দিল্লি, 23 জানুয়ারি : আর মাত্র কয়েকদিন । 1 ফেব্রুয়ারি সকাল ছ'টায় ফাঁসি । নিয়মানুয়ায়ী শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাওয়া হল নির্ভয়ার অপরাধীদের কাছ থেকে । কিন্তু এই বিষয়ে কিছুই বলতে চায়নি তারা । তিহার সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে আজ মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা,অক্ষয় ঠাকুর ও পবন গুপ্তাকে তাদের শেষ ইচ্ছের কথা জিজ্ঞেস করা হলে, কোনও উত্তর দেয়নি তারা ।
দীর্ঘ সাত বছরে একাধিক পিটিশন, রিভিউ পিটিশন, কিউরেটিভ পিটিশন, প্রাণভিক্ষার আর্জি সব পেরিয়ে শেষমেশ মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছে মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা,অক্ষয় ঠাকুর ও পবন গুপ্তাকে । প্রস্তুতি চলছ তিহার সংশোধনাগারেও । বক্সার থেকে দড়ি আনানো হয়েছে । ফাঁসিকাঠ থেকে প্রায় 1 ঘণ্টা করে 100 কেজি বালির বস্তা ঝুলিয়ে যাচাই করে নেওয়া হচ্ছে ভারবহনের ক্ষমতা । নিয়মানুযায়ী, ফাঁসির আগে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের তরফে আসামিদের শেষ ইচ্ছের কথা জিজ্ঞেস করা হয় । তারা পরিবারের কোন সদস্যের সঙ্গে দেখা করতে চায়, কখন দেখা করতে চায় তাও জিজ্ঞেস করা হয় । জানতে চাওয়া হয় তারা কাউকে নিজেদের জিনিসগুলি দিয়ে যেতে চায় না কি ? ব্যতিক্রম নয় মুকেশ, বিনয়রাও । ফাঁসির আগে কেউ ভালো খাবার খেতে চায় । কেউ পছন্দের গান শুনতে চায় । কেউ বা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চায় । নিজের জিনিসপত্রগুলি পরিবারের কাছে ছেড়ে যায় । কিন্তু এবিষয়ে প্রশ্ন করলে কিছুই বলতে চায়নি নির্ভয়ার অপরাধীরা । অপরাধীদের এই নীরব থাকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে । তাহলে কি এখনও আশাবাদী নির্ভয়ার অপরাধীরা ।
গতকাল সুপ্রিম কোর্টে সরকারের তরফে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে নিয়মে যদি পরিবর্তন আনা যায় । যাতে দোষীরা একাধিক আইনি পদক্ষেপের অজুহাতে বারবার শাস্তি বিলম্বিত করতে না পারে । মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানোর পর পিটিশন ফাইলের ক্ষেত্রে যেন একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ।
ইতিমধ্যেই বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন নির্ভয়ার মা । কয়েকদিন আগে দিল্লি কোর্ট ফাঁসির নতুন দিন ঘোষণা করে । 22 জানুয়ারি থেকে ফাঁসির সাজা পিছিয়ে 1 ফেব্রুয়ারি হয়ে যায় । তারপরই সরকার ও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ি করেন নির্ভয়ার মা । বলেন, "তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ । দোষীরা যা চেয়েছিল তাই হচ্ছে । আমাদের পুরো ব্যবস্থাই এইরকম যেখানে দোষীদের কথা শোনা হয় ।"
2012 সালের 16 ডিসেম্বর । বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাসে ফিরছিল মেয়ে । বাড়ির ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়েছিলেন মা । কিন্তু মেয়ে আর ফেরেনি । পরে মেয়েকে যেভাবে দেখেছেন তা হয়তো কোনওদিন স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি তিনি । চলন্ত বাসে প্যারা-মেডিকেল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তাঁর যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে দেয় ছয় দুষ্কৃতী । ঘটনার নির্মমতা নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো দেশকে । এরপর রাজপথে মোমবাতি মিছিল হয়েছে । সোশাল মিডিয়ায় গর্জে উঠেছে যুবসমাজ । হ্যাশট্যাগের ছড়াছড়ি । 2013 সালে নির্ভয়া অ্যাক্টও তৈরি হয়েছে । কখনও মামলার শুনানি স্থগিত । কখনও রিভিউ পিটিশন দাখিল । কখনও নতুন বেঞ্চে শুনানি এভাবেই কেটে গেছে অনেকটা সময় । সাতবছরের লড়াই শেষে 18 ডিসেম্বর খানিকটা স্বস্তি পেলেও বাধ সাধে দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ় কোর্টে । পরে নির্ভয়াকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত চার জনের মধ্যে অক্ষয় কুমার সিংহের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট । কিন্তু দিল্লি পাতিয়ালা হাউজ় কোর্টে শুনানি 7 জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয় । এরপর চার অপরাধীর ফাঁসির দিন ঘোষণা হয় 22 জানুয়ারি । তারপরও সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি সবমিলিয়ে আবার পিছিয়ে যায় ফাঁসির দিন ।