ভোপাল, 10 মার্চ : 15 মাসের মধ্যেই সংকটের মুখে কমল নাথের সরকার ৷ আজই দল থেকে পদত্যাগ করেছেন রাহুল গান্ধির অতি ঘনিষ্ঠ 'সৈনিক' জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ৷ তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস ছাড়তে চলেছেন আরও 17 জন ৷ কেউ কেউ বলছেন সংখ্যাটা 21 হতে যেতে পারে ৷ দিনের শেষে পরিস্থিতি যা, তাতে বৃহস্পতিবার ভোপালে আনুষ্ঠানিক ভাবে সিন্ধিয়া গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে পারেন সিন্ধিয়া ৷
227 আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় এই মুহূর্তে বিধায়ক সংখ্যা 224 (দুই জন প্রয়াত, এক জন সাসপেন্ড) ৷ কমল নাথের সঙ্গে এতদিন ছিলেন 120 জন ( এর মধ্যে কংগ্রেসের 114, অন্যান্য 6) ৷ সংখ্যা গরিষ্ঠতার জন্য দরকার 114 ৷ অর্থাৎ, ম্য়াজিক ফিগার থেকে মাত্র 6টি আসন বেশি ছিল কমল নাথের ৷ যদি, 21 জন ছেড়ে দেন তাহলে সংখ্য়াটি দাঁড়াবে 206 ৷ সংখ্য়া গরিষ্ঠতার জন্য দরকার 104 ৷ কংগ্রেস জোটে বিধায়ক সংখ্য়া দাঁড়াবে 99 ৷ তখন BJP বিধায়কের সংখ্যা হবে 107, যা ম্য়াজিক ফিগারের থেকে বেশি ৷ এই অংকে নতুন সরকার গড়তে পারে গেরুয়া শিবির ৷ আর জ্যোতিরাদিত্য যদি BJP তে যোগ দেন, সেক্ষেত্রে তাঁরই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, খবর রাজনৈতিক মহলের ৷
2018 সালের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে BJP-কে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস ৷ ওই জয়ের পিছনে মূল কাণ্ডারী হিসেবে তখন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার নাম উঠে এসেছিল ৷ কিন্তু তাঁর পরিবর্তে দলের প্রবীণ নেতা কমল নাথকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় ৷ এমনকী জ্যোতিরাদিত্যকে রাজ্যসভায় সাংসদও করেনি কংগ্রেস ৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদটিও হাতছাড়া হয় তাঁর ৷ এর পিছনে কমল নাথ ও দিগ্বিজয় সিংয়ের মতো প্রবীণ নেতাদের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল বলে তখন প্রশ্ন উঠেছিল কংগ্রেসের অন্দরমহলে ৷ সেই থেকেই জ্যোতিরাদিত্যর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে কংগ্রেসের ৷ এর মধ্য়ে রাহুল গান্ধি নিজেকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে নেওয়ায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন সিন্ধিয়া ৷ বাড়তে থাকে দল থেকে তাঁর দূরত্ব ৷
এক সময় রাহুলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ৷ রাহুলের পরবর্তী প্রজন্মের অন্যতম মুখও ছিলেন তিনি ৷ 2018 সালে 23 জন বিধায়কের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদারও ছিলেন ৷ মূলত তাঁর কাঁধের উপর ভর করেই 15 বছর পর মধ্যপ্রদেশে নিজেদের অস্তিত্ব ফিরে পায় কংগ্রেস ৷ এর পর এক সময় দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, সোশাল মিডিয়ায় নিজস্ব পরিচয় গড়ে তোলেন সিন্ধিয়া ৷ জল্পনা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল ৷ আজ সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন জ্যোতিরাদিত্য ৷
আরও পড়ুন : ইস্তফা দিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া
পদত্যাগের পর কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধিকে চিঠি লেখেন জ্যোতিরাদিত্য ৷ তাতে তিনি লেখেন, ‘‘18 বছর ধরে কংগ্রেসে থাকার পর সময় এসেছে এগিয়ে যাওয়ার ৷ গত এক বছর ধরে এই রাস্তাটা তৈরি হয়েছে ৷ আমি রাজ্যের ও দেশের জন্য কিছু করতে চাই ৷ যা এই দলে থেকে হবে না ৷ ’’ অর্থাৎ, তিনি যে আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তা স্পষ্ট ৷
কংগ্রেসের সঙ্গে সিন্ধিয়ার দূরত্বকে ফায়দায় পরিণত করে BJP ৷ অমিত শাহ নিজে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেন ৷ এবার অবশ্য মহারাষ্ট্রের মতো ভুল করেননি তিনি ৷ মধ্যপ্রদেশে BJP নেতৃত্ব ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বিষয়টি ৷ সিন্ধিয়ার মতো যুব নেতাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রদেশে ফের পদ্ম ফোটানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি অমিত ৷ দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন জ্যোতিরাদিত্য ৷ এরপর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র সিং, BJP সভাপতি জে পি নাড্ডা, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ও কয়েকজনকে নিয়ে বৈঠক করেন অমিত শাহ ৷ ওই বৈঠকে জ্যোতিরাদিত্য ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের পদত্যাগ এবং মধ্যপ্রদেশে সরকার গঠন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় ৷ এরপর গান্ধি পরিবারের হাত ছেড়ে মঙ্গলবার বেরিয়ে আসেন সিন্ধিয়া ৷ পদত্যাগ করেন কংগ্রেস থেকে ৷
আজ সন্ধেয় BJP-র কার্যালয়ে উপস্থিত হন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ ৷ মোদিকে অভ্যর্থনা জানান BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা ৷ এরপরে BJP-র কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠক শুরু হয় ৷ জে পি নাড্ডার নেতৃত্বে বৈঠকে যোগ দেন মোদি, শাহ-সহ দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ সবকিছু ঠিক থাকলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার BJP-তে যোগদান শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷
পুরনো দল ছাড়ার সময় জ্যোতিরাদিত্য বলেছিলেন, ‘সময় এসেছে এগিয়ে যাওয়ার’ ৷ এখন দেখার কতটা এগিয়ে যেতে পারেন একদা রাহুল ব্রিগেডের গুরুত্বপূর্ণ সৈনিকটি ৷