ETV Bharat / bharat

পথেঘাটে ঘুমিয়ে পড়ে আস্ত গ্রাম !

দেশের নাম কাজাখস্তান ৷ গ্রামের নাম কালাচি ৷ গ্রামবাসীদের ঘুমিয়ে পড়া রোগই গোটা বিশ্বে পরিচিত করেছে গ্রামটিকে ৷ এমনকী শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখিরাও রক্ষা পায় না "মারণ ঘুম" থেকে ৷

people fall asleep for days mysterious kalachi
people fall asleep for days mysterious kalachi
author img

By

Published : Oct 13, 2020, 7:00 AM IST

এখানে কে কখন কোথায় ঘুমিয়ে পড়বে কেউ জানে না ! যাদের ইনসোমনিয়া আছে তাদেরও নিস্তার নেই ৷ আর যে সে ঘুম না, একবার ঘুমোলে জাগতে জাগতে লেগে যেতে পারে সাত থেকে আট ঘণ্টা ৷ এমনকী টানা তিনদিনও ঘুমিয়ে থাকে মানুষ ৷ অবাক লাগছে নিশ্চয়ই ৷ বুদ্ধি প্রশ্ন তুলছে, এমনটা হয় না-কি ? হলে কেন হয় ? ঘটনা কোথাকার ?

দেশের নাম কাজাখস্তান ৷ গ্রামের নাম কালাচি ৷ গ্রামবাসীদের ঘুমিয়ে পড়া রোগই গোটা বিশ্বে পরিচিত করেছে গ্রামটিকে ৷ এমনকী শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখিরাও রক্ষা পায় না "মারণ ঘুম" থেকে ৷ হ্যাঁ, মারণ ঘুমই বটে ৷ কারণ এই ঘুমের মারত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে ৷ তবে, শুরু থেকেই এমনটা ছিল না কালাচিতে ৷ প্রথম ঘটনা প্রকাশ্যে আসে 2013 সালে ৷ কুম্ভকর্ণ-ঘুম রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে তখন থেকেই ৷ কারণ ঘুম ভাঙার পর দেখা দেয় নানান শারীরিক অস্বস্তি ৷ যেমন তীব্র মাথা ব্যথা, বমি ভাব ৷ কারও আবার রক্তচাপ বেড়ে যায় মাত্রহীন ভাবে ৷ স্মৃতি লোপ পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ৷ জানা গিয়েছে, ঘুম ভাঙার পর চরম হ্যালুসিনেশন তৈরি হয় শিশুদের মধ্যে ৷ আজব দৃশ্য দেখে তারা ৷ অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে কয়েক গুণ বেড়ে যায় যৌন আকাঙ্খা ৷ ঘুম ভাঙার পর সাত দিন থেকে এক মাস অবধি থেকে যেতে পারে এমন সব অবস্থা ৷

স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম এই রোগের শিকার হন এক মহিলা ৷ নাম লিউভক বেলকোভা ৷ 2010 সাল নাগাদ বাজারে কাজে বেরিয়েছিলেন, সেই সময় হঠাৎই তীব্র ঘুম পায় তাঁর ৷ এর চার দিন পর ঘুম ভাঙে বেলকোভার ৷ তখন তিনি হাসপাতালে ৷ চিকিৎসকেরা জানান, স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর ৷ পরবর্তীকালে কালাচি গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে একই ধরনের ঘটনা ঘটে ৷ যেমন, ভিক্টর কাজাচেনজো ৷ 2014 সালের অগাস্টের একদিন বাইক নিয়ে বেরিয়ে ছিলেন তিনি ৷ তারপর ঘুম ৷ চোখ খুলেছিলেন হাসপাতালের বেডে ৷ সেবার একটানা চারদিন ঘুমিয়ে ছিলেন ভিক্টর ৷ ভিক্টর রাস্তায় শুয়ে ঘুমোচ্ছিলেন, গ্রামবাসীরাই তাঁকে তুলে এনে হাসপাতালে ভরতি করে দেয় ৷ এ তো গেল একজনের ঘুম ৷ কালাচির আস্ত স্কুল পর্যন্ত বেমালুম ঘুমিয়ে পড়েছে ! সেবার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘুম ভাঙে চারদিন পর ৷ একটি পরিসংখ্যান বলছে, শুধু 2010 সালেই 120জন গ্রামবাসী "আজব ঘুমে"র শিকার হয় ৷ পরে শিকার হন আরও মানুষ ৷ কিন্তু মারণ ঘুমের কারণ কী ?

চিকিৎসকরা একশ শতাংশ উত্তর দিতে পারেননি ৷ প্রথমে তাঁদের সন্দেহ ছিল, গ্রামবাসীরা বুঝি কোনও মানসিক রোগে আক্রান্ত ৷ বৈজ্ঞানিক, রেডিওলজিস্ট, টক্সিকোলজিস্টরা গ্রামে এসে ঘুমের কারণ সন্ধানে নামে ৷ স্থানীয় জল-মাটি পরীক্ষা করা হয় ৷ এইসময় গ্রামবাসীদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা দেখা যায় মস্তিষ্কের কোষে অতিরিক্ত তরল রয়েছে ৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে "ইডিমা" ৷ ইডিমা কেন, তা জানা যায়নি ৷ গ্রামবাসীদের সন্দেহ, এই ঘুমের পেছনে রয়েছে কালাচির কাছাকাছির ক্রাসনোগোরস্কি ইউরোনিয়াম খনির বিষাক্ত বাতাস ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, খোদ ক্রাসনোগোরস্কির বাসিন্দাদের মধ্যেও রয়েছে মারণ ঘুমের অসুস্থতা ৷ যদিও সোভিয়েত যুগের এই খনি বন্ধ হয়ে গিয়েছে 1990 সালে ৷ এতদিন পর রেডিয়েশনও বিপজ্জনক নয় ৷ তাছাড়া রেডিয়েশনে ক্যানসারের মতো রোগ হতে পারে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বিকৃতি আসতে পারে, তাই বলে ঘুমিয়ে পড়া ! স্থানীয়, অনেকর ধারণা, ভিনগ্রহের প্রাণীদের উপদ্রব ৷

অবশেষে 2015 সালে জানা যায় "আজব ঘুমে"র প্রকৃত কারণ ৷ কারণ হল এগ্রামের বাতাসের অতিরিক্ত মাত্রার কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রো কার্বন ৷ শরীরে কার্বন মনোক্সাইড বেড়ে গেলে উপযুক্ত মাত্রায় অক্সিজেন পৌঁছায় না মস্তিষ্কে, তখনই পায় মারণ ঘুম ! উল্লেখ্য, ওই ইউরেনিয়াম খনি থেকেই নির্গত হত বিপুল পরিমাণ কার্বন মনোক্সাইড ৷ কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়ার এতদিন পরেও !

গ্রামবাসীরা অবশ্য চিকিৎসক তথা বিজ্ঞানীদের এইসব যুক্তিতর্ক মানা বা না মানার মতো পরিস্থিতিতেও নেই ৷ অজানা ঘুমের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে তারা ৷ কালাচি আজ দিনেও জনমানবহীন ঘুমন্ত ভুতুড়ে গ্রাম !

এখানে কে কখন কোথায় ঘুমিয়ে পড়বে কেউ জানে না ! যাদের ইনসোমনিয়া আছে তাদেরও নিস্তার নেই ৷ আর যে সে ঘুম না, একবার ঘুমোলে জাগতে জাগতে লেগে যেতে পারে সাত থেকে আট ঘণ্টা ৷ এমনকী টানা তিনদিনও ঘুমিয়ে থাকে মানুষ ৷ অবাক লাগছে নিশ্চয়ই ৷ বুদ্ধি প্রশ্ন তুলছে, এমনটা হয় না-কি ? হলে কেন হয় ? ঘটনা কোথাকার ?

দেশের নাম কাজাখস্তান ৷ গ্রামের নাম কালাচি ৷ গ্রামবাসীদের ঘুমিয়ে পড়া রোগই গোটা বিশ্বে পরিচিত করেছে গ্রামটিকে ৷ এমনকী শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখিরাও রক্ষা পায় না "মারণ ঘুম" থেকে ৷ হ্যাঁ, মারণ ঘুমই বটে ৷ কারণ এই ঘুমের মারত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে ৷ তবে, শুরু থেকেই এমনটা ছিল না কালাচিতে ৷ প্রথম ঘটনা প্রকাশ্যে আসে 2013 সালে ৷ কুম্ভকর্ণ-ঘুম রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে তখন থেকেই ৷ কারণ ঘুম ভাঙার পর দেখা দেয় নানান শারীরিক অস্বস্তি ৷ যেমন তীব্র মাথা ব্যথা, বমি ভাব ৷ কারও আবার রক্তচাপ বেড়ে যায় মাত্রহীন ভাবে ৷ স্মৃতি লোপ পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ৷ জানা গিয়েছে, ঘুম ভাঙার পর চরম হ্যালুসিনেশন তৈরি হয় শিশুদের মধ্যে ৷ আজব দৃশ্য দেখে তারা ৷ অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে কয়েক গুণ বেড়ে যায় যৌন আকাঙ্খা ৷ ঘুম ভাঙার পর সাত দিন থেকে এক মাস অবধি থেকে যেতে পারে এমন সব অবস্থা ৷

স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম এই রোগের শিকার হন এক মহিলা ৷ নাম লিউভক বেলকোভা ৷ 2010 সাল নাগাদ বাজারে কাজে বেরিয়েছিলেন, সেই সময় হঠাৎই তীব্র ঘুম পায় তাঁর ৷ এর চার দিন পর ঘুম ভাঙে বেলকোভার ৷ তখন তিনি হাসপাতালে ৷ চিকিৎসকেরা জানান, স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর ৷ পরবর্তীকালে কালাচি গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে একই ধরনের ঘটনা ঘটে ৷ যেমন, ভিক্টর কাজাচেনজো ৷ 2014 সালের অগাস্টের একদিন বাইক নিয়ে বেরিয়ে ছিলেন তিনি ৷ তারপর ঘুম ৷ চোখ খুলেছিলেন হাসপাতালের বেডে ৷ সেবার একটানা চারদিন ঘুমিয়ে ছিলেন ভিক্টর ৷ ভিক্টর রাস্তায় শুয়ে ঘুমোচ্ছিলেন, গ্রামবাসীরাই তাঁকে তুলে এনে হাসপাতালে ভরতি করে দেয় ৷ এ তো গেল একজনের ঘুম ৷ কালাচির আস্ত স্কুল পর্যন্ত বেমালুম ঘুমিয়ে পড়েছে ! সেবার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘুম ভাঙে চারদিন পর ৷ একটি পরিসংখ্যান বলছে, শুধু 2010 সালেই 120জন গ্রামবাসী "আজব ঘুমে"র শিকার হয় ৷ পরে শিকার হন আরও মানুষ ৷ কিন্তু মারণ ঘুমের কারণ কী ?

চিকিৎসকরা একশ শতাংশ উত্তর দিতে পারেননি ৷ প্রথমে তাঁদের সন্দেহ ছিল, গ্রামবাসীরা বুঝি কোনও মানসিক রোগে আক্রান্ত ৷ বৈজ্ঞানিক, রেডিওলজিস্ট, টক্সিকোলজিস্টরা গ্রামে এসে ঘুমের কারণ সন্ধানে নামে ৷ স্থানীয় জল-মাটি পরীক্ষা করা হয় ৷ এইসময় গ্রামবাসীদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা দেখা যায় মস্তিষ্কের কোষে অতিরিক্ত তরল রয়েছে ৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে "ইডিমা" ৷ ইডিমা কেন, তা জানা যায়নি ৷ গ্রামবাসীদের সন্দেহ, এই ঘুমের পেছনে রয়েছে কালাচির কাছাকাছির ক্রাসনোগোরস্কি ইউরোনিয়াম খনির বিষাক্ত বাতাস ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, খোদ ক্রাসনোগোরস্কির বাসিন্দাদের মধ্যেও রয়েছে মারণ ঘুমের অসুস্থতা ৷ যদিও সোভিয়েত যুগের এই খনি বন্ধ হয়ে গিয়েছে 1990 সালে ৷ এতদিন পর রেডিয়েশনও বিপজ্জনক নয় ৷ তাছাড়া রেডিয়েশনে ক্যানসারের মতো রোগ হতে পারে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বিকৃতি আসতে পারে, তাই বলে ঘুমিয়ে পড়া ! স্থানীয়, অনেকর ধারণা, ভিনগ্রহের প্রাণীদের উপদ্রব ৷

অবশেষে 2015 সালে জানা যায় "আজব ঘুমে"র প্রকৃত কারণ ৷ কারণ হল এগ্রামের বাতাসের অতিরিক্ত মাত্রার কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রো কার্বন ৷ শরীরে কার্বন মনোক্সাইড বেড়ে গেলে উপযুক্ত মাত্রায় অক্সিজেন পৌঁছায় না মস্তিষ্কে, তখনই পায় মারণ ঘুম ! উল্লেখ্য, ওই ইউরেনিয়াম খনি থেকেই নির্গত হত বিপুল পরিমাণ কার্বন মনোক্সাইড ৷ কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়ার এতদিন পরেও !

গ্রামবাসীরা অবশ্য চিকিৎসক তথা বিজ্ঞানীদের এইসব যুক্তিতর্ক মানা বা না মানার মতো পরিস্থিতিতেও নেই ৷ অজানা ঘুমের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে তারা ৷ কালাচি আজ দিনেও জনমানবহীন ঘুমন্ত ভুতুড়ে গ্রাম !

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.