হায়দরাবাদ, 22 সেপ্টেম্বর : অকার্যকর বর্জ্য পদার্থ প্রায়ই পরিবেশে বিপর্যয় তৈরি করে । যত্রতত্র বর্জ্য ফেলে দেওয়া এবং অকারণ জ্বালানির ফলে পরিবেশ দূষিত হয় এবং জনস্বাস্থ্য ভয়ঙ্কর ভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন হয় । তাহলে আবর্জনা নিষ্কাশন করার সঠিক উপায় কী ? হায়দরাবাদের উত্তর আছে ! কঠিন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উত্পাদনের জন্য শহর-ভিত্তিক জওহরনগর ডাম্প ইয়ার্ডটিকে কাজে লাগানো হয়েছে । দক্ষিণ ভারতের মধ্যে হায়দরাবাদেই প্রথম এমন উদ্যাগ নেওয়া হয়েছে । এই প্রকল্প থেকে 17.40 কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উত্পাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে । গোটা শহরজুড়ে এমন আরও কয়েকটি প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে । চুক্তি অনুসারে, ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ উত্পাদনে সরকারের খরচ পড়বে 7.84 টাকা । যদিও এই মুহূর্তে বিষয়টি একটি ব্যয়বহুল ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে । কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে পরিণত হতে পারে । দৈনিক 300 টন কঠিন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উত্পাদনের লক্ষে 1987 সালে দিল্লির টিমারপুরে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছিল । কিন্তু, প্রকল্পটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি । পরের কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন রাজ্যে কমপক্ষে 180টি বায়োগ্যাস এবং বায়ো-CNG প্রকল্প চালু হয় ।
তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশ বায়ো গ্যাস প্রকল্পে শীর্ষে রয়েছে । তবে হায়দরাবাদে পৃথক ভাবে জ্বালানীযোগ্য বর্জ্যকে শক্তি এবং সার উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে । সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই পদ্ধতিকে উৎসাহিত করার দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে ।
ভারতে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় মুলত বাড়িঘর এবং রাস্তা থেকে । সংগ্রহের পর তা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হত । মধ্যপ্রদেশের জাবালপুর এবং অসমের গুয়াহাটিতে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে তা ব্যবহার করা হয় । দেশের বৃহত্তম বর্জ্য-বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দিল্লিতে অবস্থিত । দিল্লি সরকার প্রতিদিন কঠিন বর্জ্য থেকে 24 মেগাওয়াট থেকে 2 হাজার মেট্রিক টন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে । প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের 400টি শহরে কঠিন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্প স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন । কিন্তু, রাজ্য সরকারগুলির তরফে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ দেখা যায়নি ।
1940-এর শেষের দিকে স্পেনে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় । জার্মানির পৌরসভাগুলিও কঠিন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্রিয় ভাবে কাজ করছে । অস্ট্রিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সুইজারল্যান্ডেও জ্বালানির উৎস হিসেবে বর্জ্যকে ব্যবহার করা হয় । এটা অনুমান করা যায়, 2030 সালের মধ্যে ভারতে 16.50 কোটি টন কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত-সংগ্রহ করা হবে । স্বাভাবিক ভাবেই এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমাদের আরও সক্রিয় পদক্ষেপ করতে হবে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি, বর্জ্য পদার্থ ঠিক মতো নিষ্কাশন না করার জন্যই ভারতীয়দের মধ্যে ক্যান্সার, হাঁপানি থেকে শুরু করে 22টি দীর্ঘস্থায়ী অসুখের ঝুঁকি প্রবল ভাবে বেড়ে চলেছে । বর্জ্য সংগ্রহ এবং তা নিষ্কাশন করার পদ্ধতি যত দ্রুত এবং মজবুত ভাবে করা সম্ভব হবে, আবর্জনার ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠা ততই আমাদের পক্ষে সহজ হবে ।