স্মিতা শর্মা
দিল্লি, 15 এপ্রিল : ‘ইচ্ছুকদের নিয়ে বিশ্বজোট কি ভারত গড়তে পারবে?’
“যে কোনও বিষয়ের আপনি যতটুকু জানেন, তার থেকে যা জানেন না, তাকেই ব্ল্যাক সোয়ান লজিক আরও প্রাসঙ্গিক করে তোলে । যেহেতু তারা অপ্রত্যাশিত, তাই ভেবে দেখুন ঠিক কতগুলি ব্ল্যাক সোয়ান আরও ঘটতে পারে আর তাদের সংখ্যাও কতটা বাড়তে পারে ।”–নাসিম নিকোলাস তালেব (দ্য ব্ল্যাক সোয়ান)
2020 সালের 13 এপ্রিলের দুপুর পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে কোরোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় 17 লাখ । এক লাখেরও বেশি মানুষের ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে এবং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে । এখনও পর্যন্ত ইতালিতে মৃতের সংখ্যা সর্বাধিক 19 হাজার 470 ৷ আর আমেরিকাতেই কেবল 18 হাজার 500-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে । COVI-১৯ এর ভরকেন্দ্র চিনের ইউহানে এখনও পর্যন্ত তিন হাজার 349 জনের মৃত্যু হয়েছে (WHO-র তথ্যানুসারে) ।
কোরোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের প্রচেষ্টা যেন কার্যত সময়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সমতুল । গোটা বিশ্ব যেন একটি ‘ব্ল্যাক সোয়ান’ ঘটনার সঙ্গে লড়াই করছে এবং এই মহামারী বিশ্বায়নের সমস্ত মডেলগুলিকে পরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । পাশাপাশি বহুস্তরীয় বিন্যাসের সক্রিয়তা এবং নিরপেক্ষতা নিয়েও যেমন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তেমনই আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সেই সব প্রতিষ্ঠানগুলিকে, যাদের কর্তৃত্ব নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে ।
একে সীমান্তগুলি বন্ধ, তার উপর দেশের পর দেশ জুড়ে লকডাউন এবং বেশিরভাগ রাষ্ট্রপ্রধানরাই এই মুহূর্তে অন্য সব কিছু ভুলে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের জীবন বাঁচানোর উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছেন ৷ তাহলে এই পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক তথা বিশ্বব্যপী জোটের কী হবে? বিশ্বব্যপী দেশগুলির ক্রমবিন্যাস কী তাহলে পাল্টাবে? নিরাপত্তা পরিষদসহ বহুস্তরীয় প্রতিষ্ঠানগুলির পরিসর কী তাহলে বাড়বে এবং প্রাসঙ্গিকতা অর্জনের জন্য তাদের নতুনভাবে বিন্যাস হবে এবং তারা কি উন্নয়নশীল দেশ তথা ক্রমবিকাশশীল অর্থনীতির কণ্ঠকে প্রতিফলিত করতে পারবে?
অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ তথা চিন এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম বাম্বাওয়ালের কথায়, “বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের জন্য বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হবে ৷ কিন্তু তার পাশাপাশি মাঝারি আয়ের দেশ বা মাঝারি শক্তির দেশগুলির কাছে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ আসবে । জাপান, জার্মানি, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলি ইচ্ছুকদের নিয়ে একটি জোট গড়তে পারে ।” COVI-১৯ এর পরর্বতী সময়ে কীভাবে বিশ্বের দেশগুলির বিন্যাস হবে, তা নিয়ে ‘কার্নেগি ইন্ডিয়া’ নামের একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাম্বাওয়ালে আরও জানিয়েছেন যে, আগামী সময়ে আমেরিকা এবং চিনের সাহর্চযে পৃথিবীতে বিকল্প একটি নেতৃত্বের সূচনা হতে পারে ।
1930 সালের ‘গ্রেট ডিপ্রেসন’-এর পর 2008 সালে যে বন্ধকজনিত সংকট দেখা গিয়েছিল, তার ফলেই বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট দেখা গিয়েছিল ৷ আর তা চলেছিল দীর্ঘতম সময় ধরে । এর জেরে একাধিক নতুন এবং বহুস্তরীয় মঞ্চের উত্থান হয় । বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কূটনীতির প্রাথমিক মঞ্চ হিসাবে G-20 টপকে যায় G-8কে । চিনের মতো দেশ বিকল্প পরিকাঠামো, যেমন BRICKS ব্যাঙ্ক থেকে AIIB (এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক) প্রভৃতিতে প্রুচুর পরিমাণে টাকা ঢালে ৷ যার ফলে এই সব ব্যাঙ্ক গত দশক ধরে প্রচুর নগদ মজুত করতে সক্ষম হয় । বর্তমানে COVI-১৯ এই সত্যকেই ফের তুলে ধরেছে যে, এই পরিস্থিতিতেও বিশ্বের দেশগুলি একে অপরের সঙ্গে কতটা সংযুক্ত এবং একে অন্যের উপর কতটা নির্ভরশীল?
কিন্তু প্রশ্ন হল, ভারত কী পারবে এমন একটি জোটের নেতৃত্ব দিতে এবং এই মহাসংকটের সময়ে মেলা সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে? বর্তমানে ভারতের তরফে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এর উৎপাদন ক্ষেত্রগুলি ৷ যাদের মাত্রা, গুণাগুণ, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতা যথাযথ মাত্রার তুলনায় নিচে রয়েছে । যেভাবে বিশ্বের বাকি দেশ, বিশেষত পশ্চিমের দেশগুলি চিনের কোরোনা ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ৷ তাতে বহুজাতিক সংস্থাগুলির বোর্ড রুমে বেজিংকে অবশ্যই কাঠগড়ায় তোলা হবে ।
বিশ্বে প্রক্রিয়াজাত কাঁচামালের সরবরাহ অক্ষু্ণ্ণ রাখতে কোনও সংকটজনক পরিস্থিতিতেই এই কাঁচামাল প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না ওয়াল স্ট্রিট কিংবা সিলিকন ভ্যালি । কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে একমত যে, সংস্থাগুলি চিনে তাদের উৎপাদন এবং কারবার সচল রাখতে কারখানার প্রসারণ করতে পারে এবং নিজেদের দেশের পাশাপাশি ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, বাংলাদেশের মতো দেশেও কারবার সম্প্রসারণের কথা ভাবতে পারে । ঠিক এইসময়ই ভারত নিজেকে মূল চালিকাশক্তি হিসাবে তুলে ধরতে পারে এবং এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে । যদি চিনের বাইরে সংস্থাগুলির সম্প্রসারণ কিংবা স্থানান্তর বাধ্যতামূলক হয়, সেক্ষেত্রে বহুজাতিক সংস্থাগুলি বেছে নিতে চাইবে চিনের সমতুল আকৃতি ও পরিসরের কোনও দেশ যেমন ভারত । কাজেই নিজের ফেডারেল সিস্টেমের ক্ষমতাকে পূর্ণভাবে ব্যবহার করে, রাজ্য সরকারদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কীভাবে দেশে স্বাগত জানানো যায়- এই সব কিছুই আগামী কয়েক মাসে মোদি সরকারের কাছে লিটমাস পরীক্ষা হতে চলেছে ।
মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সন্নিবদ্ধ আঞ্চলিক তথা বিশ্বব্যাপী কৌশলের হদিশ পেতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সঠিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছেন SAARC থেকে G-20র মতো প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে সক্রিয় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে । কেউ কেউ বলতে পারেন, চাপের মুখে পড়ে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রাষ্ট্রপ্রধানের রোষের মুখে, নরেন্দ্র মোদি বিনয়ের রাস্তাই বেছে নিয়েছেন ৷ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতো কিছু কিছু ওষুধ রপ্তানির উপর জারি থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন । জনৈক সিনিয়র অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদের কথায়, “আমরা অন্ধভাবে জিনিসপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারি না, কারণ মতাদর্শ বলেও কিছু বিষয় থাকে । যদি অন্তঃদেশীয় বাজারে মৌলিক সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রেখে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাড়তি সুবিধা আদায় করতে এবং বিশ্বব্যপী সদর্থক ভাবমূর্তি গড়তে, কিছু জিনিসের রপ্তানি এদিকে ওদিকে করা হয়, তা আখেরে সঠিক পদক্ষেপ হিসাবেই বিবেচিত হয় । এই সরকার বাস্তববাদী পদক্ষেপই করেছে ।”
2004 সালের ডিসেম্বর মাসে যখন ভয়ঙ্কর সুনামিতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, তখন প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ত্রাণ সরবরাহে প্রথমেই যারা সক্রিয় হয়েছিল, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম । ভারতই HADR (হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিসট্যান্স অ্যান্ড ডিজাস্টার রিলিফ)-এ নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়েছিল । তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সেইসময় বিদেশি আর্থিক সাহায্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এই বলে যে, তা বরং সুনামিতে আরও বেশি বিপর্যস্ত এবং আকারে ছোট দেশগুলিকে দেওয়া হয় । এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা গিয়েছিল যে, সংকটের সময়ও ভারত আত্মনির্ভরভাবে তার মোকাবিলা করতে সক্ষম । একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে শুরু করে, ইয়েমেনের মতো সংঘর্ষপ্রবণ তথা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করে আনা- এই সব ঘটনাতেই পরিস্কার যে, বিগত কিছু বছরে ভারত বিশ্বব্যাপী সদর্থক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে ৷ পাশাপাশি বিশ্বে এই বার্তা ছড়িয়ে গিয়েছে যে, সংকটে ভারত সবসময় সব দেশের পাশে থাকে । প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের যে ‘আন্তর্জাতিক সৌর জোট’ সম্পন্ন হয়েছে, তা আদপে দেখিয়ে দিয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যা কোনও দেশের গণ্ডি মানে না, তা নিয়ে ভারত কতটা চিন্তিত ।
তা সত্ত্বেও COVI-১৯ পরবর্তী সময়ে যখন এশিয় তথা বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্বের নিরিখে চিনের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তখন ভারতকে বাস্তববাদী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে ৷ যদি তারা চায় বিকল্প ‘বিশ্বব্যপী ইচ্ছুক দেশগুলির জোট’কে তারা নেতৃত্ব দিক ।
কার্নেগি ইন্ডিয়া ভার্চুয়াল সেমিনারে বাম্বাওয়ালে জানিয়েছেন, “আগামী কিছু সপ্তাহ এমনকী দশকেও চিন আর্থিক এবং সেনাসম্পদের নিরিখে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি বজায় রাখবে, যদিও বা কিছু সময়ের জন্য গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে যায় । বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সম্মান নিয়ে চিনকে সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে । আমেরিকা-চিন বাণিজ্য এবং প্রযুক্তিগত যুদ্ধ পরবর্তীকালে আরও গুরুতর হয়ে উঠবে । আর ভারত এবং আরও বহু দেশকে এই যুদ্ধের উত্তেজনা বহন করতে হবে ।”
COVI-১৯ পরবর্তী সময়ে সম্প্রসারিত নিরাপত্তা পরিষদ যে ভারতকে স্থায়ী আসনে বসাবে এবং ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতাও দেবে, তা বিশ্বাস করা বালখিল্যতা । তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি বা দীর্ঘস্থায়ী কোনও মহামারীর মারাত্মক পরিণতির মতো বিশাল মাপের কোনও বিপর্যয় না দেখা দেওয়া ইস্তক চিনের মতো কোনও বড় খেলোয়াড় এত সহজে তাদের সমস্ত ক্ষমতা এবং সুবিধার জলাঞ্জলি দেবে না । আমেরিকানরা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে নানা ধরনের আবিষ্কার করছে, ভেন্টিলেটরের মতো চিকিৎসার সরঞ্জাম প্রস্তুত করছে ।
বিশিষ্ট কৌশলী চিন্তাবিদ ডা. সি রাজামোহন ওয়েব সেমিনারে বলেছেন, “আমেরিকা নিজেকে মোটেই গুটিয়ে নিচ্ছে না । বরং নিজের কাঁধে থাকা বিশ্বব্যাপী নানা কারণজনিত বোঝাগুলিকে সাজিয়ে নিচ্ছে । মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে এসে যদি তারা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মনোনিবেশ করে, তাহলে তাদের অনেক দিকেই সুবিধা হবে ।” রাজামোহনের যুক্তি, বিশ্বে আমেরিকার শক্তি ক্রমশ কমে আসছে বলে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না । কিন্তু আর্থিকভাবে চিনকে কোণঠাসা করতে বা চিনের আঞ্চলিক উগ্রবাদকে খর্ব করতে আমেরিকার জাপান এবং ভারতের মতো দেশকে দরকার হবে । ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ‘কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ’ আগামী দিনগুলিতে এই দেশগুলির একজোট হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । কিন্তু বিশ্বব্যপী মানচিত্রে ভারতের অগ্রগতির ভাগ্য তার অন্তঃদেশীয় বিকাশের কাহিনীর উপরই নির্ভর করবে ।
ভারতকে তাই AI অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ করতে হবে ৷ নতুন নতুন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির দিকে তাকাতে হবে, হয়ে উঠতে হবে বায়োমেডিক্যাল এবং বায়োটেকনোলজির মতো মুখ্য ক্ষেত্রগুলিতে উদ্ভাবন এবং বাণিজ্যের অংশীদার । সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে ভারতের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার উপরও নির্ভর করবে যে রাষ্ট্রসংঘে বিশ্বের ছোট ছোট দেশ, বন্ধু দেশ এবং জোটবদ্ধ দেশগুলির জন্য ভারত কতখানি নিজের পকেটের পরিসর দীর্ঘায়িত করে, এদের সকলের ব্যয়ভার বহন করতে পারে । যেমন সুনামি পরবর্তী সময়ে ভারত বিপর্যয়ের আগাম পূর্বাভাস প্রদান কেন্দ্র গড়ে তোলা ছাড়াও তথ্য বিনিময়, গণ স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক এবং চিকিৎসার সরঞ্জামসহ জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিল । কিন্তু বর্তমানে অর্থের যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে কি ভারত কোনও বাছবিচার না করে টাকা ঢালতে পারবে? প্রাক্তন ভারতীয় কূটনীতিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “শুধুমাত্র সদিচ্ছা দিয়ে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব প্রদান সম্ভব নয় ।”
নয়াদিল্লি এবং বেজিংয়ের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার এই ৭০তম বর্ষে এশিয়ার এই দুই অগ্রণী দেশ কোরোনা সংকট মেটাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়েছেন । কিন্তু COVI-১৯ এর পরিস্থিতির পরর্বতী পর্যায়ে যেভাবে আন্তর্জাতিক বিবাদ বৃদ্ধি পাবে, তার ফলে হাতি এবং ড্রাগনের মধ্যে যে ঘোরতর মারপ্যাঁচের রাজনৈতিক দাবাখেলা হবে, গোটা বিশ্ব তার সাক্ষী থাকবে । রবার্ট ডি কাপলান তাঁর সু্প্রসিদ্ধ বই ‘দ্য রিভেঞ্জ অফ জিওগ্রাফি’-তে লিখেছেন, “যখন আমেরিকা এবং চিন একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষমতাধর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে, তখন যে দিকে ভারত ঝুঁকবে, সেটাই একবিংশ শতকে ইউরেশিয়ায় ভূ-রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করবে । অন্যভাবে বলতে গেলে ভারতই হয়ে উঠবে চূড়ান্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র ।”