জম্মু ও কাশ্মীর, 6 অগাস্ট : রাস্তার মাঝ বরাবর বিছানো রয়েছে কাঁটাতার ৷ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র কাঁধে টহল দিচ্ছেন সেনা জওয়ানরা ৷ যেন তাঁদের বিনা অনুমতিতে মাছি গলবার জো টুকু নেই ৷
কেটেছে সবে মাত্র 24 ঘণ্টা ৷ গতকালই জম্মু-কাশ্মীর থেকে 370 ধারা তুলে নেওয়ার কথা রাজ্যসভায় ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ আর তারপর থেকেই যেন আরও থমথমে হয়ে উঠেছে গোটা উপত্যকা ৷ যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলা করতে অতি সক্রিয় কেন্দ্রীয় সরকার ৷ ইন্টারনেট-ফোন পরিষেবা বন্ধ থাকার কথা দিন কয়েক আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল ৷ সেই নির্দেশিকা এখনও বলবৎ হয়েছে ৷ মাইকে বার বার ঘোষণা করা হচ্ছে, কেউ যেন বাড়ির বাইরে না আসেন ৷ কারণ, এখনও 144 ধারা তোলা হয়নি ৷ সচিত্র পরিচয়পত্র না দেখিয়ে, একজনকেও ছাড়া হচ্ছে না ৷ প্রতিটি গাড়িতে চলছে খুঁটিয়ে তল্লাশি ৷ যেন সামান্যতম ঢিলেমি দিতে রাজি নয় কেউ ৷
ফোন-ইন্টারনেটের পাশাপাশি ডাক যোগাযোগও কার্যত বন্ধ৷ আপাতত জম্মু ও কাশ্মীরে কোনও চিঠি পাঠানো যাবে না । শুধু চিঠি নয়, নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সব ধরনের পার্সেল নিয়েও । শুধু কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই নয়, এই নির্দেশ পৌঁছেছে দেশের সর্বত্র । নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে এই সিদ্ধান্ত । তবে, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে ফেলার আগেই এই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে এবং সেখানে জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্য বলেই উল্লেখ করা হয়েছে । বলা হয়েছে, এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীর সার্কেলের জন্য কোনও ধরনের ‘মেইল’ বুক করা যাবে না । তার মধ্যে চিঠি যেমন রয়েছে, তেমনই সব ধরনের পার্সেলও রয়েছে । বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসও আপাতত জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের পরিষেবা বন্ধ রেখেছে বলে ডাক বিভাগ সূত্রে খবর ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর: নিয়ম মেনেই কি জম্মু ও কাশ্মীর ভাগ? অমিতের কাছে জবাব চাইলেন অধীর
যদিও, গত তিন দিনে উপত্যকায় কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি বলেই প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে ৷ জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, কোনওভাবেই হিংসাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না ৷ শান্তি বজায় রাখতে যে কোনওরকম পদক্ষেপ করতে প্রস্তুত প্রশাসন ৷ জম্মু-কাশ্মীরের DGP দলবীর সিংয়ের দাবি, উত্তর-দক্ষিণ-মধ্য কাশ্মীরের পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক ৷ একই সঙ্গে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী তিন মাসের জন্য জম্মু-কাশ্মীরে খাবার-পণ্য সবই মজুত আছে ৷ কাউকে কোনওরকম সমস্যায় পড়তে হবে না ৷
আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণরেখায় বজায় থাকুক শান্তি, বার্তা ট্রাম্প প্রশাসনের
প্রশাসনের তরফে যাই বলা হোক না কেন, ঠিক যেন অন্য গ্রহে পরিণত হয়েছে উপত্যকা ৷ কাজের সন্ধানে যাওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন তাঁদের আত্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না ৷ দিন তিনেক আগে শেষ বারের মতো বাড়ির লোকগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছিল৷ আবার কবে হবে, জানেন না কেউই ৷ তেমনই কেউ জানেন না, কবে আবার স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি? কবে আবার স্কুল খুলব? কবে আবার পর্যটকরা আসবেন? কবে মুক্তি দেওয়া হবে প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রীকে? এ সব প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে উপত্যাকার আকাশে-বাতাসে ৷