ইম্ফল, 17 নভেম্বর: উত্তপ্ত রাজ্যকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং ৷ এই অভিযোগকে সামনে রেখে বিজেপির সঙ্গে গড়া জোট সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিল কনরাড সাংমার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ৷ গত কয়েকদিন ধরে নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি ৷
মণিপুরে বিজেপি সরকারে প্রভাব পড়বে না
এনপিপি সমর্থন প্রত্যাহার করলেও মণিপুরে বিজেপি সরকার পড়ে যাওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি, বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের ৷ 60 সদস্যের মণিপুর বিধানসভায় এনপিপি'র সদস্য সংখ্যা মাত্র 7 ৷ 32টি আসন নিয়ে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে মণিপুর বিধানসভায় ৷ এছাড়া নাগা পিপল'স ফ্রন্ট (এনপিপি) এবং জেডি(ইউ) বিধায়করাও বিজেপির সঙ্গে রয়েছে ৷
রবিবার ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি জেপি নাড্ডাকে একটি চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন এনপিপি'র সভাপতি কনরাড সাংমা ৷ তিনি জানিয়েছে, মণিপুরের আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে এনপিপি ৷ গত কয়েকদিনে রাজ্যের পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে ৷ বহু নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৷ সাধারণ মানুষ ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ৷
NPP (National People's Party) withdraws its support to the N. Biren Singh-led Government in Manipur with immediate effect. pic.twitter.com/iJ8VpPxWD2
— ANI (@ANI) November 17, 2024
এই পরিস্থিতির জন্য এনপিপি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকেই দায়ী করেছে ৷ সভাপতি তাঁর চিঠিতে জানান, "বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত মণিপুর রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতি সামলাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ৷ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারছেন না তিনি ৷ এই অবস্থায় এনপিপি বীরেন সিংয়ের সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ এই মুহূর্ত থেকেই তা কার্যকর হচ্ছে ৷"
সাম্প্রতিক অশান্তি
পুলিশ সূত্রে খবর, গত 11 নভেম্বর দুপুর 2.30 মিনিট নাগাদ সশস্ত্র কুকি জঙ্গিরা জিরিবাম থানা এবং কাছাকাছি সিআরপিএফ ক্যাম্পে হামলা চালায় ৷ এই ঘটনায় দু'পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে এবং 10 জন কুকি জঙ্গির মৃত্যু হয় ৷ পুলিশের শীর্ষ কর্তা আইকে মুইভা জানান, আক্রমণকারীদের কাছে রকেট-প্রপেলড গ্রেনেড, একে সিরিজের বন্দুক, ইনসাস রাইফেল এবং এসএলআর ছিল ৷ দু'তরফে লড়াইয়ে একজন সিআরপিএফ জওয়ান আহত হন ৷ তাঁকে অসমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৷
সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, এই ঘটনার একদিন পরে জিরিবামে প্রধান মেইতেই সংগঠন জিরি আপুনবা লুপ দাবি করে যে, একটি ত্রাণশিবির থেকে 3 জন মহিলা এবং 3 শিশুর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না ৷ পাশাপাশি মেইতেই সম্প্রদায়ের দু'জন প্রবীণ নাগরিকের দেহও উদ্ধার হয় ৷ পরে জানা যায়, ওই মহিলা ও শিশুদের অপহরণ করেছে কুকি জঙ্গিরাই ৷
শুক্রবার, 15 নভেম্বর সন্ধ্যায় পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জিরি নদীর কাছে 3 জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে ৷ শনিবারও একই জায়গা থেকে অন্য 3 জনের দেহ পাওয়া যায় ৷ এরপর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ রাজ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ইন্টারনেট সংযোগ ৷ চলছে কার্ফু ৷ শনিবার মণিপুরের তিন মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা ৷ তিন জন বিজেপি বিধায়কের বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে ৷
শনিবার রাতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের পৈতৃক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ছক কষা হয়েছিল ৷ সেই মতো পূর্ব ইম্ফলের লুওয়াঙ্গশাঙ্গবামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল উত্তেজিত জনতার একটি দল ৷ 100-200 মিটার দূরত্বে নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায়, রাবার বুলেট ছোড়ে ৷ রবিবার মহারাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচার ফেলে রেখে মণিপুরে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখেছেন তিনি । এরই মধ্যে সরকার থেকে সমর্থন তুলল এনপিপি ।