নয়াদিল্লি : দেশজুড়ে যেভাবে নতুন করে করোনা সংক্রমণের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে, তার জেরে ইন্ডিয়া আইএনসি, কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছে 18-45 বছর বয়সিদের জন্য টিকাকরণ কর্মসূচি চালু করতে ।
শিল্প মহল মনে করে, এই পদক্ষেপের ফলে শুধুমাত্র নাগরিকদের প্রাণই বাঁচবে না, বরং ভারতের সদ্য দৃশ্যমান অর্থনৈতিক আরোগ্য সুরক্ষিত থাকবে ।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে লেখা এক চিঠিতে এফআইসিসিআই সভাপতি, উদয় শংকর জানিয়েছেন,“যেহেতু ভ্যাকসিনের কোনও ঘাটতি নেই এবং বেসরকারি ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে টিকাকরণের ক্ষমতাকে যে আরও বাড়ানো যায়, সে কথা মাথায় রেখেই আমাদের আবেদন, ১৮ বছর থেকে ৪৫ বছর বয়সি মানুষদের জন্য টিকাকরণ কর্মসূচি চালু করা হোক । এর ফলে সংক্রমণের প্রসার হ্রাস পাবে এবং দেশেও সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা হলেও কম হবে ।”
শংকর, সরকারকে আশ্বস্ত করেছেন যে, শিল্প মহল প্রত্যাশিত ‘টেস্টিং ক্যাপাসিটি’ তথা পরীক্ষা করার ক্ষমতা হাসিল করতে সমস্ত রকম সহযোগিতা প্রদান করবে ।
তিনি বলেছেন,“আমরা বর্তমানে এক দিনে অন্তত 11 লক্ষ নমুনা পরীক্ষা করছি, অথচ জানুয়ারি মাসে আমরা এক দিনে 15 লক্ষ নমুনা পরীক্ষা করতে পেরেছি । পাশাপাশি দেশে আরও বেশি কোভিড পরীক্ষা করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে, 2,440টি পরীক্ষাগার রয়েছে, যার মাধ্যমে কোভিড পরীক্ষা করানো যায় । এর মধ্যে আবার বেসরকারি ক্ষেত্রেই 1,200-র বেশি পরীক্ষাগার রয়েছে ।”
তাঁর সুরই প্রতিধ্বনিত হল ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনও (এফএডিএ) সরকারের কাছে আবেদন করেছে চলতি টিকাকরণ কর্মসূচিতে যাতে 18 বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । এফএডিএ-র সভাপতি ভিঙ্কেশ গুলাটি, ইটিভি ভারতকে বলেছেন,“চারদিকে সকলে ভয়ে আছেন কারণ কোভিড সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে । এই পরিস্থিতিতে 18-45 বছর বয়সিদের টিকাকরণের আওতায় আনা জরুরি কারণ ভারত একটি নবীন দেশ । অন্তত গড় বয়সের নিরিখে তো বটেই । আর আমাদের মানবসম্পদের 70 শতাংশেরও বেশি এই বয়সের কোঠাতেই পড়েন ।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, দেশে শনিবার নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন 89,129 জন । এই সংখ্যা 2020 সালের 20 সেপ্টেম্বরের পর থেকে দৈনিক সর্বোচ্চ । এর জেরে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 6.58 লক্ষ । সরকারের উদে্যাগেই 1 এপ্রিল থেকে দেশে 45 বছরের ঊর্ধ্বে সকলে টিকাকরণের হকদার হতে পেরেছেন । এর আগে শুধু 60 বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স এবং যাদের বয়স 45-এর ঊর্ধ্বে ও যাদের কোমরবিডিটি রয়েছে, তারাই টিকা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন । এর মধে্যই আবার, সমীক্ষায় প্রকাশ, ভ্যাকসিন-সংক্রান্ত দ্বিধা ধীরে ধীরে খর্ব হচ্ছে, যত সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে । অনলাইন কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম লোকালসার্কেলস-এর একটি সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, ভ্যাকসিন-জনিত দ্বিধা কমে সর্বনিম্ন হয়ে গিয়েছে কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অন্যান্য রাজে্যর নেতারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন । পাশাপাশি দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণের ঘটনাও বাড়তে বাড়তে 90,000-এ গিয়ে পৌঁছচ্ছে ।
আরও পড়ুন : এপ্রিলজুড়ে টিকাকরণ, বাদ যাবে না ছুটির দিনও
সাম্প্রতিক বয়ানে লোকালসার্কেলস জানিয়েছে, “কোভিড-19 টিকা নিতে ইচ্ছুক নাগরিকদের শতকরা হার বেড়ে গিয়েছে । জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে 38 শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে তা 77 শতাংশ ।” এই প্ল্যাটফর্ম আরও জানিয়েছে যে, নাগরিকরাও চান, দেশে 18 বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে টিকা দেওয়া হোক আর এই পরিষেবা পেতে প্রিমিয়াম দিকেও তারা রাজি । যে বয়ান প্রকাশিত হয়েছে তা অনুযায়ী, “গত সপ্তাহে হওয়া লোকালসার্কেলস এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, 75 শতাংশ নাগরিক চান, 18-45 বছর বয়সিদের জন্য টিকাকরণ চালু হোক, পূর্ববর্তী সময়সূচির বাইরে, বেসরকারি হাসপাতাল এবং পরীক্ষাগারগুলিতে, আর তা-ও আবার সামান্য বেশি মূলে্য । লক্ষ্য রাখতে হবে, এর ফলে কোনওভাবেই যেন নিয়মিত টিকাকরণ বাধাপ্রাপ্ত না হয় ।”