মিরাট (উত্তরপ্রদেশ), 24 অক্টোবর: বঙ্গ যেমন মেতে ওঠে দুর্গাপুজোর আনন্দে তেমনই ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত মেতে ওঠে নবরাত্রির আনন্দে ৷ দুর্গাবরণ বা সিঁদুর খেলার মতোই জনপ্রিয় দশেরা বা রাবণ বধ ৷ অথচ অনেকেই জানেন না, এমনও একটি গ্রাম আছে, যেখানে দশেরার দিন রাবণ বধ হয় না ৷ শোক পালন করা হয় ৷ উত্তর প্রদেশের মিরাট, যা পুরাণের পাতায় রাবণের শ্বশুরবাড়ি হিসাবে পরিচিত ৷ সেখানে 166 বছর ধরে দশেরা পালন করা হয় না ৷ কারণ জানলে চমকে যেতে হয় ৷
দশেরা বা রাবণ বধের পিছনে মূল কারণ হিসাবে বলা হয়, শুভ শক্তির জয় আর অশুভ শক্তির বিনাশ ৷ সেখানে মিরাট জেলার গাগোল গ্রামে দেখা যায় অন্য ছবি ৷ এখানে গ্রামের ঘরে ঘরে শোক পালন করা হয় ৷ আসলে 165 সাল আগে এই গ্রামে ইংরেজরা 9জন বীর বিপ্লবীকে এই দিনে একসঙ্গে হত্যা করেছিল ৷ সেই ঘটনার পর থেকেই এখানেই দশেরা উৎসব পালন করা হয় না ৷
মহান বিপ্লবী এবং শহীদ ধন সিং কোতোয়ালের বংশধর তশবীর চাপরানা জানিয়েছেন, 1857 সালে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল এখানকার বাসিন্দারা ৷ তিনি জানান, 1857 সালের 10 মে মিরাটে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লব শুরু হয়েছিল। ধন সিং কোতোয়ালের নেতৃত্বে আশেপাশের জেলার লোকেরা সদর থানায় পৌঁছে ভাঙচুর শুরু করে এবং বন্দি যোদ্ধাদের মুক্ত করে ৷ পাঁচলি, নাংলা, ঘাট, গুমি, গাগোল, নূরনগর ও লিসাদি গ্রামের বিপ্লবীরা ধন সিং কোতোয়ালের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ৷
তশবীর চাপরানা আরও জানান, এই গ্রামে অনেক ক্রান্তিকারী ছিলেন ৷ তাঁদের দমনে ইংরেজরা এক নৃশংস পরিকল্পনা করে ৷ সেদিন ছিল দশেরা ৷ ইংরেজরা সুপরিকল্পিতভাবে গাগোল গ্রামে পৌঁছায়। সেখানে বিপ্লবীদের গ্রামের পিপল গাছে একসঙ্গে 9জন বিপ্লবীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয় ৷ শুধু তাই নয়, গ্রামবাসীদের ভয় জিইয়ে রাখার জন্য, ওই গাছে বিপ্লবীদের বেশ কিছুদিন ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয় ৷
আরও পড়ুন: 'আবার এসো মা...', বিজয়া দশমীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা মোদি-মমতা-রাহুলের
মিরাটের চৌধুরী চরণ সিং ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের প্রধান বিঘ্নেশ ত্যাগী জানিয়েছেন , যখন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লব শুরু হয়েছিল সেই সময় বিজয়া দশমী বা দশেরার দিনেই গাগোল গ্রামের পিপল গাছে বিপ্লবীদের ঝুলিয়ে ব্রিটিশরা নির্মমতার পরিচয় দিয়েছিল। সেই ঘটনার 166 বছর পার হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু গ্রামের মানুষ বীর যোদ্ধা রামসাহায়, হিম্মত সিং, রমন সিং, হারজিত সিং, কাদেরা সিং, ঘসিতা সিং, শিববত সিং, বৈরাম এবং দরিয়াব সিং-কে আজও স্মরণ করে চলেছে ৷ এই কারণে শুধু দশেরা নয়, গ্রামে কোনও শুভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না।