ETV Bharat / bharat

কাশ্মীরে তথ্য়যুদ্ধ

কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলা নিয়ে এই দীর্ঘ ইতিহাসে কোথাও যেন উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচার, ভুয়ো খবর ও একতরফা জ্ঞাপনের ভূমিকা রয়েছে । তাই জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের উদ্দেশে বার্তা জ্ঞাপনের সময় সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে । তাই কোথাও যেন এটি একরকম তথ্য যুদ্ধ ।

information-war-in-kashmir
কাশ্মীরে তথ্য়যুদ্ধ
author img

By

Published : May 20, 2020, 8:12 PM IST

Updated : May 20, 2020, 11:27 PM IST

কাশ্মীরের সংঘাতকে প্রায়শই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা চালিত ছায়া যুদ্ধ বলা হয় ৷ প্রশাসনের একাংশ বলেন, সীমান্তের এপারে আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদরাও এতে মদত দেন । এতে অংশ নিতে কিছু পথভ্রষ্ট ও মৌলবাদী স্থানীয় যুবক হাতে বন্দুক তুলে নেয় ৷ এধরনের বর্ণনা যে একেবারে ভুল, তা নয় ৷ কিন্তু এর মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার আসল ছবিটা উঠে আসে না ৷

জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনও সশস্ত্র বিদ্রোহ তিরিশ বছর ধরে চলতে পারে না ৷ সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের মদতকে দুর্বল করা এবং হিংসাত্মক ঘটনা রুখে দেওয়া ছাড়া কাশ্মীরের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সূত্র খুঁজতে হলে আমাদের নাগরিকদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে । কাশ্মীরে সন্ত্রাসের পরিবর্তে ‘বিদ্রোহ’ শব্দটি ব্যবহারের জন্য কেউ আপত্তি তোলার আগে এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে বিদ্রোহের সময় সন্ত্রাসবাদকেও একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় ৷

বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াইকে প্রায়ই ‘হার্টস অ্যান্ড মাইন্ডস’ প্রচার বলে অভিহিত করা হয় ৷ কিন্তু বাস্তবে এই অভিযানগুলির সঙ্গে হৃদয়ের চেয়ে মাথার সম্পর্ক আরও বেশি । আজকের পৃথিবীতে যেখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার এবং ভুয়ো খবর বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে কোনও দ্বন্দ্ব মেটাতে মানুষের মনকে প্রভাবিত করাই আসল চ্যালেঞ্জ ৷ সন্ত্রাসবাদী এবং সরকার উভয়পক্ষই জনগণকে নিজেদের দিকে রাখতে তথ্য ছড়ানোর কৌশল নেয় ৷ যাতে জনগণের আস্থা ও আনুগত্য অর্জন করা যায় ৷ সামরিক ক্ষেত্রে, এটিকে তথ্য যুদ্ধ বলা হয় ৷

এই যুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীরা এগিয়ে থাকে ৷ কারণ, তারা মূলত ভুয়ো খবরের উপর নির্ভর করে ৷ উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, ‘‘সত্য নিজের প্যান্ট পরার আগেই অর্ধেক বিশ্বে মিথ্যা ছড়িয়ে যায় ৷’’ এটা এমন এক সময়ে বলা হয়েছিল, যখন বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের মূল মাধ্যম ছিল রেডিয়ো এবং টেলিগ্রাফ ৷ আর এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের যে কোনও জায়গায় যোগাযোগ করা যায় ৷ ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির তরফে করা 2018 সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে মিথ্যে সংবাদ সত্যি সংবাদের তুলনায় 70 শতাংশ বেশি রিটুইট হয়েছে ৷ সত্যি ঘটনার চেয়ে মিথ্যে ঘটনা ছয়গুণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ৷

জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তানের তরফে মূলত দু’টি বিষয়কে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচার চলতে থাকে ৷ প্রথমটি হল কাশ্মীরের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জাতিগত পরিচয়ের রক্ষাকারী হিসেবে সন্ত্রাসীদের চিত্রিত করা ৷ যারা নাকি ক্রমবর্ধমান হিন্দু জাতীয়তাবাদের থেকে কাশ্মীরের মানুষজনকে রক্ষা করবে ৷ দ্বিতীয়টি হল কাশ্মীরের জনগণকে কোনও নির্দিষ্ট ইশুতে দমিয়ে দেওয়া ও সুরক্ষাবাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিষয়টিকে তুলে ধরতে হবে । এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, যাতে এই দু’টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচারকে প্রতিহত করতে পারে ভারত সরকারের তথ্যপ্রদান এবং গণজ্ঞাপনের রণকৌশল ।

দ্বিতীয় বিষয়টি সম্ভবত খুব সহজেই দূর করা সম্ভব ৷ কারণ, এর জন্য ধারাবাহিকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে ৷ যা ইতিমধ্যে সুরক্ষাবাহিনী করে দেখিয়েছে । এমনকি যখন শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন হয়, তখন সন্ত্রাসবাদীদের এমনভাবে নিশানা করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি কম হয় ৷ যারা সেনাবাহিনীর হাত শক্ত করা, বা নাগরিক এলাকায় নানা অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কথা বলে,তাদের কথায় প্রভাবিত হলে চলবে না ৷

কিছু সংস্থা মানবাধিকার সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে ভারতের আচরণে স্বচ্ছতার অভাবকে দর্শায় । এটা ঠিক জাতীয় সুরক্ষার সঙ্গে কখনওই আপোস করা যায় না ৷ কিন্তু আমাদের অবশ্যই আলাদা এবং ভিন্নমত পোষণকারী কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে দেওয়া উচিত নয় । এক্ষেত্রে একটু উদার হতে পারলে সরকারের উপর হয়তো আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে ।

জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ধর্মীয় ও জাতিগত ক্ষেত্রে নানা হুমকির শিকার হতে হয় । এই সকল মানুষকে আশ্বস্ত করা আরও বড় চ্যালেঞ্জ । পাকিস্তান বা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি এই ইশুকে হাতিয়ার করে ধারাবাহিকভাবে প্রচার চালাচ্ছে ৷ এবং 370 ধারা , নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও ফেব্রুয়ারিতে ঘটা দিল্লির হিংসা তাদের হাতে একপ্রকার নতুন নতুন অস্ত্র তুলে দিচ্ছে ৷

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার পাকিস্তানের অপপ্রচারকে মোকাবিলায় বা স্বপক্ষে কিছু বলার জন্য তেমন আগ্রহ দেখায়নি ৷ একদিকে যখন জম্মু ও কাশ্মীরে হাই স্পিড ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে । ভুয়ো খবর যাতে না পৌঁছায় সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে । তখন অন্যদিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চরম মুসলিম বিরোধী প্রচার কমাতে খুব বেশি কিছু করা করা হয়নি ৷ সাধারণের আবেগকে সংযত করতে বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের বার্তা দেওয়ার বিষয়টি কোথাও যেন হয় নেই নয়তো কোনওরকম কাজ করছে না ।

এটি বোঝাও খুব জরুরি যে, কোনও বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কথা বাধ্যতামূলক নয় ৷ বার্তার সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থাৎ কাজের বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে । সহানুভূতির পাশাপাশি যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিগুলির বাস্তবায়নের কোনও অগ্রগতি চোখে না পড়ে, তাহলে এধরনের বার্তার কোনও প্রভাব থাকবে না ।

জম্মু ও কাশ্মীরে তথ্য পৌঁছানোর উপর যথাযথ নজরদারি চালাতে সরকারকে গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নিতে হবে । এর জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি টিমের প্রয়োজন ৷ যে টিম সোশাল মিডিয়া ও অন্যান্য বিষয়বস্তুর বিশদে বিশ্লেষণ করবে ৷ এর পাশাপাশি স্থানীয়, আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে রণকৌশল তৈরি করবে । এক্ষেত্রে বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমগুলিকেও ভূমিকা নিতে হবে । ভুয়ো খবর এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে তাদের।

মানুষের মনোভাবকে বদল করতে কিংবা প্রভাবিত করতে শেষপর্যন্ত সমস্ত ক্ষমতার প্রয়োগের করা হয় । পাকিস্তান প্রথমে কাশ্মীরে তথ্য ছড়ানোর কাজ করে ৷ তারপর সন্ত্রাসবাদী হামলা করে । এটা বোঝানোর জন্য যে জনগণের মধ্যে গভীর অসন্তোষ রয়েছে ৷ আমরা এমন একটি প্রতিযোগিতায় রয়েছি, যেখানে এই লড়াইয়ে দ্বিতীয় লক্ষ্যের উপর নজর দিলে তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাবে ৷ ফলে সাফল্যের সম্ভাবনা কমই থাকবে ৷

প্রতিবেদনটি লিখেছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনেরাল ডি এস হুডা (2016 সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি)

কাশ্মীরের সংঘাতকে প্রায়শই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা চালিত ছায়া যুদ্ধ বলা হয় ৷ প্রশাসনের একাংশ বলেন, সীমান্তের এপারে আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদরাও এতে মদত দেন । এতে অংশ নিতে কিছু পথভ্রষ্ট ও মৌলবাদী স্থানীয় যুবক হাতে বন্দুক তুলে নেয় ৷ এধরনের বর্ণনা যে একেবারে ভুল, তা নয় ৷ কিন্তু এর মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার আসল ছবিটা উঠে আসে না ৷

জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনও সশস্ত্র বিদ্রোহ তিরিশ বছর ধরে চলতে পারে না ৷ সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের মদতকে দুর্বল করা এবং হিংসাত্মক ঘটনা রুখে দেওয়া ছাড়া কাশ্মীরের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সূত্র খুঁজতে হলে আমাদের নাগরিকদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে । কাশ্মীরে সন্ত্রাসের পরিবর্তে ‘বিদ্রোহ’ শব্দটি ব্যবহারের জন্য কেউ আপত্তি তোলার আগে এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে বিদ্রোহের সময় সন্ত্রাসবাদকেও একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় ৷

বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াইকে প্রায়ই ‘হার্টস অ্যান্ড মাইন্ডস’ প্রচার বলে অভিহিত করা হয় ৷ কিন্তু বাস্তবে এই অভিযানগুলির সঙ্গে হৃদয়ের চেয়ে মাথার সম্পর্ক আরও বেশি । আজকের পৃথিবীতে যেখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার এবং ভুয়ো খবর বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে কোনও দ্বন্দ্ব মেটাতে মানুষের মনকে প্রভাবিত করাই আসল চ্যালেঞ্জ ৷ সন্ত্রাসবাদী এবং সরকার উভয়পক্ষই জনগণকে নিজেদের দিকে রাখতে তথ্য ছড়ানোর কৌশল নেয় ৷ যাতে জনগণের আস্থা ও আনুগত্য অর্জন করা যায় ৷ সামরিক ক্ষেত্রে, এটিকে তথ্য যুদ্ধ বলা হয় ৷

এই যুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীরা এগিয়ে থাকে ৷ কারণ, তারা মূলত ভুয়ো খবরের উপর নির্ভর করে ৷ উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, ‘‘সত্য নিজের প্যান্ট পরার আগেই অর্ধেক বিশ্বে মিথ্যা ছড়িয়ে যায় ৷’’ এটা এমন এক সময়ে বলা হয়েছিল, যখন বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের মূল মাধ্যম ছিল রেডিয়ো এবং টেলিগ্রাফ ৷ আর এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের যে কোনও জায়গায় যোগাযোগ করা যায় ৷ ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির তরফে করা 2018 সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে মিথ্যে সংবাদ সত্যি সংবাদের তুলনায় 70 শতাংশ বেশি রিটুইট হয়েছে ৷ সত্যি ঘটনার চেয়ে মিথ্যে ঘটনা ছয়গুণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ৷

জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তানের তরফে মূলত দু’টি বিষয়কে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচার চলতে থাকে ৷ প্রথমটি হল কাশ্মীরের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জাতিগত পরিচয়ের রক্ষাকারী হিসেবে সন্ত্রাসীদের চিত্রিত করা ৷ যারা নাকি ক্রমবর্ধমান হিন্দু জাতীয়তাবাদের থেকে কাশ্মীরের মানুষজনকে রক্ষা করবে ৷ দ্বিতীয়টি হল কাশ্মীরের জনগণকে কোনও নির্দিষ্ট ইশুতে দমিয়ে দেওয়া ও সুরক্ষাবাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিষয়টিকে তুলে ধরতে হবে । এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, যাতে এই দু’টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচারকে প্রতিহত করতে পারে ভারত সরকারের তথ্যপ্রদান এবং গণজ্ঞাপনের রণকৌশল ।

দ্বিতীয় বিষয়টি সম্ভবত খুব সহজেই দূর করা সম্ভব ৷ কারণ, এর জন্য ধারাবাহিকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে ৷ যা ইতিমধ্যে সুরক্ষাবাহিনী করে দেখিয়েছে । এমনকি যখন শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন হয়, তখন সন্ত্রাসবাদীদের এমনভাবে নিশানা করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি কম হয় ৷ যারা সেনাবাহিনীর হাত শক্ত করা, বা নাগরিক এলাকায় নানা অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কথা বলে,তাদের কথায় প্রভাবিত হলে চলবে না ৷

কিছু সংস্থা মানবাধিকার সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে ভারতের আচরণে স্বচ্ছতার অভাবকে দর্শায় । এটা ঠিক জাতীয় সুরক্ষার সঙ্গে কখনওই আপোস করা যায় না ৷ কিন্তু আমাদের অবশ্যই আলাদা এবং ভিন্নমত পোষণকারী কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে দেওয়া উচিত নয় । এক্ষেত্রে একটু উদার হতে পারলে সরকারের উপর হয়তো আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে ।

জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ধর্মীয় ও জাতিগত ক্ষেত্রে নানা হুমকির শিকার হতে হয় । এই সকল মানুষকে আশ্বস্ত করা আরও বড় চ্যালেঞ্জ । পাকিস্তান বা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি এই ইশুকে হাতিয়ার করে ধারাবাহিকভাবে প্রচার চালাচ্ছে ৷ এবং 370 ধারা , নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও ফেব্রুয়ারিতে ঘটা দিল্লির হিংসা তাদের হাতে একপ্রকার নতুন নতুন অস্ত্র তুলে দিচ্ছে ৷

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার পাকিস্তানের অপপ্রচারকে মোকাবিলায় বা স্বপক্ষে কিছু বলার জন্য তেমন আগ্রহ দেখায়নি ৷ একদিকে যখন জম্মু ও কাশ্মীরে হাই স্পিড ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে । ভুয়ো খবর যাতে না পৌঁছায় সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে । তখন অন্যদিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চরম মুসলিম বিরোধী প্রচার কমাতে খুব বেশি কিছু করা করা হয়নি ৷ সাধারণের আবেগকে সংযত করতে বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের বার্তা দেওয়ার বিষয়টি কোথাও যেন হয় নেই নয়তো কোনওরকম কাজ করছে না ।

এটি বোঝাও খুব জরুরি যে, কোনও বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কথা বাধ্যতামূলক নয় ৷ বার্তার সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থাৎ কাজের বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে । সহানুভূতির পাশাপাশি যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিগুলির বাস্তবায়নের কোনও অগ্রগতি চোখে না পড়ে, তাহলে এধরনের বার্তার কোনও প্রভাব থাকবে না ।

জম্মু ও কাশ্মীরে তথ্য পৌঁছানোর উপর যথাযথ নজরদারি চালাতে সরকারকে গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নিতে হবে । এর জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি টিমের প্রয়োজন ৷ যে টিম সোশাল মিডিয়া ও অন্যান্য বিষয়বস্তুর বিশদে বিশ্লেষণ করবে ৷ এর পাশাপাশি স্থানীয়, আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে রণকৌশল তৈরি করবে । এক্ষেত্রে বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমগুলিকেও ভূমিকা নিতে হবে । ভুয়ো খবর এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে তাদের।

মানুষের মনোভাবকে বদল করতে কিংবা প্রভাবিত করতে শেষপর্যন্ত সমস্ত ক্ষমতার প্রয়োগের করা হয় । পাকিস্তান প্রথমে কাশ্মীরে তথ্য ছড়ানোর কাজ করে ৷ তারপর সন্ত্রাসবাদী হামলা করে । এটা বোঝানোর জন্য যে জনগণের মধ্যে গভীর অসন্তোষ রয়েছে ৷ আমরা এমন একটি প্রতিযোগিতায় রয়েছি, যেখানে এই লড়াইয়ে দ্বিতীয় লক্ষ্যের উপর নজর দিলে তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাবে ৷ ফলে সাফল্যের সম্ভাবনা কমই থাকবে ৷

প্রতিবেদনটি লিখেছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনেরাল ডি এস হুডা (2016 সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি)

Last Updated : May 20, 2020, 11:27 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.