প্রশ্ন: লকডাউনের জেরে ভারতে হওয়া খাদ্য সংকটের পরিস্থিতি বর্তমানে ঠিক কেমন ?
গণবণ্টন ব্যবস্থা (PDS) ক্ষুধা নিবৃত্তি করতে পারে অনেকাংশেই । তিন মাসের জন্য ভরতুকিযুক্ত খাদ্যশস্যের পরিমাণ দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের ভাল পদক্ষেপ । কিন্তু PDS-এর আওতার বাইরে ৫০ কোটি মানুষ আছেন । তাদের মধে্য সকলেই যে দরিদ্র, তা নয় ৷ কিন্তু বেশিরভাগই দরিদ্র । প্যানডেমিকের জন্য এদের মধে্য সংখ্যাগরিষ্ঠই দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছেন । ঝাড়খণ্ডে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ বাস করছেন রেশন কার্ড ছাড়াই । এই খাদ্য সংকটের পরিধি নিরুপণ করা কঠিন কিন্তু আমরা অত্যন্ত সংকটজনক মোড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি । এর মোকাবিলা করার জন্য এই সমস্ত পরিবারকে PDS-এর আওতাভুক্ত করতে হবে । ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (FCI) এর কাছে প্রচুর খাবার মজুত আছে । সরকারের উচিত অবিলম্বে সেই সব খাদ্য শস্য বণ্টন করা ।
প্রশ্ন: পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার কী কোনও জরুরি পদক্ষেপ করছে ?
রাজ্য সরকারগুলির তরফে নেওয়া পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগকে সমর্থন করে কেন্দ্র আরও ভালোভাবে নিজের ভূমিকা পালন করতে পারে । কেন্দ্রের উচিত রাজ্যগুলিকে খাবারের যোগান দেওয়া এবং নন-রেশন কার্ড হোল্ডারদেরও খাদ্যশস্য বণ্টন করা । যেহেতু রাজস্বে ঘাটতি হয়েছে, সুতরাং কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত রাজ্যগুলিকে দেওয়া আর্থিক অনুদানের পরিমাণ বাড়ানো । ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়েমেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্টের আওতায় কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকাগুলির উচিত একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা । PDS, পেনশন, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলি দরিদ্রদের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে । জনকল্যাণমূলক কাজ যেমন গণ-হেঁসেল তৈরি করা এবং সত্ত্বভোগীদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো এক্ষেত্রে সহায়ক হবে । অন্যান্য জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিও আরও সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত করা উচিত ।
প্রশ্ন: ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বড় খাদ্য সংকট কি আগে হয়েছে?
স্বাধীনতার আগে ভারত সাক্ষী ছিল বাংলার দুর্ভিক্ষের । বর্তমানে যা আমরা দেখছি, তার থেকে তখন পরিস্থিতি অনেক বেশি ভয়ংকর ছিল । তারপর দুর্ভিক্ষের ফলে মাঝেমাঝে খাদ্যসামগ্রীর ঘাটতির ঘটনা ঘটেছে । ১৯৬৬-৬৭ সালে আমরা বিহারের মহাদুর্ভিক্ষ দেখেছি । বর্তমানে যে খাদ্য সংকট চলছে, স্বাধীনতার পর থেকে এমন ভয়ানক সংকট হয়নি ।
প্রশ্ন: পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রস্থানের ঘটনা সামাল দিতে সরকারের ব্যর্থতার নেপথ্যে কী কী কারণ আছে?
সাধারণত পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী কিছুটা হলেও রূঢ় । এবার সেই দৃষ্টিভঙ্গী আমরা সকলে দেখতে পেয়েছি টিভি এবং ইন্টারনেটের সৌজন্যে । গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কেন্দ্র এবং আশ্রয়দাতা রাজ্যগুলি পরিযায়ী শ্রমিকদের দূরবস্থার ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নিষ্ঠুর পদক্ষেপ করছে । কাজ না পেয়ে, খাবার না পেয়ে, এমনকী, সরকারের তরফে কোনও সাহায্যও না পেয়ে এই শ্রমিকরা নিজেদের বাড়ি পৌঁছতে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ হাঁটাকেই বিকল্প হিসাবে বেছে নিয়েছে । দরিদ্রদের প্রতি আমাদের মানসিকতার এটাই প্রতিবিম্ব । সংকটে তাদের সাহায্য করার বদলে আমরা তাদের রসাতলের আরও গভীরে ঠেলে দিয়েছি ।
প্রশ্ন: ভারত কি বড়সড় পুষ্টি সংকটের মুখে পড়তে চলেছে?
নিশ্চয়ই । সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে ভোগা জনসংখ্যার হার রয়েছে ভারতেরই । PDS এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্প সত্ত্বেও ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য বেশিরভাগ মানুষের কাছে হয় শূন্য বা নামমাত্র উপায় রয়েছে । পুষ্টির মাপকাঠি কেবল পেট ভরা খাবার নয় । বরং সুষম পুষ্টির তালিকায় পড়ে সঠিক সময় খাওয়ার অভ্যাস, পরিষ্কার খাবার এবং জল । ভারতীয় দরিদ্ররা এর কোনওটিই পায় না । সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এই লকডাউন । সরকারের থেকে আর্থিক সাহায্য না পেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠবে ।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে রাজ্যগুলির কি আরও বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত? এরকম কোনও উদ্যোগ কি নেওয়া হয়েছে?
দরিদ্র রাজ্য যেমন, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির আরও সাহায্য প্রয়োজন । তারা সমূহ ক্ষতির মুখে পড়েছে । উত্তর-পূর্বের সুলভ শ্রমিকদের মাধ্যমে সংস্থাগুলি উপকৃত হয়েছে কিন্তু এই শ্রমিকরাই যখন সংকটের মুখে পড়েছে, তখন তাদের সংস্থাগুলি পরিত্যাগ করেছে । কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া এই সব রাজ্য এই শ্রমিকদের কোনওভাবেই সাহায্য করতে পারবে না । বরং কেন্দ্রের উচিত পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করতে আরও বেশি দায়িত্ব গ্রহণ করা ।
প্রশ্ন: শ্রমিকরা নিজেদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার পর তাঁদের পুনরায় ভিন রাজ্যে কাজে ফেরার সম্ভাবনা কম । এতে সেই সব রাজ্য শ্রমিক সংখ্যার ঘাটতির মুখে পড়বে । আপনি কী বলেন?
একদিন না একদিন পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজে ফিরবেই । তবে কিছুদিনের জন্য তারা তাঁদের নিজ রাজ্যে কাজ খুঁজে নিতে পারে । বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে শ্রমিক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মজুরি কমে গিয়েছে । শিল্পপতিরা এর অন্যায্য সুযোগ নিতে পারেন । আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি শ্রমিকদের জন্য সহায়ক, এমন শ্রম আইনে পরিবর্তন আনতে, আগের সেই সব আইন বাতিল করছে বেশ কিছু রাজ্য । কর্মসংস্থানের অভাব এবং খাদ্য সংকট এই শ্রমিকদের আরও শোচনীয় অবস্থার মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে, যা তাদের শ্রম আইনে হওয়া এই সব পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধা দিচ্ছে ।