লখনউ, 22 অগস্ট: একেবারে তৃণমূল স্তরের আরএসস (RSS) কর্মী থেকে দেশের বৃহত্তম রাজ্যের শীর্ষপদে পৌঁছেছিলেন প্রয়াত কল্যাণ সিং (Kalyan Singh) ৷ তাই তাঁর জীবনটা সংগ্রাম, অধ্যবসায় আর দৃঢ় সংকল্পের উপকথা ৷
শৈশবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি
1932 সালের 5 জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) আলিগড়ে (Aligarh) এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কল্যাণ সিং ৷ জীবনে শুরুর সময়টা কঠিন ছিল ৷ শৈশব থেকে তিনি হিন্দু ধর্ম ও তার দর্শনের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছিলেন ৷ তাই লেখাপড়ার পাঠ শেষ করে আরএসএস-এ (RSS) যোগ দেন ৷ জন সংঘের (Jan Sangh) সদস্য হিসেবে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ৷ এরপর জনতা পার্টি (Janata Party) আর তারপর বিজেপিতে (BJP) চলে যান ৷ বিজেপি তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের সম্ভাবনা দেখেছিল আর তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত করেছিল ৷ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি একজন কঠোর কার্যকর্তা আর রাম মন্দিরের সোচ্চার সমর্থকের পরিচিতি পেয়েছিলেন ৷
সক্রিয় কর্মী থেকে মুখ্যমন্ত্রী
রাজনীতির মূলস্রোতে তাঁর জীবন শুরু 30 বছর বয়সে ৷ আলিগড় (Aligarh) বিধানসভা কেন্দ্রের আতরাউলি (Atrauli) থেকে জন সংঘ তাঁকে একজন বিধায়ক হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন ৷ প্রথমবার হেরে গেলেও রাজনীতি চালিয়ে গিয়েছিলেন ৷ 1967-তে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাঁর প্রথম জয় হয় ৷ পরবর্তী 13 বছর তাঁর অপরাজেয় কাল ৷ কিন্তু 1980-র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী আনওয়ার খানের (Anwar Khan) কাছে তিনি পরাজিত হন ৷ মাত্র 5 বছরের মধ্যে 1985-তে আরও বেশি শক্তি নিয়ে ফিরলেন কল্যাণ সিং ৷ পরের 19 বছর অর্থাৎ 2004 পর্যন্ত আতরাউলি ছিল তাঁর দখলে ৷
আরও পড়ুন : Kalyan Singh : অযোধ্যায় রামমন্দির আন্দোলনের 'হিরো' কল্যাণ সিং
বাবরি মসজিদ
বাবরি মসজিদ কাণ্ডের সময় তিনি ছিলেন একজন কট্টরপন্থী হিন্দু সমর্থক ৷ 1991-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে লড়লেন কল্যাণ সিং ৷ তাঁর ক্যারিশমা গেরুয়া দলকে 221টি আসন দিয়েছিল ৷ তাঁর ক্ষমতায় নিশ্চিন্ত হয়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করে ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ যদিও পরের বছর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের নৈতিক দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে কল্যাণ সিং ইস্তফা দেন ৷
বাবরি মসজিদ কাণ্ডের পরে
1993 সালে আতরাউলি (Atrauli) আর কাশগঞ্জ (Kasganj) থেকে তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হন ৷ অন্য দলগুলির মধ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা বেশি থাকলেও মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি (SP) আর বহুজন সমাজ পার্টি (BSP) জোট সরকার গঠন করে ৷ সেটা হয় বিজেপি আর কল্যাণ সিংকে বাদ দিয়ে ৷ তবে কল্যাণ সিং বিরোধী দলের নেতা হয়েছিলেন (Leader of the Opposition) ৷ 4 বছর পরে সেই জোট সরকার ভেঙে গিয়েছিল ৷ ভাগ্যিস অখ্যাত "গেস্ট হাউজ" (Guest House) ঘটনা ঘটেছিল ৷
পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের তখন আর এক বছর বাকি ৷ বিজেপি আর বিএসপি মিলে সরকার গঠন করল ৷ শর্ত অনুযায়ী সেবার প্রথম 6 মাসের জন্য বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হলেন ৷ এবার কল্যাণ সিংয়ের পালা ৷ কিন্তু বিএসপি সমর্থন তুলে নিল এইসময় ৷ সরকার আবার ভেঙে পড়ল ৷ কল্যাণ সিং পূর্বতন কংগ্রেস বিধায়ক নরেশ আগরওয়ালকে তাঁর পক্ষে টানলেন ৷ পরে ঐতিহ্যবাহী বিশাল কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে খুব দ্রুত নিজের দল লোকতান্ত্রিক কংগ্রেস পার্টি (Loktantrik Congress Party) তৈরি করে ফেললেন নরেশ আগরওয়াল ৷ সঙ্গে নিলেন 21 জন বিধায়ককে ৷ আগরওয়ালের সমর্থনে উচ্ছ্বসিত হয়ে তাঁকে সরকারে বিদ্যুৎ দফতরের (electricity portfolio) দায়িত্ব দিলেন কল্যাণ সিং ৷
আরও পড়ুন : Kalyan Singh : বিজেপির সঙ্গ ছাড়ার পর কী ঘটেছিল কল্যাণ সিংয়ের জীবনে ?
বিজেপি-র সঙ্গ ত্যাগ ও জন ক্রান্তি পার্টি (রাষ্ট্রবাদী)
1990-এর শেষের দিক ৷ জাতীয় রাজনীতিতে কল্যাণ সিং একজন জনপ্রিয় ও বহুপরিচিত নাম ৷ যদিও বিজেপি সুপ্রিমো অটল বিহারি বাজপেয়ি-র (Atal Bihari Vajpayee) সঙ্গে তাঁর মতানৈক্যের জন্য তিনি 1999-তে দল ছাড়তে বাধ্য হন ৷ 5 বছর বাদে ফের গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন আর বুলন্দশহর (Bulandshahr) থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন ৷ 2009 সালে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জন্য তিনি ফের বিজেপি ছাড়েন ৷ ওই বছর লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের এটাহ (Etah) থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ে জেতেন কল্যাণ সিং ৷ পরে নিজের দল জন ক্রান্তি পার্টি (রাষ্ট্রবাদী) (Jan Kranti Party, Rashtrawadi) গড়েন তিনি ৷
2014 সালের লোকসভা নির্বাচন ৷ নীতিন গড়করির (Nitin Gadkari) জোরাজুরিতে কল্যাণ সিং-এর জেকেপি(আর)-এর সঙ্গে জোট বাঁধে বিজেপি ৷ ওই বছর 26 অগস্ট গেরুয়া দল তাঁকে রাজস্থানের রাজ্যপাল (Governor of Rajasthan) করে ৷ এর সঙ্গে জুড়ে যায় হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) রাজ্যপালের (Governor) দায়িত্ব ৷
তাঁর রাজনৈতিক জীবনের নানা মোড় আর সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ভারতের রাজনীতি তাঁকে একজন বড় নেতা হিসেবে মনে রাখবে ৷ যে নেতার বিশাল স্বপ্ন ছিল আর তাকে বাস্তবায়িত করেছিলেন তিনি ৷ বিশেষত উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে তিনি একজন কিংবদন্তি নেতা ৷