কোনও পুরুষ ঢুকতে পারে না এই গ্রামে । এই গ্রাম শুধুই নারীদের । অনেকে এই গ্রামকে 'নো-ম্যানস ল্যান্ড'-ও বলে থাকেন । নো ম্যানস ল্যান্ড বলতে কিন্তু এখানে আন্তর্জাতিক সীমানা বা কাঁটাতারে ঘেরা জায়গা বোঝানো হচ্ছে না । এই গ্রামে কোনও পুরুষ নেই । তাই এমন নাম ।
উত্তর কেনিয়ার উমোজা । প্রায় বছর তিরিশ আগে এই গ্রামের গোড়াপত্তন হয়েছিল । যিনি গোড়াপত্তন করেছিলেন তিনি রেবেকা লোলোসোলি । পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ । এই নিয়ম তাঁরই করা । কিন্তু কেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে যেতে হবে অতীতে । বেদনাদায়ক এক অতীত । সময়টা 1990 সালের আশপাশে । কেনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে মহিলাদের উপর চলত ব্রিটিশ সেনার জওয়ানদের নিগ্রহ আর নির্যাতন । এরকম নির্যাতনের শিকার হওয়া মহিলাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ত্যাগ করে দিত পরিবারের সদস্যরা । এমন 19 জন মহিলাকে নিয়ে প্রথমে এই গ্রাম তৈরি করেন রেবেকা ।
উমোজায় ঢোকার আগে একটি ফলক চোখে পড়বে আপনার । সেখানে বড় বড় করে লেখা রয়েছে 'উমোজা উসাউ উইমেন্স ভিলেজ' । গ্রামের চারিদিকে রয়েছে কাঁটা-ঝোপের ঘেরাটোপ । হিংস্র বন্য পৌরুষের শিকার হওয়া মহিলাদের আশ্রয়স্থান এই গ্রাম । শুধু ধর্ষিতারাই নন, বাল্যবিবাহ ও অন্যান্য সামাজিক অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতেও মহিলারা আশ্রয় নেন এখানে ।
আরও পড়ুন : বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরির আড়াইশো বছর !
গ্রামটি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববাসীর অগোচরে ছিল । জর্জিনা গুডউইন নামে এক মহিলা আলোকচিত্রীর হাত ধরে গ্রামটি প্রথম বিশ্ববাসীর নজরে আসে ।
কেনিয়ার নাইরোবি থেকে গাড়িতে ঘণ্টা ছয়েকের রাস্তা । স্থানীয় সোয়াহিলি ভাষায় উমোজা কথাটির অর্থ ঐক্য । আজ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে উমোজার নাম । হয়ে উঠেছে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু । তবে তা প্রাকৃতিক শোভার জন্য নয় । মহিলারা চাইলে কী কী করতে পারেন, সেই অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে চাক্ষুষ করতেই পর্যটকেরা ভিড় জমান এই গ্রামে ।
গ্রামে প্রত্যেক মহিলাই স্বনির্ভর । বিভিন্ন ধরনের কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত এই গ্রামের মহিলারা । গয়না তৈরি করেন । সেই গয়না বিক্রি করার জন্য রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইটও । গ্রামের পরিচালনা করার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম । প্রতিবছর পালা করে গ্রামের দু'জন সদস্যকে বেছে নেওয়া হয় । তাঁরাই পরিচালনা করেন উমোজা ।
আরও পড়ুন : মেসোপটেমিয়ার বুকেই প্রথম ফুটেছিল বিয়ের ফুল
বর্তমানে এই গ্রামে প্রায় 250 মহিলা ও শিশুর বাস । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যে গ্রামে পুরুষই নেই, সেই গ্রামে মহিলারা কীভাবে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন? এর নেপথ্যের অদ্ভুত এক নিয়ম । যেহেতু এই গ্রামে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ, তাই মহিলারা রাতের অন্ধকারে গ্রামের বাইরে গিয়ে নিজের পছন্দের পুরুষের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হন । কিন্তু ওইটুকুই । এরপর সন্তানের জন্ম থেকে লালন-পালন সবই নিজেকেই করতে হয় ।