ETV Bharat / bharat

বেসরকারিকরণের জন্য আদৌ কি প্রস্তুত রেল ?

author img

By

Published : Jul 8, 2020, 6:46 PM IST

রেলের বেসরকারিকরণের দিকে ঝুঁকছে ভারতীয় রেল ৷ যদিও এই পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ব্রিটেনের পরিস্থিতি দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত ভারতীয় রেলের ৷ যা প্রমাণ করে যে রেলের বেসরকারিকরণ একটি জটিল প্রক্রিয়া ৷

বেসরকারি ট্রেনের জন্য কি আদৌ প্রস্তুত ভারতীয় রেল?
বেসরকারি ট্রেনের জন্য কি আদৌ প্রস্তুত ভারতীয় রেল?

দিল্লি, 8 জুলাই: রেলের বেসরকারিকরণের দিকে প্রথম পদক্ষেপ করছে ভারতীয় রেল ৷ একাধিক ট্রেনকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চলেছে রেলমন্ত্রক ৷ ভারতীয় রেলের 1 জুলাইয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, দেশজুড়ে 109টি রুটে 151টি ট্রেন চালানোর জন্য আগ্রহী বেসরকারি সংস্থাগুলিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ৷ এতে ভারতীয় রেলে 30 হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে ৷ 2023 সাল থেকেই দেশের বিভিন্ন রুটে দৌড়বে বেসরকারি সংস্থার ট্রেন ৷

রেলমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়বে ৷ ট্রেনের পরিষেবা, সুরক্ষা, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকবে ওইসব সংস্থার উপর ৷ ট্রেনের আধুনিকীকরণ হবে ৷ এতে যাত্রীদের যাতায়াতের অভিজ্ঞতা আরও সুখকর হবে ৷ পরিবহন ক্ষেত্রে যাত্রীদের চাহিদার অভাব মিটবে ৷ তবে পরিষেবার ঘাটতি হলে সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে সংস্থাগুলি ৷ কিন্তু বিশ্বে রেলের বেসরকারিকরণের যেসব উদাহরণ রয়েছে তা প্রমাণ করে যে এই প্রক্রিয়াটি ভীষণ জটিল ৷ এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল ব্রিটেন ৷ 1993 সালে পুরোপুরিভাবে রেলকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ব্রিটেনে ৷ এতে খুব দ্রুত রেলের পরিকাঠামোর পরিবর্তন ঘটেছিল ৷ বিভিন্ন রুটে একাধিক সংস্থাকে ট্রেন চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ পরিকাঠামোর পৃথকীকরণ খুব খারাপভাবে ব্যর্থ হয়েছিল ৷ তখন থেকে রেলওয়ে ট্র্যাকের দায়িত্ব সরকারের হাতে রয়েছে ৷ তবে এখনও ব্রিটেনের বেশিরভাগ রুটে বেসরকারি সংস্থার ট্রেন চলে ৷

এক্ষেত্রে অবশ্য তর্ক থাকতে পারে ৷ কারণ ব্রিটেন ও ভারতের ভৌগোলিক পরিস্থিতি এক নয় ৷ পাশাপাশি ব্রিটেনের মতো ভারতীয় রেল পুরোপুরি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না ৷ যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে মাত্র 5 শতাংশ থাকবে বেসরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে ৷ জানিয়েছেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনোদকুমার যাদব ৷ যাত্রীরাই এসব সংস্থার পরিষেবার মানের মূল্যায়ন করবে ৷ সরকার সেই মূল্যায়ন খতিয়ে দেখবে ৷ তবে এতেও কিছু সমস্যা থেকে যাচ্ছে ৷ রেলের সাধারণ পরিকাঠামো (রেলপথ, সিগনেলিং সিস্টেম) ব্যবহার করে প্রাইভেট ট্রেন ও সরকারি ট্রেনগুলি চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে ৷ 2023 থেকে বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, জয়পুর, দিল্লি, মুম্বই, পটনা, প্রয়াগরাজ, সেকেন্দ্রাবাদ, হাওড়া, চেন্নাইয়ের রুটগুলিতে দৌড়াবে প্রাইভেট ট্রেন ৷ অথচ এই রুটগুলির নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে ৷ পাশাপাশি সময়সূচির ক্ষেত্রে কোনও একটি সংস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়া অন্যায় হবে ৷ প্রকল্পটির সাফল্যের জন্য একটি স্বনিয়ন্ত্রক বোর্ড গড়ারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে ৷ তখন ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলির প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে ভারতীয় রেল ৷ স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠলেও অন্যায়ের কিছু থাকবে না ৷ একটি স্বনিয়ন্ত্রক বোর্ড নীতি ও পদ্ধতিগুলির সঙ্গে যাত্রীদের সুরক্ষা ও সরকারি পরিবহন ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত জরুরি তদারকিও করবে ৷

তবে এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি সবার প্রথমে উঠছে তা হল ভাড়া ৷ রেল বেসরকারি হাতে গেলে ট্রেনের ভাড়াও বাড়বে ৷ ভাড়া বাড়িয়ে মুনাফা তুলবে সংস্থাগুলি ৷ প্রশ্ন হচ্ছে ভাড়ার ক্ষেত্রে সংস্থাগুলিকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে নাকি সেখানে সরকারের হাত থাকবে ? এই বিষয়ে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনোদকুমার যাদব বলেছেন, প্রাইভেট ট্রেনগুলির ভাড়া প্রতিযোগিতামূলক হবে ও বিমান, বাসের মতোই ভাড়া নির্ধারণের সময় বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে ৷

তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি ৷ টুইটে তিনি লিখেছেন, "রেল হল দেশের গরিবদের লাইফলাইন ৷ আর সরকার গরিবদের থেকে তাদের জীবনের গতি কেড়ে নিচ্ছে ৷ যা ইচ্ছে করো তবে মানুষ এর জবাব দেবে ৷"

দিল্লি, 8 জুলাই: রেলের বেসরকারিকরণের দিকে প্রথম পদক্ষেপ করছে ভারতীয় রেল ৷ একাধিক ট্রেনকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চলেছে রেলমন্ত্রক ৷ ভারতীয় রেলের 1 জুলাইয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, দেশজুড়ে 109টি রুটে 151টি ট্রেন চালানোর জন্য আগ্রহী বেসরকারি সংস্থাগুলিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ৷ এতে ভারতীয় রেলে 30 হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে ৷ 2023 সাল থেকেই দেশের বিভিন্ন রুটে দৌড়বে বেসরকারি সংস্থার ট্রেন ৷

রেলমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়বে ৷ ট্রেনের পরিষেবা, সুরক্ষা, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকবে ওইসব সংস্থার উপর ৷ ট্রেনের আধুনিকীকরণ হবে ৷ এতে যাত্রীদের যাতায়াতের অভিজ্ঞতা আরও সুখকর হবে ৷ পরিবহন ক্ষেত্রে যাত্রীদের চাহিদার অভাব মিটবে ৷ তবে পরিষেবার ঘাটতি হলে সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে সংস্থাগুলি ৷ কিন্তু বিশ্বে রেলের বেসরকারিকরণের যেসব উদাহরণ রয়েছে তা প্রমাণ করে যে এই প্রক্রিয়াটি ভীষণ জটিল ৷ এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল ব্রিটেন ৷ 1993 সালে পুরোপুরিভাবে রেলকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ব্রিটেনে ৷ এতে খুব দ্রুত রেলের পরিকাঠামোর পরিবর্তন ঘটেছিল ৷ বিভিন্ন রুটে একাধিক সংস্থাকে ট্রেন চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ পরিকাঠামোর পৃথকীকরণ খুব খারাপভাবে ব্যর্থ হয়েছিল ৷ তখন থেকে রেলওয়ে ট্র্যাকের দায়িত্ব সরকারের হাতে রয়েছে ৷ তবে এখনও ব্রিটেনের বেশিরভাগ রুটে বেসরকারি সংস্থার ট্রেন চলে ৷

এক্ষেত্রে অবশ্য তর্ক থাকতে পারে ৷ কারণ ব্রিটেন ও ভারতের ভৌগোলিক পরিস্থিতি এক নয় ৷ পাশাপাশি ব্রিটেনের মতো ভারতীয় রেল পুরোপুরি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না ৷ যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে মাত্র 5 শতাংশ থাকবে বেসরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে ৷ জানিয়েছেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনোদকুমার যাদব ৷ যাত্রীরাই এসব সংস্থার পরিষেবার মানের মূল্যায়ন করবে ৷ সরকার সেই মূল্যায়ন খতিয়ে দেখবে ৷ তবে এতেও কিছু সমস্যা থেকে যাচ্ছে ৷ রেলের সাধারণ পরিকাঠামো (রেলপথ, সিগনেলিং সিস্টেম) ব্যবহার করে প্রাইভেট ট্রেন ও সরকারি ট্রেনগুলি চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে ৷ 2023 থেকে বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, জয়পুর, দিল্লি, মুম্বই, পটনা, প্রয়াগরাজ, সেকেন্দ্রাবাদ, হাওড়া, চেন্নাইয়ের রুটগুলিতে দৌড়াবে প্রাইভেট ট্রেন ৷ অথচ এই রুটগুলির নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে ৷ পাশাপাশি সময়সূচির ক্ষেত্রে কোনও একটি সংস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়া অন্যায় হবে ৷ প্রকল্পটির সাফল্যের জন্য একটি স্বনিয়ন্ত্রক বোর্ড গড়ারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে ৷ তখন ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলির প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে ভারতীয় রেল ৷ স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠলেও অন্যায়ের কিছু থাকবে না ৷ একটি স্বনিয়ন্ত্রক বোর্ড নীতি ও পদ্ধতিগুলির সঙ্গে যাত্রীদের সুরক্ষা ও সরকারি পরিবহন ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত জরুরি তদারকিও করবে ৷

তবে এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি সবার প্রথমে উঠছে তা হল ভাড়া ৷ রেল বেসরকারি হাতে গেলে ট্রেনের ভাড়াও বাড়বে ৷ ভাড়া বাড়িয়ে মুনাফা তুলবে সংস্থাগুলি ৷ প্রশ্ন হচ্ছে ভাড়ার ক্ষেত্রে সংস্থাগুলিকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে নাকি সেখানে সরকারের হাত থাকবে ? এই বিষয়ে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনোদকুমার যাদব বলেছেন, প্রাইভেট ট্রেনগুলির ভাড়া প্রতিযোগিতামূলক হবে ও বিমান, বাসের মতোই ভাড়া নির্ধারণের সময় বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে ৷

তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি ৷ টুইটে তিনি লিখেছেন, "রেল হল দেশের গরিবদের লাইফলাইন ৷ আর সরকার গরিবদের থেকে তাদের জীবনের গতি কেড়ে নিচ্ছে ৷ যা ইচ্ছে করো তবে মানুষ এর জবাব দেবে ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.