তখন কোনও ব্র্যান্ড ছিল না ৷ নানা আকৃতিকর লম্বা চওড়া শ্যাম্পুর বোতলও ছিল না ৷ ছিল না চুলের নানা অংশের জন্য আলাদা আলাদা সমাধানের পন্থা বা পদ্ধতি ৷ একটাই সাবান জাতীয় কিছু, কোনও বিশেষ ফল কিংবা গাছের পাতা দিয়েই মাথার চুল ও শরীর পরিষ্কার করা হত ৷ চুলের যে আলাদা করে যত্ন নিতে হয়, সেকথাও জানত না গোটা বিশ্ব ৷ কিন্তু তখনও ভারতে চুল পরিষ্কার করা বা শ্যাম্পু করা নিয়মিত কাজের মধ্যে ছিল ৷ চুল পরিষ্কার করার এই সুপ্রাচীন পদ্বতিই সমগ্র বিশ্বকে শ্যাম্পুর ধারণা দিয়েছিল ৷
শ্যাম্পু শব্দের উৎপত্তি
শ্যাম্পু ইংরেজি শব্দ ৷ যা এসেছে হিন্দি শব্দ চাম্পো (Champo) বা চাম্পু (Champu) থেকে ৷ এই চাম্পো শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ চাপ্যাথি (Chapyathi) থেকে ৷ যার অর্থ কোনও কিছু টেপা বা দলাই মলাই করা ৷ পোশাকি ভাষায় যাকে মালিশ বা ম্যাসাজ বলা হয় ৷ অতীতে তেল দিয়ে এই মাথা ম্যাসাজের ধারণা থেকে জন্ম নেয় শ্যাম্পু করার পদ্ধতি৷
প্রাচীন ভারতে শ্যাম্পু ধারণার উদ্ভব
বহুকাল আগে থেকেই এই শ্যাম্পু করার বিষয়টি উপস্থিত ছিল ৷ তবে অন্য নামে ও অন্য পদ্ধতিতে ৷ মুঘল আমলেও মাথা মালিশ বা ম্যাসাজ করার বহু উল্লেখ পাওয়া যায় ৷ খ্রিশ্টপূর্ব চারের দশকে গ্রিক ইতিহাসবিদ স্ত্রাবো ভারতের শ্যাম্পু করার রীতির কথা উল্লেখ করে গেছেন ৷ তখন আয়ুর্বেদ মেনে চুলের যত্ন নেওয়া হত ৷ যা আজও অনেকাংশে বর্তমান ৷ যদিও নানা ধরনের রাসায়নিক যৌগ আজকাল আয়ুর্বেদের ব্যবহার কমিয়েছে ৷ আজ থেকে 300-400 বছর আগে মাথা ম্যাসাজ চলত ৷ মূলত তেল বা কোনও মিশ্রণ বানিয়ে মাথায় ও চুলে দেওয়া হত ৷ সাধারণত আয়ুর্বেদ গুণ সমৃদ্ধ নানা ফল ও গাছের পাতা থেকে রস বের করে তা মাথায় মাখা হত ৷ এই মিশ্রণ বা তেল তৈরিতে যেগুলি ব্যবহার করা হত, তা হল আম্লকি, রিঠা ফল, জবা ফুল, শিকাকাই, মেথি, সবুজ ছোলা, তুলসী ৷ এর পিছনে যথেষ্ট কারণও ছিল ৷ আম্লকি চুলকে মজবুত করে ৷ এর মধ্যে থাকা ভিটামিন C চুলের গোড়া শক্ত করে ৷ খুশকি এবং চুলকানিও কমায়৷ রিঠা ফল খুশকি কমায় । একইসঙ্গে সুগন্ধও ছড়ায় ৷ সেই সময় চুল পরিষ্কার করা একধরনের রীতি ছিল ৷ যা নিয়মিতভাবে করত সবাই ৷ পরের দিকে ব্রিটিশরা ভারতে এসেও এই রীতি অনুসরণ করে ৷ বিদেশিরা নিজেদের দেশেও এই পদ্ধতিকে নিত্যনতুনভাবে প্রয়োগ করে ৷ ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে শ্যাম্পুর ধারণা ৷
উনিশ শতকে পণ্য হিসেবে শ্যাম্পুর আত্মপ্রকাশ
উনিশ শতকে ইংল্যান্ডে এই শ্যাম্পু করা, মাথা ম্যাসাজ করা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে দাঁড়ায় ৷ তখনকার হেয়ার ড্রেসাররা নানা ধরনের ম্যাসাজ ও চুল ধোওয়ার পদ্ধতির আবিষ্কার করেন ৷ এই সময়কালের সঙ্গে নাম জড়ায় পটনার সেক ডিন মাহমুদের ৷ 1759 সালে জন্মেছিলেন তিনি ৷ 1800 সালের শুরু দিকে ইংল্যান্ড যান ৷ সেখানে একটি সেলুন ও স্পা খুলেছিলেন তিনি ৷ যার নাম ছিল মাহমুদ বাথস ৷ চলত মাথা ম্যাসাজের কাজ ৷ অল্পদিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মাহমুদ ৷ পরবর্তী সময়ে দোকান ছেড়ে সোজাসুজি রাজ পরিবারের সদস্যের চুলের যত্ন নেওয়ার কাজে নিযুক্ত হন তিনি ৷ 1890 সালে বাজারে পণ্য হিসেবে শ্যাম্পু আসে ৷ সৌজন্যে জার্মানি ৷ এরপর 1898 সালে অ্যামেরিকায় জন ব্রেক নামে একজন দমকল কর্মী শ্যাম্পু তৈরির জন্য গবেষণা শুরু করে দেন ৷ রসায়ন নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেন ৷ অবশ্য এর পিছনে অল্পবয়সে তার চুল পড়ে যাওয়াটাই দায়ি ছিল৷ এক শতাব্দী আগে, 1908 সালে তিনি তরল শ্যাম্পুর ব্যবহার শুরু করেন ৷ অর্থাৎ এবার এই মিশ্রণ বা তেলের জায়গায় জল যোগ করে শুরু হয় শ্যাম্পুর ব্যবহার ৷ 1930 সালের মধ্যে বিখ্যাত হয়ে যায় চুলের যত্ন নেওয়ার এই অভিনব পদ্ধতি ৷ বাকিটা ইতিহাস ৷