গণেশের একাধিক নামের মধ্যে অন্যতম নাম হল একদন্ত ৷ কিন্তু এর ইতিহাস কী ? কোথায় বা এই মূর্তি দেখতে পাওয়া যায় ? এই উত্তর পেতে পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় 900 শতাব্দী আগে ৷
ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়া জেলা ৷ এখান থেকে 30 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঢোলকাল পাহাড় ৷ যা বয়লাডিলা পর্বতের সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ ৷ এখানেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে গণেশের একদন্ত মূর্তি ৷
মূর্তিটির বৈশিষ্ট্য
এখানে গণপতি তাঁর উপরের ডানদিকের হাতে কুঠার ধরে রয়েছেন ৷ বাঁ দিকের হাতে ধরে রয়েছেন ভাঙা দাঁতের অংশ বিশেষ ৷ নিচের ডানদিকের হাতে রয়েছে রুদ্রাক্ষের মালা ও নিচের বাঁ-দিকের হাতে মোদক রয়েছে ৷ গণেশে এখানে ললিতাসন ভঙ্গিতে বসে আছেন ৷ গণেশমূর্তির এমন ভঙ্গি দেশের আর কোথাও দেখা যায় না ৷
কথিত আছে
এক সময় গণেশ তপস্যা করছিলেন ৷ সেই সময় পরশুরাম আসেন ৷ কিন্তু গণেশ যেহেতু তপস্যা করছিলেন সেই কারণে তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান না ৷ ফলত পরশুরামের সঙ্গে গণেশের বিবাদ হয় ৷ সেই বিবাদ থেকে যুদ্ধ ৷ তখনই গণেশের একটি দাঁত ফার্সা দিয়ে ভেঙে দেয় পরশুরাম ৷ তখন থেকেই গণেশকে একদন্ত বলা হয় ।
ইতিহাস বলছে
চিন্ডক নাগবংশী রাজারাগণেশের এই মূর্তিটির প্রতিষ্ঠা করেন ৷ তাঁরা গণেশ প্রতিমাটি তৈরির সময় সেখানে সাপের ছবি এঁকে দেয় ৷ পাশাপাশি যাতে ভারসাম্যতা বজায় থাকে তার জন্য একটি শিকল আকাঁও রয়েছে সেখানে ৷ যেহেতু পরশুরামের ফার্সার বা কুঠারের জন্য গণেশের দাঁত ভেঙে গেছিল সেই কারণেই এই পাহাড়ের নিচে অবস্থিত গ্রামটির নাম ফরাসাল ৷ তবে, নাগবংশী রাজারা মূর্তির প্রতিষ্ঠা করলেও ভোগা জনজাতির মহিলাই পুজো করেছিলেন ৷ এই মহিলার শাঁখের আওয়াজে পুরো এলাকায় আওয়াজ পাওয়া যেত ৷ এই পাহাড়ে চড়ে সর্বপ্রথম এখানকার আজও এই মহিলার বংশধররা এখানে পুজো করে থাকেন ৷
একাদশ শতাব্দীর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ভাস্কর্য
এই প্রতিমাটি ইন্দ্রবতী নদীর তলদেশে প্রাপ্ত পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৷ বলা হয় একাদশ শতাব্দীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হল এটি ৷
প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে ফরাসাল গ্রামে মেলা বসে ৷ সেই সময় গণেশ, পরশুরাম সহ স্থানীয় দেব-দেবীর পুজো করা হয়ে থাকে ৷ আরও একটি আকর্ষণীয় বিষয় হল এই প্রতিমাটিতে কোনও মন্দির তৈরি করা হয়নি বা ছাউনি দিয়ে আবৃত করা হয়নি ৷ এখনও প্রতিমাটির দর্শন করতে হলে পাহাড়ের উপর চড়তে হয় ৷ যার কারণে এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় কম হয় বললেই চলে ৷ আশেপাশের গ্রামের ব্যক্তিরাই এই পুজো করে থাকেন ৷ তাই এলাকাবাসীদের আবেদন যাতে রাজ্য সরকার তথা পর্যটন বিভাগে এই দুর্লভ প্রতিমাটির দিকে নজর দেয় ৷ ও এর সম্বন্ধে প্রচার করে ৷