খড়গপুর, 4 অগাস্ট : ভিজে কাপড় আমরা প্রায় সকলেই রোদে শুকিয়ে থাকি ৷ কিন্তু আপনি কি জানেন এই কাপড় থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়া সম্ভব ? হ্যাঁ, এই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুললেন IIT খড়গপুরের একদল গবেষক ৷ আর এই কাজের স্বীকৃতির জন্য তাঁদের দেওয়া হল ‘গান্ধিয়ান ইয়ং টেকনোলজিকাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডস 2020’ । সোমবার ইন্সটিটিউটের এক মুখপাত্র এই খবর জানিয়েছেন ৷ IIT খড়গপুরের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী, অধ্যাপক পার্থ সাহা এবং অধ্যাপক আদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁদের এই অসামান্য কাজের জন্য় সংস্থার পক্ষ থেকে পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে ৷ একটি বেসরকারি সংস্থা সোসাইটি ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনিসিয়েটিভস ফর সাসটেনেবল টেকনোলজিস অ্যান্ড ইন্সটিটিউশনসের (SRISTI)) পক্ষ থেকে তাঁদের এই সম্মান দেওয়া হয়েছে ৷
এক টুকরো ভেজা কাপড় ও নুন হয়ে উঠতে পারে অপ্রচলিত শক্তির উৎস । এই পদ্ধতি কাজে লাগালে আগামী সময়ে ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতেও আলো জ্বলবে ৷
কিন্তু কীভাবে সম্ভব এই পদ্ধতি ?
খাবারের নুনের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)। যে কোনও জামাকাপড়ে থাকে সেলুলোজ জাতায় টেক্সটাইল ৷ নুন ও জলের আয়ন এই সেলুলোজ দ্বারা বাহিত হলে ছোটো চ্যানেল তৈরি হয় ৷ এই চ্যানেলকে বলে ন্যানোস্কেল নেটওয়ার্ক ৷ নুনজল তাপের সুপরিবাহী ৷ এই বিষয়টিকেই এখানে কাজে লাগানো হয়েছে ৷ অন্যতম গবেষক সুমন চক্রবর্তী বলেন, " সেলুলোজ ভিত্তিক টেক্সটাইল থেকে পোশাকগুলি তৈরি হয় ৷ এসবের মধ্যে ন্যানো-চ্যানেলগুলির একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। জল ও লবণ মিশে যে আয়ন তৈরি করে তা এই প্রক্রিয়াতে বৈদ্যুতিক সম্ভাবনা পাঠায় যা কৈশিক পদ্ধতির মাধ্যমে সরবরাহ করা যেতে পারে । "
ধোবি ঘাটে প্রায় 3000 বর্গমিটার এলাকায় গবেষকরা এই পরীক্ষাটি করেন ৷ এজন্য 50টির বেশি ভেজা জামাকাপড় আর তার সঙ্গে নুন জল রেখে চ্যানেল তৈরি করা হয় । বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভেজা কাপড়গুলির সঙ্গে একটি সুপার-ক্যাপাসিটরকে সংযুক্ত করা হয়। 24 ঘণ্টা এভাবে রেখে দেওয়ার পর প্রায় 10 ভোল্ট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হন গবেষকেরা । এই উৎপাদিত বিদ্য়ুৎ দিয়ে একটা LED বাল্বকে 1 ঘণ্টার উপর জ্বালানো সম্ভব ৷ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্য়াপক সুমন চক্রবর্তী বলেন, "ভেজা কাপড় থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আমরা দীর্ঘদিন গবেষণা করছি ৷ বর্তমানে স্বল্প পরিমাণ বিদ্য়ুৎ উৎপাদন হলেও আমরা আশাবাদী ভবিষ্যতে এর মাধ্য়মে গ্রামীণ জীবনে আলো জ্বালাতে সাহায্য করবে ৷"
কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুনন্দ দাশগুপ্ত এবং তাঁর দলকে তাঁদের কাজের জন্য পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে - "স্মার্ট, নমনীয় এবং পরবর্তী প্রজন্মের বৈদ্যুতিন ডিভাইসের জন্য বহু-কার্যকরী তাপ ও শক্তি পরিচালন ব্যবস্থা"-র জন্য।
এই গবেষকদের কাজটিও ন্যানো লেটারস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ৷ জার্নালটি বিশ্বে সমাদৃত ৷ তাঁদের এই অসামান্য কাজটি ইতিমধ্যে পেটেন্ট করা হয়েছে।
অধ্যাপক সুনন্দ দাশগুপ্তের নেতৃত্বে দলটি নমনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইসে শক্তি সংরক্ষণ ও তাপ পরিচালনার সমস্যা সমাধানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কাজ করছে।