সুরাত, 21 অক্টোবর : এক কেজি মিষ্টি ৷ আর তার দাম 9 হাজার টাকা ! হ্যাঁ, খাঁটি ঘি দিয়ে তৈরি 'ঘারি' (Ghari) মিষ্টি এমনই মহার্ঘ ৷ এর ইতিহাস একশো বছরের বেশি পুরনো ৷ বৃহস্পতিবার গুজরাতজুড়ে 'চাঁদনি পরওয়া' (Chandni Padwa) পালিত হবে ৷ এর অন্যতম প্রধান অঙ্গ 'ঘারি' মিষ্টি ৷ 140 টন মিষ্টি বিক্রি হতে পারে এই সময় ৷ পাশাপাশি 10 হাজার কিলো 'ঘারি' রফতানি হবে গালফ দেশগুলিতে, আমেরিকা, ইউরোপে ৷
শারদ পূর্ণিমার (Sharad Purnima) রাতে ঘারি, দুধপাক (মিষ্টি দুধে সিদ্ধ করা চাল), নিমকি খাওয়া রীতি ৷ গত বছর করোনার জন্য মিষ্টির বিক্রি খানিকটা কমলেও এ বছর মিষ্টি ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি তুঙ্গে ৷
সুরাতে প্রাচীনকালে রাজারা সোনা মেশানো খাবার খেতেন ৷ সেখান থেকে সোনায় মোড়া ঘারির উৎপত্তি ৷ মিষ্টি বিক্রেতা রাধা মিঠাইওয়ালা (Radha Mithaiwala) ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানালেন, শুকনো ফল (dry fruit) আর খাঁটি ঘি দিয়ে তৈরি করা হয় 'ঘারি' ৷ আর একেবারে শেষে তা সোনার ফয়েল দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয় ৷ দেশের অন্য শহরগুলো ছাড়াও অনলাইনে বিদেশ থেকেও অর্ডার আসে এই মিষ্টির ৷ গত বছরের তুলনায় এ বছর 'ঘারি'র দাম 10% বেড়ে গিয়েছে ৷ 560 টাকা/কেজিতে বিক্রি হওয়া 'ঘারি' এ বছর 600 টাকা/কেজি ৷ প্রতি 15 কেজি ভোজ্য তেলের (edible oil) দাম বেড়েছে 1 হাজার টাকা ৷ পাশাপাশি ময়দা, ঘিয়ের দামও ৷ এই জন্য 'ঘারি' এমন মহামূল্য ৷
আরও পড়ুন : Rasogolla Chaat : ‘রসগোল্লা চাট’, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিয়ো
ইতিহাসে ঘারি
দশেরার (Dussehra) পর 5 অথবা 6 নম্বর দিনে শারদ পূর্ণিমা আসে ৷ সুরাতবাসী এদিন সোনায় মোড়া 'ঘারি' খায় ৷ সুরাটের ইতিহাসে 1942 সালের শারদ পূর্ণিমা একটা ঐতিহাসিক তারিখ ৷ সেই সময় স্বাধীনতা আন্দোলন একটা বিশাল রূপ নিয়েছে ৷ মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) 'ভারত ছাড়ো' (Quit India) এবং 'করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে' (Karenge ya Marenge) স্লোগানে লক্ষ লক্ষ মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে ৷ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদ হয়েছেন ৷ এদিকে 'চাঁদনি পরওয়া'র সময় এগিয়ে আসছে ৷ যখন চারদিকে সবাই মারা যাচ্ছেন, জেলে বন্দি, তখন এই উৎসব কী করে পালন করবে মানুষ ? 'মিঠাই-ফরসান অ্যাসোসিয়েশন'-এর (Mithai-Farsan Association) তৎকালীন সভাপতি যমনাদাস ঘারিওয়ালা (Jamnadas Ghariwala) ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থনে দোকান বন্ধ রাখতে এবং 'ঘারি' বিক্রি না করতে অনুরোধ করেন ৷ লাভের চিন্তা দূরে সরিয়ে শহরের সব দোকানদার খুব আন্তরিকতার সঙ্গে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে দোকান বন্ধ রাখেন ৷
কথিত আছে, 1857 সালে তাঁতিয়া টোপি (Tatya Tope) ও তাঁর সেনাবাহিনী সুরাটের নবশ্রী বাজারের (Navsari Bazaar) কাছে একটি আশ্রমে থাকছিলেন ৷ সেই সময় তাঁদের বিশুদ্ধ ঘি, ময়দা আর শুকনো ফল দিয়ে তৈরি এই 'ঘারি' মিষ্টি আর নিমকি খেতে দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই থেকে ঘারির সঙ্গে সঙ্গে নিমকি খাওয়ার রীতি চলে আসছে ৷