শিলং, 20 অগাস্ট : বিহার, জম্মু ও কাশ্মীর এবং গোয়া ৷ 3 বছরে 3 রাজ্যের রাজ্যপাল ৷ এবার মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নিলেন সত্যপাল মালিক ৷ গতকাল সন্ধেয় শিলংয়ে রাজভবনে মেঘালয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান ৷ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা ৷
রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর মন্তব্যে একাধিকবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকার সময় একবার জঙ্গিদের উদ্দেশে মন্তব্য করেছিলেন, যাঁরা কাশ্মীরকে লুট করেছেন, তাঁদের খুন করো ৷ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে তিনি বিশ্বাস করেন না বলে মন্তব্য করে দিল্লির আধিকারিকদের রোষে পড়েন ৷ গোয়ার রাজ্যপাল থাকার সময় কোরোনা মোকাবিলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্তের সঙ্গে চাপানউতোর বাধে তাঁর ৷ একাধিকবার বিতর্কে জড়ানো সত্যপাল তিনটি রাজ্যেই বছরখানেকের আশপাশে রাজ্যপালের দায়িত্ব সামলেছেন ৷
বছর চুয়াত্তরের সত্যপাল প্রথমবার রাজ্যপাল হন 2017 সালের 30 সেপ্টেম্বর ৷ সেইসময় বিহারের ক্ষমতায় JD(U) ও তাদের জোটসঙ্গী BJP ৷ সত্যপাল বিহারের রাজ্যপাল হওয়ার মাস দুয়েক আগেই লালুপ্রসাদ যাদবের RJD-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন নীতীশ কুমার ৷ আর BJP-র সঙ্গে জোট গড়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হন ৷ 2018 সালের 21 অগাস্ট পর্যন্ত বিহারের রাজ্যপালের দায়িত্বে ছিলেন সত্যপাল ৷ এরমধ্যে আবার মাস দুয়েকের জন্য ওড়িশার রাজ্যপালের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলান ৷
বিহার থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসেবে পাঠানো হয় তাঁকে ৷ 2018 সালের 23 অগাস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপালের দায়িত্ব নেন তিনি ৷ সেই সময় জম্মু ও কাশ্মীরে জারি রয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন ৷ সরকার থেকে BJP সমর্থন প্রত্যাহার করায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় ৷
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকার সময় কয়েকবার তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক বাধে ৷ কার্গিলের একটি অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, "যে যুবকরা হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছে তারা আপনজনকেই খুন করছে । তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বা বিশেষ পুলিশ অফিসারদের খুন করছে । কেন তাঁদের খুন করা হচ্ছে? যারা কাশ্মীরের সম্পদ লুট করেছেন তাঁদের খুন করো৷ তাঁদের কাউকে খুন করেছো কি?"
রাজ্যপালের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলি ৷ তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক বাধার পর সত্যপাল বলেন, "আমি যা বলেছি তা এখানে ব্যাপক দুর্নীতির জন্য রাগ ও নৈরাশ্য থেকে বলেছি ৷ রাজ্যপাল হিসেবে আমার এরকম মন্তব্য করা উচিত হয়নি ৷ তবে, আমি যা বলেছি, সেটা ব্যক্তিগত উপলব্ধি ৷ অনেক রাজনৈতিক দল ও আমলারা এখানে দুর্নীতিতে জড়িয়ে ৷"
তিনি রাজ্যপাল থাকার সময়ই জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয় ৷ গত বছরের 30 অক্টোবর জম্মু ও কাশ্মীরকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয় ৷ জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ ৷ ওই দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উপরাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেন রাধাকৃষ্ণ মাথুর ও জি সি মুর্মু ৷ আর সত্যপালকে পাঠানো হয় গোয়ার রাজ্যপাল করে ৷
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর কাজ ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সত্যপাল বলেছিলেন, "আমি কাশ্মীর থেকে গোয়া এসেছি ৷ কাশ্মীর সমস্যাসঙ্কুল জায়গা হিসেবে সবাই জানে ৷ সেখানকার সমস্ত ইশু সফল ভাবে মোকাবিলা করেছি ৷ জম্মু ও কাশ্মীর এখন শান্তিপূর্ণ ও ভালো জায়গা ৷ জম্মু ও কাশ্মীর উন্নতির পথে অগ্রসর হয়েছে ৷ সেখানকার নেতৃত্ব বিতর্কহীন ৷ তাঁরা নিজেদের কাজ ভালোভাবে করছে ৷"
গত বছরের 3 নভেম্বর গোয়ার রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি ৷ সেখানে রাজ্যপাল হিসেবে একবছরও পূর্ণ হয়নি ৷ তার আগেই মেঘালয়ের রাজ্যপালের দায়িত্ব পেলেন সত্যপাল ৷ তথাগত রায়ের জায়গায় গতকাল মেঘালয়ের রাজ্যপালের দায়িত্ব বুঝে নেন ৷
কোরোনা মোকাবিলায় গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্তের সঙ্গে মতভেদ নিয়ে সত্যপাল বলেন, "আমার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত রসায়ন খুবই ভালো ৷ কিন্তু, এটা সত্য যে আমার যা ভুল মনে হয়, তা নিয়ে আমি সরব হই ৷ তেমন কোনও বিষয়, দুর্নীতি, অনিয়ম হলে আমি বলবই ৷ রাজ্যপালরা সাধারণত এটা করেন না ৷ হয়ত কিছু মানুষ এটা পছন্দ করেন না ৷" এরপরই তাঁর সংযোজন, "গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আমায় তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু আমি যেতে পারিনি ৷"
সত্যপালকে গোয়া থেকে বদলির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজ্য কংগ্রেস ৷ তাদের বক্তব্য, গোয়ার দরকার সত্যপালকে ৷ এই নিয়ে বিক্ষোভও দেখায় তারা ৷
স্পষ্টবক্তা এবং কাজের মানুষ বলেই কি বারবার বদলি ? একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি পত্রিকাকে এর উত্তরে সত্যপাল বলেন, "আমার মনে হয় জম্মু ও কাশ্মীরে আমি যথেষ্ট কাজ করেছি ৷ হতে পারে সারাজীবনের জন্য এটা যথেষ্ট ৷ এখন বিশ্রামের সময় ৷ অ্যাকশন সবসময় ভালো নয় ৷ তাই আমাকে এখন এই সুন্দর জায়গায় (মেঘালয়) যেতে দিন ৷"
60 বিধানসভার মেঘালয়ে এই মুহূর্তে ক্ষমতায় রয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (NPP) ও তার জোটসঙ্গীরা ৷ NPP-র জোটসঙ্গী BJP-র দখলে রয়েছে 2টি আসন ৷ 19টি আসন নিয়ে বিরোধী আসনে রয়েছে কংগ্রেস ৷
মেঘালয়ে তাঁকে বদলির কারণ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ওই পত্রিকাকে সত্যপাল বলেন, "গোয়াতে আমার তেমন কিছু করার ছিল না ৷ মেঘালয় বড় রাজ্য ৷ দেখা যাক ৷"