দক্ষিণেশ্বর/বারুইপুর, 1 জানুয়ারি: কল্পতরু উৎসবে ভক্ত সমাগম দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরে । বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় মন্দিরের মূল ফটক খুলে দেওয়া হয় ভক্তদের জন্য । এরপর মঙ্গল আরতির মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় কল্পতরু উৎসবের । বিশেষ এই দিনে ভবতারিণী মাকে সাজানো হয় নতুন বেশে । কল্পতরু উৎসবে এদিন কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় মন্দির চত্বর । পর্যাপ্ত পুলিশকর্মীর পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ারের বন্দোবস্তও ছিল । যাতে তীক্ষ্ণ নজর এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতির এড়ানো যায় ।
কথিত আছে, 1886 সালের 1 জানুয়ারি কল্পতরু রূপে আবির্ভাব হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের । সেদিন তিনি ভক্তদের আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, 'তোমাদের সকলের চৈতন্য হোক।' সেই থেকে এই দিনটি কল্পতরু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে কাশিপুর উদ্যানবাটি ও দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দিরে । তাই, নতুন বছরের প্রথম দিনটি মায়ের কাছে পুজো দিয়ে সকলের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন ভক্তরা ।
এদিন ভোর থেকেই উত্তর 24 পরগনার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মায়ের পুজো দিতে ঢল নামে ভক্তদের । দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসেছিলেন ভবতারিণী মা'কে পুজো দেবেন বলে । বেলা যত গড়িয়েছে সেই ভিড় তত বেড়েছে । তবে, সকলেই সুশৃঙ্খলভাবে এদিন পুজো দেন ভবতারিণী মা'কে । কাশিপুর উদ্যানবাটিতে শ্রীরামকৃষ্ণ কল্পতরু হলেও তাঁর যাবতীয় কর্ম এবং লীলাভূমি ছিল এই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ।
![kalpataru utsav 2025](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/01-01-2025/wb-n24-01-kalpataruutsab-vis-byte-raju-10009_01012025121559_0101f_1735713959_872.jpg)
বলা ভালো, শ্রীরামকৃষ্ণের যাবতীয় কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়েছিল ভবতারিণী মায়ের মন্দিরকে ঘিরেই । সেই কারণে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনটি ।একদিকে কল্পতরু উৎসব । অন্যদিকে নতুন বছরের সূচনা হওয়ায় এই দিনটিতে আবেগও দেখা দেয় ভক্তদের মধ্যে । এই দিনে পুজো দিতে আসা মিত্রা দাস নামে এক দর্শনার্থী বলেন, "নতুন বছরে মায়ের কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি । মা'কে বলব সবাইকে ভালো রেখো । সেই সঙ্গে আমার ছেলে যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এবং মেয়ে সুখে ঘর সংসার করতে পারে, সেটাই প্রার্থনা করছি মায়ের কাছে ।"
![kalpataru utsav 2025](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/01-01-2025/wb-n24-01-kalpataruutsab-vis-byte-raju-10009_01012025121559_0101f_1735713959_986.jpg)
পূর্ব বর্ধমান থেকে আসা দেবদীপ রায় নামে অপর এক ভক্ত বলেন, "নতুন বছরে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের মানুষ যাতে ভালো থাকতে পারে, সেই কামনাই করছি মায়ের কাছে । সারা বছর সকলের ভালো কাটুক, এটাই চাই ।" এদিন সন্ধ্যাতেও মায়ের বিশেষ আরতির ব্যবস্থা থাকছে বলে জানা গিয়েছে দক্ষিণেশ্বর মন্দির কমিটি সূত্রে ।
![kalpataru utsav 2025](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/01-01-2025/wb-n24-01-kalpataruutsab-vis-byte-raju-10009_01012025121559_0101f_1735713959_665.jpg)
অন্যদিকে, দক্ষিণ 24 পরগনার বারুইপুরের কল্পতরু উৎসব উপলক্ষে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে ৷ মদনহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের মধুবন টগরবেড়িয়া বিশালাক্ষ্মী মায়ের মন্দিরে অনুষ্ঠিত হল কল্পতরু উৎসব ৷ এই মন্দির জড়িয়ে রয়েছে নানা কল্পকথা এবং ইতিহাস ।
![kalpataru utsav 2025](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/01-01-2025/wb-n24-01-kalpataruutsab-vis-byte-raju-10009_01012025121559_0101f_1735713959_260.jpg)
আজ থেকে আনুমানিক 60 থেকে 70 বছর আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় । তৎকালীন সময়ে ঘন জঙ্গলে ঢাকা থাকতো গোটা এলাকা ৷ হিংস্র বন্য জীবজন্তুর ভয় ছিল । এছাড়া ডাকাতেরও ভয় ছিল । কথিত আছে, এই মন্দিরে পুজো দিয়ে এলাকায় ডাকাতি করতে যেত দুষ্কৃতীরা । ডাকাতির পর এই মন্দিরে বসে লুট করা জিনিসপত্রের ভাগ বাটোয়ারা করা হত । ডাকাতি করার কিছু অংশ এই মন্দিরে মায়ের কাছে সমর্পিত করত ডাকাতরা । এছাড়াও এই মন্দির ঘিরে থাকতো বিষধর সাপ । এই মন্দিরে পুজো দিতে আসা ভক্তদের সামনে বিষধর সাপ দেখা দিত ৷ কিন্তু এই মন্দিরে থাকা বিষধর সাপের কামড়ে কোনও ভক্তের মৃত্যু হয়নি ।
ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে কল্পতরু উৎসবে মন্দিরে চলে বিশেষ পুজো-অর্চনা । পুজো দিতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার ভক্ত এই মন্দিরে ভিড় জমান । কুইন্টাল কুইন্টাল বাতাসার লুট দেওয়ার প্রচলন রয়েছে এই মন্দিরে । এই মন্দিরে আসা ভক্তরা জানিয়েছেন, বিশালক্ষী মা সকলের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন । রোগব্যাধি থেকে শুরু করে নানা সাংসারিক ঝামেলা থেকে মুক্ত করেন এই বিশালক্ষ্মী মা । মন্দির ঘিরে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী ।
![kalpataru utsav 2025](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/01-01-2025/thousandsofdevoteesgatheratjagatvishalakshitempleforkalpatarufestival_01012025124849_0101f_1735715929_190.jpg)
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সুকুমার মণ্ডল বলেন, "খুবই জাগ্রত এই মন্দির ৷ প্রতিবছর কল্পতরু উৎসব এবং ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে বিশালাক্ষ্মী মায়ের বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করি ৷ আমরা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার মানুষ বিশালক্ষ্মী মায়ের মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য আসি । পুজো কমিটির পক্ষ থেকে ভক্তদের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয় । সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকে ।"
এছাড়াও মন্দিরের পুরোহিত সনাতন চক্রবর্তীর কথায়, "আজ থেকে প্রায় 60 থেকে 70 বছর আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় ৷ এই মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা লোককথা । মানুষের আস্থা রয়েছে বিশালাক্ষ্মী মায়ের উপর ৷ মানুষের সমস্ত রকম দুঃখ বিশালাক্ষ্মী মা দূর করেন । এলাকার সিদ্ধ পীঠ হিসেবে পরিচিত এই বিশালাক্ষ্মী মায়ের মন্দির । কল্পতরু উৎসবে সকাল থেকেই ভক্ত সমাগম হতে থাকে এই মন্দিরে । মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও ভক্তির উপর ভর করে 60 বছরেরও বেশি সময় ধরে জাগ্রত এই বিশালাক্ষ্মী মায়ের মন্দির ।"