শ্রীনগর : বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো কোরোনার সংক্রমণের আগে বেশিরভাগ দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঠে অনুশীলন করতেন মহম্মদ হামাদ । হামাদ আই লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনে রিয়েল কাশ্মীর FC-র অন্যতম ফুটবলার । লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি একবারের জন্যও ঘরের বাইরে পা রাখেননি । তবে নিজেকে ফিট রাখতে মরিয়া তিনি । তাই নিজের চেষ্টায় বাড়ির মধ্যেই অনুশীলন করে চলেছেন ।
হামাদের মতে, "COVID-19-এর জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়া খুবই মুশকিল । আর এখন যে পরিমাণে কোরোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে খেলাধূলা শুরু হতে যে আরও বেশ কিছুটা সময় লাগবে সে বিষয়ে আমি মোটামুটি নিশ্চিত । আমার বাড়িতে একটা ছোটো বাগান আছে । আপাতত সেখানেই আমি অনুশীলন করছি । বিভিন্নভাবে শারীরিক কসরত করে, ছোটাছুটি করে, ম্যাচ পরিস্থিতির মতো অবস্থা তৈরি করে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করছি । আসলে একজন খেলোয়াড়ের বহু দিন খেলাধূলার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থেকে ফোকাস ঠিক রাখাটা খুবই সমস্যার । আমরা তো শেষবার মাঠে গিয়েছি মার্চ মাসে । খেলাধূলার ক্ষেত্রে সে রকম ভালো পরিকাঠামো নেই । তাই আমরা বাড়িতেই নিজেদের ফিট রাখার চেষ্টা করে চলেছি ।"
কিন্তু, একজন খেলোয়াড়ের জন্য ভরা মাঠের আবহ এবং দর্শকদের উৎসাহও যে অত্যন্ত জরুরি, তা-ও মনে করিয়ে দিলেন হামাদ । তাঁর মতে, "দর্শকদের ছাড়া খেলাটা খুবই কঠিন । দর্শকরা দলকে উদ্বুদ্ধ করে । বলা যেতে পারে, দর্শকরা দ্বাদশ ব্যক্তি হিসাবে দলকে সাহায্য করে ।"
কোরোনার জন্য আই লিগের খেলা মাঝপথেই থেমে গিয়েছে । হতাশ হামাদ বলেন, "আই লিগের মতো একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লিগ কোরোনার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে । একজন পেশাদার ফুটবলার হিসাবে এই বিষয়টাতে আমি অত্যন্ত হতাশ । আমি অবশ্য নিজেকে ফিট রাখার জন্য বাড়িতেই যতটা সম্ভব পরিশ্রম করছি । প্রতি দিনই ওয়ার্কআউট করছি ।"
হামাদের বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন করলেন আর এক ফুটবলার খালিদ কায়ুম । তাঁর মতে, দর্শকরা ফুটবলের আত্মা । ভক্তদের জন্য অনলাইনে ভিডিয়ো আপলোড করা শুরু করেছেন বলেও জানালেন কায়ুম । তাঁর মতে, "দর্শকদের ছাড়া ম্যাচ খেলাটা খেলোয়াড়দের কাছে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে । আমি ভিডিয়ো তৈরি করে সে সব অনলাইনে আপলোড করছি যাতে বাড়িতেই কীভাবে ওয়ার্কআউট করা সম্ভব তা নবীনরা শিখতে পারে ।"
নোভেল কোরোনা ভাইরাস জুনের 1 তারিখ পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে প্রায় তিন লাখ 75 হাজার মানুষের প্রাণ নিয়েছে । ভয়ংকর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের সমস্ত খেলাধূলার ইভেন্ট । শুধুমাত্র কাশ্মীরে প্রাণ হারিয়েছেন 28 জন, আক্রান্ত 2,100 ।
বহু খেলোয়াড়েরই দাবি, কোরোনা সংক্রমণ ও সেই জন্য হওয়া লকডাউন তাঁদের মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে । আর এক ফুটবলার কামারুল জামান বলেন, "লকডাউনের এই সময়ে আমি শারীরিকভাবে ফিট থাকার চেয়ে মানসিকভাবে ফিট থাকার দিকে বেশি নজর দিচ্ছি । শারীরিক ফিটনেস বাড়ানোর জন্য বাড়িতে কসরত করছি ঠিকই, কিন্তু মানসিক ফিটনেসের জন্য জোর দিচ্ছি টেবিল টেনিস, বই পড়া ও ছবি তোলার মতো বিষয়গুলিকে । এই কঠিন সময়ে সবারই উচিত মানসিক ফিটনেসের দিকে বেশি জোর দেওয়া ।"
রাগবি খেলোয়াড় সোলিহা ইউসুফ বলেন, এই পরিস্থিতিতে যে কারও পক্ষেই ফিটনেস বজায় রাখা যথেষ্টই কঠিন । তাঁর মতে, "বাড়িতে আমরা যা-ই করি না কেন, তা মাঠের সমতূল হতে পারে না । আমরা এখন শুধুমাত্র ফিটনেস বজায় রাখতে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই বাড়িতে করছি । এমন কী, বাড়িতে ডায়েট মেনে চলাও প্রায় অসম্ভব কারণ প্রয়োজনীয় খাবার সেভাবে পাওয়াই সম্ভব নয় ।"
তিনি আরও বলেন, "প্রতি বছর স্পোর্টস ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত করি । এ বছর পুরো বিষয়টাই থমকে গিয়েছে । আমাদের সবারই মন প্রচণ্ড বিক্ষিপ্ত । কোচ হিসাবে আমি ভিডিয়ো তৈরি করি এবং সে সব শেয়ার করি যাতে তরুণদের সুবিধা হয় এবং বাড়িতেই ওয়ার্কআউট করতে তারা উদ্বুদ্ধ হয় ।"
সাজাদ আমিন/ইব্রাহিম মুসা