কোহিমা, 6 ডিসেম্বর : নাগাল্যান্ডের মনে সুরক্ষাবাহিনীর গুলিতে মৃতের সংখ্যা বাড়ল আরও একটি (death toll increases in Nagaland firing incident) ৷ আগে জানা গিয়েছিল, 13 জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে ৷ এই মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে ধন্দ ছিল শুরু থেকেই ৷ স্থানীয় আদিবাসী সংগঠন দাবি করে, মোট 17 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ তবে পরে জানা যায় 13 জন নয়, শনি এবং রবিবারের গুলিচালনার ঘটনায় মোট 14 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ পাশাপাশি নাগাল্যান্ড রাজ্য পুলিশের তরফে সেনার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে ৷ রাজ্য সরকারের তরফে মৃতদের পরিবারকে 5 লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার হর্নবিল উৎসব স্থগিত রাখা হয়েছে ৷
রাজ্য পুলিশের অভিযোগে বলা হয়েছে, গ্রামবাসীদের উপর হামলার উদ্দেশ্যেই 21 প্যারা স্পেশাল ফোর্স গুলি চালায়, যার কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ৷ শনিবার এবং রবিবার পৃথক পৃথক গুলিচালনার ঘটনা ঘটে ৷ তাতে মোট 14 জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে ৷ প্রথম ঘটনাটি ঘটে শনিবার সন্ধ্যায় ৷ পিকআপ ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় কয়লা খনির কিছু শ্রমিক ৷ জঙ্গি সন্দেহে তাঁদের উপর গুলি চালায় সেনা ৷ 6 জনের মৃত্যু হয় ৷ বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় তাঁদের খুঁজতে বের হন বাকি গ্রামবাসী ৷ সেইসময়ই তাঁরা সেনার একটি ট্রাক ঘিরে ফেলেন ৷ গুলিচালনার ঘটনা সামনে আসায় তৎক্ষণাৎ উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি ৷ তাতেই প্রত্যুত্তরে গুলি চালায় সেনা ৷ তাতে মৃত্যু হয় আরও 7 জন গ্রামবাসীর ৷ সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক জওয়ানেরও ৷ জ্বালানো হয় সেনাবাহিনীর ট্রাকও ৷
ঘটনা সেখানেই থেমে থাকে না ৷ পরেরদিন অর্থাৎ রবিবার বিকেলের দিকে কোনিয়া ইউনিটে এবং অসম রাইফেলসের একটি ক্যাম্পে হামলা চালায় গ্রামবাসী ৷ ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করা হয় ৷ আত্মরক্ষার্থে ফের গুলি চালায় সেনা ৷ তাতে আরও একজনের মৃত্যু হয় ৷ মন জেলার এপেক্স ট্রায়াল বডি প্রাথমিকভাবে 17 জনের মৃত্যুর দাবি করলেও পরে জানা যায় দু'দিনের ঘটনায় মোট 14 জনের মৃত্যু ঘটেছে ৷ জখম হয়েছে আরও 28 জন ৷ তাঁদের মধ্যে 6 জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে ৷ তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৷
সোমবার ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের তরফে রাজ্যজুড়ে বনধ ডাকা হয়েছে ৷ নাগা স্টুডেন্টস ফেডারেশনের তরফে পাঁচদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে ৷ গত শনি এবং রবিবার অর্থাৎ 4 এবং 5 ডিসেম্বরকে 'কালাদিবস' ঘোষণা করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়কে কোনও রকম উৎসবে যোগ না দেওয়ার করা বলা হয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও এবং উপমুখ্যমন্ত্রী ওয়াই প্যাটন দিল্লি গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য ৷ রবিবারই তাঁরা ফিরে আসেন মনে ৷ রাজ্যের মন্ত্রী পি পাইওয়াং কোনিয়াক, ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ-সহ আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই ওটিংয়ে পৌঁছেছেন ৷ রাজ্য সরকারের তরফে দু'টি হেলিকপ্টরকে জরুরি পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো হচ্ছে ৷ এর মধ্যে জখম চারজনকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য মন থেকে ডিমাপুরে উদ্ধার করে আনা হয়েছে ৷ সেখানে তাঁদের দেখতে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী এস প্যাঙ্গু ফোম ৷
সোমবার সরকারিভাবে কিসামায় হর্নবিল উৎসব বন্ধ রাখা হয়েছে ৷ চারটি জেলাজুড়ে পালিত হয় নাগাল্যান্ডের প্রধান এই উৎসব ৷ হর্নবিল সঙ্গীত উৎসব, নাগাল্যান্ড সাহিত্য সম্মেলন, নাগাল্যান্ড চলচিত্র উৎসব, মাউন্টেন বাইকিং এবং হর্নবিল ব্যাব্মু ফেস্টিভ্যাল মিলিয়ে এই উৎসব সে রাজ্যের ঐতিহ্য ৷ এই ঘটনার পর এদিন কিসামার পরিস্থিতি একেবারেই থমথমে ৷
আরও পড়ুন : Assam Rifles Camp Vandalized : নাগাল্যান্ডে অসম রাইফেলসের ক্যাম্পে তাণ্ডব উন্মত্ত জনতার, জারি 144 ধারা