চেন্নাই, 23 অগস্ট: চাঁদের মাটির মতোই একই রকম মাটির হদিশ রয়েছে দেশের দক্ষিণে ৷ তাই চন্দ্রযান-3 চাঁদের মাটিতে ঠিকঠাক নামতে পারবে কি না, তা জানতে সেই মাটি পরীক্ষা করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা ৷ এর উৎস তামিলনাড়ুর নমাক্কাল জেলা ৷ এখানকার মাটির সঙ্গে নাকি চাঁদের মাটির মিল রয়েছে ৷
হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই জানিয়েছে সংবাদসংস্থা পিটিআই ৷ তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই থেকে 400 কিমি দূরে অবস্থিত নমাক্কাল ৷ 2012 সাল থেকে ইসরোর বিজ্ঞানীরা এই জেলার মাটি নিয়ে পরীক্ষা করছেন এবং সেই অনুযায়ী চন্দ্রযান মিশনের প্রস্তুতি নিয়ে আসছেন ৷
চন্দ্রযান-3 মিশনের আগেও এই জেলার মাটি পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা ৷ পরীক্ষার ফলাফল থেকে তাঁরা ল্যান্ডার মডিউলের ক্ষমতা জানতে পেরেছেন ৷ ল্যান্ডার মডিউলটিকে আরও নিখুঁত করে গড়ে তুলেছেন, যাতে চন্দ্রযান-3 চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে সফট ল্যান্ডিং করতে পারে ৷
আরও পড়ুন: বিকেলে চন্দ্রযানের সফট ল্যান্ডিং ! ইতিহাসের অপেক্ষায় দেশ
তাই আজ চন্দ্রযান-3-এর ল্যান্ডার মডিউল বিক্রম ও প্রজ্ঞা ঠিকঠাক চাঁদের মাটিতে নামতে পারলে সেই সাফল্যের ভাগ পাবে তামিলনাড়ুও ৷ এই নিয়ে তৃতীয়বার চন্দ্রযান-3 মিশনের জন্য দক্ষিণী রাজ্যটি বেঙ্গালুরুতে ইসরোর সদর কার্যালয়ে মাটি সরবরাহ করেছে ৷
পেরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের ডিরেক্টর অধ্যাপক এস আনবাঝাগান জানিয়েছেন, নমাক্কালে এই মাটি যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায় ৷ তিনি বলেন, "আমরা ভূতত্ত্ব সম্পর্কিত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি ৷ চন্দ্রপৃষ্ঠে, বিশেষত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যে ধরনের মাটি রয়েছে, ঠিক তেমনটাই রয়েছে তামিলনাড়ুতে ৷ চাঁদের জমিতে 'অ্যানোরথোসাইট' নামক মাটি আছে ৷" তিনি সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানান, ইসরো চন্দ্রাভিযানের ঘোষণা করার পর দ্রুত এই মাটি ইসরোর কাছে পাঠানো হয় ৷
অধ্যাপক এস আনবাঝাগান আরও জানান, 2008 সালে চন্দ্রযান-1-এর সাফল্যের পর চন্দ্রযান-2-এর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা ৷ প্রথম চন্দ্রযান মিশনে মহাকাশযানটি চাঁদকে প্রদক্ষিণ করেছে ৷ সেবার সফট ল্যান্ডিং বা চাঁদের মাটিতে কোনও ঝাঁকুনি ছাড়া হালকাভাবে অবতরণের বিষয়টি ছিল না ৷ চন্দ্রযান-2 মিশনে এই সফট ল্যান্ডিংয়ের পরিকল্পনা করে ইসরো ৷
ল্যান্ডার মডিউল থেকে একটি রোভার বেরিয়ে আসবে ৷ সেটি চাঁদের মাটিতে খানিকটা হামাগুড়ির মতো করেই হাঁটবে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা সারবে ৷ এমনটাই কথা ছিল চন্দ্রযান-2 মিশনে ৷ ল্যান্ডার মডিউলটি কেমন হলে তা সম্ভব ? এ বিষয়ে জানতে ইসরো নমাক্কালের দু'টি গ্রামের মাটি পরীক্ষা করে দেখে, যেমনটা হয়েছে চন্দ্রযান-3-এর ক্ষেত্রেও ৷
ভূতত্ত্বের অধ্যাপক এস আনবাঝাগান মাটির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ৷ সালেম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি রিমোট সেনসিং এবং ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন ৷ তিনি বলেন, "ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরোতে প্রায় 50 টন মাটি পাঠানো হয়েছে ৷ এই মাটির সঙ্গে চন্দ্রপৃষ্ঠের মাটির মিল রয়েছে ৷"
এই মাটি নিয়ে নানাবিধ পরীক্ষা করেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা ৷ তাঁরা নিশ্চিত করেন, নমাক্কালের মাটি আর চাঁদের মাটি একই রকম ৷ এই জেলার সীথামপুন্ডি এবং কুন্নামালাই গ্রামে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই মাটি পাওয়া যায় ৷ অন্ধ্রপ্রদেশের কয়েকটি জায়গা এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলেও এই মাটির হদিশ মিলেছে, জানালেন অধ্যাপক ৷ তিনি আরও বলেন, "আমরা ইসরোর প্রয়োজনমতো মাটি পাঠাই ৷ যদি চন্দ্রযান-4 মিশনের ঘোষণা হয় ৷ তাহলে সেক্ষেত্রেও আমরা মাটি পাঠানোর প্রস্তুতি নেব ৷"
আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়ে চাঁদে অবতরণ করবে বিক্রম, দাবি ইসরোর চেয়ারম্যানের
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম, চন্দ্রযান-2 মিশনের ডিরেক্টর মাইলস্বামী আন্নাদুরাই, চন্দ্রযান-3 মিশনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর বীরামুথুভেল পি- সবাই দক্ষিণের এই রাজ্যটির বাসিন্দা ৷ (সংবাদসংস্থা পিটিআই)