ETV Bharat / bharat

H1B ভিসার অবসান : অ্যামেরিকার ভিসা নীতিতে বদলের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ

author img

By

Published : Jun 26, 2020, 11:22 AM IST

প্রতিবেদনটি লিখেছেন অশোক মুখোপাধ্যায়, রাষ্ট্রসংঘে ভারতের প্রাক্তন স্থায়ী সদস্য, ওয়াশিংটন DC -র দূতাবাসে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ৷ লেখাটি তাঁর সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত ৷

H1B VISA TERMINATION
H1B ভিসার অবসান : অ্যামেরিকার ভিসা নীতিতে বদলের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ

নাগরিকত্বের জন্য অভিবাসী ভিসা পেতে অ্যামেরিকায় পাঁচটি বিভাগ আছে । যেমন-রাষ্ট্রের তরফে স্বাভাবিকভাবে নাগরিক অধিকার দান, স্থায়ী নিবাস (গ্রিন কার্ড), পরিবার, শরণার্থী ও দত্তক । অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক শ্রেণিতে অ্যামেরিকায় অভিবাসী নয় যারা তাদের স্বল্পমেয়াদী প্রবেশের অধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় H1B, H2B, J ও L ভিসার মাধ্যমে । এই শ্রেণিতেই ট্রাম্প প্রশাসন 24 জুন, 2020 থেকে 31 ডিসেম্বর, 2020 পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ৷ তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে ।

1990 সালের "U.S. ইমিগ্রেসন অ্যাক্ট"-এর আওতায় অ্যামেরিকায় নিয়োগকারীদের H1B ভিসা দেওয়া হয়, যাতে তারা অস্থায়ীভাবে বিদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ডিগ্রিপ্রাপ্ত, কর্মচারীদের নির্দিষ্ট কিছু পেশায় নিয়োগ করতে পারে । সাধারণত, এই ভিসা 3 থেকে 6 বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে, আর ভিসাধারী যে পদে কাজ করছিল, সেই পদে কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাকে অ্যামেরিকা ছাড়তে হয় না । H2B ভিসা দেওয়া হয় অন্য কর্মচারীদের জন্য, যারা আসেন বিশ্বের নির্দিষ্ট 81 টি দেশ থেকে (ভারত ছাড়া) । এদের অ্যামেরিকায় প্রবেশের জন্য কোনও নির্দিষ্ট শিক্ষাগত বা অন্য কোনও যোগ্যতা লাগে না ৷ কোনও মার্কিন নিয়োগকর্তার দেওয়া অস্থায়ী কাজ করতে এরা 6 মাস থেকে 1 বছর পর্যন্ত অ্যামেরিকায় থাকতে পারে । J ভিসা দেওয়া হয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের মানুষদের, যাতে বিশ্বব্যাপী বোঝাপড়ার ভিত মজবুত থাকে ৷ এই ভিসাধারীদের কর্মসূচী শেষ হলে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হয় । L ভিসা দেওয়া হয় সেই সব ‘এক্সিকিউটিভ’দের, যারা অ্যামেরিকার বাইরের কোনও সংস্থায় কাজ করেন ৷ কিন্তু সংস্থার কাজেই অস্থায়ীভাবে বা কোনও বিশেষ দরকারে তাদের অ্যামেরিকায় পাঠানো হয় ।

22 এপ্রিল 2020 অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ৷ গত 60 দিন ধরে চলা কোরোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে অভিবাসীদের প্রবেশ প্রতিহত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয় ৷ এপ্রিলের এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যে HIB/H2B/L শ্রেণির ভিসার উল্লেখ ছিল না । যারা অভিবাসী নয় তাদের অ্যামেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ততদিন কার্যকর থাকবে যতদিন না 2020 - র নভেম্বরে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজিত হচ্ছে । এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের অ-বিদেশী নীতিরই প্রতিফলন ৷ যা তিনি আসন্ন নির্বাচনের কথা ভেবে ভোট পাওয়ার কথা ভেবে করেছেন ৷

বিগত 3 বছর ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিরোধী নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে । অ্যামেরিকায় আফ্রিকান ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অধিবাসীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে ৷ এর ফলে যারা অ্যামেরিকায় শরণার্থী হিসাবে প্রবেশ করতে চান, তাদের পক্ষেও তা করা নিতান্তই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে । দেশের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে যাতে অবৈধ শরণার্থীরা অ্যামেরিকায় ঢুকতে না পারে, সেজন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যামেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণে ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহিত ছিলেন । ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (USCIS) যা অ্যামেরিকায় অভিবাসন সংক্রান্ত নজরদারি চালানোর কাজে নিযুক্ত ৷ তা চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ । ফলে অ্যামেরিকায় প্রবেশের জন্য ইতিমধ্যে যে আবেদনগুলি জমা পড়েছিল, তার দেখাশোনার কাজও অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে ।

এই নয়া পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে অ্যামেরিকার কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে COVID—১৯ প্যানডেমিকের নেতিবাচক প্রভাব । 2020 সালের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে অ্যামেরিকায় নামী শিল্পক্ষেত্রে 20 মিলিয়নের বেশি মার্কিন নাগরিক কাজ হারিয়েছেন । আর তাদের ছেড়ে যাওয়া পদে নিয়োগকারীরা H1B ও L ভিসাধারীদের নিয়োগ করেছেন । আবার 17 মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক সেই সব শিল্পক্ষেত্রে কাজ হারিয়েছেন, যেখানে বিদেশ থেকে H2B ভিসাধারী কর্মচারীদের নিয়ে এসে নিয়োগ করার চেষ্টা করা হচ্ছিল ।

কিছু বিশ্লেষকের মত, এই পদক্ষপের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প 2020 সালের শেষ পর্যন্ত মার্কিন নাগরিকদের জন্য (এই তালিকায় আছেন আফ্রিকান অ্যামেরিকান, কলেজের ডিগ্রি নেই এমন যারা, সংখ্যালঘু শ্রেণি ও প্রতিবন্ধী ) 5 লাখ 25 হাজার চাকরি ‘রক্ষা’ করতে পারবেন । যেমন, প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রকাশ্যে বলেছিলেন, " প্রতিটা ক্ষেত্রে চাকরি পেতে মার্কিন কর্মচারীদের বিদেশিদের সঙ্গে লড়াই করতে হয় । আর এই তালিকায় লাখ লাখ ভিনগ্রহের প্রাণীরাও আছে ৷ যারা অস্থায়ী কাজের জন্য অ্যামেরিকায় ঢুকে পড়ে । এই সব অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে আবার তাদের স্ত্রী, সন্তানরাও আসে আর তারাও মার্কিন কর্মচারীদের কাজ ছিনিয়ে নেয় । "

H2B ভিসাধারী যারা ফুড সাপ্লাই চেনগুলিতে কাজের জন্য আবেদন করেছেন অথবা আমেরিকার ‘জাতীয় স্বার্থ’ রক্ষার জন্য যাদের দরকার, কেবল তাদের ক্ষেত্রেই এই ভিসায় বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হচ্ছে না । ‘জাতীয় স্বার্থ’ - র আওতায় যারা নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন, সেই সব বিদেশিদের আবার 5 টি ভাগ রয়েছে । যেমন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র, আইন-কানুন বিভাগ, কূটনীতি বা জাতীয় নিরাপত্তা, COVID —১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যক্ষেত্র ও অ্যামেরিকার অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য দ্রুত ফিরিয়ে আনা ও তা চালিয়ে যাওয়ার কাজের জন্য যারা প্রয়োজনীয় । শেষ বিভাগের আওতায় সেইসব রাজনৈতিক প্রভাবসম্পন্ন মার্কিন সংস্থাগুলির কাছে সম্ভাবনা থাকছে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আবেদন করার যাতে 2020 সাল শেষ হওয়ার আগে স্বল্প সংখ্যায় হলেও H1B ও L ভিসাধারীদের আমেরিকায় কাজের জন্য আনা সম্ভব হয় ।

আমেরিকার এই পদক্ষেপের প্রভাব ভারতের উপর এখনই পড়তে দেখা যাচ্ছে । প্রতি বছর অ্যামেরিকা 85 হাজার H1B ভিসা ইশু করে ৷ যার মধ্যে তিন চতুর্থাংশই পান ভারতীয়রা, যারা প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে কাজ করেন । 2004 থেকে 2012 সালের মধ্যে H1B ভিসা ইশুর যে ট্রেন্ড দেখা গেছে, তা অনুযায়ী 5 লাখ ভিসা ভারতীয়দেরই দেওয়া হয়েছে ৷ যার মধ্যে এদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন । অ্যামেরিকার 3 মিলিয়ন প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ভিসাধারীদের সংখ্যা অন্তত 7 লাখ 50 হাজার । আর এই প্রবাসী ভারতীয়রাই বর্তমানে আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠছে ।

H1B ভিসা থেকে যে সব ভারতীয় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি উপকৃত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস, ইনফোসিস, উইপ্রো, টেক মাহিন্দ্রা, HCL টেকনোলজ়িস লিমিটেড ও লারসেন অ্যান্ড টিউব্রো ইনফোটেক । এই সব সংস্থাগুলি সেই 100 টি ভারতীয় সংস্থার অন্তর্ভুক্ত যারা অ্যামেরিকায় 2017 সাল পর্যন্ত 17.9 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে ৷ অ্যামেরিকার 50 টি রাজ্যে মোট 1 লাখ 13 হাজার চাকরির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ৷

পণ্য ও পরিষেবায় অ্যামেরিকা ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যসঙ্গী । দক্ষ শ্রমশক্তি হিসাবে অ্যামেরিকার ভারতীয় সংস্থাগুলিতে ভারত থেকে আসা H1B ভিসাধারীদের সংখ্যা হঠাৎ করে কমিয়ে দিলে অবশ্যই তার প্রভাব পরবে ৷ প্রভাব দেখা যাবে অ্যামেরিকার অর্থনীতির প্রযুক্তি, অর্থ ও উৎপাদনক্ষেত্রে । COVID —১৯ প্যানডেমিকের প্রভাবে অ্যামেরিকার বিপর্যস্ত অর্থনীতির হাল ফেরাতে নেওয়া যে কোনও জাতীয় উদ্যোগই এই 3 টি ক্ষেত্র অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । কাজেই অ্যামেরিকায় অর্থনীতিকে সচল করে তুলতে যারা অভিবাসী নয় অথচ ভিসাধারী তাদের পরিষেবা দিতে মুখ ফেরানো এই সিদ্ধান্তে সামগ্রিকভাবে ভারত-অ্যামেরিকা কৌশলগত সম্পর্কের অন্যতম উজ্জ্বল ও যৌথ সুবিধার জায়গাগুলির গুরুত্ব বহুলাংশে খর্ব করবে ৷

নাগরিকত্বের জন্য অভিবাসী ভিসা পেতে অ্যামেরিকায় পাঁচটি বিভাগ আছে । যেমন-রাষ্ট্রের তরফে স্বাভাবিকভাবে নাগরিক অধিকার দান, স্থায়ী নিবাস (গ্রিন কার্ড), পরিবার, শরণার্থী ও দত্তক । অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক শ্রেণিতে অ্যামেরিকায় অভিবাসী নয় যারা তাদের স্বল্পমেয়াদী প্রবেশের অধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় H1B, H2B, J ও L ভিসার মাধ্যমে । এই শ্রেণিতেই ট্রাম্প প্রশাসন 24 জুন, 2020 থেকে 31 ডিসেম্বর, 2020 পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ৷ তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে ।

1990 সালের "U.S. ইমিগ্রেসন অ্যাক্ট"-এর আওতায় অ্যামেরিকায় নিয়োগকারীদের H1B ভিসা দেওয়া হয়, যাতে তারা অস্থায়ীভাবে বিদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ডিগ্রিপ্রাপ্ত, কর্মচারীদের নির্দিষ্ট কিছু পেশায় নিয়োগ করতে পারে । সাধারণত, এই ভিসা 3 থেকে 6 বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে, আর ভিসাধারী যে পদে কাজ করছিল, সেই পদে কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাকে অ্যামেরিকা ছাড়তে হয় না । H2B ভিসা দেওয়া হয় অন্য কর্মচারীদের জন্য, যারা আসেন বিশ্বের নির্দিষ্ট 81 টি দেশ থেকে (ভারত ছাড়া) । এদের অ্যামেরিকায় প্রবেশের জন্য কোনও নির্দিষ্ট শিক্ষাগত বা অন্য কোনও যোগ্যতা লাগে না ৷ কোনও মার্কিন নিয়োগকর্তার দেওয়া অস্থায়ী কাজ করতে এরা 6 মাস থেকে 1 বছর পর্যন্ত অ্যামেরিকায় থাকতে পারে । J ভিসা দেওয়া হয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের মানুষদের, যাতে বিশ্বব্যাপী বোঝাপড়ার ভিত মজবুত থাকে ৷ এই ভিসাধারীদের কর্মসূচী শেষ হলে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হয় । L ভিসা দেওয়া হয় সেই সব ‘এক্সিকিউটিভ’দের, যারা অ্যামেরিকার বাইরের কোনও সংস্থায় কাজ করেন ৷ কিন্তু সংস্থার কাজেই অস্থায়ীভাবে বা কোনও বিশেষ দরকারে তাদের অ্যামেরিকায় পাঠানো হয় ।

22 এপ্রিল 2020 অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ৷ গত 60 দিন ধরে চলা কোরোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে অভিবাসীদের প্রবেশ প্রতিহত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয় ৷ এপ্রিলের এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যে HIB/H2B/L শ্রেণির ভিসার উল্লেখ ছিল না । যারা অভিবাসী নয় তাদের অ্যামেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ততদিন কার্যকর থাকবে যতদিন না 2020 - র নভেম্বরে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজিত হচ্ছে । এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের অ-বিদেশী নীতিরই প্রতিফলন ৷ যা তিনি আসন্ন নির্বাচনের কথা ভেবে ভোট পাওয়ার কথা ভেবে করেছেন ৷

বিগত 3 বছর ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিরোধী নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে । অ্যামেরিকায় আফ্রিকান ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অধিবাসীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে ৷ এর ফলে যারা অ্যামেরিকায় শরণার্থী হিসাবে প্রবেশ করতে চান, তাদের পক্ষেও তা করা নিতান্তই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে । দেশের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে যাতে অবৈধ শরণার্থীরা অ্যামেরিকায় ঢুকতে না পারে, সেজন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যামেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণে ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহিত ছিলেন । ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (USCIS) যা অ্যামেরিকায় অভিবাসন সংক্রান্ত নজরদারি চালানোর কাজে নিযুক্ত ৷ তা চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ । ফলে অ্যামেরিকায় প্রবেশের জন্য ইতিমধ্যে যে আবেদনগুলি জমা পড়েছিল, তার দেখাশোনার কাজও অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে ।

এই নয়া পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে অ্যামেরিকার কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে COVID—১৯ প্যানডেমিকের নেতিবাচক প্রভাব । 2020 সালের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে অ্যামেরিকায় নামী শিল্পক্ষেত্রে 20 মিলিয়নের বেশি মার্কিন নাগরিক কাজ হারিয়েছেন । আর তাদের ছেড়ে যাওয়া পদে নিয়োগকারীরা H1B ও L ভিসাধারীদের নিয়োগ করেছেন । আবার 17 মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক সেই সব শিল্পক্ষেত্রে কাজ হারিয়েছেন, যেখানে বিদেশ থেকে H2B ভিসাধারী কর্মচারীদের নিয়ে এসে নিয়োগ করার চেষ্টা করা হচ্ছিল ।

কিছু বিশ্লেষকের মত, এই পদক্ষপের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প 2020 সালের শেষ পর্যন্ত মার্কিন নাগরিকদের জন্য (এই তালিকায় আছেন আফ্রিকান অ্যামেরিকান, কলেজের ডিগ্রি নেই এমন যারা, সংখ্যালঘু শ্রেণি ও প্রতিবন্ধী ) 5 লাখ 25 হাজার চাকরি ‘রক্ষা’ করতে পারবেন । যেমন, প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রকাশ্যে বলেছিলেন, " প্রতিটা ক্ষেত্রে চাকরি পেতে মার্কিন কর্মচারীদের বিদেশিদের সঙ্গে লড়াই করতে হয় । আর এই তালিকায় লাখ লাখ ভিনগ্রহের প্রাণীরাও আছে ৷ যারা অস্থায়ী কাজের জন্য অ্যামেরিকায় ঢুকে পড়ে । এই সব অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে আবার তাদের স্ত্রী, সন্তানরাও আসে আর তারাও মার্কিন কর্মচারীদের কাজ ছিনিয়ে নেয় । "

H2B ভিসাধারী যারা ফুড সাপ্লাই চেনগুলিতে কাজের জন্য আবেদন করেছেন অথবা আমেরিকার ‘জাতীয় স্বার্থ’ রক্ষার জন্য যাদের দরকার, কেবল তাদের ক্ষেত্রেই এই ভিসায় বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হচ্ছে না । ‘জাতীয় স্বার্থ’ - র আওতায় যারা নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন, সেই সব বিদেশিদের আবার 5 টি ভাগ রয়েছে । যেমন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র, আইন-কানুন বিভাগ, কূটনীতি বা জাতীয় নিরাপত্তা, COVID —১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যক্ষেত্র ও অ্যামেরিকার অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য দ্রুত ফিরিয়ে আনা ও তা চালিয়ে যাওয়ার কাজের জন্য যারা প্রয়োজনীয় । শেষ বিভাগের আওতায় সেইসব রাজনৈতিক প্রভাবসম্পন্ন মার্কিন সংস্থাগুলির কাছে সম্ভাবনা থাকছে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আবেদন করার যাতে 2020 সাল শেষ হওয়ার আগে স্বল্প সংখ্যায় হলেও H1B ও L ভিসাধারীদের আমেরিকায় কাজের জন্য আনা সম্ভব হয় ।

আমেরিকার এই পদক্ষেপের প্রভাব ভারতের উপর এখনই পড়তে দেখা যাচ্ছে । প্রতি বছর অ্যামেরিকা 85 হাজার H1B ভিসা ইশু করে ৷ যার মধ্যে তিন চতুর্থাংশই পান ভারতীয়রা, যারা প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে কাজ করেন । 2004 থেকে 2012 সালের মধ্যে H1B ভিসা ইশুর যে ট্রেন্ড দেখা গেছে, তা অনুযায়ী 5 লাখ ভিসা ভারতীয়দেরই দেওয়া হয়েছে ৷ যার মধ্যে এদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন । অ্যামেরিকার 3 মিলিয়ন প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ভিসাধারীদের সংখ্যা অন্তত 7 লাখ 50 হাজার । আর এই প্রবাসী ভারতীয়রাই বর্তমানে আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠছে ।

H1B ভিসা থেকে যে সব ভারতীয় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি উপকৃত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস, ইনফোসিস, উইপ্রো, টেক মাহিন্দ্রা, HCL টেকনোলজ়িস লিমিটেড ও লারসেন অ্যান্ড টিউব্রো ইনফোটেক । এই সব সংস্থাগুলি সেই 100 টি ভারতীয় সংস্থার অন্তর্ভুক্ত যারা অ্যামেরিকায় 2017 সাল পর্যন্ত 17.9 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে ৷ অ্যামেরিকার 50 টি রাজ্যে মোট 1 লাখ 13 হাজার চাকরির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ৷

পণ্য ও পরিষেবায় অ্যামেরিকা ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যসঙ্গী । দক্ষ শ্রমশক্তি হিসাবে অ্যামেরিকার ভারতীয় সংস্থাগুলিতে ভারত থেকে আসা H1B ভিসাধারীদের সংখ্যা হঠাৎ করে কমিয়ে দিলে অবশ্যই তার প্রভাব পরবে ৷ প্রভাব দেখা যাবে অ্যামেরিকার অর্থনীতির প্রযুক্তি, অর্থ ও উৎপাদনক্ষেত্রে । COVID —১৯ প্যানডেমিকের প্রভাবে অ্যামেরিকার বিপর্যস্ত অর্থনীতির হাল ফেরাতে নেওয়া যে কোনও জাতীয় উদ্যোগই এই 3 টি ক্ষেত্র অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । কাজেই অ্যামেরিকায় অর্থনীতিকে সচল করে তুলতে যারা অভিবাসী নয় অথচ ভিসাধারী তাদের পরিষেবা দিতে মুখ ফেরানো এই সিদ্ধান্তে সামগ্রিকভাবে ভারত-অ্যামেরিকা কৌশলগত সম্পর্কের অন্যতম উজ্জ্বল ও যৌথ সুবিধার জায়গাগুলির গুরুত্ব বহুলাংশে খর্ব করবে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.