ETV Bharat / bharat

LAC-এর সমস্যা সমাধানে সেনার লড়াই নয়, কূটনীতির প্রয়োজন: জেনারেল হুডা

author img

By

Published : May 29, 2020, 2:37 PM IST

কোরোনা ভাইরাসের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিতর্কে চিন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বারা কোণঠাসা ৷ তার উপর হংকং ও তাইওয়ান ফের চিনা কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে LAC বরাবর ভারতের বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসন’ দেখাচ্ছে বেজিং ৷

LAC-এর সমস্যা সমাধানে সেনার লড়াই নয়, কূটনীতির প্রয়োজন: জেনারেল হুডা
LAC-এর সমস্যা সমাধানে সেনার লড়াই নয়, কূটনীতির প্রয়োজন: জেনারেল হুডা

দিল্লি, ২৮ মে: লাদাখের ডেমচক, গালওয়ান ও প্যাংগং এবং উত্তর সিকিমের নাথুলার একাধিক জায়গায় ভারতীয় সেনাবাহিনী ও চিনা PLA-র মধ্যে উত্তেজনা খুব শীঘ্রই মিটে যাওয়ার নয় ৷ এমনটাই মনে করেন ভারতীয় সেনার নর্দান কমান্ডের প্রাক্তন প্রধান ডি এস হুডা ৷ সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ আলোচনায় অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুডা জানিয়েছেন, LAC বরাবর চিনের এবারের কার্যকলাপ মোটেই অতীতের মতো বিছিন্ন বা কোনও স্থানীয় ঘটনাও নয় ৷ বরং এবার তা বেজিংয়ের শীর্ষস্তর থেকে পূর্ব পরিকল্পিত এবং পরিচালিত হচ্ছে ৷ উরিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে নেতৃত্ব দেওয়া এই সেনাবাহিনীর প্রাক্তন শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, কোরোনা ভাইরাসের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিতর্কে চিন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বারা কোণঠাসা ৷ তার উপর হংকং ও তাইওয়ান ফের চিনা কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে LAC বরাবর ভারতের বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসন’ দেখাচ্ছে বেজিং ৷ তারা যে দুর্বল নয়, এই বার্তাই সারা বিশ্বে পৌঁছে দিতে চাইছে চিন ৷ জেনারেল হুডার মতে, উপত্যকায় জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত এবং LOC-তে গুলি বর্ষণ LAC-এর ঘটনার থেকে বিচ্ছিন্ন নয় ৷ ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তে একাধিক লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত ৷ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টের একটি টুইটে জানিয়েছিলেন, ভারত ও চিন তাদের সমস্যা দ্বিপাক্ষিকভাবে মিটিয়ে নিতে পারবে ৷ ট্রাম্পের এই বিতর্কিত টুইটটিকেও তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন ৷ নীচে দেওয়া হল সেই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার ৷

প্রশ্ন: চুমার থেকে ডোকলামে আগেরবারের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি কেন আলাদা? আপনি এই সীমা লঙ্ঘন, সংঘর্ষ ও লড়াইয়ের সময়কালকে কীভাবে দেখছেন ?

উ: হ্যাঁ, এটা অতীতের থেকে আলাদা ৷ আমার কাছে তো বেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবেই আলাদা ৷ যদি অতীতের চুমার, ডোকলাম এমনকী ২০১৩ সালের ডেপস্যাং-এর উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, সেগুলো আসলে স্থানীয় ঘটনা ৷ স্থানীয় ভিত্তিতেই কয়েকদিনের জন্য উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল ৷ ডোকলামে চিনের তরফে রাস্তা তৈরির করার চেষ্টা করা হচ্ছিল ৷ তাতে আমাদের বাহিনী (ভারতীয় সেনা) পদক্ষেপ করে চিনকে রাস্তা তৈরি না করার অনুরোধ করে ৷ একই ঘটনা ঘটেছিল চুমারেও ৷ এখানেও তারা রাস্তা তৈরি চেয়েছিল ৷ আমাদের বাহিনী তা বন্ধ করে দেয় ৷ এটা ওই এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল ৷ ডোকলামের ঘটনার পর অন্যত্র ছড়িয়ে যায়নি ৷ দুই তরফ থেকে কী চাইছে, সেই বিষয়ে আমাদের কাছে স্পষ্ট ধারণা ছিল ৷

এবার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা ৷ প্রথমত, এটা ভৌগোলিকভাবে বহু বছর ধরে ছড়িয়ে পড়েছে ৷ এর মধ্যে অনেক জায়গায় সীমান্ত নিয়ে কোনও মতবিরোধ নেই ৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গালওয়ানে আমাদের কখনও সমস্যা হয়নি ৷ অনেক বেশি পরিমাণ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে ৷ এটাকে কখনওই স্থানীয় ঘটনা বলা যায় না ৷ চিন আসলে বোঝাতে চাইছে, পরিকাঠামো তৈরি ও ইত্যাদি নিয়েই সমস্যা ৷ এটা নিয়মিত শীর্ষস্তর থেকে পরিকল্পনা করা হচ্ছে ৷ তারা একেবারে পরিকল্পিত ভাবে এসেছে ৷ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, তাদের দাবি কী? তারা আসলে কী চায় তা নিয়ে কোনও স্বচ্ছতা নেই ৷ সুতরাং, এটা এমন একটা পরিস্থিতি যা আমাদের গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করা উচিত ৷

প্রশ্ন: গতকাল বেজিং বলেছে সীমান্তের পরিস্থিতি সার্বিকভাবে স্থিতিশীল এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৷ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেছেন, তিনি ভারত ও চিনের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে রাজি ৷ এটাকে তিনি ‘আবেগের বশবর্তী হয়ে বিরোধ’ বলে অভিহিত করেছেন ৷ কোরোনা ভাইরাসের উৎসস্থল সংক্রান্ত বিতর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বারা কোণঠাসা হওয়া থেকে শুরু করে হংকংয়ে প্রতিবাদ ও তাইওয়ানের নতুন পরিস্থিতি সংক্রান্ত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে কি সীমান্তের ঘটনা কোনওভাবে সম্পর্কযুক্ত ?

উ: যা ঘটছে, তার সঙ্গে অবশ্যই ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে ৷ চিন এখন মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে ৷ প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে ৷ এর ফলেই চিনের তরফে এই ধরনের আগ্রাসী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে ৷ আপনি যদি দক্ষিণ চিন সাগরের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন হংকংয়ে নতুন আইন পাস করানো হয়েছে ৷ দেখবেন তাইওয়ানের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটছে ৷ অস্ট্রেলিয়ার উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ এগুলির প্রত্যেকের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক রয়েছে ৷ তারা বোঝাতে চাইছে যে কোরোনা ভাইরাসের জন্য ‘আমাদের দুর্বল ভেবো না’ ৷

চিনের কূটনীতিকের দেওয়া বিবৃতিকে আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ধরতেই পারি ৷ কিন্তু যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ততক্ষণ এটাকে আমরা সামান্য পদক্ষেপ বলে ধরতে পারি ৷ আর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেউ আর কোনও গুরুত্ব দেন বলে মনে হয় না ৷ এই সমস্যার জন্য কোনও তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন নেই ৷ এটা ভারত ও চিনের মধ্যেই সমাধান করতে হবে ৷

প্রশ্ন : ভারত অতীতে BRI-এর বিরোধিতা করেছে ৷ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের আমেরিকানদের নিয়ে তৈরি চতুর্পাক্ষিক নিরাপত্তা আলোচনার অংশ ৷ এই বিষয়গুলি চিনের উপর কতটা প্রভাব ফেলছে ?

উ: এই বিষয়গুলি অবশ্যই তাদের ভাবনাচিন্তার মধ্যে রয়েছে ৷ ভারত কীভাবে মার্কিন শিবিরের দিকে চলে যাচ্ছে এবং চিন বিরোধী অবস্থান নিচ্ছে তা গ্লোবাল টাইমসের একটি লেখায় বলা হয়েছে ৷ ওদের কাছে এটা একটা চিন্তার বিষয় ৷ ভারত মহাসাগরের তরফে শক্তিশালী নৌবাহিনী রয়েছে ৷ যদি তারা মনে করে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ওই চার পক্ষ এক হয়ে যাবে, তাহলে ভারত মহাসাগরে চিনের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে ৷ তারা অবশ্যই একটা বার্তা দিতে চাইছে ৷ আর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) বরাবর আগ্রাসী ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতকে চাপে ফেলতে চাইছে ৷

প্রশ্ন: পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বাহিনী মোতায়েনে ভারত LAC বরাবর কতটা শক্তিশালী ?

উ: পরিকাঠামোগত ভাবে চিন ভারতের দিকে বেশ এগিয়ে ৷ এটা স্বীকার করতেই হবে ৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভারতেও দ্রুত উন্নতি হয়েছে ৷ রাস্তা, সেতু তৈরি হচ্ছে ৷ লজিস্টিক পরিকাঠামোও তৈরি হচ্ছে ৷ যদি আগের উত্তপ্ত পরিস্থিতিগুলির দিকে তাকান, যেখানে ভারতের উপর চিন সেনা দিয়ে চাপ বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল ৷ তারা কী সেই সব ক্ষেত্রে সফল হয়েছিল? ১৯৬৭ সালের নাথুলা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ঘটনা পর্যন্ত চাপ তৈরি করে বড় কোনও সাফল্য পায়নি ৷ তাহলে কি তারা এবার তাদের পরিকল্পনায় বদল আনতে চাইছে? তারা কি আরও আগ্রাসী মনোভাব নিতে চাইছে? এই প্রশ্নগুলিই এবারের পরিস্থিতিকে একটু ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে ৷

প্রশ্ন : বিশ্ব স্তরে চিন যখন এত সমস্যার সম্মুখীন, তখন LAC-তে তারা কেন এতগুলি সেক্টর খুলছে? বার্তা দেওয়ার জন্যই তারা কেনই বা ভারতকে বেছে নিল ?

উ: চিন খুব শক্তিশালী ৷ যখন তোমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় কিংবা খুব চাপের মধ্যে পড়ে যাও, তখন মনে হয় চুপ করে যাওয়ার জন্যই কি আমদের শক্তি কমে যাচ্ছে? নাকি আমাদের পালটা আরও কিছু করা উচিত ? আমরা চিনকে আগ্রাসী জবাব দেওয়ার ঘটনাই প্রত্যক্ষ করছি ৷ LAC-এ যা ঘটছে, তা পরিকল্পিতভাবেই করা হচ্ছে ৷ ভারত ও চিন শক্তিশালী প্রতিবেশী ৷ আর ভূ-রাজনৈতিক বাস্তব হল এই দুই শক্তিশালী প্রতিবেশীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিরল ৷ সুতরাং এখানে ভারত ও চিনের মধ্যে নিশ্চয় কিছু কৌশলগত বৈরিতা রয়েছে ৷ আর আমাদের এটা নিয়েই এগিয়ে চলতে হবে ৷

প্রশ্ন: কাশ্মীরে জঙ্গি কমান্ডাররা নিহত হচ্ছে ৷ পুলওয়ামায় বিস্ফোরণের উদ্দেশ্যে আনা গাড়ি সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় করেছে ৷ চিন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বের সঙ্গেই কি LOC এবং LAC-এর ঘটনার সংযোগ রয়েছে? নাকি দু’টোই আলাদা ঘটনা ?

উ:আমাদের অবশ্যই এই দুটো ঘটনাকে সংযুক্ত করা উচিত ৷ চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ৷ আমরা এটাও জানি যে, আমাদের পশ্চিম সীমান্তে ব্যস্ত রাখতে চিন পাকিস্তানকে ব্যবহার করছে ৷ যাতে আমরা চিনের বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে না পারি ৷ সুতরাং আমাদের এই কাজকে পরিকল্পিত ও ব্যাপক অর্থেই দেখতে হবে ৷ শুধু চিন নয়, উত্তর সীমান্তে আমাদের ব্যস্ততার সুযোগ পাকিস্তানও নিতে পারে এবং কাশ্মীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে ৷ আমাদের দুই দিকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে নজর রাখতে হবে ৷

প্রশ্ন: LOC ও LAC-এ যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তার মোকাবিলা করা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য কতটা কঠিন ?

উ:সামর্থ্যের নিরিখে আমাদের লাদাখ ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সরাসরি সংযুক্ত নয় ৷ যদি কোনও একজন আঘাত করে তাহলে আমাদের সেনাবাহিনীকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই ৷ লাদাখ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার মোকাবিলায় দুই জায়গাতেই যথেষ্ট শক্তি রয়েছে ৷ এক জায়গা অন্য জায়গা থেকে নজর ঘোরাতে পারবে না ৷ যখন আমরা লাদাখে LAC-এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছি, তখন LOC-এ আমাদের নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি বা উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ রোধে পদক্ষেপে কোনও বিচ্যুতি ঘটবে না ৷

প্রশ্ন : ভারত ও চিনের মধ্যে শান্তি এবং সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে কিছু পদ্ধতি ও সীমান্ত প্রোটোকল রয়েছে ৷ কিন্তু বারবার সীমান্ত লঙ্ঘন করার প্রচেষ্টা কি সেই প্রোটোকলের কার্যকারিতাকে নষ্ট করছে না?

উ: পুরোপুরি নয় ৷ বরং প্রোটোকলগুলি সাহায্য করছে ৷ ঘটনা হল, LAC-তে কোনও গুলি চালানো হয়নি ৷ এটা ওই প্রোটোকল এবং পদ্ধতির জন্য হয়েছে ৷ ফলে শান্তি বজায় রয়েছে ৷ প্রতিবছর লাদাখে ৫০০বার সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে ৷ এর ফলেই পরিস্থিতির অবনতি হয় ৷ কিন্তু আমাদের উচিত ক্রমাগত এই প্রোটোকলগুলির পর্যালোচনা করা ৷ এর মধ্যে কতগুলি ক্ষেত্রে সাফল্য আসেনি ৷ প্রোটোকলে খুব স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে যে, যখন নজরদারি বাহিনী মুখোমুখি পড়বে তখন কোনওরকম মুখোমুখি লড়াই করা যাবে না ৷ কোনও হিংসা ছড়ানো যাবে না ৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধরনের প্রোটোকলগুলি চিনের তরফে নিয়মিতভাবে লঙ্ঘিত হয় ৷ সুতরাং, আমাদের সীমান্ত সহযোগিতা সমঝোতা নতুন করে পর্যালোচনা করা উচিত ৷

প্রশ্ন : আপনার কী মনে হয়, এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে নাকি কমবে ? এর ভবিষ্যৎ কী দেখতে পাচ্ছেন ?

উ: কূটনীতিই মূল ভূমিকা পালন করবে ৷ ঘটনাস্থানে কমান্ডার স্তরে সেনাবাহিনীর মধ্যে এই বিশেষ পরিস্থিতি সামলানো যাবে না বলেই মনে হয় ৷ যখন দুই পক্ষের সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনও অঞ্চল নিয়ে সংঘাত তৈরি হয় , তখন কেউই এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে চায় না ৷ ঘটনাস্থানের পরিস্থিতি একেবারে তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে ৷ সুতরাং সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনা এক্ষেত্রে কোনও সাহায্য করবে না ৷ কূটনীতি দিয়েই কাজ সারতে হবে ৷ অতীতে যে সমঝোতাগুলি হয়েছিল সেগুলির সাহায্যেই কোনও সমঝোতা করতে হবে ৷ এটা কি তাড়াহুড়ো করে সমাধান করা হচ্ছে? আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ বলছে, এটা নয় ৷ এটা হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে ৷ আমরা নিশ্চিত নই যে চিন কী চাইছে ৷ তাদের দাবি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে নাকি না তাও জানি না ৷ এগুলো অনেক উত্তর না পাওয়া প্রশ্ন ৷ চিন যদি সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয় তাহলে তাদের মতো পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইতে হবে, এসবের কারণ কী? তাই আমার মনে হয়, এর জন্য কূটনৈতিক স্তরে কিছু কঠিন আলোচনা প্রয়োজন ৷ তাহলেই এর সমাধান হতে পারে ৷

দিল্লি, ২৮ মে: লাদাখের ডেমচক, গালওয়ান ও প্যাংগং এবং উত্তর সিকিমের নাথুলার একাধিক জায়গায় ভারতীয় সেনাবাহিনী ও চিনা PLA-র মধ্যে উত্তেজনা খুব শীঘ্রই মিটে যাওয়ার নয় ৷ এমনটাই মনে করেন ভারতীয় সেনার নর্দান কমান্ডের প্রাক্তন প্রধান ডি এস হুডা ৷ সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ আলোচনায় অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুডা জানিয়েছেন, LAC বরাবর চিনের এবারের কার্যকলাপ মোটেই অতীতের মতো বিছিন্ন বা কোনও স্থানীয় ঘটনাও নয় ৷ বরং এবার তা বেজিংয়ের শীর্ষস্তর থেকে পূর্ব পরিকল্পিত এবং পরিচালিত হচ্ছে ৷ উরিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে নেতৃত্ব দেওয়া এই সেনাবাহিনীর প্রাক্তন শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, কোরোনা ভাইরাসের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিতর্কে চিন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বারা কোণঠাসা ৷ তার উপর হংকং ও তাইওয়ান ফের চিনা কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে LAC বরাবর ভারতের বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসন’ দেখাচ্ছে বেজিং ৷ তারা যে দুর্বল নয়, এই বার্তাই সারা বিশ্বে পৌঁছে দিতে চাইছে চিন ৷ জেনারেল হুডার মতে, উপত্যকায় জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত এবং LOC-তে গুলি বর্ষণ LAC-এর ঘটনার থেকে বিচ্ছিন্ন নয় ৷ ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তে একাধিক লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত ৷ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টের একটি টুইটে জানিয়েছিলেন, ভারত ও চিন তাদের সমস্যা দ্বিপাক্ষিকভাবে মিটিয়ে নিতে পারবে ৷ ট্রাম্পের এই বিতর্কিত টুইটটিকেও তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন ৷ নীচে দেওয়া হল সেই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার ৷

প্রশ্ন: চুমার থেকে ডোকলামে আগেরবারের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি কেন আলাদা? আপনি এই সীমা লঙ্ঘন, সংঘর্ষ ও লড়াইয়ের সময়কালকে কীভাবে দেখছেন ?

উ: হ্যাঁ, এটা অতীতের থেকে আলাদা ৷ আমার কাছে তো বেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবেই আলাদা ৷ যদি অতীতের চুমার, ডোকলাম এমনকী ২০১৩ সালের ডেপস্যাং-এর উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, সেগুলো আসলে স্থানীয় ঘটনা ৷ স্থানীয় ভিত্তিতেই কয়েকদিনের জন্য উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল ৷ ডোকলামে চিনের তরফে রাস্তা তৈরির করার চেষ্টা করা হচ্ছিল ৷ তাতে আমাদের বাহিনী (ভারতীয় সেনা) পদক্ষেপ করে চিনকে রাস্তা তৈরি না করার অনুরোধ করে ৷ একই ঘটনা ঘটেছিল চুমারেও ৷ এখানেও তারা রাস্তা তৈরি চেয়েছিল ৷ আমাদের বাহিনী তা বন্ধ করে দেয় ৷ এটা ওই এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল ৷ ডোকলামের ঘটনার পর অন্যত্র ছড়িয়ে যায়নি ৷ দুই তরফ থেকে কী চাইছে, সেই বিষয়ে আমাদের কাছে স্পষ্ট ধারণা ছিল ৷

এবার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা ৷ প্রথমত, এটা ভৌগোলিকভাবে বহু বছর ধরে ছড়িয়ে পড়েছে ৷ এর মধ্যে অনেক জায়গায় সীমান্ত নিয়ে কোনও মতবিরোধ নেই ৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গালওয়ানে আমাদের কখনও সমস্যা হয়নি ৷ অনেক বেশি পরিমাণ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে ৷ এটাকে কখনওই স্থানীয় ঘটনা বলা যায় না ৷ চিন আসলে বোঝাতে চাইছে, পরিকাঠামো তৈরি ও ইত্যাদি নিয়েই সমস্যা ৷ এটা নিয়মিত শীর্ষস্তর থেকে পরিকল্পনা করা হচ্ছে ৷ তারা একেবারে পরিকল্পিত ভাবে এসেছে ৷ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, তাদের দাবি কী? তারা আসলে কী চায় তা নিয়ে কোনও স্বচ্ছতা নেই ৷ সুতরাং, এটা এমন একটা পরিস্থিতি যা আমাদের গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করা উচিত ৷

প্রশ্ন: গতকাল বেজিং বলেছে সীমান্তের পরিস্থিতি সার্বিকভাবে স্থিতিশীল এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৷ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেছেন, তিনি ভারত ও চিনের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে রাজি ৷ এটাকে তিনি ‘আবেগের বশবর্তী হয়ে বিরোধ’ বলে অভিহিত করেছেন ৷ কোরোনা ভাইরাসের উৎসস্থল সংক্রান্ত বিতর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বারা কোণঠাসা হওয়া থেকে শুরু করে হংকংয়ে প্রতিবাদ ও তাইওয়ানের নতুন পরিস্থিতি সংক্রান্ত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে কি সীমান্তের ঘটনা কোনওভাবে সম্পর্কযুক্ত ?

উ: যা ঘটছে, তার সঙ্গে অবশ্যই ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে ৷ চিন এখন মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে ৷ প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে ৷ এর ফলেই চিনের তরফে এই ধরনের আগ্রাসী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে ৷ আপনি যদি দক্ষিণ চিন সাগরের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন হংকংয়ে নতুন আইন পাস করানো হয়েছে ৷ দেখবেন তাইওয়ানের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটছে ৷ অস্ট্রেলিয়ার উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ এগুলির প্রত্যেকের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক রয়েছে ৷ তারা বোঝাতে চাইছে যে কোরোনা ভাইরাসের জন্য ‘আমাদের দুর্বল ভেবো না’ ৷

চিনের কূটনীতিকের দেওয়া বিবৃতিকে আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ধরতেই পারি ৷ কিন্তু যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ততক্ষণ এটাকে আমরা সামান্য পদক্ষেপ বলে ধরতে পারি ৷ আর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেউ আর কোনও গুরুত্ব দেন বলে মনে হয় না ৷ এই সমস্যার জন্য কোনও তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন নেই ৷ এটা ভারত ও চিনের মধ্যেই সমাধান করতে হবে ৷

প্রশ্ন : ভারত অতীতে BRI-এর বিরোধিতা করেছে ৷ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের আমেরিকানদের নিয়ে তৈরি চতুর্পাক্ষিক নিরাপত্তা আলোচনার অংশ ৷ এই বিষয়গুলি চিনের উপর কতটা প্রভাব ফেলছে ?

উ: এই বিষয়গুলি অবশ্যই তাদের ভাবনাচিন্তার মধ্যে রয়েছে ৷ ভারত কীভাবে মার্কিন শিবিরের দিকে চলে যাচ্ছে এবং চিন বিরোধী অবস্থান নিচ্ছে তা গ্লোবাল টাইমসের একটি লেখায় বলা হয়েছে ৷ ওদের কাছে এটা একটা চিন্তার বিষয় ৷ ভারত মহাসাগরের তরফে শক্তিশালী নৌবাহিনী রয়েছে ৷ যদি তারা মনে করে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ওই চার পক্ষ এক হয়ে যাবে, তাহলে ভারত মহাসাগরে চিনের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে ৷ তারা অবশ্যই একটা বার্তা দিতে চাইছে ৷ আর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) বরাবর আগ্রাসী ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতকে চাপে ফেলতে চাইছে ৷

প্রশ্ন: পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বাহিনী মোতায়েনে ভারত LAC বরাবর কতটা শক্তিশালী ?

উ: পরিকাঠামোগত ভাবে চিন ভারতের দিকে বেশ এগিয়ে ৷ এটা স্বীকার করতেই হবে ৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভারতেও দ্রুত উন্নতি হয়েছে ৷ রাস্তা, সেতু তৈরি হচ্ছে ৷ লজিস্টিক পরিকাঠামোও তৈরি হচ্ছে ৷ যদি আগের উত্তপ্ত পরিস্থিতিগুলির দিকে তাকান, যেখানে ভারতের উপর চিন সেনা দিয়ে চাপ বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল ৷ তারা কী সেই সব ক্ষেত্রে সফল হয়েছিল? ১৯৬৭ সালের নাথুলা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ঘটনা পর্যন্ত চাপ তৈরি করে বড় কোনও সাফল্য পায়নি ৷ তাহলে কি তারা এবার তাদের পরিকল্পনায় বদল আনতে চাইছে? তারা কি আরও আগ্রাসী মনোভাব নিতে চাইছে? এই প্রশ্নগুলিই এবারের পরিস্থিতিকে একটু ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে ৷

প্রশ্ন : বিশ্ব স্তরে চিন যখন এত সমস্যার সম্মুখীন, তখন LAC-তে তারা কেন এতগুলি সেক্টর খুলছে? বার্তা দেওয়ার জন্যই তারা কেনই বা ভারতকে বেছে নিল ?

উ: চিন খুব শক্তিশালী ৷ যখন তোমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় কিংবা খুব চাপের মধ্যে পড়ে যাও, তখন মনে হয় চুপ করে যাওয়ার জন্যই কি আমদের শক্তি কমে যাচ্ছে? নাকি আমাদের পালটা আরও কিছু করা উচিত ? আমরা চিনকে আগ্রাসী জবাব দেওয়ার ঘটনাই প্রত্যক্ষ করছি ৷ LAC-এ যা ঘটছে, তা পরিকল্পিতভাবেই করা হচ্ছে ৷ ভারত ও চিন শক্তিশালী প্রতিবেশী ৷ আর ভূ-রাজনৈতিক বাস্তব হল এই দুই শক্তিশালী প্রতিবেশীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিরল ৷ সুতরাং এখানে ভারত ও চিনের মধ্যে নিশ্চয় কিছু কৌশলগত বৈরিতা রয়েছে ৷ আর আমাদের এটা নিয়েই এগিয়ে চলতে হবে ৷

প্রশ্ন: কাশ্মীরে জঙ্গি কমান্ডাররা নিহত হচ্ছে ৷ পুলওয়ামায় বিস্ফোরণের উদ্দেশ্যে আনা গাড়ি সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় করেছে ৷ চিন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বের সঙ্গেই কি LOC এবং LAC-এর ঘটনার সংযোগ রয়েছে? নাকি দু’টোই আলাদা ঘটনা ?

উ:আমাদের অবশ্যই এই দুটো ঘটনাকে সংযুক্ত করা উচিত ৷ চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ৷ আমরা এটাও জানি যে, আমাদের পশ্চিম সীমান্তে ব্যস্ত রাখতে চিন পাকিস্তানকে ব্যবহার করছে ৷ যাতে আমরা চিনের বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে না পারি ৷ সুতরাং আমাদের এই কাজকে পরিকল্পিত ও ব্যাপক অর্থেই দেখতে হবে ৷ শুধু চিন নয়, উত্তর সীমান্তে আমাদের ব্যস্ততার সুযোগ পাকিস্তানও নিতে পারে এবং কাশ্মীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে ৷ আমাদের দুই দিকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে নজর রাখতে হবে ৷

প্রশ্ন: LOC ও LAC-এ যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তার মোকাবিলা করা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য কতটা কঠিন ?

উ:সামর্থ্যের নিরিখে আমাদের লাদাখ ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সরাসরি সংযুক্ত নয় ৷ যদি কোনও একজন আঘাত করে তাহলে আমাদের সেনাবাহিনীকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই ৷ লাদাখ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার মোকাবিলায় দুই জায়গাতেই যথেষ্ট শক্তি রয়েছে ৷ এক জায়গা অন্য জায়গা থেকে নজর ঘোরাতে পারবে না ৷ যখন আমরা লাদাখে LAC-এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছি, তখন LOC-এ আমাদের নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি বা উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ রোধে পদক্ষেপে কোনও বিচ্যুতি ঘটবে না ৷

প্রশ্ন : ভারত ও চিনের মধ্যে শান্তি এবং সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে কিছু পদ্ধতি ও সীমান্ত প্রোটোকল রয়েছে ৷ কিন্তু বারবার সীমান্ত লঙ্ঘন করার প্রচেষ্টা কি সেই প্রোটোকলের কার্যকারিতাকে নষ্ট করছে না?

উ: পুরোপুরি নয় ৷ বরং প্রোটোকলগুলি সাহায্য করছে ৷ ঘটনা হল, LAC-তে কোনও গুলি চালানো হয়নি ৷ এটা ওই প্রোটোকল এবং পদ্ধতির জন্য হয়েছে ৷ ফলে শান্তি বজায় রয়েছে ৷ প্রতিবছর লাদাখে ৫০০বার সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে ৷ এর ফলেই পরিস্থিতির অবনতি হয় ৷ কিন্তু আমাদের উচিত ক্রমাগত এই প্রোটোকলগুলির পর্যালোচনা করা ৷ এর মধ্যে কতগুলি ক্ষেত্রে সাফল্য আসেনি ৷ প্রোটোকলে খুব স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে যে, যখন নজরদারি বাহিনী মুখোমুখি পড়বে তখন কোনওরকম মুখোমুখি লড়াই করা যাবে না ৷ কোনও হিংসা ছড়ানো যাবে না ৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধরনের প্রোটোকলগুলি চিনের তরফে নিয়মিতভাবে লঙ্ঘিত হয় ৷ সুতরাং, আমাদের সীমান্ত সহযোগিতা সমঝোতা নতুন করে পর্যালোচনা করা উচিত ৷

প্রশ্ন : আপনার কী মনে হয়, এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে নাকি কমবে ? এর ভবিষ্যৎ কী দেখতে পাচ্ছেন ?

উ: কূটনীতিই মূল ভূমিকা পালন করবে ৷ ঘটনাস্থানে কমান্ডার স্তরে সেনাবাহিনীর মধ্যে এই বিশেষ পরিস্থিতি সামলানো যাবে না বলেই মনে হয় ৷ যখন দুই পক্ষের সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনও অঞ্চল নিয়ে সংঘাত তৈরি হয় , তখন কেউই এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে চায় না ৷ ঘটনাস্থানের পরিস্থিতি একেবারে তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে ৷ সুতরাং সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনা এক্ষেত্রে কোনও সাহায্য করবে না ৷ কূটনীতি দিয়েই কাজ সারতে হবে ৷ অতীতে যে সমঝোতাগুলি হয়েছিল সেগুলির সাহায্যেই কোনও সমঝোতা করতে হবে ৷ এটা কি তাড়াহুড়ো করে সমাধান করা হচ্ছে? আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ বলছে, এটা নয় ৷ এটা হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে ৷ আমরা নিশ্চিত নই যে চিন কী চাইছে ৷ তাদের দাবি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে নাকি না তাও জানি না ৷ এগুলো অনেক উত্তর না পাওয়া প্রশ্ন ৷ চিন যদি সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয় তাহলে তাদের মতো পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইতে হবে, এসবের কারণ কী? তাই আমার মনে হয়, এর জন্য কূটনৈতিক স্তরে কিছু কঠিন আলোচনা প্রয়োজন ৷ তাহলেই এর সমাধান হতে পারে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.