INS অরিহন্ত ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ডুবোজাহাজ অরিহন্ত ক্লাসের প্রধান ডুবোজাহাজ ৷ ছয় হাজার টনের এই ডুবোজাহাজ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ভেসেল প্রযুক্তির অধীনে তৈরি করা হয় ৷ বিশাখাপটনমে শিপ বিল্ডিং সেন্টারে এই ডুবোজাহাজ তৈরি করা হয় ৷ এই ডুবোজাহাজের কোড নাম S2 ৷ ভারতের তরফে অরিহন্তকে স্ট্র্যাটেজিক স্ট্রাইক নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ৷
2009 সালে কার্গিল বিজয় দিবসে উদ্বোধন করা হয়েছিল অরিহন্তের ৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর উদ্বোধন করেছিলেন ৷ 2016 সালে বিভিন্ন সামুদ্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর যেকোনও অভিযানের জন্য তৈরি অরিহন্ত ৷
ভারতীয় নৌসেনার সিক্রেটিভ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ভেসেল প্রোজেক্টের অধীনে থাকা প্রথম পাঁচটির মধ্যে একটি অরিহন্ত ৷ এই অরিহন্ত-ক্লাস ডুবোজাহাজগুলি আকুলা-ক্লাস ডুবোজাহাজের ডিজ়াইনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে ৷ এই ডুবোজাহাজের ক্রু INS চক্রতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পায় ৷
এই ডুবোজাহাজে এনরিচড ইউরেনিয়াম ফুয়েল-সহ 83 MW প্রেশারাইজ়ড লাইট-ওয়াটার রিঅ্যাক্টর থাকে ৷ এই রিঅ্যাক্টরের ভূমি-ভিত্তিক প্রোটোটাইপ প্রথম তৈরি করা হয়েছিল কলপক্কমে ৷ তিনবছরের পরীক্ষার পর তা অরিহন্তের সঙ্গে যুক্ত করা হয় ৷
রণসজ্জা
অরিহন্তে চারটি উল্লম্ব উৎক্ষেপণ টিউব রয়েছে ৷ প্রতিটিতে তিনটি করে মোট 12টি ছোটো K-5 ক্ষেপণাস্ত্র বা চারটি বড় K-4 ক্ষেপণাস্ত্র থাকে ৷ K-4 ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার ৷ এর পরীক্ষামূলক কার্যকলাপ বর্তমানে চলছে ৷
অরিহন্তের অভিযান ইতিহাস
ভারতীয় নৌসেনার অধীনে 2016 সাল থেকে যাত্রা শুরু করে INS অরিহন্ত ৷ 2017 সালে অরিহন্তের বাইরের দেওয়াল নোনা জলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৷ এটি মেরামত করার জন্য অরিহন্তকে ফিরিয়ে আনা হয় ৷ 10 মাস ধরে এই ডুবোজাহাজের ক্ষতিগ্রস্ত পাইপ প্রতিস্থাপিত করা হয় ৷
অরিহন্তের ইতিহাস
ভারত অন্য অনেক প্রকল্পের মতো এই পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজের নির্মাণকাজ খুব গোপনে শুরু করেছিল । 2009 সালে INS অরিহন্ত তৈরির কথা প্রথমবার প্রকাশ্যে আনেন তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী । সে বছরই পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য সমুদ্রে পাঠানো হয় অরিহন্তকে । কিন্তু তখনও এই ডুবোজাহাজে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বা পরমাণু চুল্লিটি লাগানো হয়নি ।
2010 সালে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর লাগানো হয় INS অরিহন্তে । 2013 সালে সেই নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর চালু করা হয় । 2014 সালের মধ্যে INS অরিহন্ত যে কোনও ধরনের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে মনে করা হয়েছিল । কিন্তু তা হয়নি । সমুদ্রের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিতে আইএনএস অরিহন্ত কতটা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারে, সেই পরীক্ষা শেষ করতে সময় লেগে যায় অনেকটা ।
এই পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করা এবং সমুদ্রগর্ভ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলা চালানোর মহড়া দেওয়ারও দরকার ছিল । সব রকম পরীক্ষা এবং মহড়ার পর নৌসেনা তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী INS অরিহন্তের পারদর্শীতা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট । বর্তমানে যে কোনও রকম যুদ্ধ বা অভিযানের জন্য INS অরিহন্ত সম্পূর্ণ তৈরি ।