এই প্রেক্ষাপটে সোমবার দেশের বার্ষিক বাজেটে সেই আঁটোসাঁটো মনোভাবেরই পরিচয় দেখা গেল। ব্যতিক্রম একমাত্র জনস্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ।
প্রত্যাশিতভাবেই সবথেকে বেশি বরাদ্দবৃদ্ধি দেখা গেছে জনস্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সেই সম্পর্কিত পরিকাঠামোয়। সব মিলিয়ে 2021-22 অর্থবর্ষে খরচ হবে 2,23,864 কোটি টাকা, যার মধ্যে ভ্যাকসিনের জন্য বরাদ্দ 35000 কোটি টাকা। এই বৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় 137 শতাংশ বেশি, এবং একে স্বাগত জানাতেই হবে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে বিশ্ব এখনও কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে পৌঁছয়নি, এবং নিরাপদ জায়গায় পৌঁছতে এখনও এক বা দুবছর লাগতে পারে।
যেখানে ব্যক্তির নিরাপত্তা, যাকে অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য ‘যোগক্ষেম’বলেছেন, সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে সার্বভোমত্বের সঙ্গে জড়িত জাতীয় নিরাপত্তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই দায়িত্ব বর্তায় নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর। 2020-র গ্রীষ্মে লাদাখ অঞ্চলে চিনা আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে, মোদি সরকারের কাছে এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
তাই এবছর প্রতিরক্ষায় কত বরাদ্দ হয়, তা দেখার অপেক্ষা ছিল, কিন্তু কোনও চমক এল না।সার্বিক বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে মোটামুটি। গতবছর এই বরাদ্দ ছিল 4,71,000 কোটি টাকা, যেটা বেড়ে 2021-22 সালের জন্য 4,78,000 কোটি হয়েছে। বর্তমান বিনিময় মূল্যের দিকে তাকালে, এটা 65.48 বিলিয়ন ডলার।
গতবছরের তুলনায় বৃদ্ধি সামান্য 1.48 শতাংশ, এবং এই বরাদ্দ বর্তমান অর্থবর্ষের আনুমানিক জিডিপির 1.63 শতাংশ। 2011-12 সালে প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির 2 শতাংশের নিচে নেমে যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ভালভাবে পুষ্ট করতে গেলে এই অঙ্ক ৩ শতাংশের দিকে নিয়ে যেতে হবে।
ভারতকে যে যে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা এখন করতে হবে, তাতে এটা স্পষ্ট, যে চিন-সমস্যা থাকলেও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে খরচে রাশ টানতেই হবে।
এই অমীমাংসিত সংখার মধ্যেও একটা শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। মোট 4,78,000 কোটি বরাদ্দের মধ্যে 1,16,000 কোটি পেনশন এবং 3,62,000 কোটি সরাসরি প্রতিরক্ষার জন্য। গতবছরের তুলনায় পরের অঙ্কটা আরএকটু বেশি, কারণটা 3,37,000 কোটি থেকে পুরো মন্ত্রক ও তার দফতরগুলোর জন্য বেড়ে 3,62,000 কোটি হয়েছে।
2021-22 অর্থবর্ষের জন্য প্রতিরক্ষা বরাদ্দের ক্যাপিটাল আউট লে হল 1,35,000 কোটি, এবং এই অর্থেই আধুনিকীকরণ ও নতুন অস্ত্রভাণ্ডার তৈরি হয়। গালওয়ান ক্ষত সম্বলিত আগের বছরে খরচ হয়েছিল 1,34,510 কোটি। তাই গত বছরের সংশোধিত খরচের থেকে এবছরের বরাদ্দ বৃদ্ধি মাত্র 500 কোটি।
ক্যাপিটাল কম্পোনেন্টের খাতে গত বছরের খরচ ছিল 1,14,000 কোটি টাকা, যেটা 19 শতাংশ, অর্থাৎ 21000 কোটি বেড়েছে। আরও যথাযথ তুলনা করা যায় গত সংশোধিত খরচ থেকে এবারের বাজেট খরচ, যেটা মাত্র 500 কোটি টাকা, বা 0.5 শতাংশের নিচে।
নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলতে সেনা, বায়ুসেনা ও নৌবাহিনীর অর্থবরাদ্দ অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই এখানে ছবিটা অস্পষ্টই রয়ে গেছে।
গত অর্থবর্ষে সংশোধিত ক্যাপিটাল খরচ ছিল – সেনাবাহিনী 33,213 কোটি, নৌসেনা 37,542 কোটি এবং বায়ুসেনা 55,055 কোটি। বর্তমান অর্থবর্ষে বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী সেনার জন্য রয়েছে 36,482 কোটি, নৌসেনা 33,254 কোটি এবং বায়ুসেনা 53,215 কোটি।
সব মিলিয়ে বর্তমান বাজেট বরাদ্দের দিক থেকে দেখলে, এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী (প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিন সমস্যা) সেনাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেনার ক্ষেত্রে ক্যাপিটাল বরাদ্দ বেড়েছে, কমেছে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রে।
এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় এবছর সীমান্তের ওপারের সামরিক সক্ষমতাকে মুলতুবি রাখা হয়েছে। আশা করা যায়, যদি অর্থনীতির হাল ফেরে, তাহলে পরের বছর বিষয়টা পরিবর্তিত হবে।
সেনার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা ভারতের রাজনৈতিক শীর্ষনেতৃত্বের কাছে একটা জটিল সমস্যা। তুলনা করলে খারাপ লাগবে, জিডিপির শতাংশ হিসেবে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ এখন ততটাই কম, যতটা ছিল প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সময়ে, আর ভারত 1962-তে জোরালো ধাক্কা খেয়েছিল। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়, কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।