ETV Bharat / bharat

3000 খ্রিষ্টপূর্বেও ছিল যোগের অস্তিত্ব

2700 খ্রিষ্টপূর্বে সিন্ধু সভ্যতায় যোগের নিদর্শন মেলে । তারপর থেকে বেদ-উপনিষদ-গীতা সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে যোগের সুপ্রাচীন ইতিহাস ।

যোগ
যোগ
author img

By

Published : Jun 21, 2020, 1:04 AM IST

Updated : Jun 21, 2020, 5:15 AM IST

হায়দরাবাদ, 21 জুন : সংস্কৃত শব্দ যুগ (YUJ) থেকে এসেছে যোগ শব্দটি । যার অর্থ হল সংযুক্ত করা বা একত্রিত করা । অর্থাৎ যোগের মাধ্যমে দেহ, মন, মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সংযোগ সাধনের চেষ্টা করা হয় । এটি সুস্থভাবে বেঁচে থাকার একটি কলা । বিজ্ঞানও । তবে এর সূচনা কয়েক হাজার বছর আগে । সিন্ধু সভ্যতা থেকে বেদ-উপনিষদ সর্বত্র যোগের উল্লেখ রয়েছে ।

পুরাণ কথা

বহু ধর্মগ্রন্থে শিবকে আদি যোগী বা যোগ গুরু হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । কথিত আছে কয়েক হাজার বছর আগে হিমালয়ের কান্তি সরোবর উপত্যকায় সপ্তঋষির মধ্যে যোগের মাধ্যমেই জ্ঞান সঞ্চার করতেন শিব ।

image
সিন্ধু সভ্যতায় মেলে যোগের অস্তিত্ব

পূর্ব বৈদিক যুগ (৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বের আগে)

হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর যে সব নিদর্শন পাওয়া গেছে, তাতে বিভিন্ন যোগমুদ্রার ছবিও পাওয়া যায় । যদিও এর লিখিত কোনও প্রমাণ মেলেনি ।

বৈদিক যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ - খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০)

খ্রিষ্টপূর্ব 27 শতকে সিন্ধু সভ্যতায়ও যোগের অস্তিত্ব মেলে । সেই সময়ের কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও জীবাশ্মগুলিতে দেখা যায় নানা মুদ্রায় ধ্যানমগ্ন মানুষজন । তারপর বৈদিক যুগে ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও যোগাভ্যাস হত । 1500 খ্রিষ্টপূর্বে ঋগবেদে যোগ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে । 1200-1000 খ্রিষ্টপূর্বে অথর্ব বেদেও যোগ, শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে ।

image
বেদেও মেলে সূর্য প্রণাম-যোগের উল্লেখ

ঊপনিষদের যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ - খ্রিষ্টপূর্ব 500)

যোগ সম্পর্কে বেদে যে বিষয়গুলি উল্লেখ ছিল, উপনিষদে তার বিস্তারিত বর্ণণা দেওয়া হয়েছে । 108টি উপনিষদের মধ্যে 20 টি যোগা উপনিষদ রয়েছে । যেখানে যোগের ধরন, নিয়মাবলী, যোগের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার পদ্ধতি সহ একাধিক বিষয়ে বলা হয়েছে ।

image
108টি উপনিষদের মধ্যে 20 টি যোগা উপনিষদ রয়েছে

খ্রিষ্টপূর্ব 500- খ্রিষ্টপূর্ব 250

এই সময়কালে বুদ্ধ ও জৈন ধর্মেও যোগ সাধনের কথা বলা হয় । মহাবীর ও গৌতম বুদ্ধের ধর্মদর্শনে যে মুক্তির কথা বলা হয়েছে, সেখানেও যোগের উল্লেখ রয়েছে ।

পরের দিকে ভগবত গীতায় নানা ধরনের যোগের কথা বলা হয় । সেখানে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে কর্ম যোগ, ভক্তি যোগ ও জ্ঞান যোগ, রাজ যোগের কথা বলছেন । কৃষ্ণ বলছেন সমত্বম যোগ উচ্চতে । অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি নম্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবতাকে খোঁজেন, তাহলে তিনি উচ্চ মার্গের চেতনা লাভ করেন । মনের মধ্যে একাগ্রতাই যোগের লক্ষ্মণ ।

image
1500 খ্রিষ্টপূর্বে ঋগবেদে যোগ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে

পতঞ্জলির যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব 200)

মহাভারতেও যোগের উল্লেখ পাওয়া যায় । তবে মহর্ষি পতঞ্জলিকেই যোগচর্চার জনক বলা হয় । তিনিই প্রথম সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যোগচর্চা শুরু করেন । তাঁর তৈরি যোগসূত্রে যোগের অর্থের বিশ্লেষণ করেন তিনি । ১৯৫ টি সূত্রকে একত্রিত করে যোগকে একটি সংক্ষিপ্ত আকার দেন তিনি । পতঞ্জলির যোগ দর্শন রাজ যোগ নামেই পরিচিত । এর মোট আটটি শাখা আছে - ইয়ম্‌ (সামাজিক বিধি), নিয়ম (ব্যক্তিগত বিধি), আসন (শারীরিক ভঙ্গি), প্রাণায়াম (শ্বাস-প্রশ্বাসের বিধি), প্রত্যাহার (চেতনাকে সরিয়ে রাখা), ধারণ (মনসংযোগ), ধ্যান ও সমাধি ।

খ্রিষ্টপূর্ব 200-র পরবর্তী সময়

এই সময়কালে বহু সাধু-সন্ন্যাসী ও দার্শনিকের যোগের বিকাশে ভূমিক নেন । এদের মধ্যে আদি শংকরাচার্য অন্যতম । রাজ যোগ, কর্ম যোগের সঙ্গে জ্ঞান যোগের কথাও বলা হয় ।

আধুনিক যুগ (1700 খ্রিষ্টাব্দ - 1900 খ্রিষ্টাব্দ )

বিশেষ করে 1863 সালের পরের দিকে যোগ আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি লাভ করে । এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন স্বামী বিবেকানন্দ । শিকাগোর ধর্ম মহাসম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ সারা পৃথিবীর কাছে যোগকে পৌঁছে দেন । এছাড়াও মহর্ষি মহেশ, পরমহংস যোগানন্দ, রামন মহর্ষি সহ অনেকে পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে যোগের প্রচার ঘটান ।

বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতেও দেশের সঙ্গে বিদেশ সমান জনপ্রিয় যোগ । প্রথমের দিকে টি কে কৃষ্ণমাচার্য ও তাঁর তিন শিষ্য বি কে এস্‌ আয়ান্‌গার, পট্টভি জয়েস্‌ এবং টি ভি কে দেসিকাচার দেশে বিদেশে যোগের প্রচার করেন । বর্তমানে যোগের ক্রমবিকাশ ও প্রচারে স্বামী রামদেব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন ।

2015 সালের 21 জুন খেকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালিত হচ্ছে । এবার ষষ্ঠবর্ষ । 2014 সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 21 জুন দিনটিকে আন্তর্জাতিক যোগদিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব রেখেছিলেন । 21 জুন দিনটি বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ দিন । সেজন্য এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয় ।

হায়দরাবাদ, 21 জুন : সংস্কৃত শব্দ যুগ (YUJ) থেকে এসেছে যোগ শব্দটি । যার অর্থ হল সংযুক্ত করা বা একত্রিত করা । অর্থাৎ যোগের মাধ্যমে দেহ, মন, মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সংযোগ সাধনের চেষ্টা করা হয় । এটি সুস্থভাবে বেঁচে থাকার একটি কলা । বিজ্ঞানও । তবে এর সূচনা কয়েক হাজার বছর আগে । সিন্ধু সভ্যতা থেকে বেদ-উপনিষদ সর্বত্র যোগের উল্লেখ রয়েছে ।

পুরাণ কথা

বহু ধর্মগ্রন্থে শিবকে আদি যোগী বা যোগ গুরু হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । কথিত আছে কয়েক হাজার বছর আগে হিমালয়ের কান্তি সরোবর উপত্যকায় সপ্তঋষির মধ্যে যোগের মাধ্যমেই জ্ঞান সঞ্চার করতেন শিব ।

image
সিন্ধু সভ্যতায় মেলে যোগের অস্তিত্ব

পূর্ব বৈদিক যুগ (৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বের আগে)

হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর যে সব নিদর্শন পাওয়া গেছে, তাতে বিভিন্ন যোগমুদ্রার ছবিও পাওয়া যায় । যদিও এর লিখিত কোনও প্রমাণ মেলেনি ।

বৈদিক যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ - খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০)

খ্রিষ্টপূর্ব 27 শতকে সিন্ধু সভ্যতায়ও যোগের অস্তিত্ব মেলে । সেই সময়ের কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও জীবাশ্মগুলিতে দেখা যায় নানা মুদ্রায় ধ্যানমগ্ন মানুষজন । তারপর বৈদিক যুগে ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও যোগাভ্যাস হত । 1500 খ্রিষ্টপূর্বে ঋগবেদে যোগ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে । 1200-1000 খ্রিষ্টপূর্বে অথর্ব বেদেও যোগ, শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে ।

image
বেদেও মেলে সূর্য প্রণাম-যোগের উল্লেখ

ঊপনিষদের যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ - খ্রিষ্টপূর্ব 500)

যোগ সম্পর্কে বেদে যে বিষয়গুলি উল্লেখ ছিল, উপনিষদে তার বিস্তারিত বর্ণণা দেওয়া হয়েছে । 108টি উপনিষদের মধ্যে 20 টি যোগা উপনিষদ রয়েছে । যেখানে যোগের ধরন, নিয়মাবলী, যোগের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার পদ্ধতি সহ একাধিক বিষয়ে বলা হয়েছে ।

image
108টি উপনিষদের মধ্যে 20 টি যোগা উপনিষদ রয়েছে

খ্রিষ্টপূর্ব 500- খ্রিষ্টপূর্ব 250

এই সময়কালে বুদ্ধ ও জৈন ধর্মেও যোগ সাধনের কথা বলা হয় । মহাবীর ও গৌতম বুদ্ধের ধর্মদর্শনে যে মুক্তির কথা বলা হয়েছে, সেখানেও যোগের উল্লেখ রয়েছে ।

পরের দিকে ভগবত গীতায় নানা ধরনের যোগের কথা বলা হয় । সেখানে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে কর্ম যোগ, ভক্তি যোগ ও জ্ঞান যোগ, রাজ যোগের কথা বলছেন । কৃষ্ণ বলছেন সমত্বম যোগ উচ্চতে । অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি নম্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবতাকে খোঁজেন, তাহলে তিনি উচ্চ মার্গের চেতনা লাভ করেন । মনের মধ্যে একাগ্রতাই যোগের লক্ষ্মণ ।

image
1500 খ্রিষ্টপূর্বে ঋগবেদে যোগ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে

পতঞ্জলির যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব 200)

মহাভারতেও যোগের উল্লেখ পাওয়া যায় । তবে মহর্ষি পতঞ্জলিকেই যোগচর্চার জনক বলা হয় । তিনিই প্রথম সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যোগচর্চা শুরু করেন । তাঁর তৈরি যোগসূত্রে যোগের অর্থের বিশ্লেষণ করেন তিনি । ১৯৫ টি সূত্রকে একত্রিত করে যোগকে একটি সংক্ষিপ্ত আকার দেন তিনি । পতঞ্জলির যোগ দর্শন রাজ যোগ নামেই পরিচিত । এর মোট আটটি শাখা আছে - ইয়ম্‌ (সামাজিক বিধি), নিয়ম (ব্যক্তিগত বিধি), আসন (শারীরিক ভঙ্গি), প্রাণায়াম (শ্বাস-প্রশ্বাসের বিধি), প্রত্যাহার (চেতনাকে সরিয়ে রাখা), ধারণ (মনসংযোগ), ধ্যান ও সমাধি ।

খ্রিষ্টপূর্ব 200-র পরবর্তী সময়

এই সময়কালে বহু সাধু-সন্ন্যাসী ও দার্শনিকের যোগের বিকাশে ভূমিক নেন । এদের মধ্যে আদি শংকরাচার্য অন্যতম । রাজ যোগ, কর্ম যোগের সঙ্গে জ্ঞান যোগের কথাও বলা হয় ।

আধুনিক যুগ (1700 খ্রিষ্টাব্দ - 1900 খ্রিষ্টাব্দ )

বিশেষ করে 1863 সালের পরের দিকে যোগ আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি লাভ করে । এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন স্বামী বিবেকানন্দ । শিকাগোর ধর্ম মহাসম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ সারা পৃথিবীর কাছে যোগকে পৌঁছে দেন । এছাড়াও মহর্ষি মহেশ, পরমহংস যোগানন্দ, রামন মহর্ষি সহ অনেকে পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে যোগের প্রচার ঘটান ।

বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতেও দেশের সঙ্গে বিদেশ সমান জনপ্রিয় যোগ । প্রথমের দিকে টি কে কৃষ্ণমাচার্য ও তাঁর তিন শিষ্য বি কে এস্‌ আয়ান্‌গার, পট্টভি জয়েস্‌ এবং টি ভি কে দেসিকাচার দেশে বিদেশে যোগের প্রচার করেন । বর্তমানে যোগের ক্রমবিকাশ ও প্রচারে স্বামী রামদেব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন ।

2015 সালের 21 জুন খেকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালিত হচ্ছে । এবার ষষ্ঠবর্ষ । 2014 সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 21 জুন দিনটিকে আন্তর্জাতিক যোগদিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব রেখেছিলেন । 21 জুন দিনটি বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ দিন । সেজন্য এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয় ।

Last Updated : Jun 21, 2020, 5:15 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.