মহারাষ্ট্র, 12 নভেম্বর : শিবসেনাকে ঝুলিয়ে রাখল কংগ্রেস ও NCP । 50 শতাংশের দাবি নিয়ে যে দর কষাকষি একসময় BJP-র সঙ্গে শিবসেনা করতে গিয়েছিল, আজ সুযোগ বুঝে সেই পথে শরদ পাওয়াররা । রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলেও সুপ্রিম কোর্টে শুনানির উপর তাকিয়ে রয়েছে সবপক্ষই । এরই মধ্যে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করল গেরুয়া শিবিরও । মঙ্গলবার মারাঠা রাজ্যের রাজনীতির গতি প্রকৃতি এভাবেই সম্ভবত বর্ণনা করা যায় ।
288 আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্রে বৃহত্তম দল হিসেবে 105 টি আসন রয়েছে BJP-র । দ্বিতীয়তে রয়েছে শিবসেনা (56) ও তৃতীয়তে শরদ পাওয়ারের ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (54 ) । গতবার বিধানসভা নির্বাচনের পর BJP ও শিবসেনা জোট করে সরকার গড়ায় এবারও তেমনটাই হবে বলে ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই । কিন্তু একদিকে ঠাকরে পরিবারের প্রথমবার ভোটে লড়া এবং তাতে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্য ঠাকরের জয় পরিসংখ্যানটা পালটে যায় । প্রথমে 50:50 ফরমুলায় আদিত্যকে প্রথম ধাপের মুখ্যমন্ত্রী পরে শর্ত পালটে অর্থ ও স্বরাষ্ট্র দপ্তর দাবি করে শিবসেনা । গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রক দু'টি কোনওমতেই ছাড়তে রাজি ছিল না BJP । এই অবস্থায় রবিবার মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি BJP-কে রাজভবনে ডেকে পাঠান । সেখানে গিয়ে BJP জানায়, দল গড়তে অক্ষম তারা ।
এরপরই বল 180 ডিগ্রি ঘুরে চলে যায় শিবসেনার কোর্টে । BJP-র পরদিনই অর্থাৎ সোমবার শিবসেনাকে রাজভবনে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল । সরকার গড়ার ইচ্ছে তাদের আছে কি না, তা জানতে চাইলে সেনার তরফ থেকে তিন দিন সময় চেয়ে নেওয়া হয় । কিন্তু রাজ্যপাল তাদের সেই সময় দেননি । ইতিমধ্যেই NCP প্রধান শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন উদ্ধব ঠাকরে । সেনিয়ার সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন তিনি । জানা যায় শিবসেনাকে বাইরে থেকে সমর্থন করতে পারে কংগ্রেস । এর পর শরদ পাওয়ারের ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টিকেও সরকার গড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান রাজ্যপাল ৷ তাদেরও একদিনের বেশি সময় দিতে রাজি হননি তিনি ৷ কোনও দলই কোনও সিদ্ধান্তে না পৌঁছাতে পারায় রাত পেরোতেই মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা ঘোষণা করেন রাজ্যপাল । যাতে বিকেলে শিলমোহর দেন রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা । জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন ।
রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় শিবসেনা ৷ তাদের সময় না দেওয়ার বিষয়ে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক, বিশ্বাসঘাতকতা, অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করে তারা । এদিকে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার জন্য ছ'মাস হাতে পায় তারা । সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে আজ সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে কিছুটা কটাক্ষ করে জানান, শিবসেনা তিনদিন সময় চেয়েছিল রাজ্যপালের কাছে, কিন্তু তিনি ছ'মাস দিয়ে দিলেন ।
প্রসঙ্গত, শিবসেনা-NCP জোট সরকার করার ক্ষেত্রে সমস্যা দুই দলের ভাবমূর্তি ও আদর্শ নিয়ে । শিবসেনা ও NCP বা শিবসেনা ও কংগ্রেসের এক্ষেত্রে অযোধ্যা ইশু নিয়ে একই ধরনের চিন্তাধারা থাকলেও বাকি ক্ষেত্রে হোঁচট খেতে হতে পারে তাদের । যে কারণে শিবসেনা ও BJP জোট সরকার তৈরি হল না, সে কারণে, সমস্যা দেখা দিয়েছে NCP-র সঙ্গে শিবসেনার । নির্দিষ্ট দু'টি দপ্তর ও মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে এবারও দর কষাকষি চলছে দুই দলের । মুখ্যমন্ত্রীত্ব বা দু'টি দপ্তর চাইতে পারে NCP-ও । সেক্ষেত্রে আবার কংগ্রেস বাইরে থেকে সমর্থন না করে ভেতর থেকে করলে তাদের সঙ্গেও দপ্তর বণ্টন নিয়ে মত পার্থক্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে । যদি আগামীকাল সুপ্রিম কোর্টের শুনানি হয় তাহলে মহারাষ্ট্রের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি অনেকটাই স্পষ্ট হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।