ETV Bharat / bharat

টেলিকম শিল্পের পুনরুজ্জীবনে আরও নজরদারির প্রয়োজন - ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড

দুই সংস্থার সংযুক্তি এবং কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প (VRS)-র ফলে সংস্থার দৈনন্দিন খরচ হয়ত কিছুটা কমবে, কিন্তু এই পদক্ষেপ সংস্থা দু’টির পুনরুজ্জীবনের পক্ষে যথেষ্ট নয় । কঠিন পথ অপেক্ষা করছে দুই রুগ্ন টেলিকম সংস্থা, BSNL ও MTNL-র । রুগ্ন এই দুই সংস্থাকে চাঙ্গা করতে সরকারের বহু আগেই পদক্ষেপ করা উচিত ছিল ।

TELECOM FIRMS REVIVAL PLAN
টেলিকম শিল্প
author img

By

Published : Nov 28, 2019, 6:42 PM IST

কঠিন পথ অপেক্ষা করছে দুই রুগ্ন টেলিকম সংস্থা, BSNL ও MTNL-র । নরেন্দ্র মোদির সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত এই দুই সংস্থা, ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL) ও মহানগর টেলিফোন নিগম লিমিটেড (MTNL)-কে মিশিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করলেও দুই সংস্থার পুনরুজ্জীবনের জন্য সম্ভবত এই ঘোষণা অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে । বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংযুক্তির ফলে বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলি একটু চাপে পড়বে ঠিকই, কিন্তু এই দুই সংস্থার বিশাল কিছু সুবিধা হবে না । তাঁদের মতে, রুগ্ন এই দুই সংস্থাকে চাঙ্গা করতে সরকারের বহু আগেই পদক্ষেপ করা উচিত ছিল । কার্যক্ষেত্রে এই দুই সংস্থার রক্তক্ষরণ অব্যাহত । দুই সংস্থার সংযুক্তি এবং কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প (VRS)-র ফলে সংস্থার দৈনন্দিন খরচ হয়ত কিছুটা কমবে, কিন্তু এই পদক্ষেপ সংস্থা দু’টির পুনরুজ্জীবনের পক্ষে যথেষ্ট নয় ।

দেশের নবরত্ন সংস্থাগুলির অন্যতম BSNL রুগ্ন হতে হতে এমন অবস্থা পৌঁছোয়, যখন তাদের বছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০ হাজার কোটি টাকায় । এর জন্য দায়ী রিলায়্যান্স জিয়ো বা ভারতী এয়ারটেলের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে BSNL-র লড়াইয়ে না পেরে ওঠা। এর অন্যতম কারণ, BSNL-র কর্মীসংখ্যা । এক লাখ ৭৬ হাজার কর্মীর বিপুল ব্যয়ভার সামলাতেই হিমশিম অবস্থা এককালের সেরা এই টেলিকম সংস্থাটির । টেলিকম বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্থাটির এই অবস্থার জন্য এই সব কর্মীদের মানসিকতা অনেকাংশে দায়ী । তাঁরা এখনও BSNL-র একাধিপত্যের যুগেই যেন পড়ে রয়েছেন । আজকের প্রতিযোগী পরিবেশের সঙ্গে কর্মীদের মানিয়ে নিতে না পারার ফলে সংস্থার উন্নতির গ্রাফ ক্রমেই নিচের দিকে নেমেছে । বাজারের মারাত্মক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ট্যারিফ কমানো, বিপুল সংখ্যক কর্মীর খরচ, সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্র বাদ দিয়ে ৪জি পরিষেবার সুবিধা না থাকা, এগুলিই এই সংস্থার পতনের প্রধান কারণ । এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রিলায়্যান্স জিয়োর বাজারে প্রবেশ । 2016 সালে জিয়ো লঞ্চ করার পর থেকে এই সংস্থার আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজির কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে BSNL । দেশের প্রায় সর্বত্র ৪জি পরিষেবা এবং অত্যন্ত কম টাকায় পরিষেবা দিয়ে টেলিকম শিল্পকে নাড়িয়ে দিয়েছিল রিলায়্যান্স জিয়ো । বাজারে জিয়ো আসার পর থেকেই দেশে ডেটার ব্যবহার অত্যাধিক হারে বেড়ে যায় । তবে ডেটার ব্যবহার বাড়লেও এর ফলে বাজারের বাকি টেলিকম সংস্থাগুলির লাভের অঙ্কে মন্দা আসে । তবে একথা না মেনে উপায় নেই যে, রিলায়্যান্স জিয়ো আসার পর টেলিকম শিল্পে বিপ্লব এসেছে । জিয়ো ছাড়া বাজারে এখন আর মাত্র দু’টি বেসরকারি টেলিকম সংস্থা রয়েছে- এয়ারটেল এবং ভোডাফোন আইডিয়া ।

বিপুল প্রতিযোগিতার এই বাজারে টিকে থাকতে দুই সংস্থার সংযুক্তির পাশাপাশি আরও এক গুচ্ছ পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র । এর মধ্যে রয়েছে বন্ডের মাধ্যমে ১৫ হাজার কোটি টাকা তোলা, সংস্থার ৩৮ হাজার কোটির সম্পদ বিক্রি, এবং কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর । স্বেচ্ছাবসরের এই প্রকল্পটি আগামী চার বছর ধরে চলবে বলে জানা গিয়েছে ।

বৃহত্তর আঙ্গিকে দেখতে গেলে, এই দুই সংস্থার সংযুক্তি খুবই যুক্তিগ্রাহ্য, যেহেতু এরা আলাদা ক্ষেত্রে কাজ করে । বাকি সমস্ত টেলিকম সংস্থার দেশ জুড়ে পরিষেবা থাকায় এই দুই সংস্থার সংযুক্তি আরও সঠিক বলেই মনে হয় । এর ফলে বাজারে কিছুটা হলেও প্রতিযোগিতা বাড়বে । লোকসানের বহর বাড়ায় দেশের কোণায় কোণায় আরও শক্তিশালী ডেটা নেটওয়ার্ক তৈরির ক্ষেত্রে টেলিকম সংস্থাগুলো এখন ধীরে চলো নীতি নিচ্ছে । সংস্থা সংযুক্তির ফলে তৈরি হওয়া শক্তিশালী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এই সব বেসরকারি সংস্থাগুলির ট্যারিফ বৃদ্ধির আগে দু’বার ভাবাবে । দেশের গ্রামীণ এলাকায় পরিষেবা পৌঁছে দিতেও সাহায্য করবে এই সংযুক্তি ।

দেশের স্বার্থেই BSNL-র টিকে থাকাটা বিশেষ জরুরি । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৌশলগত সংযোগ রক্ষার জন্য এবং দেশের একেবারে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পরিষেবা পৌঁছে দিতেও প্রয়োজন BSNL-র । জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যোগাযোগ স্থাপন এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এই বিষয়টা কখনও বেসরকারি হাতে দেওয়া যায় না । দেশের টেলিকম মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও স্বীকার করেছেন যে, যখনই কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছে, BSNL সবার আগে পরিষেবা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে । এমনকি, কঠিন পরিস্থিতিতে BSNL একমাত্র অবলম্বন হিসাবেও কাজ করেছে ।

জাতীয় ডিজিটাল যোগাযোগ প্রকল্প

আজকের যুগে, যেখানে ডিজিটাল অর্থনীতি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, সেখানে নিরাপদ আর্থিক লেনদেনের জন্য একটি শক্তিশালী সরকারি টেলিকম সংস্থার টিকে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি । 2018 সালের জাতীয় ডিজিটাল যোগাযোগ প্রকল্প (NDCP) ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে । যেমন উন্নত ব্রডব্যান্ড পরিষেবা, ভালো রেডিয়ো স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট, জাতীয় টেলিকম শিল্পের পরিকাঠামোগত নিরাপত্তা, নেট নিউট্রালিটি প্রভৃতি । তিনটি প্রকল্পের কথাও বলেছে NDCP । সেগুলি হল, ‘কানেক্ট ইন্ডিয়া’ ‘প্রপেল ইন্ডিয়া’ এবং ‘সিকিয়োর ইন্ডিয়া’ । আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে ব্রডব্যান্ডের ভূমিকার বিষয়টি দেখে ‘কানেক্ট ইন্ডিয়া’ । ‘প্রপেল ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য দেশের ডিজিটাল ব্যবস্থাকে উন্নত করতে নতুন প্রযুক্তি, যেমন ৫জি, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং বিগ ডেটা । ‘সিকিয়োর ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য, দেশে ডিজিটাল পরিষেবার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা ।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মাধ্যমে এই সব লক্ষ্য পূরণের জন্য 2022 সালের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে কেন্দ্র । যদিও এই সব ক্ষেত্রেই চিন আমাদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে । ডিজিটাল অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পাশাপাশি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে চিনের টেলিকম শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম ।অন্য বহু দেশ টেলিকম শিল্পকে বেসরকারি হাতে ছেড়ে দিলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চিন । গত বছর ৪জি LTE গ্রাহকের সংখ্যা 100 কোটি ছাড়িয়েছে চিনে । এর 65 শতাংশ হয়েছে চায়না মোবাইল, 18 শতাংশ চায়না টেলিকম এবং 17 শতাংশ চায়না ইউনিকমের মাধ্যমে । এই সংস্থাগুলির সবকটিই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা । এই মুহূর্তে বিশ্বের 40 শতাংশ ৪জি গ্রাহক রয়েছেন চিনে ।

ভারতের ক্ষেত্রে, এই দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দেশের ওয়্যারলেস গ্রাহকের 10 শতাংশ এবং ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের মাত্র 3 শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে । TRAI-র রিপোর্ট অনুযায়ী, চ‌লতি বছরের মে মাস পর্যন্ত BSNL-র মোট গ্রাহক দেশের মোট গ্রাহকের 9.98 শতাংশ, যার সঙ্গে MTNL যুক্ত হলে হয় 10.28 শতাংশ । সেই তুলনায় ভোডাফোনের গ্রাহক 33.36 শতাংশ এবং এয়ারটেলের 27.58 শতাংশ ।

৪জি স্পেকট্রাম বাজারে আরও প্রতিযোগিতা আনবে- পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া হিসাবে সরকারের এই প্রত্যাশাকে অতিরিক্ত হিসাবেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । যে বিষয়টা সবার আগে দেখা প্রয়োজন, তা হল BSNL কি প্রতিযোগিতায় নামার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত ? শুধুমাত্র ৪জি স্পেকট্রাম দিয়ে গ্রাহককে আকর্ষণ করা সম্ভব নয় । গ্রাহক আকর্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হল যে, কোনও প্রয়োজনে দ্রুত যোগাযোগ এবং সমস্যার দ্রুত সমাধান । গ্রাহক আকর্ষণের ব্যবসায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি সব সময়ই পিছিয়ে থেকেছে । এর প্রধান কারণ হল, গ্রাহক চায় সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং দ্রুতগতির অফিশিয়াল প্রক্রিয়া । BSNL এবং MTNL-র অত্যন্ত খারাপ গ্রাহক পরিষেবা আজকের এই পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী ।

টেলিকম শিল্পের কঠিন বাজারে টিকে থাকতে তাই সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে । সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নিতে দেওয়ার স্বাধীনতাও দেওয়া যেতে পারে । এখনও পর্যন্ত অবশ্য এই সংস্থাগুলিকে সরকার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবেই দেখে এসেছে । দিনের পর দিন তারা পুরোনো প্রযুক্তির পিছনে খরচ করে গিয়েছে এবং উচ্চ দামে খারাপ স্পেকট্রাম কিনে এসেছে । এই ধরনের পদক্ষেপ ধীরে ধীরে সংস্থাগুলিকে আজকের অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । টেলিকম সংস্থাগুলির প্রশাসনে রদবদলও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কর্ম সংস্কৃতির বদল, কাজে স্বচ্ছতা আনা খুবই জরুরি । দেশে চলা আর্থিক মন্দা এই সংস্কারের রাস্তা আরও কঠিন করে তুলেছে । সংস্থা দু’টির পুনরুজ্জীবনে সরকারি পদক্ষেপে কিছুটা লাভ হবে দুই সংস্থার কর্মীদের । কিন্তু এবার যদি এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তা হলে এই দুই টেলিকম সংস্থার মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী ।

কঠিন পথ অপেক্ষা করছে দুই রুগ্ন টেলিকম সংস্থা, BSNL ও MTNL-র । নরেন্দ্র মোদির সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত এই দুই সংস্থা, ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL) ও মহানগর টেলিফোন নিগম লিমিটেড (MTNL)-কে মিশিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করলেও দুই সংস্থার পুনরুজ্জীবনের জন্য সম্ভবত এই ঘোষণা অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে । বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংযুক্তির ফলে বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলি একটু চাপে পড়বে ঠিকই, কিন্তু এই দুই সংস্থার বিশাল কিছু সুবিধা হবে না । তাঁদের মতে, রুগ্ন এই দুই সংস্থাকে চাঙ্গা করতে সরকারের বহু আগেই পদক্ষেপ করা উচিত ছিল । কার্যক্ষেত্রে এই দুই সংস্থার রক্তক্ষরণ অব্যাহত । দুই সংস্থার সংযুক্তি এবং কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প (VRS)-র ফলে সংস্থার দৈনন্দিন খরচ হয়ত কিছুটা কমবে, কিন্তু এই পদক্ষেপ সংস্থা দু’টির পুনরুজ্জীবনের পক্ষে যথেষ্ট নয় ।

দেশের নবরত্ন সংস্থাগুলির অন্যতম BSNL রুগ্ন হতে হতে এমন অবস্থা পৌঁছোয়, যখন তাদের বছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০ হাজার কোটি টাকায় । এর জন্য দায়ী রিলায়্যান্স জিয়ো বা ভারতী এয়ারটেলের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে BSNL-র লড়াইয়ে না পেরে ওঠা। এর অন্যতম কারণ, BSNL-র কর্মীসংখ্যা । এক লাখ ৭৬ হাজার কর্মীর বিপুল ব্যয়ভার সামলাতেই হিমশিম অবস্থা এককালের সেরা এই টেলিকম সংস্থাটির । টেলিকম বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্থাটির এই অবস্থার জন্য এই সব কর্মীদের মানসিকতা অনেকাংশে দায়ী । তাঁরা এখনও BSNL-র একাধিপত্যের যুগেই যেন পড়ে রয়েছেন । আজকের প্রতিযোগী পরিবেশের সঙ্গে কর্মীদের মানিয়ে নিতে না পারার ফলে সংস্থার উন্নতির গ্রাফ ক্রমেই নিচের দিকে নেমেছে । বাজারের মারাত্মক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ট্যারিফ কমানো, বিপুল সংখ্যক কর্মীর খরচ, সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্র বাদ দিয়ে ৪জি পরিষেবার সুবিধা না থাকা, এগুলিই এই সংস্থার পতনের প্রধান কারণ । এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রিলায়্যান্স জিয়োর বাজারে প্রবেশ । 2016 সালে জিয়ো লঞ্চ করার পর থেকে এই সংস্থার আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজির কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে BSNL । দেশের প্রায় সর্বত্র ৪জি পরিষেবা এবং অত্যন্ত কম টাকায় পরিষেবা দিয়ে টেলিকম শিল্পকে নাড়িয়ে দিয়েছিল রিলায়্যান্স জিয়ো । বাজারে জিয়ো আসার পর থেকেই দেশে ডেটার ব্যবহার অত্যাধিক হারে বেড়ে যায় । তবে ডেটার ব্যবহার বাড়লেও এর ফলে বাজারের বাকি টেলিকম সংস্থাগুলির লাভের অঙ্কে মন্দা আসে । তবে একথা না মেনে উপায় নেই যে, রিলায়্যান্স জিয়ো আসার পর টেলিকম শিল্পে বিপ্লব এসেছে । জিয়ো ছাড়া বাজারে এখন আর মাত্র দু’টি বেসরকারি টেলিকম সংস্থা রয়েছে- এয়ারটেল এবং ভোডাফোন আইডিয়া ।

বিপুল প্রতিযোগিতার এই বাজারে টিকে থাকতে দুই সংস্থার সংযুক্তির পাশাপাশি আরও এক গুচ্ছ পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র । এর মধ্যে রয়েছে বন্ডের মাধ্যমে ১৫ হাজার কোটি টাকা তোলা, সংস্থার ৩৮ হাজার কোটির সম্পদ বিক্রি, এবং কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর । স্বেচ্ছাবসরের এই প্রকল্পটি আগামী চার বছর ধরে চলবে বলে জানা গিয়েছে ।

বৃহত্তর আঙ্গিকে দেখতে গেলে, এই দুই সংস্থার সংযুক্তি খুবই যুক্তিগ্রাহ্য, যেহেতু এরা আলাদা ক্ষেত্রে কাজ করে । বাকি সমস্ত টেলিকম সংস্থার দেশ জুড়ে পরিষেবা থাকায় এই দুই সংস্থার সংযুক্তি আরও সঠিক বলেই মনে হয় । এর ফলে বাজারে কিছুটা হলেও প্রতিযোগিতা বাড়বে । লোকসানের বহর বাড়ায় দেশের কোণায় কোণায় আরও শক্তিশালী ডেটা নেটওয়ার্ক তৈরির ক্ষেত্রে টেলিকম সংস্থাগুলো এখন ধীরে চলো নীতি নিচ্ছে । সংস্থা সংযুক্তির ফলে তৈরি হওয়া শক্তিশালী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এই সব বেসরকারি সংস্থাগুলির ট্যারিফ বৃদ্ধির আগে দু’বার ভাবাবে । দেশের গ্রামীণ এলাকায় পরিষেবা পৌঁছে দিতেও সাহায্য করবে এই সংযুক্তি ।

দেশের স্বার্থেই BSNL-র টিকে থাকাটা বিশেষ জরুরি । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৌশলগত সংযোগ রক্ষার জন্য এবং দেশের একেবারে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পরিষেবা পৌঁছে দিতেও প্রয়োজন BSNL-র । জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যোগাযোগ স্থাপন এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এই বিষয়টা কখনও বেসরকারি হাতে দেওয়া যায় না । দেশের টেলিকম মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও স্বীকার করেছেন যে, যখনই কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছে, BSNL সবার আগে পরিষেবা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে । এমনকি, কঠিন পরিস্থিতিতে BSNL একমাত্র অবলম্বন হিসাবেও কাজ করেছে ।

জাতীয় ডিজিটাল যোগাযোগ প্রকল্প

আজকের যুগে, যেখানে ডিজিটাল অর্থনীতি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, সেখানে নিরাপদ আর্থিক লেনদেনের জন্য একটি শক্তিশালী সরকারি টেলিকম সংস্থার টিকে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি । 2018 সালের জাতীয় ডিজিটাল যোগাযোগ প্রকল্প (NDCP) ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে । যেমন উন্নত ব্রডব্যান্ড পরিষেবা, ভালো রেডিয়ো স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট, জাতীয় টেলিকম শিল্পের পরিকাঠামোগত নিরাপত্তা, নেট নিউট্রালিটি প্রভৃতি । তিনটি প্রকল্পের কথাও বলেছে NDCP । সেগুলি হল, ‘কানেক্ট ইন্ডিয়া’ ‘প্রপেল ইন্ডিয়া’ এবং ‘সিকিয়োর ইন্ডিয়া’ । আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে ব্রডব্যান্ডের ভূমিকার বিষয়টি দেখে ‘কানেক্ট ইন্ডিয়া’ । ‘প্রপেল ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য দেশের ডিজিটাল ব্যবস্থাকে উন্নত করতে নতুন প্রযুক্তি, যেমন ৫জি, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং বিগ ডেটা । ‘সিকিয়োর ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য, দেশে ডিজিটাল পরিষেবার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা ।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মাধ্যমে এই সব লক্ষ্য পূরণের জন্য 2022 সালের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে কেন্দ্র । যদিও এই সব ক্ষেত্রেই চিন আমাদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে । ডিজিটাল অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পাশাপাশি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে চিনের টেলিকম শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম ।অন্য বহু দেশ টেলিকম শিল্পকে বেসরকারি হাতে ছেড়ে দিলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চিন । গত বছর ৪জি LTE গ্রাহকের সংখ্যা 100 কোটি ছাড়িয়েছে চিনে । এর 65 শতাংশ হয়েছে চায়না মোবাইল, 18 শতাংশ চায়না টেলিকম এবং 17 শতাংশ চায়না ইউনিকমের মাধ্যমে । এই সংস্থাগুলির সবকটিই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা । এই মুহূর্তে বিশ্বের 40 শতাংশ ৪জি গ্রাহক রয়েছেন চিনে ।

ভারতের ক্ষেত্রে, এই দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দেশের ওয়্যারলেস গ্রাহকের 10 শতাংশ এবং ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের মাত্র 3 শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে । TRAI-র রিপোর্ট অনুযায়ী, চ‌লতি বছরের মে মাস পর্যন্ত BSNL-র মোট গ্রাহক দেশের মোট গ্রাহকের 9.98 শতাংশ, যার সঙ্গে MTNL যুক্ত হলে হয় 10.28 শতাংশ । সেই তুলনায় ভোডাফোনের গ্রাহক 33.36 শতাংশ এবং এয়ারটেলের 27.58 শতাংশ ।

৪জি স্পেকট্রাম বাজারে আরও প্রতিযোগিতা আনবে- পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া হিসাবে সরকারের এই প্রত্যাশাকে অতিরিক্ত হিসাবেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । যে বিষয়টা সবার আগে দেখা প্রয়োজন, তা হল BSNL কি প্রতিযোগিতায় নামার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত ? শুধুমাত্র ৪জি স্পেকট্রাম দিয়ে গ্রাহককে আকর্ষণ করা সম্ভব নয় । গ্রাহক আকর্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হল যে, কোনও প্রয়োজনে দ্রুত যোগাযোগ এবং সমস্যার দ্রুত সমাধান । গ্রাহক আকর্ষণের ব্যবসায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি সব সময়ই পিছিয়ে থেকেছে । এর প্রধান কারণ হল, গ্রাহক চায় সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং দ্রুতগতির অফিশিয়াল প্রক্রিয়া । BSNL এবং MTNL-র অত্যন্ত খারাপ গ্রাহক পরিষেবা আজকের এই পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী ।

টেলিকম শিল্পের কঠিন বাজারে টিকে থাকতে তাই সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে । সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নিতে দেওয়ার স্বাধীনতাও দেওয়া যেতে পারে । এখনও পর্যন্ত অবশ্য এই সংস্থাগুলিকে সরকার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবেই দেখে এসেছে । দিনের পর দিন তারা পুরোনো প্রযুক্তির পিছনে খরচ করে গিয়েছে এবং উচ্চ দামে খারাপ স্পেকট্রাম কিনে এসেছে । এই ধরনের পদক্ষেপ ধীরে ধীরে সংস্থাগুলিকে আজকের অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । টেলিকম সংস্থাগুলির প্রশাসনে রদবদলও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কর্ম সংস্কৃতির বদল, কাজে স্বচ্ছতা আনা খুবই জরুরি । দেশে চলা আর্থিক মন্দা এই সংস্কারের রাস্তা আরও কঠিন করে তুলেছে । সংস্থা দু’টির পুনরুজ্জীবনে সরকারি পদক্ষেপে কিছুটা লাভ হবে দুই সংস্থার কর্মীদের । কিন্তু এবার যদি এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তা হলে এই দুই টেলিকম সংস্থার মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী ।

New Delhi, Nov 28 (ANI): Political analyst Tehseen Poonawalla staged protest at Delhi's Vijay Chowk on November 28 demanding action against BJP MP Pragya Thakur's comment. He was later detained by police. In Parliament, Pragya Thakur referred to Nathuram Godse as a 'deshbhakt' on November 27.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.