ETV Bharat / bharat

কোয়েট্টায় পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্টের প্রতিবাদ : বিশ্লেষণ - সি উদয় ভাস্কর

দুই বছর ধরে অপর্যাপ্ত সুশাসন চলেছে । যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ইমরান খান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ করা । এর ফলে পাকিস্তানের রাস্তায় সরকারের বিরুদ্ধে একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে । আর এটাই সেপ্টেম্বরে PDM তৈরির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক অনুঘটকের কাজ করেছে । প্রতিবেদনটি লিখেছেন সি উদয় ভাস্কর ।

Pakistan
কোয়েট্টায় পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্টের প্রতিবাদ
author img

By

Published : Oct 27, 2020, 10:32 AM IST

Updated : Oct 27, 2020, 10:57 AM IST

রবিবার (25 অক্টোবর ) পাকিস্তানের সরকার বিরোধী 11 টি রাজনৈতিক দলের জোট PDM ( পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট ) কোয়েট্টায় তাদের তৃতীয় প্রতিবাদ পথ সভার আয়োজন করেছিল । সেই প্রতিবাদ সভায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ শক্তির গতিশীলতা নিয়ে জটিলতার দিকেই নজর দেওয়া হয় ।

ওই সভায় একটি ভিডিয়ো লিঙ্কের মাধ্যমে লন্ডন থেকে ভাষণ দেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ । 1999 সালে জেনেরাল মুশারফের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পাকিস্তানের এই সবচেয়ে বরিষ্ঠ ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতাকে বারবার অপমানিত, গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে । এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন যে , তিনি আবার এই ‘আখরা’য় ফিরতে চলেছেন ।

পাকিস্তানে এখন ইমরান খানের PTI এর নেতৃত্বাধীন সরকার চলছে । 2018 সালে এই সরকারের পথ চলা শুরু হয় । যা ক্রমশ রাওয়ালপিন্ডি থেকে সেনাবাহিনীর ‘বাছাই’ সরকারে পরিণত হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেনাপ্রধান জেনেরাল কোয়ামার জাভেদ বাজওয়ার আজ্ঞাবহ হয়ে উঠছেন । বাজওয়ার সেনা প্রধানের পদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে । যা অনেককেই বিস্মিত করেছে । আর যা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের মধ্যে একটা নির্ভরতা তৈরি হয়েছে । তবে এটা ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একেবারেই নতুন নয় । তাৎপর্যপূর্ণভাবে 1990 সালে যখন নওয়াজ শরিফ প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন , তখনও সেনা একজন নাগরিক রাজনীতিক হিসেবে তাঁকে ‘পছন্দ’ করেছিল ।

দুই বছর ধরে অপর্যাপ্ত সুশাসন চলেছে । যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ইমরান খান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ করা । এর ফলে পাকিস্তানের রাস্তায় সরকারের বিরুদ্ধে একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে । আর এটাই সেপ্টেম্বরে PDM তৈরির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক অনুঘটকের কাজ করেছে । প্রধান বিরোধী দলগুলির মধ্যে চারটি বড় দল নিয়ে কোর টিম গঠিত হয়েছে । তাতে রয়েছে PML-N ( পাকিস্তান মুসলিম লিগ – নওয়াজ় ), PPP ( পাকিস্তন পিপলস পার্টি ), Jul-F (জমিয়েত উলেমা-ই-ইসালম – ফজলুর ) এবং পাখতুনওয়ালা মিল্লি আওয়ামি পার্টি । আর যে সমস্ত দল তাদের বিরোধিতা সরিয়ে রেখে PDM তৈরি করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে বালোচ ন্যাশনাল পার্টি ও পাশতুন তাহাফুজ মুভমেন্ট ।

ইমরান খান বিরোধী এই জোটের সভাপতি হলেন Jul (F) এর বর্ষীয়ান পশতুন নেতা ফজলুর রহমান । আর তরুণ মুখের মধ্যে রয়েছেন মারিয়ম নওয়াজ । তিনি PML-N এর সহ সভানেত্রী ও নওয়াজ শরিফের কন্যা । এছাড়া রয়েছেন PPP এর চেয়ারপার্সন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি । তিনি জুলফিকার আলি ভুট্টো ( জুলফিকার আলি ভুট্টো পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যাঁকে জেনারেল জিয়া উল হক জেলে পাঠিয়েছিলেন ) এর নাতি ও বেনজির ভুট্টোর ছেলে । বেনজিরও পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন । তাঁকে 2007 সালে হত্যা করা হয় ।

পাকিস্তানে দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতার অধিকারী সেনাবাহিনীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভোটারদের বৈধতা ও শক্তির ভিত্তিতে এমন এক আহ্বান জানিয়ে তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফ বলেন, ‘‘এই উৎসাহকে ভালো করে দেখুন । ভোটের গুরুত্বকে এবার আর কেউ গুরুত্বহীন করতে পারবে না বলেই আমার বিশ্বাস । এই উৎসাহ আমি গুজরানওয়ালা ও করাচিতে দেখেছি । আর এখন এটা কোয়েট্টাতেও দেখলাম ।’’

অক্টোবরের মাঝামাঝি পঞ্জাবের গুজরানওয়ালা ও সিন্ধের করাচিতে PDM এর পর পর দুইটি পথ প্রতিবাদ সভায় গণতান্ত্রিক যে আবেগ ধরা পড়েছে, সেটাকেই উল্লেখ করেছেন শরিফ । বালোচিস্তানের কোয়েট্টাতে রবিবারের প্রতিবাদ সভার পর দেশের তিনটি বড় ও সবচেয়ে জনসংখ্যা থাকা প্রদেশ পঞ্জাব, সিন্ধ ও বালোচিস্তানে পৌঁছে গেল PDM । আর তারা ইমরান খান সরকারকে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে দিল ।

PDM এর এই অবস্থান কোথায় স্বতন্ত্র ? পাকিস্তানের জনগণের কাছে এই প্রথম প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ প্রকাশ্যে জনগণের সামনে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করলেন । আর তাঁর বহিষ্কারের জন্য সরাসরি জেনেরাল বাজওয়াকে দোষারোপ করলেন ।

গুজরানওয়ালায় ( 16 অক্টোবর ) PDM ক্যাডারদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নওয়াজ শরিফ সেনাকে ‘রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র’ বলে অভিযোগ করেছেন । বিচারবিভাগের ষড়যন্ত্র করে তাঁকে পদ থেকে সরানোর জন্য সরাসরি বাজওয়াকেই অভিযুক্ত করেছেন শরিফ । তাঁর অভিযোগ, ইমরান খান নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে আনা যথেষ্ট সন্দেহজনক । গোটা ঘটনাকে তিনি নিয়ন্ত্রিত সামরিক অভিযান বলে ব্যাখ্যা করেছেন ।

করাচিতে ( 18 অক্টোবর ) PDM এর প্রতিবাদের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে । যা পাকিস্তানি স্তরেও অস্বাভাবিক । ওই প্রতিবাদের পর পাকিস্তানি রেঞ্জার ( পাকিস্তানের সেনার নিয়ন্ত্রিত ) এর তরফ থেকে করাচির শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকদের মাঠে নামানো হয় । আর অবোধ্য অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় নওয়াজ শরিফের জামাইকে । এর ফলে সিন্ধ প্রদেশের ইনস্পেক্টর জেনেরাল অফ পুলিশ মুস্তাক মাহারান গোটা ঘটনাটিতে ‘উপহাসের পাত্র ও অপমানিত’ বোধ করে প্রতিবাদ করে ছুটিতে চলে যান । তাঁর প্রতিবাদী ছুটিকে অনুকরণ করেন অধস্তনদেরও অনেকে । এতে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয় । পাকিস্তানের সেনার বিরুদ্ধে সিন্ধ পুলিশকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ উঠছে । আরও একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যদিও এড়ানো গিয়েছে, যখন PPP চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি সেনা প্রধান জেনেরাল বাজওয়ার হস্তক্ষেপ দাবি করেন ।

একটা তদন্ত, যার রিপোর্ট দশ দিন ( অক্টোবরের 30 তারিখ )-এর মধ্যে পেশ করার কথা, তার জন্য পুলিশের মধ্যে তৈরি হওয়া স্পর্শকাতর পরিস্থিতি আটকানো গিয়েছে । আর পুলিশের IG-ও নিজে প্রতিবাদী ছুটিকেও পিছিয়ে দিয়েছেন । কিন্তু পরিস্থিতি এখনও থমথমেই রয়েছে । কোয়েট্টায় বসে করাচির এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মারিয়ম নওয়াজ ‘রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র’ এর বিষয়টির উপর জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন : ‘‘যে পদ্ধতিতে IG (ইনস্পেক্টর জেনারেল ) কে অপহরণ করা হল, যে পদ্ধতিতে হোটেলে আর আমার ঘরে তল্লাশি চালানো হল ।’’ এর পর তিনি পাকিস্তানের সেনার বিরুদ্ধে স্থানীয় বালোচদের ক্ষোভকে সংযুক্ত করে তিনি আরও যোগ করেন : ‘‘বালোচিস্তানের মানুষ নিশ্চয় পারছেন যে যখন আপনার বিরোধী দেশের কোনও মেয়ে ও বোনের ঘরের দরজা ভাঙা হয়, তখন তাঁদের মানসিক পরিস্থিতি ঠিক কেমন হয় । রাষ্ট্রের উর্ধ্বে রাষ্ট্র ব্যাপারটা ঠিক কী, তা নিয়ে তাঁরা বাস্তবিক উদাহরণ তুলে ধরল তারা ।’’

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতায় এসেছেন দেশের নিচুতলার মানুষের ক্ষমতাকে হাতিয়ার করে । পাশাপাশি তিনি সেনার শীর্ষকর্তাদের সমর্থন আদায় করে নিতে সমর্থ হয়েছেন । সেনা সব সময় ওই আসনের জন্য এমন একজন নেতাকে খুঁজছিল, যিনি রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদের মধ্যে বজায় থাকা ‘রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র’ ব্যবস্থাকে বজায় রাখবে ।

বর্তমানে সেনার মধ্যে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে জেনেরাল বাজওয়ার পদের মেয়াদ বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে । আর যে পদ্ধতিতে পরবর্তী সেনা প্রধান বেছে নেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । কোভিড প্যানডেমিকের মোকাবিলা করা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আরও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে । আর তাছাড়া তিনি যে নিজেকে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের সঠিক মুখ হিসেবে দাবি করেন, জনপ্রিয় মতামতে সেটাও এখন প্রশ্নের মুখে । কোয়েট্টায় যা দেখা গিয়েছে, তাতে এখন একটা ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে এসেছে । পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির বদল ঘটছে । দিল্লি ও বেজিং উভয়েই নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে সেই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে ।

রবিবার (25 অক্টোবর ) পাকিস্তানের সরকার বিরোধী 11 টি রাজনৈতিক দলের জোট PDM ( পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট ) কোয়েট্টায় তাদের তৃতীয় প্রতিবাদ পথ সভার আয়োজন করেছিল । সেই প্রতিবাদ সভায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ শক্তির গতিশীলতা নিয়ে জটিলতার দিকেই নজর দেওয়া হয় ।

ওই সভায় একটি ভিডিয়ো লিঙ্কের মাধ্যমে লন্ডন থেকে ভাষণ দেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ । 1999 সালে জেনেরাল মুশারফের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পাকিস্তানের এই সবচেয়ে বরিষ্ঠ ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতাকে বারবার অপমানিত, গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে । এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন যে , তিনি আবার এই ‘আখরা’য় ফিরতে চলেছেন ।

পাকিস্তানে এখন ইমরান খানের PTI এর নেতৃত্বাধীন সরকার চলছে । 2018 সালে এই সরকারের পথ চলা শুরু হয় । যা ক্রমশ রাওয়ালপিন্ডি থেকে সেনাবাহিনীর ‘বাছাই’ সরকারে পরিণত হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেনাপ্রধান জেনেরাল কোয়ামার জাভেদ বাজওয়ার আজ্ঞাবহ হয়ে উঠছেন । বাজওয়ার সেনা প্রধানের পদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে । যা অনেককেই বিস্মিত করেছে । আর যা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের মধ্যে একটা নির্ভরতা তৈরি হয়েছে । তবে এটা ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একেবারেই নতুন নয় । তাৎপর্যপূর্ণভাবে 1990 সালে যখন নওয়াজ শরিফ প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন , তখনও সেনা একজন নাগরিক রাজনীতিক হিসেবে তাঁকে ‘পছন্দ’ করেছিল ।

দুই বছর ধরে অপর্যাপ্ত সুশাসন চলেছে । যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ইমরান খান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ করা । এর ফলে পাকিস্তানের রাস্তায় সরকারের বিরুদ্ধে একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে । আর এটাই সেপ্টেম্বরে PDM তৈরির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক অনুঘটকের কাজ করেছে । প্রধান বিরোধী দলগুলির মধ্যে চারটি বড় দল নিয়ে কোর টিম গঠিত হয়েছে । তাতে রয়েছে PML-N ( পাকিস্তান মুসলিম লিগ – নওয়াজ় ), PPP ( পাকিস্তন পিপলস পার্টি ), Jul-F (জমিয়েত উলেমা-ই-ইসালম – ফজলুর ) এবং পাখতুনওয়ালা মিল্লি আওয়ামি পার্টি । আর যে সমস্ত দল তাদের বিরোধিতা সরিয়ে রেখে PDM তৈরি করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে বালোচ ন্যাশনাল পার্টি ও পাশতুন তাহাফুজ মুভমেন্ট ।

ইমরান খান বিরোধী এই জোটের সভাপতি হলেন Jul (F) এর বর্ষীয়ান পশতুন নেতা ফজলুর রহমান । আর তরুণ মুখের মধ্যে রয়েছেন মারিয়ম নওয়াজ । তিনি PML-N এর সহ সভানেত্রী ও নওয়াজ শরিফের কন্যা । এছাড়া রয়েছেন PPP এর চেয়ারপার্সন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি । তিনি জুলফিকার আলি ভুট্টো ( জুলফিকার আলি ভুট্টো পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যাঁকে জেনারেল জিয়া উল হক জেলে পাঠিয়েছিলেন ) এর নাতি ও বেনজির ভুট্টোর ছেলে । বেনজিরও পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন । তাঁকে 2007 সালে হত্যা করা হয় ।

পাকিস্তানে দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতার অধিকারী সেনাবাহিনীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভোটারদের বৈধতা ও শক্তির ভিত্তিতে এমন এক আহ্বান জানিয়ে তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফ বলেন, ‘‘এই উৎসাহকে ভালো করে দেখুন । ভোটের গুরুত্বকে এবার আর কেউ গুরুত্বহীন করতে পারবে না বলেই আমার বিশ্বাস । এই উৎসাহ আমি গুজরানওয়ালা ও করাচিতে দেখেছি । আর এখন এটা কোয়েট্টাতেও দেখলাম ।’’

অক্টোবরের মাঝামাঝি পঞ্জাবের গুজরানওয়ালা ও সিন্ধের করাচিতে PDM এর পর পর দুইটি পথ প্রতিবাদ সভায় গণতান্ত্রিক যে আবেগ ধরা পড়েছে, সেটাকেই উল্লেখ করেছেন শরিফ । বালোচিস্তানের কোয়েট্টাতে রবিবারের প্রতিবাদ সভার পর দেশের তিনটি বড় ও সবচেয়ে জনসংখ্যা থাকা প্রদেশ পঞ্জাব, সিন্ধ ও বালোচিস্তানে পৌঁছে গেল PDM । আর তারা ইমরান খান সরকারকে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে দিল ।

PDM এর এই অবস্থান কোথায় স্বতন্ত্র ? পাকিস্তানের জনগণের কাছে এই প্রথম প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ প্রকাশ্যে জনগণের সামনে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করলেন । আর তাঁর বহিষ্কারের জন্য সরাসরি জেনেরাল বাজওয়াকে দোষারোপ করলেন ।

গুজরানওয়ালায় ( 16 অক্টোবর ) PDM ক্যাডারদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নওয়াজ শরিফ সেনাকে ‘রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র’ বলে অভিযোগ করেছেন । বিচারবিভাগের ষড়যন্ত্র করে তাঁকে পদ থেকে সরানোর জন্য সরাসরি বাজওয়াকেই অভিযুক্ত করেছেন শরিফ । তাঁর অভিযোগ, ইমরান খান নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে আনা যথেষ্ট সন্দেহজনক । গোটা ঘটনাকে তিনি নিয়ন্ত্রিত সামরিক অভিযান বলে ব্যাখ্যা করেছেন ।

করাচিতে ( 18 অক্টোবর ) PDM এর প্রতিবাদের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে । যা পাকিস্তানি স্তরেও অস্বাভাবিক । ওই প্রতিবাদের পর পাকিস্তানি রেঞ্জার ( পাকিস্তানের সেনার নিয়ন্ত্রিত ) এর তরফ থেকে করাচির শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকদের মাঠে নামানো হয় । আর অবোধ্য অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় নওয়াজ শরিফের জামাইকে । এর ফলে সিন্ধ প্রদেশের ইনস্পেক্টর জেনেরাল অফ পুলিশ মুস্তাক মাহারান গোটা ঘটনাটিতে ‘উপহাসের পাত্র ও অপমানিত’ বোধ করে প্রতিবাদ করে ছুটিতে চলে যান । তাঁর প্রতিবাদী ছুটিকে অনুকরণ করেন অধস্তনদেরও অনেকে । এতে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয় । পাকিস্তানের সেনার বিরুদ্ধে সিন্ধ পুলিশকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ উঠছে । আরও একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যদিও এড়ানো গিয়েছে, যখন PPP চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি সেনা প্রধান জেনেরাল বাজওয়ার হস্তক্ষেপ দাবি করেন ।

একটা তদন্ত, যার রিপোর্ট দশ দিন ( অক্টোবরের 30 তারিখ )-এর মধ্যে পেশ করার কথা, তার জন্য পুলিশের মধ্যে তৈরি হওয়া স্পর্শকাতর পরিস্থিতি আটকানো গিয়েছে । আর পুলিশের IG-ও নিজে প্রতিবাদী ছুটিকেও পিছিয়ে দিয়েছেন । কিন্তু পরিস্থিতি এখনও থমথমেই রয়েছে । কোয়েট্টায় বসে করাচির এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মারিয়ম নওয়াজ ‘রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র’ এর বিষয়টির উপর জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন : ‘‘যে পদ্ধতিতে IG (ইনস্পেক্টর জেনারেল ) কে অপহরণ করা হল, যে পদ্ধতিতে হোটেলে আর আমার ঘরে তল্লাশি চালানো হল ।’’ এর পর তিনি পাকিস্তানের সেনার বিরুদ্ধে স্থানীয় বালোচদের ক্ষোভকে সংযুক্ত করে তিনি আরও যোগ করেন : ‘‘বালোচিস্তানের মানুষ নিশ্চয় পারছেন যে যখন আপনার বিরোধী দেশের কোনও মেয়ে ও বোনের ঘরের দরজা ভাঙা হয়, তখন তাঁদের মানসিক পরিস্থিতি ঠিক কেমন হয় । রাষ্ট্রের উর্ধ্বে রাষ্ট্র ব্যাপারটা ঠিক কী, তা নিয়ে তাঁরা বাস্তবিক উদাহরণ তুলে ধরল তারা ।’’

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতায় এসেছেন দেশের নিচুতলার মানুষের ক্ষমতাকে হাতিয়ার করে । পাশাপাশি তিনি সেনার শীর্ষকর্তাদের সমর্থন আদায় করে নিতে সমর্থ হয়েছেন । সেনা সব সময় ওই আসনের জন্য এমন একজন নেতাকে খুঁজছিল, যিনি রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদের মধ্যে বজায় থাকা ‘রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র’ ব্যবস্থাকে বজায় রাখবে ।

বর্তমানে সেনার মধ্যে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে জেনেরাল বাজওয়ার পদের মেয়াদ বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে । আর যে পদ্ধতিতে পরবর্তী সেনা প্রধান বেছে নেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । কোভিড প্যানডেমিকের মোকাবিলা করা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আরও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে । আর তাছাড়া তিনি যে নিজেকে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের সঠিক মুখ হিসেবে দাবি করেন, জনপ্রিয় মতামতে সেটাও এখন প্রশ্নের মুখে । কোয়েট্টায় যা দেখা গিয়েছে, তাতে এখন একটা ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে এসেছে । পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির বদল ঘটছে । দিল্লি ও বেজিং উভয়েই নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে সেই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে ।

Last Updated : Oct 27, 2020, 10:57 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.