ETV Bharat / bharat

প্রকৃতিতেই রয়েছে সমস্ত সমস্যার সমাধান ! - প্রকৃতিতেই লুকিয়ে সমস্ত সমস্যার সমধান

আমাদের উচিত এই বিশাল পরিবার - বসুধৈব কুটুম্বকমকে আলিঙ্গন করা ৷ কারণ প্রকৃতিতেই রয়েছে সমস্ত সমস্যার সমাধান । প্রতিবেদনটি লিখেছেন, ইন্দ্রশেখর সিং । তিনি ন্যাশনাল সিড অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া পলিসি ও আউটরিচের ডিরেক্টর ।

World Biological Diversity Day
বিশ্ব জৈব বৈচিত্র্য দিবস
author img

By

Published : May 20, 2020, 3:33 PM IST

2020 সালের আন্তর্জাতিক জৈব বৈচিত্র দিবস উদযাপন করার সময় আমাদের মনে রাখা দরকার যে আমরাও প্রকৃতির অংশ । তার থেকে আলাদা নই । আমাদের পূর্বপুরুষরা বৃহত্তর সর্বজীনন পরিবার, বসুধৈব কুটুম্বকম-এর উদাহরণ দিয়ে এই সম্পর্ককে বুঝিয়েছেন ৷ যার অর্থ কেঁচো থেকে শুরু করে হাতি সকলের সঙ্গে সমপর্ক বজায় রাখা ও একে অপরকে সমর্থন করা । আমরা সমস্যার (যেমন, দুর্ভিক্ষ, বন্যা ইত্যাদি) মুখোমুখি হয়ে অনেক সময় অনেক কিছু শিখেছি । পৃথিবীর চেতনা থেকে শিখেছি । আর তার ফলে একে অপরের মধ্যে আন্তঃনির্ভরতা খুঁজে পেয়েছি ।

আমাদের পূর্বসূরীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন ৷ তাই আমরা বৈচিত্র্যময়, জলবায়ু সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর বীজের সমষ্টি দিয়ে তৈরি পৃথিবীতে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছি ৷ এর ফলে এখন ভারতীয়দের কাছে উদ্ভিদ ও খাবারের বৈচিত্র সবচেয়ে বড় ৷ ভারতে প্রায় 2 লাখেরও বেশি প্রকারের ধান পাওয়া যায় ।

আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে আমরা পবিত্র অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বার্লি থেকে রাগি বীজকে সম্মান জানাই ৷ নবরাত্রিতে আমরা পবিত্র বীজ দিয়ে নয় জন দেবীর আরাধনা করি । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের জৈব বৈচিত্র বিভিন্ন প্রথায় ঘেরা ৷ ভারতের অনেক সম্প্রদায় এখনও বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় নববধূ বাপের বাড়ির এলাকার বীজ ও হলুদের মতো পবিত্র জিনিস সঙ্গে করে নিয়ে যায় ৷ আখকে সংস্কৃতে "ইকসু" বলা হয় এবং পুরানের রাজা রাম ছিলেন, "ইকসুভাকু" ৷ কাকতালীয় ঘটনা নয় কি ?

পশুপাখিদেরও আমরা আলাদা করে দিইনি ৷ আমরা তাদের নিজেদের সঙ্গী বলেই মনে করি অথবা দেব-দেবী হিসেবে পুজো করি ৷ এমনকী, পশ্চিম বিশ্বে সবচেয়ে ঘৃণিত প্রাণী ইঁদুরকেও আমরা পবিত্র গণেশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছি ৷ উপমহাদেশের সভ্যতা নৃতাত্ত্বিক মায়োপিয়ার বাইরে বের হতে পেরেছিল ৷ আর প্রত্যেককেই পবিত্র হিসেবে মূল্যবান বলে বিবেচিত করতে পেরেছিল ৷ কারণ, বৃহত্তর জীবনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এগুলি ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির আধিকারিকদের জন্য ছিল "ফালতু প্রথা বা কুসংস্কার" ৷ নিন্দাজনকভাবে বাধা দেওয়ার পর তারা আমাদের পিজিয়ন পি, কাউ পি, হর্স গ্রামের মতো বীজগুলিকে অন্য নামে ফের তৈরি করা শুরু করে ৷ বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়ে বা সোনার লোভ দেখিয়ে তারা কিছু লেখককে তৈরি করেছিল ৷ যারা প্রাচীন ইতিহাস উলটে দেওয়ার কাজ শুরু করে ৷ প্রকৃতির দান নামের একটি ভাইরাস তারা আমাদের মধ্যে সংক্রামিত করে দেয় ৷ সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রকৃতির সমস্ত জীবিত সম্পদ লুঠ করা হল এবং তাকে নরকে পাঠিয়ে দেওয়া হল ৷

কিন্তু প্রকৃতিকে কি দখল করে নেওয়া গেছে ? না, এই দখলই বদলে গিয়েছে ৷ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি থাকা সত্ত্বেও আমরা সবচেয়ে বড় কৃষি দেশ হিসেবে পরিচিত ৷ পরিমাণের এবং বৈচিত্রের আধিক্য থাকা সত্ত্বেও ভারত তার সত্যিকারের সম্পদ হারিয়ে ফেলছে ৷ আমরা হারিয়ে ফেলছি জীব-বৈচিত্রের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ, আমাদের বীজ, ঔষধি-উদ্ভিদ এবং প্রাণী-বৈচিত্র ৷ তবে, জাতীয় পর্যায়ে পরিস্থিতি আরও বেশি ভয়ঙ্কর ৷ ভারতের উদ্ভিদ তৈরির সম্পদ (PGR), যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় তা ক্রমশ বিদেশে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে ৷ কখনও কখনও নজরদারির অভাবে এবং অন্য সময় অবৈধভাবে ৷ তবুও ITPGRFA এবং UPOV-এর মতো চুক্তিগুলি আসলে ভারতকে বোকা বানাচ্ছে ৷ আর কর্পোরেট শোষণের মাধ্যমে আমাদের PGR নিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৷ যে সম্প্রদায় এই বীজ এবং গাছগুলি তৈরি করে তাদের সামান্য টাকা এবং লাভ দিয়ে এগুলি নেওয়া হচ্ছে ৷ এই চুক্তিগুলির মাধ্যমে আমাদের বায়োডাইভারসিটি অ্যাক্ট এবং দ্য ন্যাশনাল বায়োডায়ভারসিটি অথোরিটিকেও ছোট করে দেখার প্রচেষ্টা রয়েছে ৷

চিন-সহ আন্তর্জাতিক বীজ সংস্থাগুলি ভারতে 100 শতাংশ ভর্তুকির উপর নিয়ন্ত্রণ করে ৷ তারা কৌশলগত PGR ব্যবহার করতে পারে ৷ নিজেদের দেশে ভারতের নিজস্ব বীজগুলিকে রপ্তানি করে নিয়েও যেতে পারে ৷ সেখানে ভারত, চিন, থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকে তাদের নিজস্ব বীজ রপ্তানি তো করতে পারেই না ৷ এমনকী, কোনও সংস্থার উপরও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও নেই ৷ আমাদের আরও জাতীয়তাবাদী FDI নীতি তৈরি করতে হবে ৷ PGR-এর সম্পদ রক্ষায় তা আরও জরুরি ৷ এই নীতির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন-সহ একাধিক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারব আমরা ৷ পরবর্তী নীতি হবে বৈচিত্রের সংরক্ষণ ৷ যার মাধ্যমে ফসল ফলনে চাষিদের অধিকার রক্ষিত হবে । নতুন ধরনের বীজ তৈরি করা যাবে৷ প্রকৃতিতেই রয়েছে সমস্ত সমস্যার সমাধান ৷ এই থিম অনুযায়ী, আমাদের বন্য প্রজাতি এবং ভূমি সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা যায় ৷ কিন্তু এটাকে স্থায়ীভাবে করতে হবে ৷ পেটেন্ট নেওয়া প্রযুক্তিগত বিকল্পের পরিবর্তনে স্থানীয় মানুষ ও কৃষকদের এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা খরচ সাপেক্ষ এবং লাভজনক ৷

সবুজ বিপ্লবের জনক এম এস স্বামীনাথন একাধিকবার বলেছেন যে, ভারতের জীববৈচিত্র আমাদের সমস্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম ৷ আমাদের জিন আধুনিকীকরণ বা CRISPR-এর মতো কোনও আবিষ্কারের প্রয়োজন নেই ৷ আমাদের সমাধান খোঁজার জন্য অবশ্যই প্রকৃতির মধ্যেই অনুসন্ধান করতে হবে ৷

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে জীববৈচিত্রকে প্রয়োগ করতে হবে ৷ শুধু অর্থনৈতিক পন্থা হিসেবে নয়, স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি হিসেবেও এর ব্যবহার করতে হবে ৷ একেবারে আমাদের খাবারের থালা থেকে যদি শুরু করা যায় ৷ তাহলে একবারের খাবার বা স্থানীয় চাল বা গম ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ এর ফলে জীববৈচিত্রের প্রতি আমাদের সাহস এবং স্বাস্থ্য দু’টোই বাড়বে ৷ আমাদের স্থানীয় এলাকায় উৎপন্ন সবজি খাওয়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হবে ৷ স্থানীয় হিমঘরে রাখা সবজি বা ঋতুকালীন সবজিকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে ৷ প্রক্রিয়াজাত খাবারও জীববৈচিত্র এবং স্থানীয় মানুষকে সাহায্য করবে । এটা মাথায় রেখেই কিনতে হবে ৷ পোশাকের জন্যও আমাদের বিটি কটনের আধিপত্য প্রয়োজন ৷ এখনই ভারতীয় সচেতন নাগরিকদের সস্তার বিকল্প কাপড় বেছে নেওয়ার এবং হ্যান্ডলুম ও টেকসই কাপড়কে সাহায্য করার সময় চলে এসেছে ৷

প্রকৃত সমাধান সচেতনতার মধ্যে নিহিত রয়েছে । আমাদের উচিত এই বিশাল পরিবার - বসুধৈব কুটুম্বকমকে আলিঙ্গন করা ৷ আমাদের জীবনে পবিত্রতা ও জীববৈচিত্র ফিরিয়ে আনাও উচিত ৷ লাভের জন্য প্রকৃতির বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তাদের দূরে সরিয়ে দিতে হবে এবং প্রকৃতির প্রাচুর্যতাকে সম্মান জানাতে হবে ৷ আমাদের ব্যবহার ও ভাষায় (যা প্রকৃতি মৃত এবং বস্তু বলে প্রতিপন্ন করে) বদল আনতে হবে ৷ আমাদের প্রকৃতিকে ‘ইহা’ বলা বন্ধ করতে হবে ৷ আর প্রকৃতি সত্যিই তো দেবী ৷ তাই তাঁকে দেবীর মতো নারী হিসেবে সম্বোধন করতে হবে ৷

2020 সালের আন্তর্জাতিক জৈব বৈচিত্র দিবস উদযাপন করার সময় আমাদের মনে রাখা দরকার যে আমরাও প্রকৃতির অংশ । তার থেকে আলাদা নই । আমাদের পূর্বপুরুষরা বৃহত্তর সর্বজীনন পরিবার, বসুধৈব কুটুম্বকম-এর উদাহরণ দিয়ে এই সম্পর্ককে বুঝিয়েছেন ৷ যার অর্থ কেঁচো থেকে শুরু করে হাতি সকলের সঙ্গে সমপর্ক বজায় রাখা ও একে অপরকে সমর্থন করা । আমরা সমস্যার (যেমন, দুর্ভিক্ষ, বন্যা ইত্যাদি) মুখোমুখি হয়ে অনেক সময় অনেক কিছু শিখেছি । পৃথিবীর চেতনা থেকে শিখেছি । আর তার ফলে একে অপরের মধ্যে আন্তঃনির্ভরতা খুঁজে পেয়েছি ।

আমাদের পূর্বসূরীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন ৷ তাই আমরা বৈচিত্র্যময়, জলবায়ু সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর বীজের সমষ্টি দিয়ে তৈরি পৃথিবীতে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছি ৷ এর ফলে এখন ভারতীয়দের কাছে উদ্ভিদ ও খাবারের বৈচিত্র সবচেয়ে বড় ৷ ভারতে প্রায় 2 লাখেরও বেশি প্রকারের ধান পাওয়া যায় ।

আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে আমরা পবিত্র অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বার্লি থেকে রাগি বীজকে সম্মান জানাই ৷ নবরাত্রিতে আমরা পবিত্র বীজ দিয়ে নয় জন দেবীর আরাধনা করি । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের জৈব বৈচিত্র বিভিন্ন প্রথায় ঘেরা ৷ ভারতের অনেক সম্প্রদায় এখনও বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় নববধূ বাপের বাড়ির এলাকার বীজ ও হলুদের মতো পবিত্র জিনিস সঙ্গে করে নিয়ে যায় ৷ আখকে সংস্কৃতে "ইকসু" বলা হয় এবং পুরানের রাজা রাম ছিলেন, "ইকসুভাকু" ৷ কাকতালীয় ঘটনা নয় কি ?

পশুপাখিদেরও আমরা আলাদা করে দিইনি ৷ আমরা তাদের নিজেদের সঙ্গী বলেই মনে করি অথবা দেব-দেবী হিসেবে পুজো করি ৷ এমনকী, পশ্চিম বিশ্বে সবচেয়ে ঘৃণিত প্রাণী ইঁদুরকেও আমরা পবিত্র গণেশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছি ৷ উপমহাদেশের সভ্যতা নৃতাত্ত্বিক মায়োপিয়ার বাইরে বের হতে পেরেছিল ৷ আর প্রত্যেককেই পবিত্র হিসেবে মূল্যবান বলে বিবেচিত করতে পেরেছিল ৷ কারণ, বৃহত্তর জীবনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এগুলি ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির আধিকারিকদের জন্য ছিল "ফালতু প্রথা বা কুসংস্কার" ৷ নিন্দাজনকভাবে বাধা দেওয়ার পর তারা আমাদের পিজিয়ন পি, কাউ পি, হর্স গ্রামের মতো বীজগুলিকে অন্য নামে ফের তৈরি করা শুরু করে ৷ বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়ে বা সোনার লোভ দেখিয়ে তারা কিছু লেখককে তৈরি করেছিল ৷ যারা প্রাচীন ইতিহাস উলটে দেওয়ার কাজ শুরু করে ৷ প্রকৃতির দান নামের একটি ভাইরাস তারা আমাদের মধ্যে সংক্রামিত করে দেয় ৷ সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রকৃতির সমস্ত জীবিত সম্পদ লুঠ করা হল এবং তাকে নরকে পাঠিয়ে দেওয়া হল ৷

কিন্তু প্রকৃতিকে কি দখল করে নেওয়া গেছে ? না, এই দখলই বদলে গিয়েছে ৷ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি থাকা সত্ত্বেও আমরা সবচেয়ে বড় কৃষি দেশ হিসেবে পরিচিত ৷ পরিমাণের এবং বৈচিত্রের আধিক্য থাকা সত্ত্বেও ভারত তার সত্যিকারের সম্পদ হারিয়ে ফেলছে ৷ আমরা হারিয়ে ফেলছি জীব-বৈচিত্রের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ, আমাদের বীজ, ঔষধি-উদ্ভিদ এবং প্রাণী-বৈচিত্র ৷ তবে, জাতীয় পর্যায়ে পরিস্থিতি আরও বেশি ভয়ঙ্কর ৷ ভারতের উদ্ভিদ তৈরির সম্পদ (PGR), যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় তা ক্রমশ বিদেশে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে ৷ কখনও কখনও নজরদারির অভাবে এবং অন্য সময় অবৈধভাবে ৷ তবুও ITPGRFA এবং UPOV-এর মতো চুক্তিগুলি আসলে ভারতকে বোকা বানাচ্ছে ৷ আর কর্পোরেট শোষণের মাধ্যমে আমাদের PGR নিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৷ যে সম্প্রদায় এই বীজ এবং গাছগুলি তৈরি করে তাদের সামান্য টাকা এবং লাভ দিয়ে এগুলি নেওয়া হচ্ছে ৷ এই চুক্তিগুলির মাধ্যমে আমাদের বায়োডাইভারসিটি অ্যাক্ট এবং দ্য ন্যাশনাল বায়োডায়ভারসিটি অথোরিটিকেও ছোট করে দেখার প্রচেষ্টা রয়েছে ৷

চিন-সহ আন্তর্জাতিক বীজ সংস্থাগুলি ভারতে 100 শতাংশ ভর্তুকির উপর নিয়ন্ত্রণ করে ৷ তারা কৌশলগত PGR ব্যবহার করতে পারে ৷ নিজেদের দেশে ভারতের নিজস্ব বীজগুলিকে রপ্তানি করে নিয়েও যেতে পারে ৷ সেখানে ভারত, চিন, থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকে তাদের নিজস্ব বীজ রপ্তানি তো করতে পারেই না ৷ এমনকী, কোনও সংস্থার উপরও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও নেই ৷ আমাদের আরও জাতীয়তাবাদী FDI নীতি তৈরি করতে হবে ৷ PGR-এর সম্পদ রক্ষায় তা আরও জরুরি ৷ এই নীতির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন-সহ একাধিক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারব আমরা ৷ পরবর্তী নীতি হবে বৈচিত্রের সংরক্ষণ ৷ যার মাধ্যমে ফসল ফলনে চাষিদের অধিকার রক্ষিত হবে । নতুন ধরনের বীজ তৈরি করা যাবে৷ প্রকৃতিতেই রয়েছে সমস্ত সমস্যার সমাধান ৷ এই থিম অনুযায়ী, আমাদের বন্য প্রজাতি এবং ভূমি সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা যায় ৷ কিন্তু এটাকে স্থায়ীভাবে করতে হবে ৷ পেটেন্ট নেওয়া প্রযুক্তিগত বিকল্পের পরিবর্তনে স্থানীয় মানুষ ও কৃষকদের এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা খরচ সাপেক্ষ এবং লাভজনক ৷

সবুজ বিপ্লবের জনক এম এস স্বামীনাথন একাধিকবার বলেছেন যে, ভারতের জীববৈচিত্র আমাদের সমস্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম ৷ আমাদের জিন আধুনিকীকরণ বা CRISPR-এর মতো কোনও আবিষ্কারের প্রয়োজন নেই ৷ আমাদের সমাধান খোঁজার জন্য অবশ্যই প্রকৃতির মধ্যেই অনুসন্ধান করতে হবে ৷

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে জীববৈচিত্রকে প্রয়োগ করতে হবে ৷ শুধু অর্থনৈতিক পন্থা হিসেবে নয়, স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি হিসেবেও এর ব্যবহার করতে হবে ৷ একেবারে আমাদের খাবারের থালা থেকে যদি শুরু করা যায় ৷ তাহলে একবারের খাবার বা স্থানীয় চাল বা গম ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ এর ফলে জীববৈচিত্রের প্রতি আমাদের সাহস এবং স্বাস্থ্য দু’টোই বাড়বে ৷ আমাদের স্থানীয় এলাকায় উৎপন্ন সবজি খাওয়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হবে ৷ স্থানীয় হিমঘরে রাখা সবজি বা ঋতুকালীন সবজিকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে ৷ প্রক্রিয়াজাত খাবারও জীববৈচিত্র এবং স্থানীয় মানুষকে সাহায্য করবে । এটা মাথায় রেখেই কিনতে হবে ৷ পোশাকের জন্যও আমাদের বিটি কটনের আধিপত্য প্রয়োজন ৷ এখনই ভারতীয় সচেতন নাগরিকদের সস্তার বিকল্প কাপড় বেছে নেওয়ার এবং হ্যান্ডলুম ও টেকসই কাপড়কে সাহায্য করার সময় চলে এসেছে ৷

প্রকৃত সমাধান সচেতনতার মধ্যে নিহিত রয়েছে । আমাদের উচিত এই বিশাল পরিবার - বসুধৈব কুটুম্বকমকে আলিঙ্গন করা ৷ আমাদের জীবনে পবিত্রতা ও জীববৈচিত্র ফিরিয়ে আনাও উচিত ৷ লাভের জন্য প্রকৃতির বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তাদের দূরে সরিয়ে দিতে হবে এবং প্রকৃতির প্রাচুর্যতাকে সম্মান জানাতে হবে ৷ আমাদের ব্যবহার ও ভাষায় (যা প্রকৃতি মৃত এবং বস্তু বলে প্রতিপন্ন করে) বদল আনতে হবে ৷ আমাদের প্রকৃতিকে ‘ইহা’ বলা বন্ধ করতে হবে ৷ আর প্রকৃতি সত্যিই তো দেবী ৷ তাই তাঁকে দেবীর মতো নারী হিসেবে সম্বোধন করতে হবে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.