ETV Bharat / bharat

কোরোনা আতঙ্কে বিশ্ব - corona death troll rises in china

বিশ্বজুড়ে কোরোনা আতঙ্ক । ইতিমধ্যেই বিশ্বের 26টি দেশ এই মারণ ভাইরাসের শিকার । সর্বত্রই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে ।

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Mar 9, 2020, 5:07 PM IST

দিল্লি, 9 মার্চ : সমগ্র বিশ্বে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে কোরোনা ভাইরাস । এর আঁতুড়ঘর চিনের হুবেই প্রদেশে মৃতের সংখ্যা পাঁচশো ছুঁয়েছে । শুধুমাত্র চিনেই অন্তত 26,000 জনের ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে । কোরোনা যে মহামারির আকার ধারণ করেছে, ভারত-সহ বিশ্বের 26টি দেশে ইতিমধ্যেই তার প্রমাণ মিলেছে । ফিলিপিন্স এবং হংকংয়েও কোরোনায় মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ‌া (WHO) এখনও এই রোগের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেনি । তবুও ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা দেখে পৃথিবীর কোনও দেশই রোগের সংক্রমণ এড়ানো নিয়ে এপর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারেনি । বলা হচ্ছে, সাপ এবং বাদুড় থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে । চিনের প্রেসিডেন্ট শি জ়িনপিং প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন যে, সরকার কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে । যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চিনে দশ হাজার শয‌্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে এবং সেখানকার 13টি শহরে চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ধরনের পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে । ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে চার কোটিরও বেশি নাগরিকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি করা রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতার চেহারা নিয়েছে । ইতিমধ্যেই ইউহানে আটকে পড়া ভারতীয়দের আকাশপথে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে ভারত । সেই জায়গায় পাকিস্তান সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের নাগরিকরা চিনে পড়ে থাকবেন । WHO-র দাবি, এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা তখনই সম্ভব, যখন বিশ্বের সব দেশ একজোট হয়ে কাজ করবে । কিন্তু, বিশ্বের সব দেশ কি আদৌ প্রস্তুত এই জরুরি অবস্থার সঙ্গে লড়াই করতে ? আখেরে বিশ্ব অর্থনীতির উপর বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে এই অবস্থা ।

কোরোনা ভাইরাসের জেরে বর্তমানে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা আমাদের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (SARS)-র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে । 18 বছর আগে চিনকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল এই SARS । সেই সময় চিনে যে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, বেজিং তা প্রকাশ্যে আনতে চায়নি । কারণ তাতে দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হত । বর্তমান কোরোনা সংক্রমণ নিয়ে চিনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে এমনও শোনা গেছে যে, এই রোগের প্রকোপ নাকি সেদেশে জৈব মারণাস্ত্র নিয়ে চলা গবেষণা ব্যর্থ হওয়ার ফল । তবে এই সমস্যার আসল কারণ আদৌ কখনও প্রকাশ্যে আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে । কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনাম SARS-এর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়েছে । কোরোনা সংকট প্রতিরোধে চিনও তার সর্বশেষ সম্পদ ব্যবহার করে শেষ পর্যন্ত লড়াই করছে । SARS-এ আক্রান্ত 8000 জনের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ছিল 800 । 2009 সালে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত 2.5 লাখের মধ্যে অন্তত 3,000 জনের মৃত্যু হয়েছিল । শুধুমাত্র 2014 সালেই ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণে 7000 -এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ।

কোরোনা ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ চিনের শিল্প এবং বাণিজ্যেও সমস্যা তৈরি করেছে । ভারতে লঙ্কার দাম বেড়ে গেছে। ভারতের বৃহত্তম লঙ্কার ক্ষেত্র গুন্টুর মার্কেট ইয়ার্ড । চিনে রপ্তানি কমে যাওয়ার ফলে সেখানকার ব্যবসা মার খাচ্ছে । সুরাতের হিরে ব্যবসা থেকে শুরু করে বেশ কিছু সেক্টর ইতিমধ্যেই বড়সড় লোকসানের মুখে পড়েছে । 2002 সালে যখন SARS-এর প্রাদুর্ভাব হয়, তখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের নয়া সদস্য ছিল চিন । আজ যে যে দেশের সঙ্গে চিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, সেইসব দেশে এই লোকসানের প্রভাব পড়েছে । অন্যদিকে যে হারে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, তা জনসাধারণকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে ।

যদিও এই সংকট মোকাবিলায় চিন সবরকম উদ্যোগ নিচ্ছে । তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে । ফিলিপিন্স এবং হংকংয়ে কোরোনায় মৃত্যুর জেরে পর্যটন বাণিজ্য বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে । চিনের অন্তঃদেশীয় পর্যটন বর্তমানে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে । ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাজ্যগুলিকে কেরালার পথ অনুসরণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । কোরোনা আক্রান্ত সন্দেহে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসাধীন সকলকে সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছে তেলাঙ্গানা সরকার । সন্দেহভাজন কোরোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে গান্ধি হাসপাতালে। চিকিৎসা পরিষেবার গুণগত মানের বিচারে বিশ্বের 195টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান 145তম । চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়ায় প্রতিবছর এদেশে 24 লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় । যে দেশে মেলা, শোভাযাত্রা, অনুষ্ঠান বছরভর লেগেই থাকে, সেখানে এই ধরনের মহামারি প্রতিরোধে জনসচেতনতা এবং যথেষ্ট পরিমাণে চিকিৎসার সামগ্রী ও পরিষেবা থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজন। দেশের যে কোনও প্রান্তে সন্দেহভাজন কোরোনা আক্রান্তের হদিশ মিললেই তাঁর চিকিৎসা জরুরি ভিত্তিতে এবং সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা অবলম্বন করে করা উচিত । কোরোনা ভাইরাসের জেরে চিনে ইতিমধ্যেই মৃত্যুমিছিল শুরু হয়েছে । অচিরেই ভারতেও মারণথাবা বসাতে পারে এই ভাইরাস । যদি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার যথাসময়ে এর নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী না হয়, তাহলে বিপদ আসন্ন ।

দিল্লি, 9 মার্চ : সমগ্র বিশ্বে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে কোরোনা ভাইরাস । এর আঁতুড়ঘর চিনের হুবেই প্রদেশে মৃতের সংখ্যা পাঁচশো ছুঁয়েছে । শুধুমাত্র চিনেই অন্তত 26,000 জনের ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে । কোরোনা যে মহামারির আকার ধারণ করেছে, ভারত-সহ বিশ্বের 26টি দেশে ইতিমধ্যেই তার প্রমাণ মিলেছে । ফিলিপিন্স এবং হংকংয়েও কোরোনায় মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ‌া (WHO) এখনও এই রোগের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেনি । তবুও ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা দেখে পৃথিবীর কোনও দেশই রোগের সংক্রমণ এড়ানো নিয়ে এপর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারেনি । বলা হচ্ছে, সাপ এবং বাদুড় থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে । চিনের প্রেসিডেন্ট শি জ়িনপিং প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন যে, সরকার কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে । যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চিনে দশ হাজার শয‌্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে এবং সেখানকার 13টি শহরে চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ধরনের পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে । ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে চার কোটিরও বেশি নাগরিকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি করা রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতার চেহারা নিয়েছে । ইতিমধ্যেই ইউহানে আটকে পড়া ভারতীয়দের আকাশপথে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে ভারত । সেই জায়গায় পাকিস্তান সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের নাগরিকরা চিনে পড়ে থাকবেন । WHO-র দাবি, এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা তখনই সম্ভব, যখন বিশ্বের সব দেশ একজোট হয়ে কাজ করবে । কিন্তু, বিশ্বের সব দেশ কি আদৌ প্রস্তুত এই জরুরি অবস্থার সঙ্গে লড়াই করতে ? আখেরে বিশ্ব অর্থনীতির উপর বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে এই অবস্থা ।

কোরোনা ভাইরাসের জেরে বর্তমানে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা আমাদের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (SARS)-র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে । 18 বছর আগে চিনকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল এই SARS । সেই সময় চিনে যে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, বেজিং তা প্রকাশ্যে আনতে চায়নি । কারণ তাতে দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হত । বর্তমান কোরোনা সংক্রমণ নিয়ে চিনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে এমনও শোনা গেছে যে, এই রোগের প্রকোপ নাকি সেদেশে জৈব মারণাস্ত্র নিয়ে চলা গবেষণা ব্যর্থ হওয়ার ফল । তবে এই সমস্যার আসল কারণ আদৌ কখনও প্রকাশ্যে আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে । কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনাম SARS-এর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়েছে । কোরোনা সংকট প্রতিরোধে চিনও তার সর্বশেষ সম্পদ ব্যবহার করে শেষ পর্যন্ত লড়াই করছে । SARS-এ আক্রান্ত 8000 জনের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ছিল 800 । 2009 সালে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত 2.5 লাখের মধ্যে অন্তত 3,000 জনের মৃত্যু হয়েছিল । শুধুমাত্র 2014 সালেই ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণে 7000 -এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ।

কোরোনা ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ চিনের শিল্প এবং বাণিজ্যেও সমস্যা তৈরি করেছে । ভারতে লঙ্কার দাম বেড়ে গেছে। ভারতের বৃহত্তম লঙ্কার ক্ষেত্র গুন্টুর মার্কেট ইয়ার্ড । চিনে রপ্তানি কমে যাওয়ার ফলে সেখানকার ব্যবসা মার খাচ্ছে । সুরাতের হিরে ব্যবসা থেকে শুরু করে বেশ কিছু সেক্টর ইতিমধ্যেই বড়সড় লোকসানের মুখে পড়েছে । 2002 সালে যখন SARS-এর প্রাদুর্ভাব হয়, তখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের নয়া সদস্য ছিল চিন । আজ যে যে দেশের সঙ্গে চিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, সেইসব দেশে এই লোকসানের প্রভাব পড়েছে । অন্যদিকে যে হারে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, তা জনসাধারণকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে ।

যদিও এই সংকট মোকাবিলায় চিন সবরকম উদ্যোগ নিচ্ছে । তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে । ফিলিপিন্স এবং হংকংয়ে কোরোনায় মৃত্যুর জেরে পর্যটন বাণিজ্য বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে । চিনের অন্তঃদেশীয় পর্যটন বর্তমানে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে । ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাজ্যগুলিকে কেরালার পথ অনুসরণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । কোরোনা আক্রান্ত সন্দেহে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসাধীন সকলকে সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছে তেলাঙ্গানা সরকার । সন্দেহভাজন কোরোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে গান্ধি হাসপাতালে। চিকিৎসা পরিষেবার গুণগত মানের বিচারে বিশ্বের 195টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান 145তম । চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়ায় প্রতিবছর এদেশে 24 লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় । যে দেশে মেলা, শোভাযাত্রা, অনুষ্ঠান বছরভর লেগেই থাকে, সেখানে এই ধরনের মহামারি প্রতিরোধে জনসচেতনতা এবং যথেষ্ট পরিমাণে চিকিৎসার সামগ্রী ও পরিষেবা থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজন। দেশের যে কোনও প্রান্তে সন্দেহভাজন কোরোনা আক্রান্তের হদিশ মিললেই তাঁর চিকিৎসা জরুরি ভিত্তিতে এবং সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা অবলম্বন করে করা উচিত । কোরোনা ভাইরাসের জেরে চিনে ইতিমধ্যেই মৃত্যুমিছিল শুরু হয়েছে । অচিরেই ভারতেও মারণথাবা বসাতে পারে এই ভাইরাস । যদি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার যথাসময়ে এর নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী না হয়, তাহলে বিপদ আসন্ন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.