মুম্বই, 20 নভেম্বর: জামিন মিলেছে আগেই । মাদক-কাণ্ডে আরও স্বস্তি আরিয়ান খানের (Aryan Khan) । কিন্তু অস্বস্তি বাড়ল নার্কোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র । কারণ বম্বে হাইকোর্টের সাফ যুক্তি, আরিয়ান এবং তাঁর বন্ধুদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজকর্ম বা ষড়যন্ত্রের কোনও প্রমাণ নেই । তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনেও আপত্তিকর কিছু পাওয়া যায়নি ।
গত 28 অক্টোবর শর্তসাপেক্ষে জামিন পান আরিয়ান এবং তাঁর বন্ধুরা ৷ তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারপতি নিতিন সাম্বরে ৷ শনিবার তাঁর 14 পাতার রায়ের বিশদ তথ্য প্রকাশ করেছে আদালত ৷ তাতেই আরিয়ানকে কার্যত ক্লিনচিট ধরানো হয়েছে ।
আদালতের নথিতে বলা রয়েছে, ‘জেনেশুনে ওই তিন জন বেআইনি কাজকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন, তার সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণই মেলেনি ৷ আরিয়ান, মুনমুন ধামেচা এবং আরবাজ মার্চেন্ট একই প্রমোদতরীতে ছিলেন, তাই সকলেই ষড়যন্ত্রে যুক্ত, মাদক নেওয়ার জন্যই তাঁরা ওই প্রমোদতরীতে চেপেছিলেন, এমন অভিযোগ আনা যুক্তিহীন ৷’
এর আগে, আরিয়ান এবং তাঁর বন্ধুদের জামিনের বিরোধিতায় আদালতে তাঁদের বয়ান জমা দিয়েছিল এনসিবি ৷ অভিযুক্তরা মাদক নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে তাতে দাবি করে এনসিবি ৷ কিন্তু আদালতের সাফ যুক্তি, এনসিবি আরিয়ানদের বয়ান বলে যেটিকে চালানোর চেষ্টা করছে, তাতে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে ৷ তাই শুধু তাদের দাবির উপর ভরসা করা অসম্ভব ৷
শুধু তাই নয়, আরিয়ানদের বিরুদ্ধে মাদক বিরোধী আইন প্রয়োগ করে এনসিবি জানিয়েছিল, কত পরিমাণ মাদক সঙ্গে রাখা বেআইনি, তা জানতেন অভিযুক্তরা । তা সত্ত্বেও সঙ্গে মাদক রাখতে সম্মত হয়েছিলেন সকলে । একসঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছিলেন । কিন্তু এনসিবি-র এই দাবিও খারিজ করে দিয়েছে আদালত ।
অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে যে ন্যূনতম থাকা প্রয়োজন, এনসিবি তা আদালতে দেখাতে পারেনি বলে সাফ জানিয়েছেন বিচারপতি সাম্বরে । আরিয়ান খানের কাছ থেকে যেখানে মাদক পাওয়া যায়নি, তিনি মাদক নিয়েছিলেন পরীক্ষায় যখন তা-ও প্রমাণিত হয়নি, মুনমুন এবং আরবাজের কাছ থেকে মাদক উদ্ধার হলেও, তা যে পরিমাণে একেবারেই সামান্য, সে কথাও তুলে ধরেন তিনি ।
আরও পড়ুন: Priyanka Gandhi to Modi : লখিমপুর-কাণ্ডে মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার দাবিতে মোদিকে চিঠি প্রিয়াঙ্কার
শুধু তাই নয়, আরিয়ান, মুনমুন এবং আরবাজ, তিন জনেই যেখানে আলাদা আলাদাভাবে যাত্রা করছিলেন, সেখানে একসঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার প্রশ্ন কোথায়, এনসিবি-র উদ্দেশে এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন বিচারপতি । আর তার ভিত্তিতেই আরিয়ানদের জামিন মঞ্জুর করেন তিনি ।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর আরবসাগরের বুকে একটি প্রমোদতরী থেকে আরিয়ান-সহ বেশ কয়েকজনকে মাদক নেওয়া এবং মজুত করে রাখার অভিযোগে আটক করে এনসিবি । তার এক দিন পর তাঁদের গ্রেফতার করা হয় । আরিয়ানের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও, দু’বার তাঁর জামিনের আর্জি খারিজ হয় । শেষমেশ জেলে একমাস পূর্ণ হতে কয়েক দিন বাকি থাকতে তাঁদের জামিন মঞ্জুর হয় আদালতে ।
এই গোটা পর্বে এনসিবি-র সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পডে় মহারাষ্ট্র সরকার । অভিনেতা শাহরুখ খানের ছেলে বলেই বিজেপি ঘনিষ্ঠ এনসিবি আধিকারিক সমীর ওয়াংখেড়ে আরিয়ানকে বলির পাঁঠা করছেন বলে অভিযোগ করে তারা । অন্য দিকে সমীরের বিরুদ্ধেও ভুয়ো পরিচয় দিয়ে চাকরি হাতানো থেকে মোটা টাকা আদায়ে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ উঠে আসে । যে কারণে আরিয়ান মামলা থেকে সমীরকে সরানো হয় । তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় তদন্তও । এই মুহূর্তে জামিন পেয়ে জেলের বাইরে আছেন আরিয়ান । প্রতি শুক্রবার এনসিবি-র সামনে হাজিরা দিতে হয় তাঁকে ।