ETV Bharat / bharat

স্বচ্ছ ভারত- এক দূরের স্বপ্ন? - প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ODF হিসাবে ঘোষিত গ্রামগুলিতে দ্বিমুখী পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন । শৌচালয়গুলিতে জলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব শৌচালয় তৈরির এবং বর্জ্যের ব্যবহারে হওয়া ত্রুটিগুলি সংশোধনের । আর তবেই ভারত সঠিকভাবে স্বচ্ছ হবে ।

Swachh Bharat
স্বচ্ছ ভারত
author img

By

Published : Dec 31, 2019, 3:46 AM IST

অক্টোবরের 2 তারিখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন, গ্রামীণ ভারত মুক্ত শৌচালয়ের সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্ত । তাঁর কথায়, “স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের অংশ হিসাবে আমরা গত 60 মাসে 11 কোটি শৌচাগার নির্মাণ করেছি । এর ফলে উপকৃত হয়েছেন 60 কোটি মানুষ । সারা বিশ্ব এটা দেখে চমকে গেছে।”

দেশের এই দুর্দান্ত সাফল্যের জন্য বিল এবং মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরে ‘গ্লোবাল গোলকিপার’ পুরস্কার পান নরেন্দ্র মোদি । যদিও 76তম জাতীয় নমুনা সমীক্ষা (NSS)-এর অংশ হিসাবে করা ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিসের ‘পরিশ্রুত পানীয় জল, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা এবং বাসস্থানের অবস্থা’ বিষয়ক সর্বশেষ রিপোর্ট কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করছে না । সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামীণ ভারতের 29 শতাংশ বাড়িতে আজও শৌচাগার নেই । ওডিশা ও উত্তরপ্রদেশের প্রায় অর্ধেক অঞ্চলে রয়েছে এই সমস্যা । ঝাড়খণ্ড, তামিলনাডু, রাজস্থানের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা 30 শতাংশের কাছাকাছি । স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের অংশ হিসাবে যাঁরা শৌচাগার তৈরি করেন, সরকারের উচিত তাঁদের আর্থিক সাহায্য করা । কিন্তু, রিপোর্ট অনুযায়ী দেশজুড়ে গ্রামীণ ভারতের মাত্র 17 শতাংশ এর ফলে উপকৃত হয়েছে । NSS-এর এই রিপোর্ট যেহেতু সরকারের কাছে অস্বস্তির, তাই এই রিপোর্ট ছয় মাস প্রকাশ করেনি সরকার । জাতীয় নমুনা সমীক্ষক সংস্থা (NSSO)-এর সেই রিপোর্টও পরে প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল দেশের বেকারত্বের হার 6.1 শতাংশ হয়ে গেছে ।ওই রিপোর্টও সাধারণের জন্য প্রকাশিত হয় প্রায় ছয় মাস পরে । এপ্রিলে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, দেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে । ঠিক তার দুই মাস পরে নীতি আয়োগ এবং রকিফেলার ফাউন্ডেশানের রিপোর্ট জানায়, গ্রামীণ ভারতের প্রায় 45 লাখ বাড়িতে আজও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি ।

অর্ধ প্রচেষ্টার পর্যবেক্ষণ

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী জেলার ভাবেখেড়ি গ্রামের পঞ্চায়েত অফিসের সামনে খোলা জায়গায় প্রস্রাব করার ‘অপরাধে’ দুই শিশুকে পিটিয়ে মেরে ফেলে একদল লোক । ঘটনা হল, আক্রান্ত পরিবারের কোনও শৌচাগার ছিল না । কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত কমিউনিকেশন ফান্ড অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশের এই গ্রাম মুক্ত শৌচের সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্ত । এমনকী, উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি জেলাতেও মুক্ত শৌচের সমস্যা নেই । কিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে । দেশে এখনও বহু গ্রাম রয়েছে, যেখানে মুক্ত শৌচের সমস্যা রয়েছে । যদি কোনও গ্রামসভা স্বচ্ছ ভারতের অংশ হিসাবে সেই গ্রামকে মুক্ত শৌচের সমস্যা থেকে মুক্ত (ODF) হিসাবে ঘোষণা করে, তবে সরকার থেকে দ্বিস্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা যাচাই করা হয় । সরকারের অবশ্যই উচিত, এই যাচাই প্রক্রিয়া কোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে করানো । গ্রামসভার এই ঘোষণার তিন মাস পর এই সংস্থার তরফ থেকে গ্রামে গিয়ে দেখা হবে, মুক্ত শৌচ সত্যিই বন্ধ হয়েছে কি না । বেশির ভাগ রাজ্যে এই ধরনের নজরদারি ঠিকমতো হয় না । 26 সেপ্টেম্বরের প্রথম পর্যায়ের হিসাব অনুযায়ী, ওডিশার 23 হাজার 92টি ODF গ্রামে নজরদারির কাজ শেষ হয়েছে । 30 সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় 37 হাজারে! অর্থাৎ মাত্র 4 দিনে 13 হাজার গ্রামে নজরদারির কাজ চালানো হয়েছে ! নির্ধারিত মান অনুযায়ী, এই ধরনের পর্যবেক্ষণ চালাতে কম করে এক মাস সময় লাগার কথা । দেশে ODF ঘোষিত ছয় লাখ গ্রামের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বে মাত্র 25 শতাংশের ক্ষেত্রে নজরদারি চালানো সম্ভব হয়েছে । এই পর্বে উত্তরপ্রদেশের 87 হাজার ODF গ্রামের মধ্যে মাত্র 10 শতাংশে নজরদারি চালানো হয়েছে । ওডিশার 47 হাজার গ্রামে দ্বিতীয় বার নজরদারি চালানোই হয়নি । সব মিলিয়ে মোট 10টি রাজ্যে দ্বিতীয় দফার পর্যবেক্ষণ করা হয়নি । নথি অনুযায়ী এই সব গ্রাম ODF হলেও এখানে কোনও দিনই মুক্ত শৌচ বন্ধ হয়নি । লক্ষ্যপূরণের চাপে এই সব ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি ।

প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা

পাঁচ বছর আগে, মহাত্মা গান্ধির স্বপ্ন পূর্ণ করে পরিচ্ছন্ন ভারত গড়ে তুলতে সরকার স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল । সরকারের লক্ষ্য ছিল, চলতি বছরের 2 অক্টোবর মহাত্মা গান্ধির 150তম জন্মবার্ষিকীর মধ্যে সারা দেশকে প্রকাশ্য স্থানে শৌচ থেকে মুক্ত করা হবে । এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য নেতারা সরকারের দপ্তরের উপর চাপ দিতে শুরু করে । 2 অক্টোবর ঘোষণা করা হয়, অবশেষে লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে । গত পাঁচ বছরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে 80 হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে ফেলেছে । সরকারি রিপোর্ট বলছে, শৌচালয় বানানো হয়েছে 10 কোটি 16 লাখ বাড়িতে । অভিযোগ, লক্ষ্যপূরণের জন্য গরিবদের প্রবলভাবে হয়রান করা হয়েছে । এই অভিযোগ করেছেন লিও হিলার, যিনি শৌচালয়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণে দলের বিশেষ সদস্য হিসাবে 2017 সালে দুই সপ্তাহের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা গেছিলেন । তাঁর দাবি, “লক্ষ্যপূরণের জন্য প্রশাসনের আধিকারিক ও কর্মীরা সাধারণ মানুষকে যথেষ্ট নাকাল করেছেন ।” তিনি এমনও ঘটনা দেখেছেন, যেখানে শৌচালয় না থাকার জন্য রেশন কার্ড ও বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে ।

Swachh Bharat
আবর্জনা সাফাইয়ে ব্যস্ত পড়ুয়ারা

শৌচালয় করার জায়গা না থাকলে স্বচ্ছ ভারতের তরফে সেই সব পরিবারকে কোনওরকম সাহায্য করা হয়নি । হরিয়ানার আমরোলি গ্রামের তফশিলি জাতির মানুষের অভিযোগ, “শৌচালয় তৈরির জন্য আমাদের পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না । পঞ্চায়েত থেকে আমাদের সুলভ শৌচালয় ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু উঁচু জাতির লোকেরা বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি । ফলে সব সময় লড়াই লেগেই থাকে ।” বিষয়টির কোনও সুষ্ঠু সমাধান আজও হয়নি । অথচ সরকারি খাতায় হরিয়ানা ODF রাজ্য । আর্থিক বা জমির সমস্যার জন্য যাঁরা শৌচালয় বানাতে পারেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে দূরে শৌচালয় বানানো হয়েছে । কোনও কোনও গ্রামে শৌচালয়ের জন্য মানুষকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে হয় । কোনও কোনও গ্রামে আবার জলের সমস্যার জন্য শৌচালয় ব্যবহার করা যায় না । ওডিশার মতো রাজ্যে এই সমস্যাটা মারাত্মক । কণকপুর গ্রামের তরঙ্গিনী মিশ্র দুঃখ করে বলেন, “গ্রীষ্মকালে জলের অভাবে গ্রামের অর্ধেক মানুষ শৌচালয় ছেড়ে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে বাধ্য হন ।” বলঙ্গিরের জেলাশাসকও জানালেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল শৌচালয়ে জলের সমস্যা । গত বছর ১৯ জুলাই গ্রামীণ ভারতের উন্নয়নের জন্য গঠিত সংসদের স্থায়ী কমিটি একটি রিপোর্ট পেশ করে । সেই রিপোর্টে পরিষ্কার বলা ছিল, "প্রত্যেক ভারতীয়কে শৌচালয়ের পূর্ণ সুবিধা দিতে হবে । জাতির জনকের স্বচ্ছ ভারত তৈরির স্বপ্ন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।" রিপোর্টে আরও বলা ছিল, স্বচ্ছ ভারতের সরকারি নথি এবং বাস্তব এক কথা বলছে না । কিন্তু কেন্দ্র এই রিপোর্টকে ততটা গুরুত্ব না দিয়ে জানায়, অন্য সব সমীক্ষা ভালো ফলের কথা বলায় এই রিপোর্টের তেমন গুরুত্ব নেই । এই অবস্থায়, বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক মতো বুঝতে ODF হিসাবে ঘোষিত গ্রামগুলিতে দ্বিমুখী পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন । শৌচালয়গুলিতে জলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব শৌচালয় তৈরির এবং বর্জ্যের ব্যবহারে হওয়া ত্রুটিগুলি সংশোধনের । আর তবেই ভারত সঠিকভাবে স্বচ্ছ হবে ।

পরিবেশের ক্ষতি

ম্যাগসেসে বিজেতা এবং ‘সাফাই কর্মচারী আন্দোলন’-র জাতীয় আহ্বায়ক বেজাওয়াড়া উইলসনের দাবি, “দেশে 96 লাখ শুষ্ক শৌচালয় রয়েছে । ফলে সেই সব অঞ্চলে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করা ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা থাকে না ।” কেন্দ্রের দাবি, তারা দুই গর্ত বিশিষ্ট পরিবেশ বান্ধব শৌচালয় তৈরিতে জোর দিচ্ছে । কিন্তু, স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের আওতায় যে সব শৌচালয় তৈরি হয়েছে, তার বেশির ভাগই হয়েছে একটি গর্তে । গ্রামীণ উন্নয়ন দপ্তরের প্রাক্তন সচিব ন্যান্সি সাক্সেনা বলেন, “শৌচালয়ে সব সময়ই 50 ঘন ফুটের দু’টি গর্ত থাকা উচিত । কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কেউই ভাবিত নয়।” এক গর্তের শৌচালয় খুব দ্রুত ভরে যাবে । বড় জলাশয়ের কাছে এই ধরনের মানব বর্জ্য ফেলে দেওয়া হচ্ছে । এর ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ।

অক্টোবরের 2 তারিখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন, গ্রামীণ ভারত মুক্ত শৌচালয়ের সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্ত । তাঁর কথায়, “স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের অংশ হিসাবে আমরা গত 60 মাসে 11 কোটি শৌচাগার নির্মাণ করেছি । এর ফলে উপকৃত হয়েছেন 60 কোটি মানুষ । সারা বিশ্ব এটা দেখে চমকে গেছে।”

দেশের এই দুর্দান্ত সাফল্যের জন্য বিল এবং মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরে ‘গ্লোবাল গোলকিপার’ পুরস্কার পান নরেন্দ্র মোদি । যদিও 76তম জাতীয় নমুনা সমীক্ষা (NSS)-এর অংশ হিসাবে করা ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিসের ‘পরিশ্রুত পানীয় জল, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা এবং বাসস্থানের অবস্থা’ বিষয়ক সর্বশেষ রিপোর্ট কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করছে না । সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামীণ ভারতের 29 শতাংশ বাড়িতে আজও শৌচাগার নেই । ওডিশা ও উত্তরপ্রদেশের প্রায় অর্ধেক অঞ্চলে রয়েছে এই সমস্যা । ঝাড়খণ্ড, তামিলনাডু, রাজস্থানের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা 30 শতাংশের কাছাকাছি । স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের অংশ হিসাবে যাঁরা শৌচাগার তৈরি করেন, সরকারের উচিত তাঁদের আর্থিক সাহায্য করা । কিন্তু, রিপোর্ট অনুযায়ী দেশজুড়ে গ্রামীণ ভারতের মাত্র 17 শতাংশ এর ফলে উপকৃত হয়েছে । NSS-এর এই রিপোর্ট যেহেতু সরকারের কাছে অস্বস্তির, তাই এই রিপোর্ট ছয় মাস প্রকাশ করেনি সরকার । জাতীয় নমুনা সমীক্ষক সংস্থা (NSSO)-এর সেই রিপোর্টও পরে প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল দেশের বেকারত্বের হার 6.1 শতাংশ হয়ে গেছে ।ওই রিপোর্টও সাধারণের জন্য প্রকাশিত হয় প্রায় ছয় মাস পরে । এপ্রিলে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, দেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে । ঠিক তার দুই মাস পরে নীতি আয়োগ এবং রকিফেলার ফাউন্ডেশানের রিপোর্ট জানায়, গ্রামীণ ভারতের প্রায় 45 লাখ বাড়িতে আজও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি ।

অর্ধ প্রচেষ্টার পর্যবেক্ষণ

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী জেলার ভাবেখেড়ি গ্রামের পঞ্চায়েত অফিসের সামনে খোলা জায়গায় প্রস্রাব করার ‘অপরাধে’ দুই শিশুকে পিটিয়ে মেরে ফেলে একদল লোক । ঘটনা হল, আক্রান্ত পরিবারের কোনও শৌচাগার ছিল না । কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত কমিউনিকেশন ফান্ড অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশের এই গ্রাম মুক্ত শৌচের সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্ত । এমনকী, উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি জেলাতেও মুক্ত শৌচের সমস্যা নেই । কিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে । দেশে এখনও বহু গ্রাম রয়েছে, যেখানে মুক্ত শৌচের সমস্যা রয়েছে । যদি কোনও গ্রামসভা স্বচ্ছ ভারতের অংশ হিসাবে সেই গ্রামকে মুক্ত শৌচের সমস্যা থেকে মুক্ত (ODF) হিসাবে ঘোষণা করে, তবে সরকার থেকে দ্বিস্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা যাচাই করা হয় । সরকারের অবশ্যই উচিত, এই যাচাই প্রক্রিয়া কোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে করানো । গ্রামসভার এই ঘোষণার তিন মাস পর এই সংস্থার তরফ থেকে গ্রামে গিয়ে দেখা হবে, মুক্ত শৌচ সত্যিই বন্ধ হয়েছে কি না । বেশির ভাগ রাজ্যে এই ধরনের নজরদারি ঠিকমতো হয় না । 26 সেপ্টেম্বরের প্রথম পর্যায়ের হিসাব অনুযায়ী, ওডিশার 23 হাজার 92টি ODF গ্রামে নজরদারির কাজ শেষ হয়েছে । 30 সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় 37 হাজারে! অর্থাৎ মাত্র 4 দিনে 13 হাজার গ্রামে নজরদারির কাজ চালানো হয়েছে ! নির্ধারিত মান অনুযায়ী, এই ধরনের পর্যবেক্ষণ চালাতে কম করে এক মাস সময় লাগার কথা । দেশে ODF ঘোষিত ছয় লাখ গ্রামের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বে মাত্র 25 শতাংশের ক্ষেত্রে নজরদারি চালানো সম্ভব হয়েছে । এই পর্বে উত্তরপ্রদেশের 87 হাজার ODF গ্রামের মধ্যে মাত্র 10 শতাংশে নজরদারি চালানো হয়েছে । ওডিশার 47 হাজার গ্রামে দ্বিতীয় বার নজরদারি চালানোই হয়নি । সব মিলিয়ে মোট 10টি রাজ্যে দ্বিতীয় দফার পর্যবেক্ষণ করা হয়নি । নথি অনুযায়ী এই সব গ্রাম ODF হলেও এখানে কোনও দিনই মুক্ত শৌচ বন্ধ হয়নি । লক্ষ্যপূরণের চাপে এই সব ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি ।

প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা

পাঁচ বছর আগে, মহাত্মা গান্ধির স্বপ্ন পূর্ণ করে পরিচ্ছন্ন ভারত গড়ে তুলতে সরকার স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল । সরকারের লক্ষ্য ছিল, চলতি বছরের 2 অক্টোবর মহাত্মা গান্ধির 150তম জন্মবার্ষিকীর মধ্যে সারা দেশকে প্রকাশ্য স্থানে শৌচ থেকে মুক্ত করা হবে । এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য নেতারা সরকারের দপ্তরের উপর চাপ দিতে শুরু করে । 2 অক্টোবর ঘোষণা করা হয়, অবশেষে লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে । গত পাঁচ বছরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে 80 হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে ফেলেছে । সরকারি রিপোর্ট বলছে, শৌচালয় বানানো হয়েছে 10 কোটি 16 লাখ বাড়িতে । অভিযোগ, লক্ষ্যপূরণের জন্য গরিবদের প্রবলভাবে হয়রান করা হয়েছে । এই অভিযোগ করেছেন লিও হিলার, যিনি শৌচালয়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণে দলের বিশেষ সদস্য হিসাবে 2017 সালে দুই সপ্তাহের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা গেছিলেন । তাঁর দাবি, “লক্ষ্যপূরণের জন্য প্রশাসনের আধিকারিক ও কর্মীরা সাধারণ মানুষকে যথেষ্ট নাকাল করেছেন ।” তিনি এমনও ঘটনা দেখেছেন, যেখানে শৌচালয় না থাকার জন্য রেশন কার্ড ও বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে ।

Swachh Bharat
আবর্জনা সাফাইয়ে ব্যস্ত পড়ুয়ারা

শৌচালয় করার জায়গা না থাকলে স্বচ্ছ ভারতের তরফে সেই সব পরিবারকে কোনওরকম সাহায্য করা হয়নি । হরিয়ানার আমরোলি গ্রামের তফশিলি জাতির মানুষের অভিযোগ, “শৌচালয় তৈরির জন্য আমাদের পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না । পঞ্চায়েত থেকে আমাদের সুলভ শৌচালয় ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু উঁচু জাতির লোকেরা বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি । ফলে সব সময় লড়াই লেগেই থাকে ।” বিষয়টির কোনও সুষ্ঠু সমাধান আজও হয়নি । অথচ সরকারি খাতায় হরিয়ানা ODF রাজ্য । আর্থিক বা জমির সমস্যার জন্য যাঁরা শৌচালয় বানাতে পারেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে দূরে শৌচালয় বানানো হয়েছে । কোনও কোনও গ্রামে শৌচালয়ের জন্য মানুষকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে হয় । কোনও কোনও গ্রামে আবার জলের সমস্যার জন্য শৌচালয় ব্যবহার করা যায় না । ওডিশার মতো রাজ্যে এই সমস্যাটা মারাত্মক । কণকপুর গ্রামের তরঙ্গিনী মিশ্র দুঃখ করে বলেন, “গ্রীষ্মকালে জলের অভাবে গ্রামের অর্ধেক মানুষ শৌচালয় ছেড়ে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে বাধ্য হন ।” বলঙ্গিরের জেলাশাসকও জানালেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল শৌচালয়ে জলের সমস্যা । গত বছর ১৯ জুলাই গ্রামীণ ভারতের উন্নয়নের জন্য গঠিত সংসদের স্থায়ী কমিটি একটি রিপোর্ট পেশ করে । সেই রিপোর্টে পরিষ্কার বলা ছিল, "প্রত্যেক ভারতীয়কে শৌচালয়ের পূর্ণ সুবিধা দিতে হবে । জাতির জনকের স্বচ্ছ ভারত তৈরির স্বপ্ন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।" রিপোর্টে আরও বলা ছিল, স্বচ্ছ ভারতের সরকারি নথি এবং বাস্তব এক কথা বলছে না । কিন্তু কেন্দ্র এই রিপোর্টকে ততটা গুরুত্ব না দিয়ে জানায়, অন্য সব সমীক্ষা ভালো ফলের কথা বলায় এই রিপোর্টের তেমন গুরুত্ব নেই । এই অবস্থায়, বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক মতো বুঝতে ODF হিসাবে ঘোষিত গ্রামগুলিতে দ্বিমুখী পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন । শৌচালয়গুলিতে জলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব শৌচালয় তৈরির এবং বর্জ্যের ব্যবহারে হওয়া ত্রুটিগুলি সংশোধনের । আর তবেই ভারত সঠিকভাবে স্বচ্ছ হবে ।

পরিবেশের ক্ষতি

ম্যাগসেসে বিজেতা এবং ‘সাফাই কর্মচারী আন্দোলন’-র জাতীয় আহ্বায়ক বেজাওয়াড়া উইলসনের দাবি, “দেশে 96 লাখ শুষ্ক শৌচালয় রয়েছে । ফলে সেই সব অঞ্চলে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করা ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা থাকে না ।” কেন্দ্রের দাবি, তারা দুই গর্ত বিশিষ্ট পরিবেশ বান্ধব শৌচালয় তৈরিতে জোর দিচ্ছে । কিন্তু, স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের আওতায় যে সব শৌচালয় তৈরি হয়েছে, তার বেশির ভাগই হয়েছে একটি গর্তে । গ্রামীণ উন্নয়ন দপ্তরের প্রাক্তন সচিব ন্যান্সি সাক্সেনা বলেন, “শৌচালয়ে সব সময়ই 50 ঘন ফুটের দু’টি গর্ত থাকা উচিত । কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কেউই ভাবিত নয়।” এক গর্তের শৌচালয় খুব দ্রুত ভরে যাবে । বড় জলাশয়ের কাছে এই ধরনের মানব বর্জ্য ফেলে দেওয়া হচ্ছে । এর ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ।

New Delhi, Dec 31 (ANI): Obese children have lower working memory in comparison to children with normal weight, a new study has demonstrated. The study published in JAMA Pediatrics and performed at the University of Vermont and Yale University found that obese children had a thinner prefrontal cortex than normal-weight children. The thinner cortex could be a factor in the decreased executive function earlier studies observed among children with higher BMI.
The study analysed results from 3,190 nine- and 10-year-olds recruited at 21 ABCD sites in 2017.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.