চেন্নাই : ‘অপারেশন কমল’-এর পূর্ণ প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে ভোটমুখী পুদুচেরিতে চলা রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে কে সবচেয়ে বেশি ফায়দা তুলতে পারবে? এলজি-র নির্দেশমতো নারায়ণস্বামী সরকার কি পারবে আগামীকালের আস্থা ভোট জিততে? মুখ্যমন্ত্রী কোনও ঝড় তুলতে পারুন বা না পারুন, কংগ্রেস হয়তো লাভেই থাকবে । যদি কংগ্রেস আস্থা ভোট জিততে পারে এবং সরকারকে উদ্ধার করতে পারে, যা আপাতত অসম্ভব মনে হচ্ছে, কিন্তু করতে পারলে তা তাদের মুকুটে একটা বড় পালক হতে পারবে । আর যদি কংগ্রেস তা করতে না পারে, তাহলে অন্তত তারা ‘ভিকটিম কার্ড’টুকু খেলতে পারবে ।
একের পর এক পদাধিকারীর পদ ছেড়ে চলে যাওয়ার জেরে পুদুচেরি কেন্দ্রশাসিত এলাকার কংগ্রেস সরকার প্রায় তাদের কার্যকালের একেবারে অন্তিম সীমায় এসে দাঁড়িয়েছে । রবিবার, আস্থা ভোটের একদিন আগে তারা আরও দুই বিধায়ককে হারিয়েছে, একজন কংগ্রেসের আর একজন কংগ্রেসের শরিক দল ডিএমকে-র। ওই দুই বিধায়ক নিজেদের ইস্তফাপত্র স্পিকারের কাছে জমা দিয়েছেন। ফলে পূর্বতন ফরাসি ‘এনক্লেভ’-এর রাজনৈতিক সংকট দিন দিন আরও বেশি জটিল হয়ে পড়ছে।
কংগ্রেস নেতৃত্বকে হতবাক করে মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামীর সংসদীয় সচিব কে লক্ষ্মীনারায়ণ এবং ডিএমকে বিধায়ক কে ভেঙ্কটেশন রবিবার পর পর নিজেদের ইস্তফাপত্র স্পিকারের কাছে জমা দেন। এর ফলে আসন ছেড়ে দেওয়া বিধায়কদের সংখ্যা কমে দাঁড়াল 6 । যা সরকারকে বিপদের মুখে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ইস্তফা দেওয়া বিধায়কদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে বিজেপিতে যোগদান করে ফেলেছেন, আর বাকিরা গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার অপেক্ষা করছেন মাত্র ।
যদিও কেন্দ্র কিরণ বেদিকে রাজভবন থেকে অপসারিত করেছেন, তবুও পুদুচেরির নারায়ণস্বামী সরকারের সম্মুখে ধেয়ে আসা বিপদ কিছু কম হয়নি। দুর্গ সামলাচ্ছেন তেলাঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সৌন্দর্য্যরাজন । যিনি পুদুচেরির উপরাজ্যপাল হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে সৌন্দর্য্যরাজন সরকারকে সোমবার (22 ফেব্রুয়ারি) বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা কংগ্রেসশাসিত জোট সরকারের কাছে যে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তা বলা বাহুল্য। আর এ সবের মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে ডিএমকে বিধায়কের ইস্তফা দেওয়া চমক আরও বাড়িয়েছে।
এই কেন্দ্রশাসিত এলাকার রাজনৈতিক টানাপোড়েন বিপজ্জনক মোড় নেয় যখন 33 সদস্যের বিধানসভায় গত সপ্তাহ থেকে ক্ষমতাসীন দলের পাঁচ বিধায়ক ইস্তফা দেন । এদের মধ্যে আবার দু’জন মন্ত্রী। এবার, আরও দু’জনের ইস্তফায় বিধানসভায় দুই শিবিরের অনুপাত গিয়ে দাঁড়াল 12 : 14 ।
বিজেপি বর্তমানে ব্যস্ত ভোটমুখী এই কেন্দ্রশাসিত এলাকা থেকে কংগ্রেস শাসিত সরকারকে গদিচ্যুত করতে আর অন্যদিকে কংগ্রেস এবং তাদের শরিক দল, ডিএমকে মরিয়া চেষ্টা করছে সরকারকে বাঁচাবার।
সূত্রের খবর, “স্পিকার যে দু’জন এআইএডিএমকে বিধায়ককে বাতিল করবেন, যারা এনআর–কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে আগে কংগ্রেস বিধায়কদের ‘চোরাশিকার’-এর চেষ্টা করেছিল, সেই সম্ভাবনা জোরালো । এই নিয়ে স্পিকারের কাছে কংগ্রেস বিধায়করা প্রমাণও জমা দিয়েছেন।” সূত্রের সংযোজন, এই ধরনের পরিস্থিতি কংগ্রেসকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে এবং এই পরিস্থিতি নির্বাচন পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
আরও পড়ুন : পুদুচেরিতে সংকট বাড়ল কংগ্রেসের, ইস্তফা আরও দুই বিধায়কের
যদিও ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের কাছে বিপদের আশঙ্কা তৈরি করেছে তিন জন মনোনীত বিজেপি বিধায়ক, সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছেন। কংগ্রেসের এক দ্বিতীয় সারির নেতার কথায়, “এই পরিস্থিতিতে বল স্পিকারের কোর্টে রয়েছে । কারণ আস্থা ভোটের সময় কোনও মনোনীত বিধায়ককে ভোট দেওয়া থেকে তিনিই বিরত রাখতে পারেন। যদিও এর ফলে বিরোধীদের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে। ওই নেতার বিশ্বাস, কংগ্রেস ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে।
অন্যদিকে এমন খবরও রয়েছে যে, বিজেপি হাই কম্যান্ডের সঙ্গে পর্দার আড়ালে যোগাযোগ রেখে চলেছেন স্পিকার। কিন্তু এই কেন্দ্রশাসিত এলাকায় বিজেপির রাজনৈতিক আশ্রয় তৈরির চেষ্টা, এআইএডিএমকে-এনআর কংগ্রেস এমনকী ডিএমকে-কেও চিন্তায় রেখেছে, ভোটযুদ্ধে নতুন এক প্রতিদ্বন্দ্বীর আবির্ভাবের মাধ্যমে। যদিও স্থানীয় এআইএডিএমকে এবং এনআর কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে জোটবন্ধ হয়েছে নারায়ণস্বামী কী করেন, তা দেখতে। তাঁরা এখনও পর্যন্ত গেরুয়া দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সন্ধি করতে সঙ্কোচ বোধ করছেন।
আরও পড়ুন : আগামী সোমবার আস্থাভোট পুদুচেরিতে
বিশ্লেষকদের মতে, যদি ‘অপারেশন কমল’ সফলও হয়, তাহলেও তা বিজেপির পক্ষে খুব সুবিধাজনক হবে না? কারণ এই কেন্দ্রশাসিত এলাকায় বিজেপির অস্তিত্ত্ব খুবই কম। সিনিয়র সাংবাদিক, জি বাবু জয়কুমারের মতে, “বিজেপি যখন থেকে কিরণ বেদীকে এলজি (উপরাজ্যপাল) পদে নিযুক্ত করেছিল, পুদুচেরিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা শুরু হয়ে যায়। আর এখন এই অচলাবস্থা তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছে। আস্থা ভোটের বিষয়ে বলতে গেলে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের কাছে এই প্রতিযোগিতা খুবই হাড্ডাহাড্ডি। বিরোধী শিবির থেকে যদি দুই বা তিনজন বিধায়ক আস্থা ভোটে ভোটদানে বিরত থাকেন, তাহলে সম্ভবত কংগ্রেস তাদের সরকার উদ্ধার করতে পারবে। কিন্তু যে হারে ইস্তফা বাড়ছে, তাতে তা হওয়ার আশা ক্ষীণ। যাই হোক, আমাদের কাজ শুধু অপেক্ষা করা এবং কী হয়, তা দেখা।”