বেঙ্গালুরু, 1 জুন: মৃতদেহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ! নীতির প্রশ্নে এটি অপরাধ হলেও দেশের আইনে এর কোনও যথাযোগ্য শাস্তি নেই ৷ শবদেহ ধর্ষণে শাস্তি দিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় সংশোধন চাইল কর্ণাটক হাইকোর্ট ৷ ভারতীয় দণ্ডবিধিতে প্রাসঙ্গিক সংশোধন হোক অথবা আনা হোক নতুন আইন ৷ এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবগত করল আদালত ৷
ঘটনার সূত্রপাত 2015 সালের 25 জুন। টুমাকুরু জেলায় বোনের মৃতদেহ খুঁজে পেয়ে দাদা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে ৷ 21 বছর বয়সি বোন কম্পিউটারের ক্লাসে গিয়েছিলেন ৷ বাড়ি ফেরার রাস্তায় তাঁর গলা কাটা দেহ পাওয়া যায় ৷ অভিযুক্তকে ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ ট্রায়ালের পর সেশনস কোর্ট অভিযুক্তকে ভারতীয় দণ্ডবিধির 302 ধারায় (খুন) দোষী সাব্যস্ত করে ৷ তাকে আজীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় ৷ এরপর 2017 সালের 14 অগস্ট ওই অভিযুক্তকেই ফের ধর্ষণের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধি বা আইপিসির 376 ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় ৷ 10 বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত ৷
আরও পড়ুন: ঋণের বোঝা ঝেড়ে ফেলতে তরুণীকে ধর্ষণ করে খুনের চেষ্টা ! কাঠগড়ায় হবু স্বামী ও তাঁর ভাই
সেশনস কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কর্ণাটক হাইকোর্টে আবেদন জানায় অভিযুক্ত ৷ তার আইনজীবী সওয়াল-জবাব পর্বে দাবি করেন, এই ধর্ষণের ঘটনাটি আদতে নেক্রোফিলিয়া ৷ এর অর্থ মৃতদেহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা ৷ তদন্তকারীরা জানতে পারেন, খুনের পর তরুণীর মৃতদেহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে অভিযুক্ত। নৈতিকতার বিচারে এই কাজটি অপরাধমূলক ৷ তবে এতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রয়োজনীয় আইন নেই ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ৷ এখানে আদালতের পর্যবেক্ষণ, তরুণীকে খুনের অভিযোগে অভিযুক্তকে দোষী বলা যায় কিন্তু ধর্ষণের প্রসঙ্গটি আদপেই ধোপে টেকে না ৷
আইপিসি-র 376 ধারায় কোনও ব্যক্তিকে ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা যায় ৷ তবে এই আইনে মৃতদেহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তার কোনও উল্লেখ নেই ৷ ওই যুবক তরুণীকে খুন করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল ৷ আদালত তাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির 302 ধারায় খুনের দায়ে আজীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় ৷ সঙ্গে 50 হাজার টাকা জরিমানা করে ৷
ভারতীয় দণ্ডবিধির 375 এবং 377 ধারায় পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে কোনও মৃতদেহকে মানুষ বা ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা যায় না ৷ তাই এই ধারাগুলিতে অভিযুক্তকে দোষী প্রমাণিত করা সম্ভব হয়নি ৷ 376 ধারার আওতাতেও আইনত কোনও দোষ করেনি ওই অভিযুক্ত ৷ তাই 30 মে কর্ণাটক আদালতের বিচারপতি বি বীরাপ্পা এবং বিচারপতি ভেঙ্কটেশ নায়ক টির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যায় না ৷
নেক্রোফিলিয়া ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কর্ণাটক হাইকোর্ট ব্রিটেন, কানাডার মতো বেশ কয়েকটি দেশের উদাহরণ তুলে ধরে ৷ এই দেশগুলিতে নেক্রোফিলিয়া অর্থাৎ মৃতদেহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক অথবা মৃতদেহের সঙ্গে কোনও বিরুদ্ধাচরণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় ৷ এমতাবস্থায় আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছে, ভারতেও এই আইনি ব্যবস্থা কার্যকর করা হোক ৷ পাশপাশি এই ঘটনার পর আদালত রাজ্য সরকারকে সব সরকারি হাসপাতাল এবং প্রাইভেট হাসপাতালগুলির মর্গে সিসিটিভি ক্যামেরার বন্দোবস্ত নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে ৷ মৃতদেহ নিয়ে অপরাধ রুখতে 6 মাসের মধ্যে এই ব্যবস্থা করতে হবে কর্ণাটক সরকারকে ৷
আরও পড়ুন: দোষী সাব্যস্ত অশীতিপর প্রৌঢ়, সাজা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এক বছরের সেবা