হায়দরাবাদ : পৃথিবীবিখ্যাত আলানগানাল্লুর – ‘জালিকাট্টু’ (ষাঁড়কে বাগে আনার বহুধরনের খেলার একটি) আজ পূর্ণ জাঁকজমক নিয়ে মাদুরাই জেলায় আয়োজিত হবে ৷ আর শুক্রবার অসমের মরিগাঁও ও নওগাঁ জেলায় আয়োজিত হল ষাঁড়ের লড়াই । কাবেরী ব-দ্বীপ এবং পশ্চিমের কিছু অংশে আয়োজিত হয় জালিকাট্টু, যা বেশিরভাগ সময়েই দক্ষিণ ভারতেই আয়োজিত হয়ে থাকে । সেখানে ষাঁড়গুলো ‘ভাদি ভাসাল’ নামে একটি প্রবেশপথ দিয়ে ক্রীড়াভূমিতে ঢোকে । অপেক্ষমান অংশগ্রহণকারীদের ষাঁড়ের পিঠে বসে থাকতে হয় একটা নির্দিষ্ট সময় (৩০ সেকেন্ড মতো), অথবা সেভাবেই তিনপাক ঘুরতে হয় বা নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব পেরোতে হয় । যদি তিনি তা করতে পারেন, তবে ষাঁড়টিকে পোষা বলে গণ্য করা হয় এবং অংশগ্রহণকারী পুরস্কৃত হন । এই পুরস্কার গৃহস্থালীর জিনিসপত্র থেকে শুরু করে, সবথেকে বেশি সংখ্যক ষাঁড়কে বাগে আনা প্রতিযোগীকে গাড়ি দেওয়া পর্যন্ত হতে পারে ।
তবে, অসমের ষাঁড়ের লড়াইয়ে এমনটা হয় না । সেখানে মহিষেরা শিঙে-শিং লাগিয়ে, আঘাত করে বা ধাক্কা মেরে একে অপরকে ক্রীড়াক্ষেত্র থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করে । প্রথম খেলাটি আসছে প্রাচীন তামিল সংস্কৃতি থেকে, যেখানে ষাঁড়কে পরিবারের সদস্যের মতোই বড় করে তোলা হয় । অসমের মোষের লড়াইতে খেয়াল রাখতে হয় যাতে সবকিছু লন্ডভন্ড না হয়ে যায় । স্থানীয়দের কথায়, এই সময় পশুগুলির শরীরে অসাধারণ শক্তি চলে আসে । জালিকাট্টু হল, তামিল থাই মাসে ফসল কাটার উৎসবের অংশ। আলানগানাল্লুর সহ তিনটি বড় অনুষ্ঠান মন্দির চত্বরে হলেও, এই খেলার একটা ধর্মনিরপেক্ষ রূপ আছে, এবং গির্জাগুলোর তরফ থেকেও জালিকাট্টুর আয়োজন করা হয় । অসমে বিহুর প্রথম দিন, অর্থাৎ ‘মাঘ বিহু’ উদযাপন করতে এই খেলার আয়োজন করা হয় ।
অসমের ষাঁড়ের লড়াই সহ এই স্থানীয় খেলা 2014 সালে সুপ্রিম কোর্ট নিষিদ্ধ ঘোষণা করে । এরপর 2017 সালের 8 জানুয়ারি জালিকাট্টুর সমর্থনে বিরাট আন্দোলন শুরু হয় চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচ এবং মাদুরাইতে আলানগানাল্লুর জালিকাট্টুর আয়োজনস্থান সহ নানা জায়গায় । বিক্ষোভের মধ্যেই 23 জানুয়ারি তামিলনাড়ু বিধানসভা জালিকাট্টুর জন্য একটি বিল পাশ করে এবং তা দিয়ে 21 জানুয়ারির একটি অর্ডিন্যান্স কার্যকর করা হয় । সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে এই আইনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করে পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিমালস (পেটা)-এর মতো সংগঠন, কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। প্রায় 2000 বছরের প্রাচীন খেলা এখনও প্রাসঙ্গিক । আর অসমে সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কয়েকটি জেলায় 600-800 বছরের পুরনো এই খেলা অনুষ্ঠিত হয় ।
সঙ্গম যুগের সাহিত্যকর্ম ‘কালিথোগাই’তে বধূর পাণিপ্রার্থীকে যাচাই করে নিতে এই খেলার উল্লেখ রয়েছে । সেই তরুণী এমন একজনকে এজন্মে এবং পরজন্মেও বিয়ে করতে চাইবে না, যে ষাঁড়ের শিং চেপে ধরতে ভয় পায় । কবিতায় আরেকবার বলা হয়েছে যে এই খেলায় অংশগ্রহণ এবং জয়লাভ করাকে সেই ব্যক্তির সাহসিকতার পরিচয় হিসেবে ধরা হবে । সিন্ধু সভ্যতার একটি সিলমোহর, যা এখন দিল্লির জাতীয় সংগ্রহালয়ে রয়েছে, সেখানেও জালিকাট্টুর উল্লেখ রয়েছে, যাতে বোঝা যায় যে ওই সময়েও এই খেলার চল ছিল ।