দিল্লি, 3 সেপ্টেম্বর : প্রকাশ্যে আসবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সেই ডায়েরি ? অনুমান-বিশ্বাস যে ডায়েরিতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তাঁর পাঁচ দশকের রাজনৈতিক-ব্যক্তিগত জীবনের নানা অজানা কথা লিখে গিয়েছেন ।
ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং রাজীব গান্ধির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব । কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার, নতুন দল গড়া; রাজনৈতিক জীবনের টানাপোড়েন । প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এলেও, শেষ না হওয়া-- এমনই কিছু অজানা-কিছু বিতর্কিত কথা হয়তো থাকলে পারে সেই ডায়েরিতে । নিত্য দিন -রুটিন করে ঘটনা পরম্পরা লিখে রাখতেন প্রণববাবু । নিজের মেধা-স্মৃতি শক্তিকে পরীক্ষা করার জন্য কোনও ঘটনা ঘটার দুই দিন পর তা লিপিবদ্ধ করতেন ডায়েরিতে ।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ডায়েরি প্রকাশ্যে এলে ভারতীয় রাজনীতির অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ্যে আসতে পারে বলেই মনে করা হয় । হয়তো সেই ডায়েরিতে থাকতেও পারে প্রণববাবুর বিভিন্ন ব্যক্তিগত মতামত ও উপলব্ধি । থাকতে পারে নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের কথা, বেদনার কথাও । দল-সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলানো মানুষটা কোনও দিনই তেমন ভাবে প্রচার চাননি । চাননি নিজের ইচ্ছাকে বড় করে তুলে ধরতে । দল বা সরকারের স্বার্থকেই সব সময় প্রাধান্য দিয়েছেন । আর তাই চাননি তাঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছা প্রকাশ্য আসুক । তাই চাননি ডায়েরি প্রকাশ্য হোক । প্রণববাবুর মুখে একাধিকবার শোনাও গিয়েছে সেই কথা । মৃত্যুর পর সেই ডায়েরি পুড়িয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও মনে করা হতো ।
প্রণববাবুর মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যেই এবার জল্পনা সেই ডায়েরি নিয়ে । কী হবে তার ভবিষ্যত ? প্রণববাবুর মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় জানালেন, সেই ডায়েরি আছে তাঁর কাছে । ডায়েরির ভবিষ্যত কী হবে, সে বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার বাবা তাঁর উপর দিয়ে গিয়েছেন বলেও জানান শর্মিষ্ঠা ।
আরও পড়ুন : অজানা থেকে গেল অনেক কিছু...
1969 সালে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন প্রণববাবু । ধীরে ধীরে ইন্দিরা গান্ধির ঘনিষ্ঠ হয়েছেন । রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে সামলেছেন বিদেশ, প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি এবং বাণিজ্যের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব । তিনি যত শীর্ষে উঠেছেন, ততই তাঁর ঘনিষ্ঠ হয়েছেন অনেকে । শুধু রাজনৈতিক কর্মী নন, তালিকায় আছে বহু সাংবাদিকের নামও । তেমনই একজন গৌতম লাহিড়ি । দিল্লি প্রেস ক্লাবের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গৌতম লাহিড়ি তাঁর বইতেও প্রণববাবু সম্পর্কে একাধিক অজানা কথা তুলে ধরেছেন । সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রবীণ সাংবাদিক এমন অনেক স্মৃতিকথা তুলে ধরলেন । তিনি বলছেন, "একবার তীক্ষ্ম স্মৃতির রহস্য কী জানতে চেয়ে প্রণববাবুকে প্রশ্ন করেছিলাম । উত্তরে প্রণববাবু জানান, শুধু আজকের কথাই তিনি ডায়েরিতে লিখে রাখেন, তা নয় । দুই দিন আগের কথাও মনে করে ডায়েরিতে লেখেন তিনি । এইভাবেই স্মৃতিশক্তির চর্চা করতেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ।"
সেই ডায়েরির কথা মনে করে আরও কয়েকটি ঘটনার কথা মনে করেন গৌতম লাহিড়ি । একদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর নাতনির মধ্যে বার্তালাপ চলছিল । তাঁর নাতনি অনেক ছোটো । সেই সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন । তাঁর নাতনিকে ডেকে বলেন তুমি প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চেয়েছিলে । এই ব্যক্তিই প্রধানমন্ত্রী । কিন্তু সেই দিন প্রণববাবুর নাতনি তা মানতে চায়নি । সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল । গৌতম লাহিড়ি বলেন, "সেইদিনই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রণববাবুর একটি ছবি এঁকেছিল তাঁর নাতনি । সেই ছবির উল্লেখও পাবেন ডায়েরিতে ।"
আরও পড়ুন : ব্যক্তিগত ক্যারিশমাই প্রণব-মমতাকে কাছে এনেছিল, বাড়িয়েছিল চাপানউতোরও
অনেক মানুষই চেয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন । কিন্তু কখনওই তা হয়নি, কীভাবে, সেই বিষয়েও কথা বলেন গৌতমবাবু । বলেন, "অনেক মানুষের মতো তাঁর পরিবারও চাইত তিনি প্রধানমন্ত্রী হন । তিনি তার জন্য কোনওদিন কাউকে কিছু বলেননি । তিনি মনে করতেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ খুব সম্মানের । কিন্তু তাঁর নাতি-নাতনিরা মনে করত প্রণব মুখোপাধ্যায় একদিন প্রধানমন্ত্রী হবেন । "
আর এক বর্ষীয়ান সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল । সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনিও প্রণববাবুর সেই চর্চিত ডায়েরির কথা উল্লেখ করেছেন । বলেন, "আমি একবার তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম এই ডায়েরির ভবিষ্যৎ কী ? তিনি জানিয়েছিলেন, ডায়েরি তাঁর মেয়েকে দিয়ে যাবেন । না হলে নানা বিতর্ক হতে পারে । কারণ তিনি যা ভেবেছেন সেই কথাই ডায়েরিতে লিখেছেন । তবে মৃত্যুর আগে ডায়েরি প্রকাশ করতে চাননি তিনি । "
2012 সালে এক সাক্ষাৎকারে নিজেই ডায়েরির কথা বলেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায় । জানিয়েছিলেন, তিনি ডায়েরি লেখেন । তবে সেই ডায়েরি প্রকাশ্যে এলেও তা কখনই তাঁর জীবদ্দশাতে নয় ।