ক্যানিং, 27 নভেম্বর: প্রতিবছর শীতের মরশুমে সুন্দরবনে ঢল নামে পর্যটকদের। কিন্তু এবার সমস্যায় পড়ছেন অনেক পর্যটক। আগের মতো অবাধে জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি মিলছে না। আর অনুমতি না-মেলায় লোকালয় লাগোয়া নদীবক্ষে ভ্রমণ সেরেই ফিরতে হচ্ছে অনেককে। সে কারণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ পর্যটকরা।
গত 1 ডিসেম্বর থেকে ঠিক হয়েছে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের কাছাকাছি পর্যটক এবং লঞ্চ ও ভুটভুটি মিলিয়ে 150টি জলযান সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। আরও ঠিক হয়েছে বুকিং করতে হবে অনলাইনেই। এই সব শর্ত মানলে তবে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের জঙ্গল ও বন্যপ্রাণ দেখার সুযোগ হবে। অনলাইনে নির্ধারিত পর্যটক সংখ্যা পূরণ হয়ে গেলেই আর মিলছে না বুকিং। ফলে সমস্যায় পড়ছেন পর্যটকরা। হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁদের। অথবা গভীর জঙ্গল লাগোয়া নদী, খাঁড়ির পরিবর্তে লোকালয় লাগোয়া এলাকায় নদীবক্ষে ভ্রমণ করেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হচ্ছে তাঁদেরকে।
আগে অফলাইনে মিলত এই অনুমতি। কিন্তু সম্প্রতি, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প সম্পূর্ণ অনলাইনেই বুকিং ব্যবস্থা চালু করেছে। পর্যটক পিছু অনুমতি মূল্য, জলযানের অনুমতি মুল্য, গাইডের অনুমতি মূল্য সবই বাড়ানো হয়েছে । সে সবে সমস্যা না হলেও পর্যটকদের প্রবেশের ঊর্ধ্বসীমা ঠিক করে দেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পর্যটক শীতকালেই সুন্দরবনে আসে। এখন প্রতিদিন গড়ে দশ থেকে 12 হাজারের বেশি পর্যটক আসছেন ভ্রমণে।
সেখানে অর্ধেকের বেশি জঙ্গলের অভ্যন্তরে ভ্রমণের অনুমতি না-পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। পর্যটকদের একাংশ বলেন, "পরপর দু'দিন চেষ্টা করেও অনলাইনে বুকিং করতে পারিনি। তাই হতাশ হয়েই এবার ফিরে যেতে হচ্ছে।" এদিকে এই সমস্যার ফলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিদিনই বচসায় জড়াচ্ছেন পর্যটকরা। প্যাকেজ বুকিং করে এসে জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি না-পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তাঁদের অনেকেই।
ক্যানিংয়ের এক পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলেন, "অন্তত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি বন দফতর এই ঊর্ধ্বসীমার নিয়ম শিথিল করত তাহলেও কিছুটা সামলানো যেত। এখন প্রতিদিনই পর্যটকদের সঙ্গে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। বেড়াতে এসে তাঁরা জঙ্গল দর্শন না-করে ফিরে যাচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশও করছেন।"
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, "জঙ্গলে আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি পর্যটকদের ঢুকতে দিতে পারি না। কারণ ওখানে বন্যপ্রাণ রয়েছে। অতিরিক্ত জলযান প্রবেশে পরিবেশে দূষণ বাড়বে। ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষার জন্য বলা ভালো সুন্দরবনকে রক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"