ETV Bharat / bharat

নতুন উচ্চতায় ধর্মনিরপেক্ষতা - নতুন উচ্চতায় ধর্মনিরপেক্ষতা

সুপ্রিম কোর্টের আশা, সরকার একটি অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার পরিচয় দিয়ে 1991 সালের উপাসনা আইনকে মান্যতা দেবে । আগামী কয়েক দশক গণতন্ত্র অক্ষুন্ন থাকবে । গত কয়েক দশকের সাম্প্রদায়িকতা এবং ঘৃণার গণতন্ত্রকে মুছে ফেলা সম্ভব হবে ।

supreme court
সুপ্রিম কোর্ট
author img

By

Published : Nov 26, 2019, 4:49 PM IST

সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক এবং স্পর্শকাতর অযোধ্যা রায়ের পর ভারতবর্ষে ধর্মনিরপেক্ষতা কি আরও শক্তিশালী হল ? তিন দশকের অবিশ্বাস আর ভুল বোঝাবুঝি কি আস্তে আস্তে কমে যাবে ? ভবিষ্যতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলি কি দেশের বিভিন্ন ধর্মস্থান ও পুরোনো বিবাদ-দ্বন্দ্বে নাক গলানো বন্ধ করবে ?

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগে বা পরে কোনওরকম হিংসার ঘটনা সামনে না আসায় এখন এই প্রশ্নগুলিই সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে । তাদের ১১১০ পাতার রায়ে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে একাধিক মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত । ভবিষ্যতে ধর্মীয় স্থানগুলি নিয়ে যেন কোনওরকম বিতর্কের সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিয়ে একাধিক প্রশ্নের বিশদ ব্যাখ্যা করেছে সুপ্রিম কোর্ট । মধ্যযুগে হওয়া অবিচারের অজুহাতে বিশেষ কোনও ধর্মের প্রতি কোনও রকম হিংসা বা অভিযানকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে শীর্ষ আদালত ।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে মুহূর্তের আবেগে হওয়া ঘটনা না বলে বেআইনি আখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট । এই ঘটনাকে তারা সাড়ে চারশো বছর আগে তৈরি হওয়া উপাসনাস্থল থেকে মুসলিমদের বলপূর্বক বিতাড়ন হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে । তাদের মতে, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, যেখানে আইন সবার জন্য একই, সেখানে এই ধরনের ঘটনা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না । এই একই কারণে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, বিচার সমান হবে না, যদি মুসলিমদের জন্য বিকল্প জমির ব্যবস্থা না করা হয় ।

দেশের জনসাধারণের একটা অংশ, যাদের দাবি, ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি পশ্চিমের দেশ থেকে এ দেশে আমদানি করা হয়েছে, তারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টিকে একেবারেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে । সেই ১৯২০ সাল থেকে চলে আসা একটি অদ্ভুত বিতর্কের বিষয় হল, যারা নিজেদের দেশকে কর্ম ও উপাসনাস্থল হিসাবে দেখতে পারে না, তারা কখ‌নই এ দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারবে না ।

শেষ তিন দশকে এই ধারণা আরও মজবুত হয়েছে । কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, সংবিধান মেনে চলাই যথেষ্ট নয় । এই রকম বুদ্ধিজীবীদেরও অভাব নেই, যাঁরা মনে করেন, শতাব্দী প্রাচীন সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রাণীত না হলে জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠে না ।

রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কের পর ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে । রাজনীতিতে প্রবল জনপ্রিয় হয়েছে ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দবন্ধটি ।

কেবলমাত্র বিশ্বাস ও আস্থার উপর নির্ভর করে যে বিতর্কিত ১৫০০ গজ জমির ফয়সালা করা সম্ভব নয়, তা রায়ের ছত্রে ছত্রে বুঝিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত । সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা, ন্যায়বিচার এবং প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই এই মামলার রায় দেওয়া হয়েছে । মন্দির-মসজিদের এই দ্বন্দ্ব যে শুধুমাত্র দেশকে রাজনৈতিকভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছিল তা-ই নয়, দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ।

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট । ধর্মনিরপেক্ষতাকে ব্যক্তিগত পছন্দ বা মতাদর্শ হিসাবে না দেখে একে ধর্মীয় সহনশীলতার অংশ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে শীর্ষ আদালত । ধর্মনিরপেক্ষতাকে সাংবিধানিক কাঠামোর অংশ হিসাবে ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি একে সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশও বলেছে সুপ্রিম কোর্ট । শীর্ষ আদালত এটা স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, সরকার, দেশের নাগরিক এবং বিচারব্যবস্থাকে ধর্মনিরপেক্ষতা মেনে চলতেই হবে ।

বোম্মাই মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতিদের নয় সদস্যের প্যানেলের অন্যতম বিচারপতি জীবন রেড্ডি ধর্মনিরপেক্ষতার স্পষ্ট সংজ্ঞা দিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন, ধর্মীয় সংঘর্ষের সময় নিরপেক্ষ থাকা ধর্মনিরপেক্ষতা নয় । অযোধ্যা মামলার রায়ের সময় বিচারপতি জীবন রেড্ডির সেই বক্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে আমাদের পাখির চোখ করা উচিত, আর তাই এটি ভারতীয় সংবিধানের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ।

ধর্মীয় উপাসনাস্থলগুলোতে যাতে এই ধরনের বিতর্ক ভবিষ্যতে আর না ঘটে, তার দিকে বিশেষ নজর দিতে সুপ্রিম কোর্ট বারবার 1991 সালের উপাসনা আইনের উল্লেখ করেছে । এই আইন অনুসারে, 1947 সালের 15 অগাস্ট অনুযায়ী যে ধর্মস্থান যেমন ছিল, তার পরিবর্তন করা যাবে না । কেউ যদি এর অন্যথা করে, তা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে ।

ধর্মীয় স্থানগুলিকে রূপান্তরিত করতে চেয়েছে এমন কোনও ক্ষেত্রে মামলা গ্রহণ এই আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে । সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে যে কোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে, এবং তা লঙ্ঘণ করা যাবে না । বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না ।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নির্দিষ্ট নির্দেশিকার দ্বারাই এক মাত্র এই সমস্যার সমাধান সম্ভব । মুসলিম আইনজীবীদের অনুরোধ ছিল, আদালত যেন বিশ্বাস এবং আস্থার কথায় মাথায় রেখে রায় ঘোষণা করে । এই কথাকে সামনে রেখে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, কোথায় এটা সম্ভব, কোথায় তা সম্ভব নয় ।

আদালত একটিবারের জন্য বাবরি মসজিদের উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করেনি । এমনকি, ডিসেম্বর 1949-এ মসজিদ চত্বরে হিন্দু মন্দিরের বিষয়টিও তারা অস্বীকার করেনি । 16 ডিসেম্বর 1949-র আগে পর্যন্ত নমাজ পাঠের বিষয়টিও তারা মেনে নিয়েছে । হিন্দু দেবতা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই নমাজ পাঠ বন্ধ হয়ে যায় । কিন্তু, মুসলিমরা কোনওভাবেই প্রমান করতে পারেনি 1857 সালের আগে ওই জায়গাটার আধিকার তাদের ছিল ।

1856 সালে অযোধ্যা ব্রিটিশদের অধিকারে আসে । সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, 1857 সালের আগে হিন্দুরা যে এখানে ধর্ম পাঠ করতেন তার প্রমান আছে । নির্দেশিকাটা ছিল হিন্দু-মুসলিম সংঘাত দূর করার । 1857 সালে 1500 গজের একটি প্রাচীর নির্মান করেন এক ব্রিটিশ কর্তা । হিন্দুরা কিন্তু পুরো জায়গাটাকে রামজন্মভূমি হিসেবে না ভেবে থাকতে পারেনি । তারা অর্ধেক অংশ প্রার্থনা চালিয়ে যেতে থাকে । এখানে যুগ ধরে মন্দির রয়েছে, এই ধারনা থেকে তারা কোনও ভাবেই সরে আসতে পারেনি ।

1877 সালে হিন্দুদের দাবি মতো জমির অন্য প্রান্তে আরও একটি প্রবেশ দ্বার খোলা হল । রাম নবমী এবং কৃষ্ণ পঞ্চমীর মতো অনুষ্ঠানে প্রচুর পরিমান মানুষের সমাগম হয় । বিষয়টির সাক্ষী থাকার জন্য বিদেশি পর্যটকদের ভীড়ও লেগেছিল । সরকারি নথিতেও বিষয়গুলির কথা উল্লেখ আছে ।

ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের রিপোর্টে উল্লেখ আছে, দ্বাদশ শতকে মাটির নিচে মন্দিরের অস্তিত্বের কথার । রিপোর্টে একথাও বলা হয়েছে, ওই জমিতেই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে ।

সুপ্রিম কোর্টও তার রিপোর্টে পুরাতাত্ত্বিক সর্বক্ষেণের সেই পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করেছে । রিপোর্টে মন্দিরের কথা উল্লেখ থাকলেও কেন কীভাবে তা ধ্বংস হয়, সে বিষয় স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি । একথাও উল্লেখ করা হয়নি যে, মসজিদ নির্মাণের জন্য মন্দির ধ্বংসের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়ছিল বলে । ষোড়শ শতকে তৈরি হয়েছিল মসজিদ । অর্থাৎ, সময়ের পার্থক্য চার শতক ।

ASI-র রিপোর্টে একটিবারের জন্যও উল্লেখ করা হয়নি এই 400 বছরে ঠিক কী ঘটেছিল, সে কথার । রিপোর্টে এ কথাও বলা হয়নি যে, মসজিদ নির্মানে মন্দিরের কোনও স্থাপত্য ব্যবহার করা হয়েছিল কি না । রিপোর্টে কেবলমাত্র বলা হয়েছে, মসজিদ নির্মানে কালো পাথর ব্যবহারের কথা, কিন্তু, উল্লেখ করা হয়নি এই পাথর হিন্দু মন্দিরেও ছিল কি না ।

সামগ্রিক ভাবে সুপ্রিম কোর্ট 1857 আগে হিন্দু ধর্মের বিষয়ে একটা ধরনা তৈরি করেছিল । এবং রাম মন্দিরের ইতিহাস পর্যালোচনা করেই তার রায় শুনিয়েছিল । অন্যদিকে, মুসলিম সম্প্রদায়কে আঘাত করার মতো কোনও বিবৃতিও দেয়নি শীর্ষ আদালত । শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে মসজিদ ধ্বংসের প্রমান থাকার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করে ।

সুপ্রিম কোর্টের আশা, সরকার একটি অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার পরিচয় দিয়ে 1991 সালের উপাসনা আইনকে মান্যতা দেবে । আগামী কয়েক দশক গণতন্ত্র অক্ষুন্ন থাকবে । গত কয়েক দশকের সাম্প্রদায়িকতা এবং ঘৃণার গণতন্ত্রকে মুছে ফেলা সম্ভব হবে ।

সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক এবং স্পর্শকাতর অযোধ্যা রায়ের পর ভারতবর্ষে ধর্মনিরপেক্ষতা কি আরও শক্তিশালী হল ? তিন দশকের অবিশ্বাস আর ভুল বোঝাবুঝি কি আস্তে আস্তে কমে যাবে ? ভবিষ্যতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলি কি দেশের বিভিন্ন ধর্মস্থান ও পুরোনো বিবাদ-দ্বন্দ্বে নাক গলানো বন্ধ করবে ?

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগে বা পরে কোনওরকম হিংসার ঘটনা সামনে না আসায় এখন এই প্রশ্নগুলিই সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে । তাদের ১১১০ পাতার রায়ে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে একাধিক মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত । ভবিষ্যতে ধর্মীয় স্থানগুলি নিয়ে যেন কোনওরকম বিতর্কের সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিয়ে একাধিক প্রশ্নের বিশদ ব্যাখ্যা করেছে সুপ্রিম কোর্ট । মধ্যযুগে হওয়া অবিচারের অজুহাতে বিশেষ কোনও ধর্মের প্রতি কোনও রকম হিংসা বা অভিযানকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে শীর্ষ আদালত ।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে মুহূর্তের আবেগে হওয়া ঘটনা না বলে বেআইনি আখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট । এই ঘটনাকে তারা সাড়ে চারশো বছর আগে তৈরি হওয়া উপাসনাস্থল থেকে মুসলিমদের বলপূর্বক বিতাড়ন হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে । তাদের মতে, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, যেখানে আইন সবার জন্য একই, সেখানে এই ধরনের ঘটনা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না । এই একই কারণে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, বিচার সমান হবে না, যদি মুসলিমদের জন্য বিকল্প জমির ব্যবস্থা না করা হয় ।

দেশের জনসাধারণের একটা অংশ, যাদের দাবি, ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি পশ্চিমের দেশ থেকে এ দেশে আমদানি করা হয়েছে, তারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টিকে একেবারেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে । সেই ১৯২০ সাল থেকে চলে আসা একটি অদ্ভুত বিতর্কের বিষয় হল, যারা নিজেদের দেশকে কর্ম ও উপাসনাস্থল হিসাবে দেখতে পারে না, তারা কখ‌নই এ দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারবে না ।

শেষ তিন দশকে এই ধারণা আরও মজবুত হয়েছে । কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, সংবিধান মেনে চলাই যথেষ্ট নয় । এই রকম বুদ্ধিজীবীদেরও অভাব নেই, যাঁরা মনে করেন, শতাব্দী প্রাচীন সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রাণীত না হলে জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠে না ।

রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কের পর ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে । রাজনীতিতে প্রবল জনপ্রিয় হয়েছে ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দবন্ধটি ।

কেবলমাত্র বিশ্বাস ও আস্থার উপর নির্ভর করে যে বিতর্কিত ১৫০০ গজ জমির ফয়সালা করা সম্ভব নয়, তা রায়ের ছত্রে ছত্রে বুঝিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত । সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা, ন্যায়বিচার এবং প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই এই মামলার রায় দেওয়া হয়েছে । মন্দির-মসজিদের এই দ্বন্দ্ব যে শুধুমাত্র দেশকে রাজনৈতিকভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছিল তা-ই নয়, দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ।

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট । ধর্মনিরপেক্ষতাকে ব্যক্তিগত পছন্দ বা মতাদর্শ হিসাবে না দেখে একে ধর্মীয় সহনশীলতার অংশ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে শীর্ষ আদালত । ধর্মনিরপেক্ষতাকে সাংবিধানিক কাঠামোর অংশ হিসাবে ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি একে সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশও বলেছে সুপ্রিম কোর্ট । শীর্ষ আদালত এটা স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, সরকার, দেশের নাগরিক এবং বিচারব্যবস্থাকে ধর্মনিরপেক্ষতা মেনে চলতেই হবে ।

বোম্মাই মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতিদের নয় সদস্যের প্যানেলের অন্যতম বিচারপতি জীবন রেড্ডি ধর্মনিরপেক্ষতার স্পষ্ট সংজ্ঞা দিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন, ধর্মীয় সংঘর্ষের সময় নিরপেক্ষ থাকা ধর্মনিরপেক্ষতা নয় । অযোধ্যা মামলার রায়ের সময় বিচারপতি জীবন রেড্ডির সেই বক্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে আমাদের পাখির চোখ করা উচিত, আর তাই এটি ভারতীয় সংবিধানের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ।

ধর্মীয় উপাসনাস্থলগুলোতে যাতে এই ধরনের বিতর্ক ভবিষ্যতে আর না ঘটে, তার দিকে বিশেষ নজর দিতে সুপ্রিম কোর্ট বারবার 1991 সালের উপাসনা আইনের উল্লেখ করেছে । এই আইন অনুসারে, 1947 সালের 15 অগাস্ট অনুযায়ী যে ধর্মস্থান যেমন ছিল, তার পরিবর্তন করা যাবে না । কেউ যদি এর অন্যথা করে, তা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে ।

ধর্মীয় স্থানগুলিকে রূপান্তরিত করতে চেয়েছে এমন কোনও ক্ষেত্রে মামলা গ্রহণ এই আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে । সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে যে কোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে, এবং তা লঙ্ঘণ করা যাবে না । বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না ।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নির্দিষ্ট নির্দেশিকার দ্বারাই এক মাত্র এই সমস্যার সমাধান সম্ভব । মুসলিম আইনজীবীদের অনুরোধ ছিল, আদালত যেন বিশ্বাস এবং আস্থার কথায় মাথায় রেখে রায় ঘোষণা করে । এই কথাকে সামনে রেখে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, কোথায় এটা সম্ভব, কোথায় তা সম্ভব নয় ।

আদালত একটিবারের জন্য বাবরি মসজিদের উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করেনি । এমনকি, ডিসেম্বর 1949-এ মসজিদ চত্বরে হিন্দু মন্দিরের বিষয়টিও তারা অস্বীকার করেনি । 16 ডিসেম্বর 1949-র আগে পর্যন্ত নমাজ পাঠের বিষয়টিও তারা মেনে নিয়েছে । হিন্দু দেবতা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই নমাজ পাঠ বন্ধ হয়ে যায় । কিন্তু, মুসলিমরা কোনওভাবেই প্রমান করতে পারেনি 1857 সালের আগে ওই জায়গাটার আধিকার তাদের ছিল ।

1856 সালে অযোধ্যা ব্রিটিশদের অধিকারে আসে । সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, 1857 সালের আগে হিন্দুরা যে এখানে ধর্ম পাঠ করতেন তার প্রমান আছে । নির্দেশিকাটা ছিল হিন্দু-মুসলিম সংঘাত দূর করার । 1857 সালে 1500 গজের একটি প্রাচীর নির্মান করেন এক ব্রিটিশ কর্তা । হিন্দুরা কিন্তু পুরো জায়গাটাকে রামজন্মভূমি হিসেবে না ভেবে থাকতে পারেনি । তারা অর্ধেক অংশ প্রার্থনা চালিয়ে যেতে থাকে । এখানে যুগ ধরে মন্দির রয়েছে, এই ধারনা থেকে তারা কোনও ভাবেই সরে আসতে পারেনি ।

1877 সালে হিন্দুদের দাবি মতো জমির অন্য প্রান্তে আরও একটি প্রবেশ দ্বার খোলা হল । রাম নবমী এবং কৃষ্ণ পঞ্চমীর মতো অনুষ্ঠানে প্রচুর পরিমান মানুষের সমাগম হয় । বিষয়টির সাক্ষী থাকার জন্য বিদেশি পর্যটকদের ভীড়ও লেগেছিল । সরকারি নথিতেও বিষয়গুলির কথা উল্লেখ আছে ।

ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের রিপোর্টে উল্লেখ আছে, দ্বাদশ শতকে মাটির নিচে মন্দিরের অস্তিত্বের কথার । রিপোর্টে একথাও বলা হয়েছে, ওই জমিতেই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে ।

সুপ্রিম কোর্টও তার রিপোর্টে পুরাতাত্ত্বিক সর্বক্ষেণের সেই পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করেছে । রিপোর্টে মন্দিরের কথা উল্লেখ থাকলেও কেন কীভাবে তা ধ্বংস হয়, সে বিষয় স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি । একথাও উল্লেখ করা হয়নি যে, মসজিদ নির্মাণের জন্য মন্দির ধ্বংসের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়ছিল বলে । ষোড়শ শতকে তৈরি হয়েছিল মসজিদ । অর্থাৎ, সময়ের পার্থক্য চার শতক ।

ASI-র রিপোর্টে একটিবারের জন্যও উল্লেখ করা হয়নি এই 400 বছরে ঠিক কী ঘটেছিল, সে কথার । রিপোর্টে এ কথাও বলা হয়নি যে, মসজিদ নির্মানে মন্দিরের কোনও স্থাপত্য ব্যবহার করা হয়েছিল কি না । রিপোর্টে কেবলমাত্র বলা হয়েছে, মসজিদ নির্মানে কালো পাথর ব্যবহারের কথা, কিন্তু, উল্লেখ করা হয়নি এই পাথর হিন্দু মন্দিরেও ছিল কি না ।

সামগ্রিক ভাবে সুপ্রিম কোর্ট 1857 আগে হিন্দু ধর্মের বিষয়ে একটা ধরনা তৈরি করেছিল । এবং রাম মন্দিরের ইতিহাস পর্যালোচনা করেই তার রায় শুনিয়েছিল । অন্যদিকে, মুসলিম সম্প্রদায়কে আঘাত করার মতো কোনও বিবৃতিও দেয়নি শীর্ষ আদালত । শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে মসজিদ ধ্বংসের প্রমান থাকার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করে ।

সুপ্রিম কোর্টের আশা, সরকার একটি অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার পরিচয় দিয়ে 1991 সালের উপাসনা আইনকে মান্যতা দেবে । আগামী কয়েক দশক গণতন্ত্র অক্ষুন্ন থাকবে । গত কয়েক দশকের সাম্প্রদায়িকতা এবং ঘৃণার গণতন্ত্রকে মুছে ফেলা সম্ভব হবে ।

Pulwama (J-K), Nov 26 (ANI): Two terrorists were killed in an exchange of fire with security forces at Tachwara village in Pulwama. The encounter happened on Nov 25. One terrorist was killed on Nov 25, while the other was killed on Nov 26. The terrorists have been identified as Irfan Ahmed and Irfan Sheikh, police said. Irfan Ahmed was a listed and a wanted Hizbul Mujahideen terrorist. Earlier today, police arrested a terrorist in Baramulla district and recovered a hand grenade from his possession.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.