মুম্বই, 19 ডিসেম্বর: আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমকে নিয়ে সোমবার থেকেই সরগরম সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম ৷ বিষপান করে করাচির হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন - এই খবর ছড়িয়ে পড়লেও, তা কতটা সত্যি তা নিয়ে এখনও ধন্ধ রয়েছে ৷ পাকিস্তান সরকারের তরফেও এ বিষয়ে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি ৷ তবে, অনেকের মতে, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের আশ্রয়েই রয়েছেন দাউদ ৷ তাঁর মতো অপরাধীর প্রতি পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতা বহুদিনের ৷ যদিও আদপে তিনি মুম্বইয়ের বাসিন্দা ৷ বর্তমানে কয়েকশো কোটি টাকার মালিক ৷ তবে দেশ ছাড়ার পর আর ফেরেননি ৷ অংশ নিতে পারেননি বাবা, মা ও বোনের শেষকৃত্যেও ৷
1993 বোমা বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড: ভারতের তদন্তে উঠে এসেছে যে, 1993 সালে মুম্বই বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড দাউদ ইব্রাহিম ৷ গত কয়েক বছর ধরেই তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার রাডারে রয়েছে । 1993 সালের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর দাউদ মুম্বইয়ের নাগপাড়া থেকে পাকিস্তানে চলে যান । তিনি করাচিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বলে প্রতিনিয়ত খবর আসে গোয়েন্দাদের কাছে । পাকিস্তান সরকার তাঁকে সুরক্ষা দিচ্ছে বলেও জানা যায় ।
দাউদের পরিবার: দাউদ ইব্রাহিম মুম্বইয়ের বাসিন্দা । তিনি দেশ ছাড়ার পরেও, তাঁর বোন এবং বাবা-মা মুম্বইতে থাকতেন । কিন্তু তাঁদের মৃত্যুর পর শেষকৃত্যেও যোগ দিতে পারেননি দাউদ ৷ তাঁর পরিবার সম্পর্কে আরও তথ্য দিয়েছেন প্রবীণ সাংবাদিক প্রভাকর পাওয়ার । দাউদের বাবা মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চে একজন কনস্টেবল ছিলেন । দাউদ প্রথমে ওরলির একটি পুলিশ কলোনিতে বড় হয়ে ওঠেন । এরপর তিনি নাগপাড়ার আহমেদ সেলের উর্দু স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন । আরও বলা হয়, দাউদ ডামি ছাত্র বসিয়ে দশম শ্রেণি পাশ করেছেন । সাংবাদিক পাওয়ার জানিয়েছেন যে, 5 ফুট 6 ইঞ্চির উচ্চতার দাউদ উর্দু, মারাঠি এবং হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজিতেও কথা বলতে পারেন ।
দাউদের প্রথম গ্যাং: তাঁর বাবা পুলিশের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর দাউদ এবং তাঁর ভাই পাকমোড়িয়া স্ট্রিটে চলে আসেন । সেখানে হাজী মুসাফির খানা নামে একটি ভবনের দোতলায় একটি ঘর কেনেন তাঁরা । এরপর ধীরে ধীরে তাঁরা একই ভবনের অন্য বাসিন্দাদের ঘর দখল করতে থাকেন । দাউদ ও তাঁর দল প্রথমে এই ভবন থেকে তাঁদের অপকর্ম চালাতে শুরু করেন ৷
দাউদ বর্তমানে কোথায় থাকেন: 1981 সালে দাউদের বড় ভাই শাব্বিরকে হত্যা করা হয় । দাউদের বাবা মারা যান 1988 সালে । মা মারা যান 2000 সালে । তবে দাউদ তাঁদের দুজনের শেষকৃত্যে অংশ নিতে পারেননি । বলা হয়, করাচির ডিফেন্স কলোনিতে স্ত্রী মেহজাবিনের সঙ্গে থাকতেন তিনি । কিন্তু তাঁর আসল ঠিকানা আইএসআই ছাড়া কেউ জানে না । দাউদের বড় ভাই শাব্বিরের মৃত্যুর পর, তাঁর ছোট ভাই নুরাও 2009 সালে করাচিতে মারা যান । তাঁর বয়স ছিল মাত্র 52 বছর । দীর্ঘ অসুস্থতার পর তাঁর মৃত্যু হয় । দাউদের ছত্রছায়ায় তাঁর বোন হাসিনাও নাগপাড়া এলাকার ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন ৷ সেখানে হাসিনার সাম্রাজ্য চলত ৷ তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে । হাসিনা পারকার 2014 সালে মারা যান । সিনিয়র সাংবাদিক প্রভাকর পাওয়ার জানিয়েছেন যে, বোনের মৃত্যুর পরও তাঁর শেষকৃত্যের জন্য মুম্বই আসতে পারেননি দাউদ । সাংবাদিক পাওয়ারের কথায়, অনেক বেনামি সম্পত্তি রয়েছে দাউদের । তাঁর কিছু সম্পত্তি নিলামও করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: