ETV Bharat / bharat

রমরমা ব্যবসা জাল স্যানিটাইজ়ারের - COVID 19

কোরোনা প্যানডেমিকের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে ভেজাল কারবারীদের একাংশ ৷ এই পরিস্থিতিতে তাদের নতুন মাধ্যম জাল স্যানিটাইজ়ার ৷ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমরমিয়ে চলছে জাল স্যানিটাইজ়ার তৈরির ব্যবসা ৷ অসাধু এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ৷

business of fake sanitizers
জাল স্যানিটাইজ়ার
author img

By

Published : Aug 18, 2020, 7:40 AM IST

কলিযুগ ক্রমশই প্রতারণার যুগে পরিণত হচ্ছে ৷ আর এর জন্য দায়ী সেই সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্তরা, যারা নিরীহ মানুষের জীবনের বিনিময়ে নকল ও ভেজাল সামগ্রী তৈরির ব্যবসা চালাচ্ছে । জনস্বাস্থ্য নীতিতে কোনও সংস্থান না থাকার ফলে, এই অপরাধীরা কোরোনা প্যানডেমিককেও সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে ৷ এই সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্তরা পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ নিয়ে বাজারে ভেজাল বা জাল স্যানিটাইজার তৈরির নানা রকম ছক করেছে । চিন ও বাংলাদেশের সরকার এই ধরনের ষড়যন্ত্রীদের প্রাণদণ্ডের সাজা শোনাচ্ছে । ব্রিটেন, ব্রাজিল, ফ্রান্স, ও স্পেন নজরদারি বাড়াচ্ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা মানদণ্ডে কড়া নজর রাখছে । যদিও যথাযথ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের অভাবে এধরনের অপরাধীরা অভ্যন্তরীণ বাজারকে ব্যবহার করে তাদের ব্যবসা গড়ে তুলছে । আইন ও নিয়ন্ত্রণ তখনই কার্যকরী হতে পারে, যখন সেগুলো তৈরি হবে এবং বিনা দ্বিধায় প্রয়োগ করা হবে ।

সম্প্রতি এইসব অর্থলোভীরা, বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ ব্যবসার পথ বার করেছে । ভেজালের চক্রীদের নির্মূল করতে এবং জনস্বাস্থ্যের অবনবি রুখতে নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে । এরই মধ্যে CAG রিপোর্টে অজস্র প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাগত খামতি তুলে ধরা হয়েছে এমন একটা দেশে, যেখানে দুধ, ডাল থেকে তেল, মশলা – সবেতেই ভেজাল খুঁজে পাওয়া যায় ।

কোরোনা প্যানডেমিকের সময় বিভিন্ন গ্যাং তৈরি হয়েছে, যারা হাত পরিচ্ছন্ন রাখার ক্রমবর্দ্ধমান গুরুত্বের ফায়দা তুলছে । স্যানিটাইজ়ারের বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার পাঁচ মাস আগেই 200 মিলিলিটারের সর্বোচ্চ দাম 100 টাকায় বেঁধে দিয়েছে । ইথাইল অ্যালকোহল, আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ও প্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে সঠিক মানের স্যানিজাইজ়ার তৈরির গাইডলাইনও প্রকাশ করা হয়েছে । কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নয়ডা, জম্মু ও কাশ্মীর, মুম্বই, বরোদা, ব্যাঙ্গালোর ও হায়দরাবাদে নকল স্যানিটাইজ়ার তৈরির চক্র ধরা পড়েছে ৷

ছোটো তদন্তে বড় পর্দাফাঁস

প্রকাশম, কাডাপ্পা আর চিত্তুর জেলায় প্রায় 50 জন অ্যালকোহল আসক্ত মানুষ স্যানিটাইজ়ার খেয়ে মারা যান । এইসব মৃত্যুর পুলিশি তদন্তে মৃত্যুর কারণ ও তারপর অবৈধ কারবার নিয়ে বিরাট বড় সত্য সামনে আসে । রাসায়নিক মিথানল লিটার প্রতি 10-15 টাকায় বাজারে পাওয়া যায় । ভেজাল কারবারীরা তার সঙ্গে অন্য রাসায়নিক মিশিয়ে ভেজাল পণ্য তৈরি করা শুরু করে । হায়দরাবাদের শহরতলীতে এই নকল জিনিসের ব্যবসা কুটিরশিল্পের মতো বেড়ে উঠছে । ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ছদ্মবেশে কীভাবে এই অবৈধ ব্যবসায়ীরা মানুষের জীবনের সঙ্গে ছেলেখেলা করে ব্যক্তিগত মুনাফা লুটছে, তা দেখে অবাক লাগে ।

ন্যায়পরায়ণতার অভাব

কয়েকদিন আগেই অখণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশের হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, “দু্র্নীতি রুখতে কর্তৃপক্ষগুলির মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার গুরুতর অভাব রয়েছে ৷ অবৈধ ব্যবসায়ীরা মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয় ।” এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে অবৈধ ব্যবসার পুরো প্রক্রিয়ার আসল কালপ্রিট কারা । কোরোনা প্যানডেমিকের সময়ে এটা আরও বেশি প্রমাণ হচ্ছে । স্যানিটাইজ়ারে মিথানলের ব্যবহার চোখের ক্ষতি করতে পারে, স্নায়ুতন্ত্রকে গড়ে উঠতে দেয় না, যে কোনও ক্রনিক অসুখকে দীর্ঘায়িত করে যার ৷ ফলত এই ধরনের স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার মানুষের ক্ষতি করতে পারে ৷ কিন্তু ভেজাল কারবারীরা সে সমস্ত বিষয়কে গুরুত্ব দেয় না ৷ আর এই ভেজাল কারবারীদের যারা সহযোগিতা করছে তারা সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে ৷

অন্তহীন আত্মত্যাগ

চিন ও বাংলাদেশ এই ধরনের ষড়যন্ত্রকারীদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিচ্ছে ৷ আর ব্রিটেন, ব্রাজিল, ফ্রান্স ও স্পেন পথ দেখাচ্ছে যে কীভাবে খাদ্য নিরাপত্তার মানদণ্ড প্রয়োগ ও তদারকি করতে হয় । দেশে যথাযথ পদক্ষেপের অভাব ভেজালচক্রীদের কাছে আশির্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ তারা বিনা বাধায় তাদের ব্যবসা ছড়াতে পারছে । এটা সবাই জানেন যে দুধে ভেজাল শিশুদের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে ৷ তেল ও ওই জাতীয় পদার্থে ক্ষতিকর যৌগ মেশালে তার জেরে ক্যান্সার এবং অন্ত্রের আলসারও হতে পারে ৷ ধীরে ধীরে এই ভেজাল পণ্যের তালিকায় উঠে এসেছে নকল স্যানিটাইজ়ার, যা বহু মানুষের জীবন নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে !

দ্রুত অনুসন্ধান প্রয়োজন

নজরদারির জন্য সর্বভারতীয় স্তরে সংস্থা তৈরি করেই মনে হয় কেন্দ্রের দায় শেষ হয়ে গেছে । রাজ্যস্তরে নির্দিষ্ট পদ্ধতির অভাব রয়েছে, যা নিয়ে নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ বলবৎ করা যায় । নজরদারির চেকপয়েন্টগুলোকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা প্রয়োজন, যাতে ভেজাল কারবারীদের সংগঠনগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করা যায় । আইন তৈরি করে হাত ঝেড়ে ফেলার বিষয় নয় এটা । আইন তখনই কার্যকর হবে যখন কার্যক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হবে । যদি এই ভেজাল কারবারীদের বাধা দেওয়ার কোনও প্রক্রিয়া থাকত – তাহলে এই অপরাধীদের সমস্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া যেত ৷

কলিযুগ ক্রমশই প্রতারণার যুগে পরিণত হচ্ছে ৷ আর এর জন্য দায়ী সেই সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্তরা, যারা নিরীহ মানুষের জীবনের বিনিময়ে নকল ও ভেজাল সামগ্রী তৈরির ব্যবসা চালাচ্ছে । জনস্বাস্থ্য নীতিতে কোনও সংস্থান না থাকার ফলে, এই অপরাধীরা কোরোনা প্যানডেমিককেও সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে ৷ এই সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্তরা পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ নিয়ে বাজারে ভেজাল বা জাল স্যানিটাইজার তৈরির নানা রকম ছক করেছে । চিন ও বাংলাদেশের সরকার এই ধরনের ষড়যন্ত্রীদের প্রাণদণ্ডের সাজা শোনাচ্ছে । ব্রিটেন, ব্রাজিল, ফ্রান্স, ও স্পেন নজরদারি বাড়াচ্ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা মানদণ্ডে কড়া নজর রাখছে । যদিও যথাযথ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের অভাবে এধরনের অপরাধীরা অভ্যন্তরীণ বাজারকে ব্যবহার করে তাদের ব্যবসা গড়ে তুলছে । আইন ও নিয়ন্ত্রণ তখনই কার্যকরী হতে পারে, যখন সেগুলো তৈরি হবে এবং বিনা দ্বিধায় প্রয়োগ করা হবে ।

সম্প্রতি এইসব অর্থলোভীরা, বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ ব্যবসার পথ বার করেছে । ভেজালের চক্রীদের নির্মূল করতে এবং জনস্বাস্থ্যের অবনবি রুখতে নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে । এরই মধ্যে CAG রিপোর্টে অজস্র প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাগত খামতি তুলে ধরা হয়েছে এমন একটা দেশে, যেখানে দুধ, ডাল থেকে তেল, মশলা – সবেতেই ভেজাল খুঁজে পাওয়া যায় ।

কোরোনা প্যানডেমিকের সময় বিভিন্ন গ্যাং তৈরি হয়েছে, যারা হাত পরিচ্ছন্ন রাখার ক্রমবর্দ্ধমান গুরুত্বের ফায়দা তুলছে । স্যানিটাইজ়ারের বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার পাঁচ মাস আগেই 200 মিলিলিটারের সর্বোচ্চ দাম 100 টাকায় বেঁধে দিয়েছে । ইথাইল অ্যালকোহল, আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ও প্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে সঠিক মানের স্যানিজাইজ়ার তৈরির গাইডলাইনও প্রকাশ করা হয়েছে । কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নয়ডা, জম্মু ও কাশ্মীর, মুম্বই, বরোদা, ব্যাঙ্গালোর ও হায়দরাবাদে নকল স্যানিটাইজ়ার তৈরির চক্র ধরা পড়েছে ৷

ছোটো তদন্তে বড় পর্দাফাঁস

প্রকাশম, কাডাপ্পা আর চিত্তুর জেলায় প্রায় 50 জন অ্যালকোহল আসক্ত মানুষ স্যানিটাইজ়ার খেয়ে মারা যান । এইসব মৃত্যুর পুলিশি তদন্তে মৃত্যুর কারণ ও তারপর অবৈধ কারবার নিয়ে বিরাট বড় সত্য সামনে আসে । রাসায়নিক মিথানল লিটার প্রতি 10-15 টাকায় বাজারে পাওয়া যায় । ভেজাল কারবারীরা তার সঙ্গে অন্য রাসায়নিক মিশিয়ে ভেজাল পণ্য তৈরি করা শুরু করে । হায়দরাবাদের শহরতলীতে এই নকল জিনিসের ব্যবসা কুটিরশিল্পের মতো বেড়ে উঠছে । ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ছদ্মবেশে কীভাবে এই অবৈধ ব্যবসায়ীরা মানুষের জীবনের সঙ্গে ছেলেখেলা করে ব্যক্তিগত মুনাফা লুটছে, তা দেখে অবাক লাগে ।

ন্যায়পরায়ণতার অভাব

কয়েকদিন আগেই অখণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশের হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, “দু্র্নীতি রুখতে কর্তৃপক্ষগুলির মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার গুরুতর অভাব রয়েছে ৷ অবৈধ ব্যবসায়ীরা মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয় ।” এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে অবৈধ ব্যবসার পুরো প্রক্রিয়ার আসল কালপ্রিট কারা । কোরোনা প্যানডেমিকের সময়ে এটা আরও বেশি প্রমাণ হচ্ছে । স্যানিটাইজ়ারে মিথানলের ব্যবহার চোখের ক্ষতি করতে পারে, স্নায়ুতন্ত্রকে গড়ে উঠতে দেয় না, যে কোনও ক্রনিক অসুখকে দীর্ঘায়িত করে যার ৷ ফলত এই ধরনের স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার মানুষের ক্ষতি করতে পারে ৷ কিন্তু ভেজাল কারবারীরা সে সমস্ত বিষয়কে গুরুত্ব দেয় না ৷ আর এই ভেজাল কারবারীদের যারা সহযোগিতা করছে তারা সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে ৷

অন্তহীন আত্মত্যাগ

চিন ও বাংলাদেশ এই ধরনের ষড়যন্ত্রকারীদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিচ্ছে ৷ আর ব্রিটেন, ব্রাজিল, ফ্রান্স ও স্পেন পথ দেখাচ্ছে যে কীভাবে খাদ্য নিরাপত্তার মানদণ্ড প্রয়োগ ও তদারকি করতে হয় । দেশে যথাযথ পদক্ষেপের অভাব ভেজালচক্রীদের কাছে আশির্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ তারা বিনা বাধায় তাদের ব্যবসা ছড়াতে পারছে । এটা সবাই জানেন যে দুধে ভেজাল শিশুদের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে ৷ তেল ও ওই জাতীয় পদার্থে ক্ষতিকর যৌগ মেশালে তার জেরে ক্যান্সার এবং অন্ত্রের আলসারও হতে পারে ৷ ধীরে ধীরে এই ভেজাল পণ্যের তালিকায় উঠে এসেছে নকল স্যানিটাইজ়ার, যা বহু মানুষের জীবন নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে !

দ্রুত অনুসন্ধান প্রয়োজন

নজরদারির জন্য সর্বভারতীয় স্তরে সংস্থা তৈরি করেই মনে হয় কেন্দ্রের দায় শেষ হয়ে গেছে । রাজ্যস্তরে নির্দিষ্ট পদ্ধতির অভাব রয়েছে, যা নিয়ে নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ বলবৎ করা যায় । নজরদারির চেকপয়েন্টগুলোকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা প্রয়োজন, যাতে ভেজাল কারবারীদের সংগঠনগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করা যায় । আইন তৈরি করে হাত ঝেড়ে ফেলার বিষয় নয় এটা । আইন তখনই কার্যকর হবে যখন কার্যক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হবে । যদি এই ভেজাল কারবারীদের বাধা দেওয়ার কোনও প্রক্রিয়া থাকত – তাহলে এই অপরাধীদের সমস্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া যেত ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.