দিল্লি, 21 মার্চ : হাসপাতাল চত্বরে ঢুকলে, সেখানকার পরিচ্ছন্ন ও সুখকর আবহাওয়ায় রোগীর মন শান্ত হওয়া উচিত ৷ এই আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠা উচিত, যে তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন । স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের 195টি দেশের মধ্যে ভারত 145 নম্বরে । ভারতের হাসপাতালগুলির মানের ক্রমশ অবনমনের কাহিনি, বছরের পর বছর ধরে একই থেকে যায় । হাসপাতালগুলিতে তৈরি হওয়া বর্জ্য ও জঞ্জাল দেশজুড়ে রোগীদের মধ্যে এই আতঙ্ক তৈরি করছে, যে তাঁরা আরও অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন । কোরোনা ভাইরাস যেভাবে দেশের পর দেশ গ্রাস করছে, তার সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনাও বেড়ে চলেছে । কয়েক বছর আগে লখনউ IIM-র করা সমীক্ষায় হতবাক করা যে তথ্য এসেছে তা হল, দেশজুড়ে 84 হাজার হাসপাতালের মধ্যে মাত্র দু'শোটির নিজস্ব ওয়েস্ট ডিসপোজ়াল প্ল্যান্ট রয়েছে । তথ্য বলছে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি । লরিতে চাপিয়ে জৈব বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার সময় মহীশূর ও কোয়েম্বাটুরে মানুষের অবরোধের খবরও সামনে এসেছে । 2016 সালের বায়ো-মেডিকেল বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে 22টি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে হরিয়ানা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড । এই অভিযোগেই দিল্লির 48টি চিকিৎসাকেন্দ্রকে সম্প্রতি জরিমানা দিতে হয়েছে । কেন্দ্র যাকে ইতিমধ্যেই 'বিপর্যয়' আখ্যা দিয়েছে, সেই কোরোনা আক্রমণ যদি বাড়তে থাকে, তাহলে হাসপাতালগুলোর জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে । এর বিরুদ্ধে সরকারগুলোকে একটা জাতীয় নীতি ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিতে হবে ।
হিসেব করে দেখা গেছে, শয্যা প্রতি 400 গ্রাম হিসেবে, শুধু গ্রেটার হায়দরাবাদের হাসপাতালগুলি থেকে প্রতিদিন 50 টন জৈব বর্জ্য তৈরি হয় । অ্যাসোচ্যামের (অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া) মতে, এই পরিমাণ 2022 সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে 775 টনে । এই বর্জ্যকে 48 ঘণ্টার মধ্যে সাবধানে ডিসপোজ়াল সেন্টারে পৌঁছে দেওয়া উচিত । যদি সঠিকভাবে বর্জ্য নষ্ট করে না ফেলা হয়, তাহলে ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া ও ভাইরাস হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ে জনস্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে । এই বিপদ এড়াতে, 1986 সালে তৈরি হাসপাতালে বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ বিধিকে তিন দশক পর সংশোধন করা হয়েছে । কিন্তু নতুন বিধিগুলি প্রয়োগে ব্যর্থতা হতাশাজনক । কোনও এলাকায় তৈরি হওয়া জৈব বর্জ্যের পরিমাণ এবং তা ডিসপোজ়াল প্ল্যান্টে পৌঁছে দেওয়ার বিশদ তথ্য, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপলোড হওয়া উচিত । যদিও, বিভিন্ন জায়গায় এইসব বিধি নিয়মিতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে । বিজ্ঞানসম্মতভাবে জৈব বর্জ্য নষ্ট করার পদ্ধতি ব্যয়বহুল । কেন্দ্রের ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সার্টিফিকেট পাওয়া অনেক হাসপাতালই মফঃস্বলের নালা-নর্দমায় তাদের জৈব বর্জ্য ফেলছে । দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডগুলো দুর্নীতির অভিযোগ এবং গাফিলতিতে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকার ফলে, জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জনমানসে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে ।
চিন, যারা কোরোনা আক্রান্তদের জন্য ন'দিনে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরি করে ফেলতে পেরেছে, তাদেরও প্রতিদিন উহান শহরে তৈরি হওয়া 240 টন জৈব বর্জ্য নষ্ট করার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে । জার্মানির মতো দেশগুলো তাদের কঠিন বর্জ্যের 47 শতাংশ পুনর্ব্যবহার করতে, এবং 36 শতাংশকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে সক্ষম । তাদের তুলনায়, আমাদের হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বহু পিছিয়ে । কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর মেনে নিয়েছে, যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের 10 শতাংশ, অপরিচ্ছন্নতার কারণে তৈরি নতুন সংক্রমণে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে । মেডিকেল বর্জ্য নিয়ন্ত্রণকে কেউ তাদের কর্তব্য বলে মনেই করে না । জৈব বর্জ্য এবং তা নিয়ন্ত্রণে গাফিলতির অভিযোগ জানাতে, নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ও অ্যাপ তৈরি হয়েছে; দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এক্ষেত্রেও ! বাড়িতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে মানুষ কোরোনা মহামারির হাত থেকে বাঁচতে পারে । কিন্তু তাঁরা যদি সামান্য অসুস্থতা নিয়েও কোনও হাসপাতালে যান, তাহলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য তাঁরা সংক্রমিত হতে পারেন । এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই জরুরি অবস্থার কথা মাথায় রেখে, কেন্দ্রের রাজ্যগুলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত । চিন যেখানে তাদের GDP-র 6.36 শতাংশ জনগণের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় ব্যবহার করে, সেখানে ভারতের GDP-র মাত্র 1.28 শতাংশ বরাদ্দ করার অর্থ স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে গুরুত্ব না দেওয়া । দেশ এই সঙ্কটে টিকে থাকতে পারে, যদি জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়, জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুসংবদ্ধ করা যায়, এবং প্রতিটি পর্যায়ে যদি দায়বদ্ধতা ও নজরদারির স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা যায় ।