বিশ্ব উষ্ণায়ন ৷ হিমবাহ গলে যাওয়া নিয়ে গেল গেল রব ৷ বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর ৷ বহু দ্বীপ অঞ্চল গিলে নিচ্ছে নোনতা জলের স্রোত ৷ একদিকে বন্যায় ভেসে যাচ্ছে গ্রাম, অন্যদিকে বৃষ্টিহীন প্রকৃতির রুক্ষতা ৷ জলসেচের অভাবে মাঠে মারা যাচ্ছে ফসল ৷ এমন এক দুনিয়ায় তিনি বুঝি দেবদূত ! যে কাজ মানুষের না বলেই জানা ছিল, সেই কাজ করে দেখিয়েছেন তিনি ৷ কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ৷ তিনি সোনম ওয়াংচুক ৷
লাদাখের বাসিন্দা ৷ বছর তিপান্নর সোনম ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কোনও সংস্থায় চাকরি নেননি ৷ বরং নেমে পড়েন লাদাখের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে ৷ তৈরি করেন NGO ৷ নাম দেন স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ ৷ শুধু সেখানকার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের সমস্যা নিয়েও ভাবলেন ৷ লাদাখের একটা বড় অংশে জলসংকট তাঁকে ভাবাল ৷ প্রথম দফায় সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে 10 জনের একটি দল তৈরি করে 30 ফুট উঁচু একটি হিমবাহ ৷ শীত কিছুটা কমলে সেই হিমবাহের জল ধীরে ধীরে গলতে শুরু করে ৷ সেই জলকেই কাজে লাগানো হয় স্থানীয় কৃষিক্ষেতে ৷ কিন্তু কীভাবে বানানো হল এই গ্লেসিয়ার? এমন ভাবনা মাথায় এলই বা কীভাবে?
"শিল্পী" এই ইঞ্জিনিয়র জানান, একবার স্থানীয় সেতুর তলায় জমা বরফ দেখতে পাই ৷ শীত তখন কমে ৷ তখনই হিমবাহ তৈরির ভাবনা আসে মাথায় ৷
আরও কারণ হল অতি প্রয়োজন ৷ অভাবই যে উদ্ভাবনের প্রথম শর্ত ৷ লাদাখ হল চরম আবহাওয়ার জায়গা ৷ শীতে মাইনাসে নেমে যায় তাপমাত্রা ৷ গরমে দয়ামায়াহীন চড়া সূর্য৷ ফ্রস্ট ব্রাইট আর হিট স্ট্রোক, দুইয়ের শিকার হয় এখানকার মানুষ ৷ এমন অবস্থা থেকেই স্থানীয়দের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন সোনাম ওয়াংচুক ৷ কিন্তু, কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির পদ্ধতিটি ঠিক কেমন?
সহজ করে বললে, শীতে লাদাখে বরফ জমে প্রচুর ৷ শীত কমলে সেই বরফ ধীরে ধীরে গলে যায় ৷ সূর্যরশ্মি থেকে সেই বরফকে বুদ্ধি করে রক্ষা করার উপায়ই বার করেছেন সোনম ৷ এর জন্য মাটির তলায় পাইপ লাইন করা হয়েছে ৷ প্রাকৃতিক হিমবাহ গলা জল সেই পাইপ বেয়ে সমতলে নেমে আসে ৷ পাইপের শেষ অংশটি খাড়া করে রাখা হয়৷ উচ্চতা ও অভিকর্ষের তারতাম্যের জন্য পাইপে চাপ তৈরি হয়৷ এর ফলেই জল জমে বরফের আকার ধারণ করে৷
শুরুতে 2014 সালে প্রাথমিক পরীক্ষার পর স্থানীয় ফিয়াং মঠ এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় ৷ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা 20 টি বরফস্তূপ তৈরির অর্ডার দেন ৷ সাফল্যের সঙ্গে সেই কাজ করে টিম সোনম ৷ তারপরই নাম ডাক ৷ গোটা বিশ্বের হাজারও সম্মান প্রাপ্তি ৷ সম্প্রতি সুইৎজ়ারল্যান্ড সরকারের ডাকে সে দেশের সেন্ট মরিৎজেতে একই পদ্ধিতে কৃত্রিম হিমবাহের কাজে হাত দিয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়র সোনম ওয়াংচুক ৷
সাধে কী তিনি আইস ম্যান অফ ইন্ডিয়া ! 2009 সালে 'থ্রি ইডিয়টস' সিনেমায় আমির খানের ফুংসুখ ওয়াংডু চরিত্রটি তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত ৷