চেন্নাই, 31 জুলাই: লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু করেছিল বিজেপি। রাজ্য সফরেও বেরিয়ে পড়েছেন বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব। বসে নেই বিরোধী শিবিরও । তবে বিজোপির বরাবরের দাবি, বিরোধীদের থেকে তারা অন্তত একদিক থেকে এগিয়ে রয়েছে । 26 দলের জোটের প্রধানমন্ত্রীর মুখ কে তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় বিরোধীরা । আর এখানেই বিজেপি-র দাবি, তাদের অন্তত সেই দুশ্চিন্তা নেই। তৃতীয়বারও যে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই বিজেপি তথা এনডিএ ভোটের ময়দানে নামছে তাও স্পষ্ট । এবার সেই নরেন্দ্র মোদির আসনও প্রায় নিশ্চিৎ করে ফেলেছে বিজেপি ৷ প্রাথমিকভাবে সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, 2024 লোকসভা নির্বাচনে তামিলনাড়ুর কোনও আসন থেকে দাঁড়াতে পারেন নরেন্দ্র মোদি।
বিজেপি সূত্রে খবর, দলের তৃণমূল স্তরের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রামানাথপুরম থেকে প্রার্থী হওয়া সমীচিন হবে না । আর সে করাণেই পদ্মশিবির প্রধানমন্ত্রীকে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী বা কোয়েম্বাটুর থেকে প্রার্থী করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে । বিজেপি নেতা পন রাধাকৃষ্ণণ এবং সিপি রাধাকৃষ্ণণ যথাক্রমে এই আসনগুলি থেকে জিতেছিলেন। বিজেপি সূত্রে খবর, যেহেতু কোয়েম্বাটুর এবং কন্যাকুমারী দুই জায়গাতেই তৃণমূল স্তরে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি, তাই এই দুই আসনের মধ্যে যে কোনও একটি মোদির জন্য বাছাই করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে দল রামানাথপুরম লোকসভা আসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রাথমিকভাবে তৈরি হচ্ছিল। গত 9 জুলাই হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ ভারতের বিজেপি রাজ্য সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলের প্রবীণ নেতাদের বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রী মোদির রামনাথপুরম নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে আপত্তি জানান । সেক্ষেত্রে তাদের যুক্তি ছিল, এটি উল্লেখযোগ্যভাবে মুসলিম জনসংখ্যাধিক্য় আসন । আসনটি বর্তমানে আইইউএমএল-এর নাভাস্কানির দখলে রয়েছে।
অন্যদিকে, বিজেপি আসনটিতে একটি বিশদ অধ্যয়ন করার পরও দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার পাশাপাশি বুথ কমিটিগুলিতেও দলের তোমন কোনও সমর্থন নেই। এরপরই বিজেপি নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেয়, কন্যাকুমারী বা কোয়েম্বাটুর থেকে নরেন্দ্র মোদিকে প্রার্থী করা হতে পারে । কারণ এই দুই কেন্দ্রেই বিজেপির ব্যাপক সমর্থন রয়েছে বলেও দাবি পদ্ম শিবিরের।
বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, আরএসএসও প্রধানমন্ত্রীর জন্য দুটি আসনের যে কোনও একটি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা বলেছে । প্রধানমন্ত্রী মোদিও সক্রিয়ভাবে তামিল ভাষা, তামিল সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলছেন । সম্প্রতি নতুন সংসদে তামিলনাড়ু থেকে সেঙ্গল এনেও স্থাপন করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মোদির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তামিলনাড়ুতে বড় ধরনের অগ্রগতির পরিকল্পনা করছে বিজেপি। কন্যাকুমারী এবং কোয়েম্বাটোর উভয় কেন্দ্রেই পার্টির প্রায় 80 শতাংশ বুথে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধি, সোনিয়া গান্ধি এবং রাহুল গান্ধি যথাক্রমে চিকমঙ্গালুর, বেল্লারি এবং ওয়ানাড নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কন্যাকুমারী বা কোয়েম্বাটুর আসনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রার্থী করার চিন্তাভাবনা নিয়ে বিজেপির চিন্তার কারণ হিসেবেও এটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে। দক্ষিণ ভারত নিয়ে যে বিজেপির বড় কোনও পরিকল্পনা রয়েছে তা সাম্প্রতিক কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন থেকেই স্পষ্ট হয়েছে । কর্ণাটকে হারের পর দল আরও বেশি করে তামিলনাড়ু এবং তেলেঙ্গানার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছে । বিজেপির দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদি তামিলনাড়ুতে প্রার্থী হলে তার প্রভাব পড়বে সমগ্র দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও ।
আরও পড়ুন: অগ্নি পরীক্ষায় বসছে মোদি সরকার ! মঙ্গলবার লোকসভায় দিল্লি বিল আনছে কেন্দ্র
চেন্নাই সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ডিরেক্টর সি রাজীব বলেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদি কন্যাকুমারী বা কোয়েম্বাটুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এমন একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে যা বিজেপির জন্য সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক ফলাফল এবং সংঘ পরিবারের ক্ষেত্রেও ভালো হতে পারে। বিগত কয়েক বছর ধরে তামিলনাড়ুতে বিজেপি সক্রিয় রয়েছে এবং কোয়েম্বাটুর এবং কন্যাকুমারী আসন থেকে দলীয় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এই পরিকল্পনা বিজেপিকে দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে।”