ETV Bharat / bharat

ভারতে বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টির উপর কীভাবে প্রকৃত EFFECT তৈরি করতে পারি?

প্রতিবেদনটি লিখেছেন শ্বেতা খান্ডেলওয়াল ৷ তিনি পাবলিক হেল্থ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার অতিরিক্ত অধ্যাপক এবং নিউট্রিশন রিসার্চের প্রধান ৷ প্রতিবেদনের মতামত ব্যক্তিগত ৷

author img

By

Published : Feb 29, 2020, 11:36 PM IST

ভারতে বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টির উপর কীভাবে প্রকৃত EFFECT তৈরি করতে পারি?
ভারতে বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টির উপর কীভাবে প্রকৃত EFFECT তৈরি করতে পারি?

যখন সাম্প্রতিকতম পুষ্টি সমীক্ষাগুলিতে (NFHS-4, CNNS ইত্যাদি) দেখা যাচ্ছে যে পুষ্টির অভাব (17 শতাংশ ক্ষয়, 35 শতাংশ বৃদ্ধির হ্রাস পাওয়া, 33 শতাংশ কম ওজন) এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা ভারতের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তখন 71 তম সাধারণতন্ত্র দিবসে ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারোকে ভারতের তরফে বিশেষ অতিথি করে নিয়ে আসা যথেষ্ট প্রশংসনীয় ৷ চার দশকেরও কম সময়ে ব্রাজ়িল অপুষ্টির হারকে 55 শতাংশ থেকে 6 শতাংশে নামিয়ে এনেছে ৷ পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ে জড়িতরা ব্রাজ়িলের এই জয়ে খুবই খুশি ৷ ব্রাজ়িল কীভাবে এটা করতে সক্ষম হল ? ব্রাজ়িলের তরফে প্রথমে শিশুদের অপুষ্টি হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা হয় ৷ প্রধান কারণ হিসেবে বেরিয়ে আসে খাবারের অপ্রতুলতা, নারী ও শিশুদের দেখভালের গাফিলতি, স্বাস্থ্য পরিষেবায় ঘাটতি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ৷ এটা কি সতর্কতার সংকেত নয় ? অবশ্যই ৷ ভারতও এ নিয়ে অনেক বড় প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ৷ এখন অন্য দেশ থেকে সমাধানের শিক্ষা নিয়ে, তা আমাদের দেশে সরাসরি প্রয়োগ বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে ৷ অতি সাধারণ টুকে নেওয়ার পদ্ধতির থেকে শিখে নিয়ে নিজেদের মতো করে তার ব্যবহার অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে ৷

এর মাধ্যমে আমি কী বোঝাতে চাইছি ? নতুন কিছু নয় ৷ শুধুমাত্র সরকারের ‘‘কুপোষণ মুক্ত ভারত 2022" মানে অপুষ্টিকে চিরকালের জন্য ছুঁড়ে ফেলার প্রকল্পকে আরও শক্তি দিতে চাইছি ৷ বিভিন্ন রকমের অপুষ্টির সঙ্গে লড়াইকে আরও শক্তিশালী করে তাকে গতি দিতে একটা বাস্তবসম্মত E-F-F-E-C-T প্রস্তাব করতে পারি ৷

প্রমাণ (EVIDENCE) - সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে উচ্চ মানযুক্ত, ভালো তথ্য তৈরির সরঞ্জাম, পদ্ধতি এবং প্রযুক্তির দিকে নজর দিতে হবে ৷ কার্যকরী নজরদারি ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে একে অপরের পরিপূরক করে তোলা প্রয়োজন এবং এর মাধ্যমে সঠিক দিশায় ব্যবস্থা নেওয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করা দরকার ৷

খাদ্য ব্যবস্থা (FOOD SYSTEMS) - সুস্বাস্থ্যযুক্ত জনসংখ্যার জন্য এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক ৷ বর্তমান খাদ্য ব্যবস্থায় অতিরিক্ত ফ্যাট, চিনি ও লবণ যুক্ত খাবার বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ৷ ফলে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে বাড়িতে তৈরি খাবার ৷ যার মধ্যে তাজা, মরশুমি ও স্থানীয় শস্য, সবজি এবং ফল থাকে ৷ আমাদের জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচি সুরক্ষিত শস্য ব্যবহার ও কম মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যুক্ত পণ্যের ব্যবহার কমানোর উপর জোর দিয়েছে ৷ কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভারতের দেশীয় খাবার জনপ্রিয় করার কাজ এখনও অনেকটা বাকি ৷ বিশেষ করে বাড়িতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় খাবার তাদের থালায় রোজ হাজির করতে হবে ৷

অর্থ (FINANCES) - টাকা ছাড়া কোনও কাজই হয় না ! শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়ে আর্থিক তহবিল গঠন করাই যথেষ্ট নয়, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে মানুষকে জোর করতে আর্থিক ব্যবস্থাগুলিকে ব্যবহারও লাভজনক হতে পারে ৷ দারিদ্র দূরীকরণ, লিঙ্গ ও আয়ের বৈষম্যের উপর নজর দিতে হলে গরিবদের জন্য সঠিক জননীতি তৈরি করা প্রয়োজন ৷ সরকারের তরফে চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ কিন্তু প্রান্তিক মানুষকে এ নিয়ে সচেতন করতে গেলে আয়ের বিন্যাস এবং স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত পরিষেবা প্রাপ্তির সুযোগকে আরও ভালো করতে হবে ৷ উপভোক্তাদের তালিকা তৈরিতে দুর্নীতি এবং হিসাবের গরমিল এখনই চিহ্নিত করা উচিত এবং তা বন্ধ করা দরকার ৷

স্তন্যপান এবং IYCF-এর অভ্যাস (EXCLUSIVE BREASTFEEDING AND IYCF PRACTICES) - যখন সরকারের থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তখন সদ্যোজাত ও শিশুদের খাওয়ানোর বিষয়ে ব্যক্তিগত দায়িত্বের বিষয়টিও জেনে রাখা উচিত ৷ এই অভ্যাস তৈরি করতে বাহ্যিক পরিবেশ অবশ্যই একটি নির্ধারক (পারিবারিক গতিশীলতা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, প্রবেশাধিকার ও সুবিধা, সহায়ক কাজের নীতি ইত্যাদি) হয়ে ওঠে ৷ তবুও সাত শতাংশের কম দু’বছরের থেকে ছোটো শিশুদের খাওয়া-দাওয়া এবং পরিচর্যায় ঘাটতির বিষয়টি কোনও অজুহাত হাত হতে পারে না ৷ শুরুর দিকে অপুষ্টির লক্ষণগুলি চোখে পড়ে না ৷ ফলে যাঁরা শিশুর দেখাশোনা করেন, তাঁরা পুষ্টির সঠিক ঘনত্ব, বৈচিত্র্য , কতক্ষণ পরপর খাওয়ানো উচিত, পরিমাণ ইত্যাদি জানতেই পারেন না ৷ আমাদের সমাজে স্তন্যপান অনেক আগেই শেষ হয়ে যায় এবং সঠিকভাবে পরিপূরক খাবার দেওয়া অনেক পরে শুরু হয় ৷ বারবার সংক্রমণ এড়াতে পরিষ্কার ভাবে খাবার তৈরি, আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সময়মতো টিকাদানও খুব জরুরি ৷ প্রথম 1000 দিনে যে ক্ষতি হয়ে যায় (বিশেষ করে বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশ), তা আর ভবিষ্যতে শুধরে নেওয়া সম্ভব নয়, এটা আমরা সবাই জানি ৷ আরও একটা সমস্যা হল, এই খাবারের ক্ষেত্রে অপুষ্টি ও ক্ষিদে মেটাতে দ্রুত সমাধান সম্ভব এমন পদ্ধতি প্রয়োগ করা ৷ আলাদা করে গম জাতীয় শস্য এবং উচ্চ শর্করা জাতীয় খাবার খেলে হয়তো শিশুদের SAM-এর সমস্যা থেকে অনেকটাই আটকানো যায় ৷ কিন্তু এর ফলে তাঁদের আমরা অসংক্রামক রোগের (NCD) দিকে আরও বেশি করে ঠেলে দিই ৷ এক ধরনের অপুষ্টি থেকে বাঁচাতে অন্য ধরনের অপুষ্টিতে ঠেলে দেওয়ার বিষয়ে সকলকে সতর্ক করা জরুরি ৷ কয়েকটি রাজ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ৷ সেখানে খাবারে ফল, সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, ডিম ও ডালের ব্যবহার অনেক বেশি করে করতে দেখা যাচ্ছে ৷ কিন্তু এটা আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে হবে ৷

যোগাযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (CONVERGENCE AND CAPACITY BUILDING) - অপুষ্টির সমস্যার সমাধান করতে হলে জল, নিকাশি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বিজ্ঞাপন, টিকাকরণ, কৃষি, পরিবেশ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ তাই পুষ্টি প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে গেলে সৎভাবে এগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি করতে হবে ৷ পুষ্টি আসলে একাধিক নির্ধারককে একত্রীভূত করে কাজ করে ৷ যৌথ মালিকানা এবং দায়িত্ব, সহজে কাজের জন্য সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা এবং উদার স্বীকৃতি, ইনসেনটিভ ইত্যাদি আরও ভালো ফল করতে সাহায্য করতে পারে ৷ শুরুতে ধারণক্ষমতার ঘাটতি মেটাতে শূন্যপদে নিয়োগ, নিয়োগে বিলম্ব এড়ানো, সময়মতো পদোন্নতি ও কার্যকারিতা বাড়াতে ছোটো ছোটো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা খুব কার্যকরী হতে পারে ৷ যোগাযোগ রক্ষাকারী কর্মীরা প্রশাসনের অপূর্ণতা ঢেকে দিতে পারেন ৷ মাথা খাটিয়ে স্থানীয় সমস্যার স্থানীয় সমাধান বের করতে পারবেন ৷ একই ধরনের কাজ এড়াতে এবং বহু মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে সামনের সারির কর্মীদের মনোবলও সবসময় উচ্চস্তরে রাখতে হবে ৷ এক সমীক্ষা করে দেখা গেছে প্রাক-বিদ্যালয় শিক্ষায় তথ্যবলী তৈরির পরিকল্পনার জন্য (বারবার নথি তৈরি, রিপোর্ট তৈরি ইত্যাদি) AWW-এর পরামর্শ এক চতুর্থাংশ সময় কমিয়ে দিয়েছে ৷

পুষ্টির পরিমাণ বাড়াতে প্রমাণকে কাজে লাগাতে প্রযুক্তির ব্যবহার (TECHNOLOGY TO TRANSFORM EVIDENCE TO ACTION FOR IMPROVED NUTRITION) - সরকারি এবং ব্যক্তিগত স্তরে পুষ্টির মতো ক্ষেত্রগুলিতে বৃদ্ধি ও উন্নতিতে গতি আনতে প্রযুক্তি প্রকৃত সহায়ক হয়ে উঠতে পারে ৷ একদিকে প্রযুক্তির ব্যবহারে পারদর্শী লোকেরা পুষ্টি নিয়ে আরও ভালো কিছু জানতে পারবেন ৷ অন্যদিকে সোশাল মিডিয়ার শক্তিকে ব্যবহার করে নীতি নির্ধারকরা জন আন্দোলন তৈরি করতে পারবেন, ব্যক্তিগত অংশগ্রহণও বাড়াতে পারবেন ৷ এ নিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে উচ্চস্তরের প্রযুক্তি প্রবেশ ঘটানো এখনই আবশ্যিক ৷ জনসাধারণের ভালো জীবনযাপনের জন্য জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ করতে আধুনিক সরঞ্জামগুলিকে কাজে লাগানো উচিত ৷

ঠিকমতো দিশায় কাজ করা গেলে তাড়াতাড়ি হোক কিংবা দেরিতে সঠিক ফল পাওয়া যাবেই ৷ ভারত অন্যতম একটি দেশ, যারা সমস্ত বয়স ভিত্তিক সম্প্রসারিত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ জনপুষ্টি প্রোগ্রাম ও নীতি গ্রহণ করতে পারে ৷ যদিও বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে উন্নত করা হয়েছে ৷ অপুষ্টির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে সব অংশীদারদের মনোবল নতুন করে বাড়ানো হয়েছে ৷ নতুন ধরনের ভাবনা এবং ঐক্যবদ্ধ শক্তি এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে ৷

যখন সাম্প্রতিকতম পুষ্টি সমীক্ষাগুলিতে (NFHS-4, CNNS ইত্যাদি) দেখা যাচ্ছে যে পুষ্টির অভাব (17 শতাংশ ক্ষয়, 35 শতাংশ বৃদ্ধির হ্রাস পাওয়া, 33 শতাংশ কম ওজন) এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা ভারতের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তখন 71 তম সাধারণতন্ত্র দিবসে ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারোকে ভারতের তরফে বিশেষ অতিথি করে নিয়ে আসা যথেষ্ট প্রশংসনীয় ৷ চার দশকেরও কম সময়ে ব্রাজ়িল অপুষ্টির হারকে 55 শতাংশ থেকে 6 শতাংশে নামিয়ে এনেছে ৷ পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ে জড়িতরা ব্রাজ়িলের এই জয়ে খুবই খুশি ৷ ব্রাজ়িল কীভাবে এটা করতে সক্ষম হল ? ব্রাজ়িলের তরফে প্রথমে শিশুদের অপুষ্টি হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা হয় ৷ প্রধান কারণ হিসেবে বেরিয়ে আসে খাবারের অপ্রতুলতা, নারী ও শিশুদের দেখভালের গাফিলতি, স্বাস্থ্য পরিষেবায় ঘাটতি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ৷ এটা কি সতর্কতার সংকেত নয় ? অবশ্যই ৷ ভারতও এ নিয়ে অনেক বড় প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ৷ এখন অন্য দেশ থেকে সমাধানের শিক্ষা নিয়ে, তা আমাদের দেশে সরাসরি প্রয়োগ বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে ৷ অতি সাধারণ টুকে নেওয়ার পদ্ধতির থেকে শিখে নিয়ে নিজেদের মতো করে তার ব্যবহার অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে ৷

এর মাধ্যমে আমি কী বোঝাতে চাইছি ? নতুন কিছু নয় ৷ শুধুমাত্র সরকারের ‘‘কুপোষণ মুক্ত ভারত 2022" মানে অপুষ্টিকে চিরকালের জন্য ছুঁড়ে ফেলার প্রকল্পকে আরও শক্তি দিতে চাইছি ৷ বিভিন্ন রকমের অপুষ্টির সঙ্গে লড়াইকে আরও শক্তিশালী করে তাকে গতি দিতে একটা বাস্তবসম্মত E-F-F-E-C-T প্রস্তাব করতে পারি ৷

প্রমাণ (EVIDENCE) - সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে উচ্চ মানযুক্ত, ভালো তথ্য তৈরির সরঞ্জাম, পদ্ধতি এবং প্রযুক্তির দিকে নজর দিতে হবে ৷ কার্যকরী নজরদারি ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে একে অপরের পরিপূরক করে তোলা প্রয়োজন এবং এর মাধ্যমে সঠিক দিশায় ব্যবস্থা নেওয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করা দরকার ৷

খাদ্য ব্যবস্থা (FOOD SYSTEMS) - সুস্বাস্থ্যযুক্ত জনসংখ্যার জন্য এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক ৷ বর্তমান খাদ্য ব্যবস্থায় অতিরিক্ত ফ্যাট, চিনি ও লবণ যুক্ত খাবার বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ৷ ফলে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে বাড়িতে তৈরি খাবার ৷ যার মধ্যে তাজা, মরশুমি ও স্থানীয় শস্য, সবজি এবং ফল থাকে ৷ আমাদের জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচি সুরক্ষিত শস্য ব্যবহার ও কম মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যুক্ত পণ্যের ব্যবহার কমানোর উপর জোর দিয়েছে ৷ কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভারতের দেশীয় খাবার জনপ্রিয় করার কাজ এখনও অনেকটা বাকি ৷ বিশেষ করে বাড়িতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় খাবার তাদের থালায় রোজ হাজির করতে হবে ৷

অর্থ (FINANCES) - টাকা ছাড়া কোনও কাজই হয় না ! শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়ে আর্থিক তহবিল গঠন করাই যথেষ্ট নয়, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে মানুষকে জোর করতে আর্থিক ব্যবস্থাগুলিকে ব্যবহারও লাভজনক হতে পারে ৷ দারিদ্র দূরীকরণ, লিঙ্গ ও আয়ের বৈষম্যের উপর নজর দিতে হলে গরিবদের জন্য সঠিক জননীতি তৈরি করা প্রয়োজন ৷ সরকারের তরফে চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ কিন্তু প্রান্তিক মানুষকে এ নিয়ে সচেতন করতে গেলে আয়ের বিন্যাস এবং স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত পরিষেবা প্রাপ্তির সুযোগকে আরও ভালো করতে হবে ৷ উপভোক্তাদের তালিকা তৈরিতে দুর্নীতি এবং হিসাবের গরমিল এখনই চিহ্নিত করা উচিত এবং তা বন্ধ করা দরকার ৷

স্তন্যপান এবং IYCF-এর অভ্যাস (EXCLUSIVE BREASTFEEDING AND IYCF PRACTICES) - যখন সরকারের থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তখন সদ্যোজাত ও শিশুদের খাওয়ানোর বিষয়ে ব্যক্তিগত দায়িত্বের বিষয়টিও জেনে রাখা উচিত ৷ এই অভ্যাস তৈরি করতে বাহ্যিক পরিবেশ অবশ্যই একটি নির্ধারক (পারিবারিক গতিশীলতা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, প্রবেশাধিকার ও সুবিধা, সহায়ক কাজের নীতি ইত্যাদি) হয়ে ওঠে ৷ তবুও সাত শতাংশের কম দু’বছরের থেকে ছোটো শিশুদের খাওয়া-দাওয়া এবং পরিচর্যায় ঘাটতির বিষয়টি কোনও অজুহাত হাত হতে পারে না ৷ শুরুর দিকে অপুষ্টির লক্ষণগুলি চোখে পড়ে না ৷ ফলে যাঁরা শিশুর দেখাশোনা করেন, তাঁরা পুষ্টির সঠিক ঘনত্ব, বৈচিত্র্য , কতক্ষণ পরপর খাওয়ানো উচিত, পরিমাণ ইত্যাদি জানতেই পারেন না ৷ আমাদের সমাজে স্তন্যপান অনেক আগেই শেষ হয়ে যায় এবং সঠিকভাবে পরিপূরক খাবার দেওয়া অনেক পরে শুরু হয় ৷ বারবার সংক্রমণ এড়াতে পরিষ্কার ভাবে খাবার তৈরি, আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সময়মতো টিকাদানও খুব জরুরি ৷ প্রথম 1000 দিনে যে ক্ষতি হয়ে যায় (বিশেষ করে বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশ), তা আর ভবিষ্যতে শুধরে নেওয়া সম্ভব নয়, এটা আমরা সবাই জানি ৷ আরও একটা সমস্যা হল, এই খাবারের ক্ষেত্রে অপুষ্টি ও ক্ষিদে মেটাতে দ্রুত সমাধান সম্ভব এমন পদ্ধতি প্রয়োগ করা ৷ আলাদা করে গম জাতীয় শস্য এবং উচ্চ শর্করা জাতীয় খাবার খেলে হয়তো শিশুদের SAM-এর সমস্যা থেকে অনেকটাই আটকানো যায় ৷ কিন্তু এর ফলে তাঁদের আমরা অসংক্রামক রোগের (NCD) দিকে আরও বেশি করে ঠেলে দিই ৷ এক ধরনের অপুষ্টি থেকে বাঁচাতে অন্য ধরনের অপুষ্টিতে ঠেলে দেওয়ার বিষয়ে সকলকে সতর্ক করা জরুরি ৷ কয়েকটি রাজ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ৷ সেখানে খাবারে ফল, সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, ডিম ও ডালের ব্যবহার অনেক বেশি করে করতে দেখা যাচ্ছে ৷ কিন্তু এটা আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে হবে ৷

যোগাযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (CONVERGENCE AND CAPACITY BUILDING) - অপুষ্টির সমস্যার সমাধান করতে হলে জল, নিকাশি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বিজ্ঞাপন, টিকাকরণ, কৃষি, পরিবেশ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ তাই পুষ্টি প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে গেলে সৎভাবে এগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি করতে হবে ৷ পুষ্টি আসলে একাধিক নির্ধারককে একত্রীভূত করে কাজ করে ৷ যৌথ মালিকানা এবং দায়িত্ব, সহজে কাজের জন্য সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা এবং উদার স্বীকৃতি, ইনসেনটিভ ইত্যাদি আরও ভালো ফল করতে সাহায্য করতে পারে ৷ শুরুতে ধারণক্ষমতার ঘাটতি মেটাতে শূন্যপদে নিয়োগ, নিয়োগে বিলম্ব এড়ানো, সময়মতো পদোন্নতি ও কার্যকারিতা বাড়াতে ছোটো ছোটো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা খুব কার্যকরী হতে পারে ৷ যোগাযোগ রক্ষাকারী কর্মীরা প্রশাসনের অপূর্ণতা ঢেকে দিতে পারেন ৷ মাথা খাটিয়ে স্থানীয় সমস্যার স্থানীয় সমাধান বের করতে পারবেন ৷ একই ধরনের কাজ এড়াতে এবং বহু মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে সামনের সারির কর্মীদের মনোবলও সবসময় উচ্চস্তরে রাখতে হবে ৷ এক সমীক্ষা করে দেখা গেছে প্রাক-বিদ্যালয় শিক্ষায় তথ্যবলী তৈরির পরিকল্পনার জন্য (বারবার নথি তৈরি, রিপোর্ট তৈরি ইত্যাদি) AWW-এর পরামর্শ এক চতুর্থাংশ সময় কমিয়ে দিয়েছে ৷

পুষ্টির পরিমাণ বাড়াতে প্রমাণকে কাজে লাগাতে প্রযুক্তির ব্যবহার (TECHNOLOGY TO TRANSFORM EVIDENCE TO ACTION FOR IMPROVED NUTRITION) - সরকারি এবং ব্যক্তিগত স্তরে পুষ্টির মতো ক্ষেত্রগুলিতে বৃদ্ধি ও উন্নতিতে গতি আনতে প্রযুক্তি প্রকৃত সহায়ক হয়ে উঠতে পারে ৷ একদিকে প্রযুক্তির ব্যবহারে পারদর্শী লোকেরা পুষ্টি নিয়ে আরও ভালো কিছু জানতে পারবেন ৷ অন্যদিকে সোশাল মিডিয়ার শক্তিকে ব্যবহার করে নীতি নির্ধারকরা জন আন্দোলন তৈরি করতে পারবেন, ব্যক্তিগত অংশগ্রহণও বাড়াতে পারবেন ৷ এ নিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে উচ্চস্তরের প্রযুক্তি প্রবেশ ঘটানো এখনই আবশ্যিক ৷ জনসাধারণের ভালো জীবনযাপনের জন্য জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ করতে আধুনিক সরঞ্জামগুলিকে কাজে লাগানো উচিত ৷

ঠিকমতো দিশায় কাজ করা গেলে তাড়াতাড়ি হোক কিংবা দেরিতে সঠিক ফল পাওয়া যাবেই ৷ ভারত অন্যতম একটি দেশ, যারা সমস্ত বয়স ভিত্তিক সম্প্রসারিত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ জনপুষ্টি প্রোগ্রাম ও নীতি গ্রহণ করতে পারে ৷ যদিও বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে উন্নত করা হয়েছে ৷ অপুষ্টির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে সব অংশীদারদের মনোবল নতুন করে বাড়ানো হয়েছে ৷ নতুন ধরনের ভাবনা এবং ঐক্যবদ্ধ শক্তি এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.