অভিভাবকরা সবসময় শিশু বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হন দামি দামি হেলথ টনিকের জন্য । কারণ, তাদের সবসময় দাবি থাকে, “আমার বাচ্চা যেন সবকিছুতে প্রথম হয়।” কোনও পরীক্ষা বা বানান, সাঁতার, যেমন খুশি সাজো, আবৃত্তি-বক্তৃতা, খেলাধূলা বা জেলা তথা জাতীয় স্তরে পড়াশোনা সংক্রান্ত কোনও সাধারণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে অভিভাবকরা মস্তিষ্কের ক্ষমতাবর্ধক টনিকের খোঁজ করতে শুরু করেন । এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে মহারাষ্ট্রের নাসিকের জগদীশ চাইল্ড গাইডেন্স অ্যান্ড ল্যাকটেশন ম্যানেজমেন্ট ক্লিনিকের ডেভলপমেন্টাল, অ্যাডোলেসেন্ট’ অ্যান্ড ল্যাকটেশন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শমা জগদীশ কুলকার্নির (এম.বি.বি.এস, ডি.সি.এইচ, আই.বি.সি.এল.সি) সঙ্গে কথা বলেছে ইটিভি ভারত সুখীভব ।
সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য, তাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য টনিক যোগাড় করতে অভিভাবকরা যত খুশি টাকা খরচ করতে রাজি থাকেন । যদিও চিকিৎসক শমার মতে, কোনও টনিকের তুলনায় ডায়েট থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি অনেক বেশি প্রয়োজনীয় । তিনি অত্যন্ত দরকারি ধারণার উপর আলোকপাত করেছেন যে, আমাদের জীবনের প্রথম হাজার দিনে, আমাদের মস্তিষ্কের ‘ওয়্যারিং’ চলতে থাকে । অর্থাৎ নিউরোনের বৃদ্ধি হয়, সংযোগ তৈরি হয় এবং মস্তিষ্কেরও বিকাশ হয় । গর্ভাবস্থায় অর্থাৎ 280তম দিনে মায়ের পুষ্টির দিকটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ । 1 থেকে 6 মাস বয়সি শিশুদের বিশেষভাবে স্তন্যপান করানো উচিত । ওইসময় তা ছাড়া আর অন্য কোনও কিছুই এক ফোঁটাও দেওয়া ঠিক নয় । ছ’মাস পর বাড়িতে তৈরি নরম, সহজপাচ্য, পরিপূরক এবং টাটকা রান্না করা খাবারদাবার শিশুদের দিতে হবে । কারণ স্তন্যপানকারী শিশুদের মেধা ও বুদ্ধি বেশি হয় ।
কারণ এই 1 হাজার দিনে যত বেশি আপনি শিশুর প্রতি যত্নশীল হবেন, তত তার বুদ্ধিমত্তা বাড়বে । এই সময় যদি আপনি শিশুকে ভালবাসার পাঠ দেন, তাহলে সেও ভালবাসতে শিখবে, ভালবাসাও পাবে । যদি আপনি শিশুকে ঘৃণা করতে শেখান, সে ঘৃণার পাঠ পাবে । আর যদি কিছুই না শেখান, তাহলে সে শুধু মাংসপিন্ড হিসাবে, বয়সে বাড়তে থাকবে । কাজেই এই সময়টায় আপনি শিশুকে যা যা শেখাবেন, সেটাই হল বিবেচ্য । পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হল শিশুর সঙ্গে আপনি কেমন ব্যবহার করছেন, তাঁকে কী কী পাঠ দিচ্ছেন, কী কী অভ্যাসে তাঁকে লালন–পালন করছেন–এই সব কিছুই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
আরও পড়ুন, প্যানডেমিকের বছরে স্বাস্থ্য বাজেট কি দুর্বল জনস্বাস্থ্যের ব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারবে ?
জীবনধারণের জন্য ছাড়াও স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলীর জন্য খাদ্য প্রয়োজনীয় । খাবারে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল প্রভৃতি যা মিলে পুষ্টির জরুরি উৎস গড়ে তোলে । কাজেই খাবারের মধ্যে শাকসবজি, স্প্রাউটস অর্থাৎ অঙ্কুরিত ছোলা–বাদাম, ডাল এবং খাদ্যশস্য প্রভৃতি থাকা দরকার । যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায় । একজন শিশুর সব ধরনের খাবারই চেখে দেখা উচিত, যা তার খাবারে স্বাদ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে । ছোটো শিশু অবশ্য সেই খাবারই খাবে যা স্বাদ ও বর্ণে তাকে আকৃষ্ট করবে ।
তাই মায়েদের উচিত, খাবারের পুষ্টিগত গুরুত্বের প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব আরোপ করা । বিশেষ করে বাড়িতে তৈরি করা এবং টাটকা তৈরি করা কঠিন খাবারের উপর । ভারতীয় খাদ্যদ্রব্যসমূহ যেমন হলুদ শুধুমাত্র ক্ষতই সারিয়ে তোলে না বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায় । রাগি তথা মিলেট থেকে ক্যালসিয়াম মেলে । স্প্রাউট ও ডাল থেকে প্রোটিন মেলে । ফল থেকে পাওয়া যায় নানা ধরনের ভিটামিন যেমন ভিটামিন সি প্রভৃতি । মানুষের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, প্রাকৃতিক খাবারের তুলনায় প্যাকেটজাত খাবার থেকে শিশুরা অনেক বেশি প্রোটিন পায় । ডালের জল, চাল ভেজানো জল, চিপস, বিস্কুট, টিনজাত খাবারের বদলে শিশুকে দিন ইডলি, উপমা, দুধ-পোহা, শিরা স্প্রাউট ধোসা, ভেজিটেবল স্টু্য ।
শিশুকে এমন খাবার দিন, যা তার পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে । শিশু যেন খাবারের প্রকৃতি, রং বুঝতে পারে । আটা মাখতে শেখান । এই সবের মাধ্যমে শিশু পরিবারের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত বলে মানবে । মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য নিচের প্রত্যেকটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
- ডিএইচএ–অ্যাপ্রিকট, মাছে পাওয়া যায় ।
- আয়রন–গুড়, খেজুর এবং লোহার পাত্রে রান্না করা খাবার থেকে মেলে ।
- প্রাকৃতিক খাবার, যা মস্তিষ্কের ডিএনএ গঠনে সাহায্য করে ।
- টিনজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের কোনও পুষ্টিগত গুরুত্ব নেই । এগুলি মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে না ।
- খাদ্যশস্য, পালিশবিহীন ডালের সুষম আহার মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে ।
- শিশুর মস্তিষ্কের গঠন তার জন্মের 1 হাজার দিনের মাথায় বুদ্ধিমত্তা তৈরিতে সহায়ক হয় ।
- পুষ্টির প্রভাবেই মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধি হয় ।
- পুষ্টির প্রভাবেই গঠনমূলক শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ ঘটে ।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন kulkarnishamaj@gmail.com-এ