চণ্ডীগড়, 23 এপ্রিল: খালিস্তানি নেতা অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতার করা গত 36 দিনে পঞ্জাব পুলিশের জন্য সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল ৷ শেষমেশ রবিবার ভোরে মোগায় রোডে গ্রামে গুরুদ্বারার সামনে থেকে অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতার করা হয় ৷ পালাবার পথ না পেয়েই তিনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন বলে পুলিশের দাবি ৷ এই গ্রেফতারির পরই কি শেষ হবে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদ ? 18 মার্চ অমৃতপাল সিং গ্রেফতার হন ৷ সেদিন রাতেই তিনি পালিয়ে যান ৷ এরপর তাঁর সন্ধানে পুলিশি তল্লাশি চলতে থাকে ৷ তাঁকে ঘিরে দেশের বাইরেও উত্তাল হয়ে উঠেছিল ৷
18 মার্চ অমৃতপাল সিংকে পলাতক ঘোষণা করে পঞ্জাব পুলিশ ৷ আজনালা থানায় হামলার ঘটনা এবং তারপর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে তিনি পুলিশের রেডারে ছিলেন ৷ পঞ্জাবের একটি গ্রামের বাসিন্দা অমৃতপাল দুবাইতে গাড়িচালক হিসাবে কাজ করতেন ৷ কিন্তু পরে পঞ্জাবে ফিরে আসেন ৷ 'ওয়ারেস দে পঞ্জাব' সংগঠনের প্রধানের দায়িত্ব নেন এবং খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হয়ে ওঠেন। অমৃতপাল এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অপহরণ, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িত হওয়ার অভিযোগ ওঠে ৷ তবে অমৃতপাল শিখ সম্প্রদায়, এমনকী তাদের সর্বোচ্চ অস্থায়ী কর্তৃপক্ষ শ্রী অকাল তখত সাহিবের কাছ থেকে সমর্থন পায়নি ৷
অমৃতপাল সিংয়ের বিষয়ে 10টি তথ্য:
1. 2022 সালের ডিসেম্বরে জলন্ধরে একটি গুরুদ্বারা সাহিবের আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেয় ওয়ারেস পঞ্জাব দে-র প্রধানের সমর্থকরা । সেই সময়, অমৃতপাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ৷ তাঁর দাবি ছিল, গুরুদ্বারার মতো একটি পবিত্র জায়গায় চেয়ার রাখার অর্থ শিখ ধর্মকে অসম্মান করা ৷
2. আজনালা থানার ঘটনাটি তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৷ অমৃতপাল সিংয়ের নেতৃত্বে উন্মত্ত জনতা থানায় প্রতিবাদ জানাতে আসে ৷ তারা পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায়। এরপর আরও বেশি করে শিরোনামে উঠে আসেন অমৃতপাল।
3. এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও মারধরের জন্য অমৃতপাল সিংয়ের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী লাভপ্রীত সিং তুফানকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ এই ঘটনায় অমৃতপালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছিল ৷ সঙ্গীকে ছাড়াতে আজনালা থানায় রীতিমতো ঝড় তোলে অমৃতপাল সিং ৷
4. পঞ্জাবের জল্লুপুর খেরা গ্রামে অমৃতপাল সিংয়ের বাড়ি ৷ তিনি কাপুরথালায় পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা করেন ৷ এরপর পারিবারিক পরিবহণ ব্যবসায় মন দেন । সেই সূত্রে দুবাই চলে যান ৷ পরে ফিরে আসেন পঞ্জাবে ।
5. অমৃত পাল ওয়ারেস পঞ্জাব দে-র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর নাম খবরের শিরোনামে উঠে আসে ৷ এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা দীপ সিধুর পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৷ এরপর খালিস্তানি নেতা অমৃত পাল প্রধান হন ৷ তবে দীপের মৃত্যু নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে।
6. ওয়ারিস পঞ্জাবের প্রধান হিসেবে তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করার পরেই অমৃতপাল পুলিশের রেডারে আসেন ৷ তাঁর গতিবিধির উপর নজরদারি চালানো হয় ৷
7. ওয়ারিস প্রধান হিসাবে অমৃতপাল সিং খালসা ভেহির নামের সচেতনতামূলক যাত্রা শুরু করেন ৷ এতে পঞ্জাবের যুবকদের মাদকের হাত থেকে রক্ষার বার্তা দেন তিনি ৷ এই খালসা পদযাত্রা শ্রী অকাল তখত সাহিব থেকে খালসার জন্মস্থান শ্রী আনন্দপুর সাহিব পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়।
8. একাধিক বৈঠকে অমৃতপালের আক্রমণাত্মক বক্তৃতা এবং গুরুদ্বারা সাহিবগুলিতে আসবাবপত্রে আগুন ধরানোর ঘটনায় রাজনৈতিক দল ও শিখ সম্প্রদায় উভয়েই সমালোচনা করে ৷
9. অমৃতপালকে ধরতে পুলিশি অভিযানের পর খালিস্তানি বিক্ষোভকারীরা 22 মার্চ লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনের তেরঙা নামিয়ে দিয়েছিল ৷ এ নিয়ে দু'দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কথোপকথন হয় ৷ দোষীদের শাস্তি দেওয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আশ্বাস্ত করেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ৷
9. এপ্রিল মাসের 8 তারিখ অকাল তখত জাঠেদার অমৃতপাল সিংয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করার আবেদন জানিয়েছিল ৷ পাশাপাশি ভয়ের পরিবেশ তৈরি না-করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানায় অকাল তখত ৷
আরও পড়ুন: গ্রেফতারির আগে গুরুদ্বারে ভাষণ, ভিন্দ্রানওয়ালেকে স্মরণ অমৃতপালের