আজ থেকে তিন দশক আগে সারকারিয়া কমিশন বলেছিল, রাজ্যপালের কাজ হওয়া উচিত সরকার গঠনে সাহায্য করা । কোনওভাবেই সরকার গঠন করা নয় । সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ হওয়ার পরেও রাজভবন যেন রাজনীতির আবর্তে গণতন্ত্রের ছবিটা নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে । অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেস থেকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া BJP-তে যোগ দেওয়ার পর মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল কাল বিলম্ব না করে কমলনাথ সরকারকে বিধানসভায় গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলে । কোরোনা প্যানডেমিকের তোয়াক্কা না করে 23 মার্চ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন শিবরাজ সিং চৌহান । এর পাশাপাশি প্রায় একই সময়ে একই রকম রাজনৈতিক নাটক শুরু হয় রাজস্থানে । অনুগামীদের নিয়ে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন রাজস্থানের উপ মুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট । কয়েক দিন পরেই তাঁকে এবং তাঁর অনুগামী বিধায়কদের বহিষ্কার করে দল । মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে রাজস্থানের অবশ্য একটি বিষয়ে অমিল রয়েছে— মরু রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত ও সচিন পাইলটের অনুগামীরা আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন । এইসব মামলার একটিরও শুনানি খুব শীঘ্র হওয়ার প্রায় কোনও সম্ভাবনাই নেই । রাজস্থানের রাজনৈতিক দড়ি টানাটানিতে রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্র কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে কাজ করছেন বলে অভিযোগ । তিনি বিধানসভার অধিবেশন ডাকার একাধিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অবশেষে নিজের সিদ্ধান্তে জানান, বিধানসভার অধিবেশন ডাকার আগে অন্তত 21 দিনের নোটিস দিতেই হবে । এর কারণ হিসাবে তিনি জানান, রাজ্যে কোরোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন । পাশাপাশি বিধানসভার সদস্যদের স্বাস্থ্য নিয়েও তিনি চিন্তিত ৷ একই সঙ্গে তাঁদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখা তাঁর দায়িত্ব বলে জানান রাজ্যপাল । রাজ্যপালের উচিত, মন্ত্রিসভার প্রস্তাব মেনে নেওয়া এবং অশোক গেহলতকে আস্থাভোট করার সুযোগ দেওয়া ।
অভিযোগ উঠছে, মুখ্যমন্ত্রীদের গোপনীয়তার শপথবাক্য পাঠ করালেও একাংশ রাজ্যপাল এখন দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মের আখড়া হয়ে উঠেছেন। 1983 সালের সারকারিয়া কমিশন তাই একেবারে সঠিক ভাবেই রাজ্যপালদের ব্যাখ্যা করে বলেছিল, “ রাজ্যপাল তাঁদেরই করা হয়, যাঁদের দল আর কোনওভাবেই সহ্য করতে পারে না, দলীয় ক্ষমতার বৃত্তে যাঁদের কোনওভাবেই আর ঠাঁই হয় না । এইসব লোক যত দিন অফিসে থাকেন, অর্থাৎ দায়িত্বে থাকেন, সাংবিধানিক দায়দায়িত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে ততদিন তাঁরা কেন্দ্রের হয়ে কাজ করেন ।”
অন্যদিকে, লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনেরাল PDT আচার্যের মতে, “কক্ষের অধিবেশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে একমাত্র স্পিকারের । নিয়ম ও আইন অনুযায়ী স্পিকারের কাজকর্মে নাক গলানোর কোনও অধিকারই নেই রাজ্যপালের । এমনই এক ঘটনায় 2016 সালে সুপ্রিম কোর্ট উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ সিং রাওয়াতকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ দেয় । রাষ্ট্রপতি শাসনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে আস্থাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ দেয় । ওই একই বছর সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল JP রাজখোয়ার সিদ্ধান্ত খারিজ করে বিধানসভার অধিবেশন শুরু করার নির্দেশ দেয় । পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানায়, রাজ্যপাল কোনও অবস্থাতেই সাংবিধানিক ক্ষমতার শীর্ষে নন । সুপ্রিম কোর্ট আরও বলে, মুখ্যমন্ত্রী তথা মন্ত্রিসভার সঙ্গে আলোচনা না করে রাজ্যপাল কোনও অবস্থাতেই বিধানসভার অধিবেশন ডাকা বা খারিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না । শীর্ষ আদালতের এই মন্তব্যগুলি থেকেই পরিষ্কার, রাজস্থানের রাজ্যপাল সংবিধান মেনে কাজ করছেন না । রাজ্যপালকে সব সময় সংবিধানের রক্ষক হিসাবে কাজ করা উচিত । কিন্তু, রাজ্যপালদের সর্বশেষ কাজকর্ম থেকে এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার , সংবিধানের মর্যাদা রক্ষায় তাঁরা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন ।